সুন্দরী ললনা দেখলে ছেলেদের চোখ পলক ফেলতে ভুলে যায়। ট্রাকের হেডলাইটের মতো ড্যাব ড্যাব করে জ্বলে থাকে।
মানুষ দুইভাবে মেয়ে দেখে। সমাজস্বীকৃত ধাপ হচ্ছে, বিয়ের জন্য পাত্রী দেখতে যাওয়া। পছন্দ হোক বা না হোক পাত্রীর হাতে কিছু টাকা গুজে দিয়ে আসতে হয়।
এটা হচ্ছে কনে দেখার ফি।
দ্বিতীয় পদ্ধতি হচ্ছে, নিষিদ্ধ উপায়ে পাত্রী দেখা। রাস্তায়, বাসে, ক্লাসে, সিনেমা হলে যে কোনো জায়গায়ই মেয়ে দেখলে চোখের পলক না ফেলে, মেয়ের পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নেওয়া। তারপর মুখের দিকে বলদের মতো হা করে তাকিয়ে থাকা। এই পদ্ধতিতে মেয়েরা তাকে দেখার ফি পান না।
পুরোপুরি বিনামূল্য। এটাকে রূপের চ্যারিটি শো বলা যেতে পারে।
চারদিকে রূপের চ্যারিটি শো চলছে হরদম। গুরা থেকে বুড়া সবাই বলদের মতো হা করে তাকিয়ে থাকে। এর মধ্যে আবার গুণ্ডা টাইপের যারা আছেন, তারা ইভ টিজিংও করে বসেন।
যুগে যুগে এই চ্যারিটি শোর ধরন বদলেছে। আগের দিনে মানুষ মেয়েদের দেখত লাজুক ভাব নিয়ে। কোনোভাবে মেয়ের চোখে চোখ পড়ে গেলে ছেলেরা চোখ নামিয়ে ফেলত। কিন্তু এখন আর পোলাপাইন চোখ নামায় না, উল্টো চোখ মেরে বসে।
এবার আমার কথায় আসি।
আমি কখনো রাস্তায় মেয়েদের দিকে তাকিয়ে থাকি না। আমি দাবি করছি না, আমার চরিত্র ডিটারজেন্ট পাউডারে ধোয়া ধবধবা পরিষ্কার। আমি মেয়েদের দিকে তাকিয়ে থাকি না, কিছু মজার বিষয় দেখার জন্য। সেই মজার বিষয়টি হচ্ছে, ছেলে দেখা। সবাই মেয়ে দেখে, আমি ছেলে দেখি।
কেন ছেলে দেখি, তার ব্যাখ্যায় আসা যাক। মেয়েদের দিকে যখন ছেলেরা তাকিয়ে থাকে তখন তাদের চেহারা হয় দেখার মতো। কেউ হা করে থাকে, কেউ ঠোঁট কামড়ায়, কেউ মুখ বুজে মিটমিট করে হাসে, কেউ মাতালের মতো তাকায়...। অসংখ্য রূপ। আগে জানতাম নারীরা বহুরূপী, কিন্তু যেদিন থেকে ছেলে দেখা শুরু করলাম, সেদিন আমার ভুল ভেঙে গেল।
ছেলেরাই আসলে বহুরূপী।
এবার একটি বাস্তব গল্পে আসা যাক।
রাস্তায় দাঁড়িয়ে ধোয়া ফুঁকছি। আমার পাশে এক বৃদ্ধ দাঁড়িয়ে আছেন। পেছনে কিছু ছাত্র আড্ডা দিচ্ছে।
ক্লাসের মেয়েদের মধ্যে কে কত সুন্দরী, তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। রাস্তার অপরপ্রান্তের মার্কেট থেকে একটি মেয়ে বের হয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়ায়। সঙ্গে সঙ্গে একটি মিরাকেল ঘটে গেল। পেছনের ইচরে পাকা ছাত্রদের আড্ডায় নীরবতা নেমে এলো। তারা হা করে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইল।
দেখে মনে হলো, একদল বলদ সিনেমা দেখছে। এতে আমি অবাক হইনি। কারণ দৃশ্যটা খুবই পরিচিত। অবাক হয়েছি বয়স্ক চাচাকে দেখে। তিনিও তাকিয়ে আছেন মেয়েটার দিকে।
চাচার তাকানোর ভঙ্গিমাটা অসাধারণ। চোখে স্বপি্নল মায়া, হা করে আছেন, জিহ্বাটা দুই ঠোঁটের মাঝে তিরতির করে কাঁপছে। এ সময় 'পড়ে না চোখের পলক...' গানটি বাজলে সার্থক হতো।
আমি গিয়ে চাচার সামনে দাঁড়ালাম। বললাম, 'কি চাচা, মেয়েটা দেখতে খুব সুন্দর, তাই না?'
আমার প্রশ্ন শুনে চাচা ধাক্কা খেলেন, তার স্বপ্নটি ভেঙে দিলাম।
আমি রসিকতা করে আবারও বললাম, 'চাচি বেশি সুন্দরী, নাকি মেয়েটা?'
চাচা সঙ্গে সঙ্গে 'বেয়াদব পোলাপাইন' বলে হাঁটা শুরু করলেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।