আত্মশুদ্ধি প্রজ্ঞা লাভ মনুষ্যত্বে সিদ্ধি লাভ
হে নব্বইদশকের আফগান মুজাহিদ ! রুশ-নজীবুল্লারর বিরদ্ধে যুদ্ধে তোমাদের লড়াকু মনোভাব আর আল্লার উপরে যে আবেগ ছিল তা আল্লা পছন্দ করেছিলেন। আল্লা তোমাদের বিজয় দান করেছিলেন। অতঃপর যা ঘটলো তাতে আল্লা সাংঘাতিকভাবে মনোক্ষুন্ন হয়েছেন। তোমরা সেই গতানুগতিক ক্ষমতার মোহ আর ফেরকার জালে পড়ে তোমাদের সমস্ত আমলকে বরবাদ করে দিলে। স্মরণ কর যখন তোমরা আল্লার ঘরের গেলাফ ছুঁয়ে শফথ করেছিলে যে তোমরা নিজেরা নিজেদের উপর অস্ত্র সংবরণ করবে এবং তোমরা মুজাহিদরা এক আল্লার রাঁহে একীভূত হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করবে।
কিন্ত হায় আক্ষেপ ! তোমাদের সেই গেলাফ ছোঁয়া শফথ কিভাবেই না প্রহসনে পরিনত হলো। তোমরা নিজেরাই নিজেদের ক্ষুদ্র গোষ্ঠী স্বার্থে নিজেদের ধ্বংশ করে ফেললে। জেনে রাখ আল্লার আনুকল্য পাওয়া যেমন সহজ তেমন কঠিন।
হে তালেবান ! তোমরা কিন্ত আবেগ আর আকলকে এক সাথে পরিচালনা করতে পারোনি। আল্লা যখন তোমাদের পূর্ববর্তী মুজাহিদ ভাইদের খাসলত খারাপের জন্য বিজয়দান করলো।
অতঃপর যখন তোমরা ক্ষমতা পরিচালনা শুরু করলে তখন তোমাদের কে আরও ধৈর্য্যশীল হয়ে উঠতে হতো। বেশীবেশী জ্ঞান চর্চা আর নফসে মুতমায়িন্নাতে উত্তরণের মুজাহাদা গ্রহন করতে হতো। কিন্ত তোমরা মাথা গরম করে ফেললে। তোমরা খামোখা বৌদ্ধধর্মাম্বলীদের প্রাচীন মূর্তিখানা ধ্বংশ করে ফেললে আল্লার দোহাই দিয়ে। অথচ আল্লা পরমত সহিষ্ণুতাকে পছন্দ করেন।
ঐ মূর্তি কি তোমাদের কাউকে মূর্তি পুজা করতে প্ররোচিত করছিল। মূর্তি ধ্বংশ করাতে বৌদ্ধরা কি ইসলামে দাখিল হয়ে গেল। বল। ইবরাহিমের মূর্তি ভাঙ্গার সাথে বর্তমান প্রেক্ষাপটের এই মূর্তি ভাঙ্গাকে গুলালে চলবে না। তাদের সাথে তোমাদের বৈপ্যরিত্য না খুঁজে তোমাদের সাথে তাদের মিল গুলো নিয়ে অগ্রসর হওয়াটাই হিকমতধারীর পরিচয়।
এই প্রেক্ষিতে কোরানের ঐ বাণীটি উল্লেখ কর, ভালো ও মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দ প্রতিহত কর উৎকৃষ্ট দ্বারা ; ফলে তোমার সাথে যার শত্রুতা আছে, সে হয়ে যাবে উৎকৃষ্ট বন্ধু। ' বল সকল ধর্মই বিশুদ্ধচিত্ত অর্জণের প্রচেষ্টাকে অগ্রাধিকার দেয়। তোমাদের কর্তব্য ছিল ভাংচুর আর অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ করে অমায়িক ব্যবহারের অস্ত্র প্রয়োগ করা। যেমন প্রয়োগ করেছিলেন আল্লার রাসুল মক্কা বিজয়কালে।
যেমন প্রযোগ করেছিল ওমর তার গোলামকে উটের পিঠে চড়িয়ে নিজে লাগাম ধরে থেকে। তার ফলতো তোমরা হাতেনাতে দেখেছিলে। বিভিন্ন প্রকারের ধর্মাম্বলীরা ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে ইসলামের ছায়াতলে জমায়েত হয়েছিল। স্মরণ কর তারা যদি রূঢ় আচরণ করতো তবে নিশ্চয় ইসলামের বরকত হতো না। বল।
আল্লা করুনাময় দয়ালু।
হে তালেবান নেতৃবৃন্দ ! যখন দজ্জাল বুশ তোমাদের ধ্বংশ করার জন্য পাঁয়তারা খুঁজছিল। লাদেনকে বহিস্কারের জন্য হম্বিতম্বি করছিল। তখন তোমাদেরকে হিকমতধারীর পরিচয় দিতে হতো। যেমন হিকমতের পরিচয় দিয়েছিলেন মহানবী হুদায়বিয়ার সন্ধিকালে।
সে সময় যদি তিনি হিকমত অবলম্বন না করতেন, কতিপয় সাহাবাদের মত আবেগে আপ্লুত হতেন তবে নিশ্চয় ইসলামের দিগন্ত বিস্তৃত হতো না। শুধুমাত্র রাসুলের হিকমত অবলম্বনের জন্যই আল্লা কোরানে ঘোষণা দিলেন হুদায়বিয়ার সন্ধি হচ্ছে ইসলামের জন্য সুস্পষ্ট বিজয়। বল। অথচ তোমরা একটা আতুঁড় রাষ্ট্রের পরিচালক হয়ে হুদায়বিয়ার সন্ধি থেকে শিক্ষা না নিয়ে গোয়ার্তমী করে বসলে। প্রতিপক্ষ প্রবল হলে যে কৌশল নেয়া দরকার সেটা তোমরা করতে পারোনি।
তাই ফল যা হবার তাই ঘটলো ! বল। আল্লা ধৈর্য্য প্রজ্ঞাসম্পন্ন ন্যায়পরায়ণ মানুষের সাথে আছেনই।
হে সাদ্দাম হোসেন ! তোমাকে ও হুদায়বিয়ার সন্ধির প্রেক্ষাপট থেকে শিক্ষা নিয়ে দ্বিতীয় বুশের আলটিমেটামকালীন সময় বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে হতো ! বল তোমার যতটুকু না প্রজ্ঞা ছিল তার চাইতে বেশী ছিল ক্ষমতার লোভ। তুমি যদি দুরদৃষ্টিসম্পন্ন্ন এবং দেশপ্রেমিক ব্যক্তিই হতে তবে অবশ্যই বুঝতে পারতে যে - পরিস্থিতি তখন তোমার অনুকলে ছিল না। তোমার উচিত ছিল এক সাদ্দামকে প্রত্যাহার করে নিয়ে যে করেই হোক দেশকে দেশের মানুষকে ধ্বংশযজ্ঞের হাত থেকে বাঁচানো।
হে কলমধারী ! তুমি আরও বলে দাও যে, তখন তো গোটাবিশ্ব ইরাক আক্রমনের বিরোধী ছিল কিন্ত তোমার হুঁশ করা উচিত ছিল- রাশিয়ারা আক্রমনের বিরোধী হলেও শেষ পর্যন্ত কেউই আগাবে না। তোমাকে একাই প্রটেকশন দিতে হবে। আর তুমি তো একা প্রটেকশান দিতে পারবে না, তার তলের খবর তো তুমি নিজেও জানতে। আসলে তোমার মতলব ছিল দেখি না শেষ পর্যন্ত গদিটা রক্ষা করা যায় কিনা ? অথচ তুমি যদি ভাবতে আসলে আক্রমনকারীর উদ্দেশ্য হচ্ছে আমার প্রতি ব্যক্তিগত আক্রোশ আর ইরাকের উদীয়মান শক্তি নস্যাৎ করা আর তেলের প্রতি লোলুপদৃষ্টি।
যখন তথাকথিত মিত্রবাহিনী তোমাকে আলটিমেটাম দিল তখন তোমাকে একটা ফন্দি আটতে হতো ! তাহলে বর্তমানের এই হৃদয়বিদারক ও ধ্বংশযজ্ঞ ঘটনা থেকে রেহাই আল্লা দিতে ও পারতেন।
বল তখন তোমাকে হয় জাতিসংঘের কাছে আত্মসর্মপন করে অথবা জনগণের কাছে রেডিওটিভি ভাষণে বলতে হতো যে, আমি পদত্যাগ করছি শুধু একারণে যে, যে বিশাল অন্যায়ের বহর ধেয়ে আসছে তার ধ্বংশের হাত থেকে আমার দেশটাকে রক্ষার স্বার্থে কেননা এই অন্যায়কে বিশ্ব শুধু মুখেই প্রতিবাদ করবে কিন্ত কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসবে না। হে জাতিসংঘ বা দেশবাসী তোমরা এখন নিরপেক্ষভাবে ভোটের ব্যবস্থা কর। আর আমাকে কোন একটি দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় দাও। আমার এ পিছু হটা যে শুধুমাত্র দেশের স্বার্থেই। বল।
তাহলে বুশব্লেয়াররা আর ইরাক দেশটাকে ধ্বংশযজ্ঞে অন্তত পরিনত করতে পারতো না আর হাজার হাজার আবাল বৃদ্ধ বনিতার মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটতো না। আসলে এই প্রজ্ঞার ব্যাপারটা তোমার মাথায় আসেনি। ক্ষমতার প্রতি নেশা থেকে তুমি বাহির হতে পারোনি। অথচ এক সাদ্দামের চেয়ে নিশ্চয় একটা দেশ অনেক বড়। তোমার এই মনোভাব থাকলে শেষ পর্যন্ত তোমাকেও ধেঁড়ে ইদুরের মত গর্ত থেকে পাকড়াও হতে হতো না।
তুমি হয়তবা বলতে পার- পরবর্তীতে আমেরিকারা আমাকে নির্বাচন করতে দিতো না। তা হয়তবা ঠিকই কিন্ত তার পরবর্তী নির্বাচনে আল্লা তোমার পবিত্র নিয়তগুণে তোমাকে যেমন অমরসম্মান দিতেন আবার ক্ষমতার মসনদ ফিরিয়ে ও দিতেন। অথচ তুমি একটিমাত্র লোক তো ফুতুর হয়েই গেলে, শেষ পর্যন্ত একটা সম্ভাবনাময় দেশ মৃত্যুপুরীতে পরিনত হলো। বল। বড় শত্রুর সাথে মোকাবেলায় গোয়ার্তুমী বুমেরাং হয়ে যায়।
যদি নাই হতো তবে রাসুল হুদায়বিয়ার অপমানকর সন্ধিকে অন্যান্য বড়বড় সাহাবাদের মত অমান্য করতে পারতো। তাহলে কিন্ত তাদের জীবন বিপন্ন হওয়ার পাশাপাশি ইসলামের পবিত্র লক্ষ্য অর্জণ ব্যাহত হতো। একারনেই সেই সন্ধিকে কোরানে ইসলামের সুস্পষ্ট বিজয় হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বল। হে আল্লা আমাদের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়ার হেকমত প্রদান কর।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।