আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

Detroit Metal City (2008) [Anime Review]

আই অ্যাম এ ম্যাংগো পাবলিক


[Warning! এই আনিমেটিতে অনেক আক্রমণাত্মক, অপমানজনক, সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য কথাবার্তা রয়েছে এবং একই ধরণের লিরিক্সসম্বলিত গান আছে। যদিও সকল কথাবার্তা ও গানের লিরিক্স শুধুই হাস্যকর অর্থে বিনোদন দেবার মত দৃশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে, তারপরেও লেখক আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছে এধরনের কথাবার্তা নিয়ে এই রিভিউতে আলোচনা করার জন্যে। লেখক কোনভাবেই বাস্তব কিংবা কাল্পনিক জীবনে এধরণের বিকৃত রুচির কথাবার্তা/গানকে সাপোর্ট করে না]

ধরে নিন আপনি একজন অসম্ভব মারামারি-কোপাকুপি মুভির ফ্যান, কাহিনী দ্রুত এগিয়ে না গেলে আপনার মুভি দেখার আগ্রহ হারিয়ে যায়। ধীর গতিতে আগানো মুভি দেখতে গেলে অধৈর্য হয়ে যান, ঘুমিয়ে কূল পান না! এখন দুর্ভাগ্যক্রমে আপনার জীবনটা এমন হয়ে গেলো যে, প্রচন্ড আতেলি কিংবা আর্টিস্টিক কিংবা ঘন্টায় ১ মিটার গতিতে আগানো ধীর মুভি দেখে দেখেই বাকি জীবন পাড়ি দিতে হবে, কেমন লাগবে আপনার? কিংবা বিপরীত অবস্থা ভাবুন, আপনি ভদ্র, ধীরস্থির জীবন কাটাতে পছন্দ করেন। শাস্ত্রীয় গান কিংবা ভাবুক আলোচনা, ৫ মিনিটে শেষ করে দেওয়া ঘটনা নিয়ে তৈরি ৫ ঘন্টার সিনেমা শান্ত মনে উপভোগ করতে পারা আপনার সবচেয়ে পছন্দের কাজ।

এর বাইরে তথাকথিত নতুন যুগের গানাবাজনা, আর্ট, সিনেমা, আলোচনা ইত্যাদি আপনার শরীরে আগুন জ্বালিয়ে দেয় রীতিমত!! হঠাত করে আবিষ্কার করলেন বাকি জীবনটা র‍্যাপ গান গেয়েই কাটিয়ে দিতে হবে, দুনিয়া আপনাকে শ্রেষ্ট র‍্যাপ গায়কদের একজন হিসেবে মেনে নিয়েছে। শাস্ত্রীয় গানের প্রসঙ্গে গেলে রীতিমত অপমানিত হতে হয় আপনাকে। জীবনটা কিরকম লাগবে আপনার?

ঠিক এরকমই ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে দুষ্টু-মিষ্টি প্রেমের গানের গায়ক হবার স্বপ্ন দেখা নেগিশি সৌইচি একদিন জাপানের আন্ডারগ্রাউন্ড গানের জগতে সবচেয়ে বিখ্যাত, প্রচন্ড ভায়োলেন্ট একটি ডেথ মেটাল ব্যান্ড “ডেট্রয়েট মেটাল সিটি”-এর লিড ভোকাল হয়ে যায়। সারা দেশে তার অসংখ্য মেটালহেড ভক্ত, যাদের উদ্যম প্রেরণা আর সাপোর্ট দেখে মেটাল গান ঘৃণা করা নেগিশি চরম অনিচ্ছা স্বত্বেও নিজে থেকে গেয়ে যেতে থাকে ডেথ মেটাল গান আর সবাইকে উপহার দিতে থাকে একের পর এক সুপারডুপারহিট সব ভয়াবহ অশ্লীল কথার পাগল করে দেওয়া ইতিহাস সৃষ্টি করা জিনিস!!

ডেট্রয়েট মেটাল সিটি আনিমেটি প্রথম দৃষ্টিতে দেখে শুধু গান কিংবা পাগলামির আনিমে মনে হলেও, এটি আসলে এর চেয়ে অনেক বেশি কিছু দিবে। খুব কম আনিমে আছে যা দেখতে গিয়ে আমি অসম্ভব হেসেছি, সেখানে এই ১৩ মিনিট করে মোট ১২টি এপিসোড দেখার সময়ে হাসতে গিয়ে মোটে ৫-৬বার চেয়ার থেকে পরে গিয়েছি [সত্যি সত্যি চেয়ার থেকে পরে গিয়েছি, একবার হাতে ব্যাথাও পেয়েছি! -_- ]।

এই আনিমেতে পাগলামি নেই, আছে পৈশাচিক লেভেলের পাগলামি! আছে কথায় কথায় গালাগালি, F অক্ষরে শুরু হওয়া বিখ্যাত শব্দটির ব্যবহার, অপব্যবহার, সুব্যবহার, কুব্যবহার! আর আছে “ধর্ষণ” শব্দটির কিছু লেজেন্ডারি ব্যবহার!



ঘটনা সংক্ষেপ: নেগিশি সৌইচি টোকিও শহরে আসে পড়াশুনার উদ্দেশ্যে, এবং একই সাথে স্বপ্ন দেখে টোকিওতে এসে ফ্যাশনেবল একটা পপ-ব্যান্ড গড়বে। কিন্তু গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পর কিভাবে যেন ঢুকে গেলো এক ইন্ডি ডেথ মেটাল জনরার ব্যান্ড ডেট্রয়েট মেটাল সিটিতে, যা সবার কাছে DMC বলেই বেশি পরিচিত! হয়ে গেলো জাপানের আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ড মিউজিকের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং ভায়োলেন্ট ডেথ মেটাল ব্যান্ডের লিড ভোকাল, ছদ্ম নাম নিল “ক্রওজার-২”। মিষ্টি-রোম্যান্টিক গান পছন্দ করা ও সারাক্ষন দুষ্টুমিষ্টি প্রেমের গান লেখা-গাওয়া নেগিশির জীবন এখন কাটে খুনখারাবি, ধর্ষণ, পৈশাচিক অপকর্মের গান গেয়ে গেয়ে!!

কাহিনী: ডেট্রয়েট মেটাল সিটির কাহিনী এর বড় শক্তি নয়, তবে দুর্বলতাও নয়। ১৩ মিনিটের একেকটি পর্বকে দুই ভাগে ভাগ করে ফেলা যায়। দুইটি অংশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দুটি ভিন্ন ঘটনা দেখায়।

সব মিলিয়ে বলা যায়, ৬-৭ মিনিটের একেকটি অংশ একেকটি গ্যাগ। তবে শুধু হাস্যরসাত্মক গ্যাগ নয়, একদম উন্মত্ত-পাগলামির গ্যাগ।

অ্যানিমেশন: আনিমেটির অ্যানিমেশন অন্যান্য আনিমে থেকে বেশ আলাদা। মাঙ্গার প্যানেলের মত ভাগ থাকে মাঝে মাঝে, আবার 16x9 রেজল্যুশনের ভিডিও হলেও প্রায়শ দেখা যায় লম্বাটে বিশাল একটা প্যানেলেই শুধু অ্যানিমেশন চলছে। তবে সবকিছু মিলিয়ে সিরিজটির জন্যে আদর্শ অ্যানিমেশন।

হঠাত হঠাত চলে আসা হাস্যকর ডায়লগ, ইমোশনের বহিঃপ্রকাশ, কিংবা একেকজনের নড়াচড়া – এসবকিছু আনিমেটির পাগলামিকে ঠিকভাবে তুলে ধরার জন্যে আদর্শ অ্যানিমেশন রয়েছে ডেট্রয়েট মেটাল সিটির।

সাউন্ডট্র্যাক: ডেথ মেটাল ব্যান্ডকে নিয়ে আনিমে, সুতরাং বুঝতেই পারছেন সাউন্ডট্র্যাক হিসাবে কি অপেক্ষা করছে আপনার জন্যে। ডেথ মেটাল পছন্দ এমন দর্শকের জন্যে এই আনিমের প্রতিটি এপিসোডে রয়েছে রক্ত-গরম-করা কিছু ডেথ মেটাল ট্র্যাক। যেহেতু আনিমের মধ্যেই গান চলতে থাকবে অনেক জায়গাতে, তাই গানের লিরিক্সও ইংলিশ সাবটেইটেল হিসাবে দেখা যেতে পারে – যেটা খুব একটা ভাল এক্সপেরিয়েন্স হবে না অনেকের জন্যেই। একদম “সেইরকম” লিরিক্স।

তবে সব মিলিয়ে অসাধারণ পাওয়ারফুল কিছু ট্র্যাক। এর মধ্যে ওপেনিং ট্র্যাকটি সত্যিকার অর্থে অসাধারণ একটি ডেথ মেটাল গান [আবারও বলি, লিরিক্স দেখে অস্বস্তি লাগতে পারে]। আর নেগিশি নিজে যেহেতু ঠান্ডা আর মিষ্টি প্রেমের গান পছন্দ করে, তার নিজের কম্পোজ করা এরকম একটি গানও আছে। সেই হোপলেস-রোম্যান্টিক গানটিও মাঝেমধ্যে শুনা যাবে, আরও শুনা যাবে আনিমেটির এন্ডিং ট্র্যাক হিসাবে।

ক্যারেক্টার: আনিমেটির সবচেয়ে শক্তিশালী দুটি পয়েন্টের একটি হল এর ক্যারেক্টারগুলি।

প্রায় সব চরিত্রই বিভিন্ন মুহুর্তের হাস্যকর দৃশ্যগুলি ফুটিয়ে তুলবার জন্যে দারুণ ভূমিকা রেখেছে, এমন কি যেসব চরিত্র শুধু ১ পর্বের জন্যে হাজির হয়েছিল তারাও। তবে মূল ক্যারেক্টার নেগিশি এবং তার অল্টার-ইগো ক্রওজার-এর ক্যারেক্টার ডেভলপমেন্ট সবচেয়ে বেশি হয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন সময়ে তার দুটি ভিন্ন রূপ ও সেই অনুযায়ী আচার-আচরণ পুরো সিরিজটির সবচেয়ে মজার অংশগুলি উপহার দিয়েছে। আরও রয়েছে তার ব্যান্ডের ড্রামার কামুস [নিশিদা তেরুমিচি] এবং গ্ল্যাম রক গান গেতে চাইলেও অবশেষে DMC তে যোগ দেওয়া জাগি [ওয়াদা মাসাইয়ুকি]। যদিও তারা তাদের DMC জীবনের সাথে মানিয়ে নিতে পেরেছে, নেগিশি তার ব্যান্ড জীবন আর স্বপ্নের পপ গানের জীবনের মধ্যে দোটানাতে রয়ে গিয়েছে।

সিরিজটির অন্যতম বড় আকর্ষন অসম্ভব রকমের বাজে কথার জন্যে বিখ্যাত ব্যান্ডটির ম্যানেজার। “প্রেসিডেন্ট” বা “বস” বলে পরিচিত এই মহিলার চোখে কোন জিনিস সার্থক বা সফল শুধু তখনই হবে যখন সেই জিনিস দেখে বা উপভোগ করে তাকে ... ... ...

থাক, কি হবে সেটি তার মুখেই আপনারা শুনে নিয়েন। তবে একটা জিনিস বলা যায়, F**k শব্দটিকে প্রেসিডেন্ট প্রায় আর্টের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে। কথায় কথায় ইংলিশগুলি বলার এক্সপ্রেশন এত বেশি মজা দিয়েছে যে, মারাত্মক অশ্লীল শব্দ হওয়ার পরেও সেগুলি বারবার রিপিট করে শুনার ইচ্ছা হয়েছিল!!!

একদম সুস্থ-স্বাভাবিক চিন্তাভাবনার, গ্ল্যামারাস ম্যাগাজিন লেখিকা ও নেগিশির স্বপ্নকন্যা আইকাওয়া ইয়ুরি কিংবা DMC ব্যান্ডের স্টেজ পার্ফরম্যান্সের সময়ে থাকা Pig of Capitalism নাসিমোতো কেইসকে সিরিজটির আরও দুটি উল্লেখযোগ্য চরিত্র। আইকাওয়াও নেগিশির মত শুধু মিষ্টি মিষ্টি পপ গানের ভক্ত, আর মেটাল গান সম্পর্কে বলতে গেলে একদমই অজ্ঞ।

অন্যদিকে নাসিমোতো হল একজন মধ্যবয়স্ক ম্যাসোকিস্ট।

এছাড়া বাকি চরিত্রগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল DMC এর ভক্তরা। DMC বা ক্রওজারের বিভিন্ন ঘটন-অঘটনকে দর্শকের কাছে তুলে ধরবার জন্যে DMC ভক্তদের একেকজনের দেওয়া উক্তি, ব্যাখ্যা মারাত্মক হাস্যকর হয়েছে।

ভয়েস এক্টিং: আনিমেটির আরেকটি শক্তিশালী দিক হল এর অসাধারণ ভয়েস এক্টিং। নেগিশি/ক্রওজার এর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ইমোশন দেওয়ার জন্যে সেইয়ু উয়েদা ইয়ুজি অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন।

মুখ-খারাপের জন্যে বিখ্যাত ম্যানেজার বা প্রেসিডেন্টকে চমৎকার ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন সেইয়ু কোবায়াসি আই। নেগেশির স্বপ্নকন্যা আইকাওয়া ইয়ুরির সেইয়ু নাগাসাওয়া মাসামিও চমৎকার ভয়েস এক্টিং করেছেন। আর DMC ভক্তদের একেকজনের ভয়েস এক্টিং-এর কোন তুলনাই হয় না!

এবার আসা যাক সিরিজটির বিখ্যাত কিছু উক্তি ও মুহুর্ত নিয়ে, তাই এগুলি হালকা ধরণের স্পয়লার মনে হতে পারে। কেউ স্পয়লার বলে ভয় পেয়ে থাকলে, একদম শেষের প্যারাতে চলে যান। ]

বিখ্যাত একটি উক্তি রয়েছে, “Fall seven times, Stand up eight” – কথাটিকে DMC ভক্তরা এক পর্যায়ে সুন্দরভাবে পরিবর্তন করে দেয়: “Fall down seven times, rape on the eighth time” :V
স্টেজে এক পর্যায়ে গানের যুদ্ধে থুতু ছিটানো শুরু করে ক্রওজার আর তার প্রতিপক্ষ।

ভক্তরা তা দেখে মুগ্ধ হয়ে আরও একটি বিখ্যাত ডায়লগ দেয়: “They’re spitting into the fourth dimension!!!”
আর সিরিজটির সবচেয়ে অসাধারণ ডায়লগগুলির একটি হল: “Krauser-sama won by half a F**k!!!”

পরিশেষে বলবো, আনিমেটি সব দর্শকের জন্যে নয়। অনেকেই এটা দেখে মজা পাবে না। তবে নিখাদ পাগলামি দেখতে চাইলে এই আনিমেটি অবশ্যই অবশ্যই দেখবেন। ডেথ মেটাল গানের ভক্ত হলে তো কথাই নাই! উড়াধুড়া একটার পর একটা গান রয়েছে এই আনিমেতে। সম্ভব হলে এর সাউন্ডট্র্যাক ডাউনলোড করে শুনে নিতে পারেন।



MyAnimeList Score: 8.37/10
আমার স্কোর: 10/10

কমেডি/মিউজিক/পাগলামির জন্যে আদর্শ একটি সিরিজ! অবশ্যই দেখার চেষ্টা করবেন এটি।


 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.