নিচে তাকিয়ে থাকার মজা হল কাওকে দেখতে হয় না, আবার কাওকে দেখা দিতে হয় না। লুকিয়ে থাকতে চাই বলে উপরে তাকাই না। একদিন তাকাবো, আর সব কিছু দেখে নেব। চেনা মানুষ দেখতে দেখতে আজ ক্লান্ত আমি, বড় বেশি ক্লান্ত। facebook.com/rabib5
প্রচন্ড ঠান্ডা পড়েছে।
হুহু করে ঠান্ডা বাতাস বইছে। ঠান্ডা বাতাস গায়ের চামড়া কেটে হাড়ে গিয়ে কাঁপুনি ধরাচ্ছে। রফিক চাদরটা ভাল করে গায়ের সাথে পেঁচিয়ে নেয়। সন্ধ্যা সাতটার মত বাজে। শীতের সন্ধ্যা সাতটা মানে মোটামুটি রাত।
টানা অবরোধ চলার কারনে রাস্তা-ঘাট প্রায় ফাঁকা। সন্ধার আগেই ঘরে ফেরা উচিত ছিল। কিন্তু লাবনীর জন্য দেরি হয়ে গেল।
এইযে ভাই, শুনছেন?
রফিক বিরক্তি নিয়ে লোকটার দিকে তাকায়। মধ্যবিত্ত সংসার টেনে নিয়ে যাওয়া অসহায় চেহারা।
চেহারা অসহায়ত্ব ঢাকতেই বোধহয় ঝাঁকড়া মোচ রেখেছেন। ভদ্রলোকের মাথার সামনে ইয়া বড় টাক।
- আমাকে বলছেন?
জ্বী। শুনলাম সামনে নাকি ভাংচুর হচ্ছে? সত্যি নাকি?
-জানি না।
খুবই নাকি ভয়ংকর অবস্থা।
সামনে যে গাড়ি পাচ্ছে তাতেই আগুন দিচ্ছে।
-ও
বুঝলেন ভাই, দেশটা রসাতলে গেল। এখন দরকার সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনী আসলে সব কয়টাকে পিটিয়ে টাইট করে দিত।
ভদ্রলোককে অত্যান্ত আনন্দিত মনে হচ্ছে।
গাড়ি পোড়ানো হচ্ছে এতে আনন্দিত হবার কি আছে কে জানে। কথা কটা বলেই ফস করে একটা সিগারেট ধরিয়ে ফেললেন। চারিদিকে আগুন জ্বালানো হচ্ছে শুনে তারও হয়ত আগুন জ্বালাতে ইচ্ছে করছে।
রফিক বললো,
-আপনি এভাবে রাস্তায় সিগারেট খাচ্ছেন, সেনাবাহিনী নামলে কিন্তু আপনার মুখের সিগারেট আপনাকে গিলিয়ে খাওয়ায়ে দিবে।
ভদ্রলোক অত্যান্ত বিরক্ত হয়ে হন হন করে হেটে চলে গেলেন।
রফিক শুনতে পেল ভদ্রলোক যাওয়ার সময় বিড়বিড় করে বলছেন,- 'কেন যে গায়ে পড়ে আজাইরা লোকের সাথে কথা বলতে গেলাম?'
রফিক পকেটে হাত দুটো সেঁধিয়ে দিয়ে সিএনজির জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। পকেটে হাত দিতেই একছড়া কাচের চুড়ির অস্তিত্ব অনুভব করে। লাবনীর জন্য কেনা হয়েছে। চুড়ি কেনা যে এত ঝকমারি কাজ হবে রফিকের আগে জানা ছিল না।
রফিক এ দোকান ও দোকান ঘুরে চুড়ির দোকানের সামনে দাড়িয়ে ছিল।
মহিলা আর তরুনীদের ভিড়ের মধ্যে গিয়ে দোকানীর কাছে চুড়ি চাইতে কেমন যেন অস্বস্তি লাগে। ভিড় কমলে গিয়ে দোকানদারকে ফিসফিস করে বলে,
- চুড়ি আছে?
কি চুড়ি? কাঁচের না ইমিটেশনের?
-কাঁচের। নীল কালার।
দোকানদার নীল চুড়ি দেখায়। কিন্তু লাবনীর হাতের মাপের চুড়ি পাওয়া যায় না।
ঠিকঠাক মাপের চুড়ি খুজে পেতে অনেক রাত হয়ে যায়।
'আসেন আসেন, আমতলা, ঝিকমারি, রায়পাড়া। তাড়াতাড়ি আসেন। '
একটা সিএনজি এসেই হাক ছাড়ে।
রায় পাড়া কত নিবেন?
৩০ টাকা।
-৩০ টাকা কেন? ভাড়া তো ১৫ টাকা?
অবরোধের দিনে ডবল ভাড়া।
নির্বিকার ভাবে জবাব দেয় ড্রাইভার।
রফিক ওঠে না। পকেটে একটা ২০ টাকার নোট আছে মাত্র। চুড়ি কিনতেই সব টাকা বেড়িয়ে গেছে।
প্রচন্ড ক্ষুধা পেয়েছে রফিকের। রাস্তার পাশে চায়ের দোকানটায় বসে এক কাপ আগুন গরম চা খেতে পারলে খুব আরাম লাগতো। সাথে দুইটা টোস্ট বিস্কুট। কিন্তু তাতে ভাড়ার টাকায় টান পড়ে যাবে।
পরের সিএনজিতে ২০ টাকাতে রফা করে উঠে পড়ে রফিক।
পকেটে হাত দিয়ে চুড়ির প্যাকেটটায় হাত বুলিয়ে নেয় । লাবনীর কথা ভেবে মনে মনে হাসে রফিক।
মেয়েটা বড্ড অভিমানী। রফিকের উপর রাগ করে কথা বলা বন্ধ করে রেখেছে। কাল যখন দেখা হবে তখন নিশ্চয় রাগ পড়বে।
কল্পনায় লাবনীর সাথে কথপোকথন শুরু করে রফিক।
-লাবনী তোমার জন্য চুড়ি এনেছি।
লাগবে না। যাও।
-নীল চুড়ি।
বললাম তো লাগবে না।
রফিক লাবনীর হাত টেনে নিয়ে নিজ হাতে একটা একটা করে চুড়ি পড়িয়ে দিবে।
লাবনী রাগ দেখিয়ে বলবে , কি দরকার ছিল শুধু শুধু এত টাকা নষ্ট করার? আমি কি তোমার কাছে চেয়েছি?
-তাতে কি? আমি তো তোমাকে কখনো কিছুই দিতে পারি না।
আমার কিছু লাগবে না। শুধু তুমি আমার সাথে থাকলেই হবে।
আর আমার সাথে ঝগড়া করবা না।
-কি! আমি ঝগড়া করি?
তো কি আমি করি?
-আবার শুরু করলে?!
সরি।
-আমিও সরি।
তুমি শুধু আমাকে কষ্ট দাও।
-আমি যে তোমাকে অনেক ভালবাসি তাই ঝগড়া করি।
যাকে ভালবাসা যায় তাকে কষ্ট ও দেয়া যায়।
কচু।
সি এনজির ড্রাইভার ব্রেক কষে গাড়ি থামাতেই রফিকের কল্পনার সূতো ছিড়ে যায়। সামনে কিছু লোকজন হৈচৈ করছে। কোত্থেকে কে যেন চিৎকার করে বলতে থাকে,
'দে সব জ্বালায়ে দে।
শালা অবরোধে গাড়ি বাহির করছে। '
রফিকের গায়ে ভেজা ভেজা কি যেন ছিটে এসে পড়ে। নাকে এসে লাগে কড়া পেট্রলের গন্ধ।
সেদিন রাতে মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে একজন অজ্ঞাত পরিচয় যুবকের লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। লাশটা চেনার কোন উপায় ছিল না।
সব কিছু পুড়ে গিয়েছিল। শুধু লাশটার পকেটে ছিল পুড়ে কাল হয়ে যাওয়া এক ছড়া নীল চুড়ি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।