এক যুগের বেশি হয়ে গেছে বাংলাদেশ টেস্ট খেলা শুরু করেছে। তারও অনেক আগে থেকে খেলে ওয়ানডে। কিন্তু বহু জ্ঞানীগুণীজন এবং পণ্ডিত ব্যক্তিবর্গ এখনো মনে করেন বাংলাদেশের উপযুক্ত খেলার ময়দান হলো আই সি সি সহযোগী সদস্যদের সাথে, একদিনের ক্রিকেটও নয়। আর এটাকে সঠিক প্রমাণ করতেই বাংলাদেশও যেন উঠেপড়ে লেগেছে, সেই শুরু থেকেই। হতাশাজনক ও জঘন্য পারফর্মেন্স প্রদর্শন শুধু আফগানিস্তান নয়, বরং সব সহযোগী সদস্য ও সমমানের দলের সঙ্গেই করে আসা, বাংলাদেশের জন্যে প্রায় নিয়মিত রুটিন।
এক্ষেত্রে, প্লেয়ারদের ইনজুরি, ভেন্যু, কন্ডিশন ইত্যাদি কিছুই যেন বিবেচ্য নয়, ঘরে-বাইরে একই অবস্থা।
এখানে আমি সহযোগী সদস্য হিসেবে আমলে নিচ্ছিঃ কেনিয়া, নেদারল্যান্ড, কানাডা, আফগানিস্তান, স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডকে। আর সমমানের দল হিসেবে শুধুই জিম্বাবুয়ে (কারন আর কোন দলেরই এত বাজে রেকর্ড নেই)
চেষ্টা করবো এই দলগুলোর সাথে বাংলাদেশের খেলা সবচেয়ে জঘন্য ম্যাচগুলোর বর্ণনা দিতে।
কেনিয়াঃ
বাংলাদেশের প্রথম নেমেসিস। ১৯৯৭-এ আইসিসি কাপ জয়ের পর থেকেই কেনিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বিতা।
সেই কাপ ফাইনালে হারের প্রতিশোধ নিতেই, ৯৭-এর অক্টোবরেই কেনিয়া আমন্ত্রণ জানালো বাংলাদেশকে, একটি ৩-জাতি টুর্নামেন্টে। আসুন দেখি সেই টুর্নামেন্ট দিয়েই বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের ক্রীড়া নৈপুণ্য পর্যালোচনা শুরু করি।
ম্যাচ-১ (১৯৯৭)
টসে জিতে বাংলাদেশ ফিল্ডিং নেয়, কেনিয়ার দীপক চুদাসামা আর কেনেডি ওটিয়েনোর বিশ্বরেকর্ড গড়া ২২৫ রানের জুটির সুবাদে ৩৪৭ রান করে ৩ উইকেটে। দুই দলের লড়াইয়ে এটাই এখনো সবচেয়ে বড় রান সংগ্রহ। বাংলাদেশ ৮ জন বোলার ব্যবহার করেও ৩টির বেশি উইকেট ফেলতে পারেনি।
জবাবে বাংলাদেশের হয়তো লড়াই করার কথা ছিল। তবে যথারীতি ব্যাটসম্যানরা ২০০ রানও পার করতে পারেনি (১৯৭, অলআউট)। বাংলাদেশ কতটা জঘন্য ব্যাটিং করেছিলো তা বোঝা যায়, তারা অলআউট হয়েছিলো ৪৪ ওভারে, ৩য় সর্বোচ্চ রান ছিলো যৌথভাবে নয় নম্বরে নামা হাসিবুল হোসেন শান্তর ও অতিরিক্ত খাতের (২১)।
ম্যাচ-২ (১৯৯৭)
এবার বাংলাদেশ টসে আগে ব্যাট নেয়, ধরে নিতে পারি, আগের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে। তবে এবার তাদের ব্যাটিং হয় আরো ভয়াবহ।
সর্বসাকুল্যে ১০০ রান করেছিল বাংলাদেশ, সর্বোচ্চ রান অতিরিক্ত থেকে (১৯)। এই অতিরিক্ত খাতটি না থাকলে বাংলাদেশের ১০০ পার হওয়াটাও সম্ভব হত না। এবার আসা যাক বোলিং-এ, কেনিয়া ২ উইকেটে ১৭ ওভারে ১০২ রান করে ম্যাচটি জিতে নেয়।
এই ট্যুরে বাংলাদেশ এতই খারাপ খেলেছিলো যে মনে হচ্ছিল খেলা হচ্ছে র্যাঙ্কিং-এ ১, ২ ও ১০ এর মধ্যে, যদিও হয়েছিলো ৮, ৯ ও ১০ এর মধ্যে।
ম্যাচ-৩ (১৯৯৮)
১৯৯৮ সালে ভারত একটি টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছিল, কেন করেছিল কে জানে! বাংলাদেশ, ভারত ও কেনিয়ার সাথে, আজকের ভারতের বোর্ড কোনদিনও এই দলগুলোর সাথে খেলার কথাও ভাবে না।
হয়তো জাগমোহন ডালমিয়া ছিলেন বলে এটা সম্ভব হয়েছিলো। যা হোক, এক বছর পরে অন্তত একটু চেনা পরিবেশে আমরা বাংলাদেশের জয় আশা করতেই পারি, বিশেষ করে আগের ম্যাচে বাংলাদেশ কেনিয়ার সাথে ১ম জয় পেয়েছে। কিন্তু না, রফিকের সেই ম্যাচজয়ী ইনিংস ও জয়কে ফ্লুক বলে প্রমাণ করতেই যেন বাংলাদেশ ম্যাচটি ২৮ রানে হেরে যায়। এই ম্যাচ নিয়ে কিছু বলার নেই আসলে, কেনিয়া আগে ব্যাট করে ২২৬ করে, বাংলাদেশ কখনোই ম্যাচে ছিলো না। নিয়মিত উইকেট হারাতে হারাতে ২৮ রান আগেই থেমে যায়।
মোটামুটি সকলেই ধরে নেয়, বাংলাদেশের কেনিয়া বধ 'ওয়ান ফ্ল্যাশ ইন দ্যা প্যান'। যথারীতি বাংলাদেশ এ ম্যাচেও ৫০ ওভার খেলতে পারেনি, ২০০ ও পার করতে পারেনি।
ম্যাচ-৪ (১৯৯৯)
এবার দেশে ফেরত আসি, আরো একবছর গিয়েছে। কিন্তু যদি ভাবি বাংলাদেশের উন্নতি হয়েছে, তাহলে কি ভুল হবে? জ্বি, হবে। তার প্রমাণ ঢাকায় বাংলাদেশ, কেনিয়া ও জিম্বাবুয়ের এই টুর্নামেন্ট।
বিশ্বকাপের প্রস্তুতি বলুন, সমমানের দলের সাথে খেলাই বলুন অথবা প্রতিশোধের বাসনাই বলুন, বাংলাদেশ একটা ম্যাচও নিজেদের দর্শকদের সামনে, নিজেদের মাটিতে জিততে পারেনি, তাও সমমানের দলের সঙ্গে। বাংলাদেশ এ ম্যাচে বিদ্যুতের ৯৫ রানের উপর ভর করে ২১৩ করে, আগে ব্যাটিং করে। এখানেও অতিরিক্ত খাতে আসে ২৪টি রান, মানে বাংলাদেশ একজনের প্রায় সেঞ্চুরির পরেও ২০০ পার হতে পারেনি। ১০০/১ থেকে ২১৩ তে অলআউট হয়ে যায়। কেনিয়া ম্যাচ জিতে নেয় ৮ উইকেটতে, প্রায় ৭ ওভার বাকি থাকতেই।
ম্যাচ-৫ (২০০৩)
এলো ২০০৩ সালের বিশ্বকাপ, সারা বিশ্ব ভেবেছিলো, এবার ডার্কহর্স বাংলাদেশ, যাদের থেকে ২-৩টা অঘটন আশা করাই যায়। তাদের ভুল প্রমাণ করতে বাংলাদেশের বেশি সময় লাগেনি। বাংলাদেশ আগে বোলিং করে কেনিয়াকে ২১৭ রানে বেধে ফেলে। ব্যাটিং করতে নেমে তারা আবারো প্রায় ৩ ওভার বাকি থাকতেই ১৮৫ রানেই অলআউট হয়ে যায়। এখানেও এক্সট্রা ১৮ রান, ২০০র নিচে আউট হওয়া আর ৫০ ওভার খেলতে না পারার ব্যর্থতা।
যদি কেউ ভাবেন পিচ ছিলো পেস বোলিং সহায়ক, ভুল হবে। বাংলাদেশের ৮ উইকেট নেন ৩ স্পিনার, তাও এর মধ্যে টিকেলো ও ওদুম্বে দুইজনেই ছিলেন পার্টটাইমার। পুরো খেলায় এক মুহূর্তের জন্যেও মনে হয়নি বাংলাদেশ জিতে যেতে পারে।
ম্যাচ-৬ (২০০৬)
তিন বছর পর, বাংলাদেশ এখন অনেকদূর এগিয়েছে। দেশে কেনিয়াকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ৩-০ তে সিরিজ জিতেছে (যদিও সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচটি মাত্র ২০ রানের জয়, তাও তা বাংলাদেশের জয়ের দুর্দমনীয় ইচ্ছার বহিপ্রকাশ বলে ধরে নিতে পারি)।
এই ম্যাচটিতেও বাংলাদেশই জিতেছিলো, এবং এটাও সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচ ছিল। কিন্তু জিতেছিলো মাত্র ২ উইকেটে। কেনিয়া টসে জিতে আগে ব্যাট নেয়, বাংলাদেশের দারুণ বোলিং-এর মুখে মাত্র ১৮৪ রানেই গুটিয়ে যায়। কাগজে-কলমে অত্যন্ত সহজ জয়, তবে ব্যাটসম্যানেরা ভেবেছিলো অন্যরকম। মনে রাখতে হবে এটা কিন্তু সাকিব-আশরাফুল-শাহরিয়ার নাফিস যুগের ব্যাটিং লাইন-আপ, ৯৭ যুগের অ্যামেচার ক্রিকেটারদের নয় এবং বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ৫ বছরের উপরে টেস্ট খেলে ফেলেছে।
বাংলাদেশ ১৩৪ রান করতেই ৮ উইকেট খুইয়ে বসে, মাশরাফির এক অসাধারণ ৪৩ রানের ইনিংস আমাদের ম্যাচ জিতিয়ে দেয়। বলতে লজ্জা লাগলেও এবারেও ৩য় সর্বোচ্চ স্কোর জনাব অতিরিক্ত মশাইয়ের, ২২ রান। বাংলাদেশ অনেক কষ্টে একটি আইসিসি সহযোগী সদস্যের সাথে জিতে মান-সম্মান রক্ষা করে।
আমি ভেবেছিলাম, এক বসায় সব দলের সঙ্গেই এরকম ভয়ঙ্কর পারফর্মেন্সগুলো লিখে ফেলতে পারবো। কিন্তু দেখলাম, বাংলাদেশ এত এত বেশি বাজে খেলা উপহার দিয়েছে আমাদের এবং লিখতে গিয়ে এত বেশি খারাপ লাগে, যে দুই পর্বে লেখার সিদ্ধান্ত নিলাম।
বাকি দলগুলোর সাথে খেলা নিয়ে পরের নোটে লিখবো।
ধ্রুব আলম
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।