আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বড়দিনের কড়চা - Chronique de Noël 2012

বড়দিনের কড়চা - Chronique de Noël 2012 শুভ বড়দিন। তাই সকলকে বড়দিনের শুভেচ্ছা জানাই। স্বভাবতই শুভ বড়দিন কথাটায় অনেকেই প্রশ্ন করে বসেন ''শুভ বড়দিন'' অর্থ কি? অর্থ হচ্ছে মানব ত্রাতা যীশু খ্রীষ্টের জন্ম দিন তাই বড়দিন। যীশু প্রায় ৩০ বছর অপরিচিতি ছিলেন কিন্তু ৩০ বছর বয়স থেকে মাত্র ৩ বছর তিনি প্রকাশ্যে কাজ করেছেন, শিক্ষা দিয়েছেন, রোগী সুস্থ করেছেন, মৃতকে জীবন দিয়েছেন ফলে জগতে এমন প্রভাব রেখে গেছেন যা আর কারও পক্ষে কখনও সম্বব নয় এবং ছিলও না। তার শিক্ষা, সেবা ও জীবন যাপনের ধরণ সবই ছিল ভিন্ন প্রকৃতির।

এমন ব্যতিক্রমি হওয়ার জন্য তাঁর জন্ম দিনে আমাদের কৃতজ্ঞা জানাই। এই উদ্যাপন আনন্দময়, এই আনন্দের সঙ্গে জড়িয়ে আছে যিশুর শান্তির বাণী। ভ্রাতৃত্ব, ভালোবাসা, সহমর্মিতা, উদারতা, কৃতজ্ঞতা—এসব উৎকৃষ্ট মানবিক গুণ অর্জনের জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে উন্নততর মানবিক সম্পর্ক ও সমৃদ্ধতর সমাজ গড়ে তোলার আহ্বান নিয়ে আসে বড়দিন যিশু এসেছিলেন মানবজাতির ত্রাণকর্তারূপে। হিংসা, বিদ্বেষ, পঙ্কিলতার পথ থেকে মানুষকে উদ্ধার করে তিনি দেখাতে চেয়েছিলেন ভালোবাসা, করুণা, মিলন ও সুন্দরের পথ। যিশু মহামানব, তাঁর জন্মদিন শুধু খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের জন্য আনন্দবার্তা বয়ে আনেনি, পৃথিবীতে তাঁর আগমন সমগ্র মানবজাতির জন্যই আনন্দের।

সংযম-সহিষ্ণুতা, ভালোবাসা ও সেবার পথ ধরে মানুষকে সত্য ও কল্যাণের পথে আনার প্রয়াসে যিশুকে অবর্ণনীয় নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছিল। কিন্তু সত্য ও কল্যাণের পথ থেকে কোনো কিছুই তাঁকে বিচ্যুত করতে পারেনি। নিপীড়কের বিরুদ্ধে তিনি পাল্টা আঘাতের কথা বলেননি; তিনি অকাতরে ক্ষমা করেছেন, আর সমগ্র মানবজাতির হয়ে সব দুঃখযন্ত্রণা যেন একাই আত্মস্থ করতে চেয়েছেন। হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি-রক্তপাতের পৃথিবীতে যিশুর প্রদর্শিত সহনশীলতা-সহমর্মিতার পথই প্রকৃত শান্তির পথ। পাশবিকতাকে জয় করে প্রকৃত মানব হয়ে ওঠার জন্য যিশুর শিক্ষা বিরাট পাথেয়।

যিশু আশাহীন মানুষকে দিয়েছেন আশা; জীবন-সংগ্রামে পর্যুদস্ত মানুষকে জুগিয়েছেন জীবন-জয়ের অনুপ্রেরণা। যুদ্ধ ও অশান্তির বিপরীতে তিনি মানুষকে ডেকেছেন মমতা-ভালোবাসা ও মিলনের পথে। বাংলাদেশে শুভ বড়দিন অবাক হওয়ার কিছু নেই যে বাংলাদেশে বড়দিন পালিত হয় যুক্তরাষ্ট্রে চল হওয়ার আগে থেকে। ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির ভারতে আসার সূত্র ধরে প্রায় সোয়া ২০০ বছর আগে এখানে যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন ২৫ ডিসেম্বর ছুটির দিন হিসেবে উদ্যাপিত হয়। অন্যদিকে ১৮৭০ সালের ২৬ জুন ক্রিসমাসকে প্রথম ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রে।

বাংলাদেশে খ্রিস্টধর্ম নিয়ে আসে পর্তুগিজরা সেই ১৬ শতকে। প্রথম গির্জাটি তৈরি হয় ১৫৯৯ সালে, পুরাতন যশোরের কালীগঞ্জের কাছে সুন্দরবন এলাকায়। কলকাতার প্রতিষ্ঠাতা জব চার্নকই এই উপমহাদেশে প্রথম উদ্যাপন করেন এই দিবস। ১৬৬৮ সালে হিজলির পথে যাওয়ার সময় সুতানুটি গ্রামে ক্রিসমাস পালনের জন্য যাত্রাবিরতি করেন তিনি। এই অঞ্চলে ইংরেজদের সেই প্রথম বড়দিন পালন।

সেই থেকে এখানে বড়দিন পালন শুরু। বড়দিন : মহামিলনের দিবস খ্রিষ্টজন্মোৎসব (খ্রিষ্টমাস) বা বড়দিন পালিত হয় একটি শিশুর জন্মকে কেন্দ্র করে। তার জন্মের বহু আগে থেকেই প্রবক্তাগণ ভাববাণী করেছিলেন : ‘একটি ছেলে আমাদের জন্য জন্মগ্রহণ করবেন, একটি পুত্র আমাদের দেওয়া হবে। শাসন করবার ভার তার কাঁধের উপর থাকবে, আর তার নাম হবে আশ্চর্য পরামর্শদাতা, শক্তিশালী ঈশ্বর, চিরস্থায়ী পিতা, শান্তির রাজা’ (যিশা ৯:৬) । আমাদের খ্রিষ্টভক্তদের বিশ্বাস : (২৫ শে ডিসেম্বর) বেথলেহেমের গোশালায় মানুষ বেশে যিনি শিশু হয়ে জন্মেছিলেন, তিনি স্বয়ং ঈশ্বরপুত্র।

সেদিনের মহা উপাসনায় শাস্ত্রপাঠে আছে : ‘আদিতে ছিলেন বাণী : বাণী ছিলেন ঈশ্বরের সঙ্গে, বাণী ছিলেন ঈশ্বর। … তার মধ্যে ছিল জীবন; সেই জীবন ছিল মানুষের আলো’ (যোহন ১:১-৪)। বাণী বলতে স্বয়ং ঈশ্বরপুত্রকেই বোঝায়। শাস্ত্রে লেখা আছে : ‘সময় যখন পূর্ণ হলো, তখন ঈশ্বর এই পৃথিবীতে পাঠালেন তার আপন পুত্রকে; তিনি জন্ম নিলেন নারীগর্ভে, জন্ম নিলেন মোশীর বিধানের অধীন হয়ে। এমনটি ঘটেছিল, যাতে তিনি বিধানের অধীনে-পড়ে-থাকা যত মানুষের মুক্তিমূল্য দিতে পারেন যাতে আমরা হয়ে উঠতে পারি (ঈশ্বরের) দত্তক-পুত্র’ (গালা ৪:৪-৫)।

‘‘তোমরা যে সত্যিই পুত্র, তার প্রমাণ এই যে, ঈশ্বর আমাদের হৃদয়ে পাঠিয়েছেন তার পুত্রের সেই পরম আত্মাকে, যিনি ডাকতে থাকেন: ‘আব্বা! পিতা!’ তাই এখন তুমি আর দাস হয়ে নেই, তুমি পুত্র, আর পুত্রই যদি হও, তবে পুত্রের একদিন যা-কিছু পাওয়ার কথা, ঈশ্বরের অনুগ্রহে তা পাওয়ার অধিকার তোমার আছেই” (গালা ৪:৬-৭)। দীক্ষাস্নানের গুণে আমরা নবজন্ম লাভ করি এবং ঈশ্বরের সেই আত্মাকে লাভ করি বলেই আত্মিক জ্ঞানের প্রভাবে নিজেদেরকে ঈশ্বরের সন্তান বলে জানতে ও বুঝতে পারি। কাদামাটি দিয়ে তৈরি আদমের সন্তান হয়েও আমরা অনাদি, অনন্ত, অসীম ও সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে আপন ‘পিতা’ বলে উপলব্ধি করতে পারি। তখন বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে ঈশ্বরের উপস্থিতি তুমি আছ কেবলমাত্র এই তাত্ত্বিক সত্য নয় (যা এমনকি শয়তানও জানে), বরং ‘তুমি আমাতে আছ’ এই উপলব্ধিতে বিশ্বপ্রভুকে জানা, অন্তরের আত্মিক অনুভূতিতে স্রষ্টাকে জানা। ঈশ্বরে-মানুষে ও মানুষে-মানুষে মহামিলনের ডাক আমরা সাধু পলের কথা দিয়ে বুঝতে পারি : ‘তোমাদের মনোভাব তেমনটি হওয়া উচিত, যেমনটি খ্রিষ্টযিশুর নিজেরই ছিল।

তিনি নিজেকে তিনি রিক্ত করলেন; দাসের স্বরূপ গ্রহণ করে তিনি মানুষের মতো হয়েই জন্ম নিলেন। মানুষের মতো হয়ে তিনি নিজেকে আরো নমিত করলেন। চরম আনুগত্য দেখিয়ে, এমনকি ক্রুশেই মৃত্যু মেনে নিলেন। তাই ঈশ্বর তাকে সব কিছুর ওপরে উন্নীত করলেন, তাকে দিলেন সেই নাম, সকল নামের শ্রেষ্ঠ, যেন শিশুর নামে আনত হয় প্রতিটি মানুষ স্বর্গে, মর্ত্যে ও পাতালে প্রতিটি জিহ্বা যেন এই সত্য ঘোষণা করে : যিশুখ্রিষ্ট স্বয়ং প্রভু, আর এতেই যেন প্রকাশিত হয় পিতা ঈশ্বরের মহিমা’ (ফিলি ২:৫-১১)। ঈশ্বর দূর থেকে আরাধ্য নন, তিনি ভক্তি-ভালোবাসায়, প্রেম-প্রীতি ও মিলনে আরাধ্য।

‘তোমাদের মধ্যে যদি পরিবর্তন না আসে, তোমরা যদি শিশুর মতোই না হয়ে ওঠো, তাহলে তোমরা কিছুতেই স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে না। তাই যে নিজেকে এই শিশুর মতোই নম্র করে, স্বর্গরাজ্যে সেই সবচেয়ে বড়!’ (মথি ১৮:৩-৫)। শিশুরা ভেদাভেদ জানে না, বৈষম্য বোঝে না। ‘তোমরা তো আমাদের প্রভু যিশুখ্রিষ্টের দয়ার দানের কথা জান যে, তিনি নিজে ধনী হয়েও তোমাদের জন্য গরিব হলেন, যেন তার গরিব হওয়ার মধ্য দিয়ে তোমরা ধনী হতে পার। ’ (২ করি ৮:৯)।

‘অন্তরে যারা নিজেদের গরিব মনে করে তারা ধন্য’ (মথি ৫:৩)। ‘কারণ যে নিজেকে বড় করে, তাকে ছোটই করা হবে; আর যে নিজেকে ছোট করে, তাকে করা হবে বড়!’ (লুক ১৮:১৪)। ঈশ্বর সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা, অধীশ্বর এবং প্রভু হয়েও দয়ালু। তিনি মানুষের ওপর, বলপ্রয়োগ করেন না। মানুষের কাছে তার সার্বক্ষণিক আহ্বান ভালোবাসা ও মিলনের পথে।

তাই মানুষের কাছে তার সর্বশ্রেষ্ঠ আদেশ হচ্ছে, ‘সমস্ত মনপ্রাণ শক্তি দিয়ে ঈশ্বরকে ভালোবাসা এবং প্রতিবেশীকে নিজের মতোই ভালোবাসা। ’ বর্তমান বাস্তবতা : এক ও অভিন্ন সৃষ্টিকর্তা বিশ্বপ্রভুর সৃষ্ট বিশ্ব ও মানব-পরিবার আজ শতধা বিভক্ত : ধনী-গরিব, উঁচু-নিচু, শোষক-শোষিত, পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণ; প্রথম বিশ্ব-তৃতীয় বিশ্ব; পরাশক্তি- ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ ইত্যাদি। ফলে বিশ্বে বিরাজ করছে দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত, যুদ্ধ-বিগ্রহ, মারামারি, হানাহানি। যিনি ভালোবেসে নিজ প্রতিমূর্তিতে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি এরূপ বিভাজন সমর্থন করতে পারেন? নেতিবাচক এসব বাস্তবতার মূলে কি সেই ভালোবাসার অভাব নয়? মানবসমাজে আমরা যে বিশৃঙ্খলা দেখতে পাই, যেমন অস্ত্রবল ও বাহুবলের দাপট, দরিদ্র মানুষকে পুঁজি করে সুলভমূল্যে তাদের শ্রম কিনে কোটিপতি হওয়ার কলাকৌশল প্রয়োগ, নির্বোধ বিড়ালদের কষ্টার্জিত পিঠা ভাগ-বণ্টন করে দেয়ার নামে সুচতুর বানরের মতো সবটাই আত্মসাৎ করে তৃপ্তির ঢেঁকুর। ভোগলিপ্সু বিত্তবানরা অপরকে বঞ্চিত করে ক্রমাগত আরো বিত্তবান হওয়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত।

ছলেবলে কৌশলে তারা দীনদরিদ্রদেরকে অধিকারবঞ্চিত করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছে। তারা নিজেদের পরাশক্তি ভাবতে ও তদনুরূপ আচরণ করতে পছন্দ করে। আধিপত্যবাদী ও সাম্রাজ্যবাদীরা প্রতিনিয়ত প্রভাববলয় বিস্তারের কৌশল আবিষ্কারে সচেষ্ট। মানুষে-মানুষে জাতিতে-জাতিতে বিভাজন ও দ্বন্দ্ব-সংঘাত সৃষ্টি করে তারা পৈশাচিক উন্মত্ত উল্লাসে মত্ত। সরলতা, ক্ষমা, নম্রতাকে তারা মনে করে দুর্বলতা ।

মানুষের মর্যাদা : ঈশ্বর তো মানুষকে অনেক মর্যাদা দিয়ে নিজের প্রতিমূর্তিতে গড়েছেন। মানুষের প্রতি ঈশ্বরের মহানুভবতার কথা ধ্যান করে বিস্ময়াভিভূত হয়ে তাই সামরচয়িতা বলেন : তুমি মানুষকে স্বর্গদূতের চেয়ে সামান্য নিচু করেছ; রাজমুকুট হিসেবে তুমি তাকে দান করেছ গৌরব ও সম্মান। তোমার হাতে সৃষ্টির শাসনভার তুমি তারই হাতে দিয়েছ’ (সাম ৮:৪-৬)। মানুষকে ঈশ্বর অসীম মর্যাদা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। এ হচ্ছে তার নিকট স্রষ্টার দান।

এ জন্য তাকে সব সময় ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে হয়, অহঙ্কার বা আত্মশ্লাঘার কোনো সুযোগই তার নেই। মানুষ ঈশ্বরপ্রদত্ত সেই মর্যাদায় সন্তুষ্ট না থেকে অসৎ পথে ‘আরো কিছু’ হওয়ার চিন্তা করেছিল। শয়তানের প্রলোভনে পড়ে মানুষ ঈশ্বরের সমান হতে চেয়েছিল; তাই সে করেছিল অবাধ্যতার পাপ। আদিপুস্তকের রচয়িতা মানুষের পতনকে এভাবে দেখেছেন : ঈশ্বর আদম-হবাকে একটি গাছের ফল খেতে নিষেধ করেছিলেন। সৃষ্টজীবসমূহ সৃষ্টিকর্তার প্রতি আনুগত্য ও বাধ্য থাকা স্বাভাবিক।

তার বিধান মেনে চলার মধ্যেই স্বস্তি ও শান্তি। ঈশ্বরের ইচ্ছার বিরোধিতা করে মানুষ কখনো সুস্থ-স্বাভাবিক থাকতে পারে না। সসীম মরণশীল সৃষ্টজীব মানুষের জন্য স্রষ্টার বিধানের বিরোধিতা করা আত্মঘাতী। কিন্তু শয়তান মানুষকে ঈশ্বরের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করল। সর্বজ্ঞ ঈশ্বর জানেন, কিসে মানুষের মঙ্গল, আর কিসে অমঙ্গল।

তাই ঈশ্বর মানুষের জন্য বিধান দিলেন; মানুষের হৃদয়ের মধ্যেই ঈশ্বর সেই বিধান লিখে দিয়েছেন (যিরমিয় ৩১:৩১)। সেই বিধান হচ্ছে ভালোবাসার। শয়তান আজো প্রতিনিয়ত মানুষের মধ্যে প্রলোভন জাগিয়ে দেয়। এ কারণে সে ঈশ্বরের সমান হতে চায়, অসীম ক্ষমতাধর হতে চায়। ভালোবাসার বিধান লঙ্ঘন করে মানুষ প্রকৃতপক্ষে তার মনুষ্যত্ব হারায়, সে পশুতুল্য হয়ে ওঠে।

সন্ত্রাস, দুর্নীতি, ঘুষ, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, ব্যভিচার, শোষণ-নির্যাতন, শত্রুতা, ঘৃণা এসব নিন্দনীয় ও পরিত্যাজ্য। কিন্তু কোনো কোনো মহল বা শ্রেণীর মানুষ এগুলোকেই বীরত্ব বা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পন্থা হিসেবে বেছে নেয়। বড়দিন হচ্ছে মহামিলনের দিন। সব দিনের সেরা। ক্ষমা করার দিন, নম্র হওয়ার দিন।

এদিনে যে মানুষ তার অন্তরগভীরে প্রবেশ করে সেখানে বিশ্বসৃষ্টির প্রভু পরমেশ্বরের উপস্থিতিতে বিশ্বসঙ্গীতের সাথে তাল মেলাতে সক্ষম, সে-ই বড়দিনের তাৎপর্য অনুধাবন করতে এবং যার জন্মোৎসব পালিত হয় তার সাথে মিলিত হয়ে ঈশ্বরের আশিসধন্য সন্তান হিসেবে নিজের মর্যাদা আস্বাদন করতে সক্ষম। এই দিনে ভক্তি-ভালোবাসায় আপ্লুত মানুষ বুঝতে পারে, তার নিজের গর্ব করার মতো অর্জন কিছুই নেই, তার যা আছে বা সে যা-কিছু হয়েছে তার সবটাই অনুগ্রহ। ‘বাণী একদিন হলেন রক্তমাংসের মানুষ; বাস করতে লাগলেন আমাদেরই মাঝখানে। আর আমরা তার মহিমা প্রত্যক্ষ করলাম, একমাত্র পুত্র হিসেবে পিতার কাছ থেকে পাওয়া সেই যে মহিমা- ঐশ অনুগ্রহ ও সত্যের সেই যে পূর্ণতা। … সত্যিই তো আমরা সবাই তার সেই পূর্ণতা থেকে লাভবান হয়েছি : লাভ করেছি অনুগ্রহ আর অনুগ্রহ’ (যোহন ১:১৪, ১৬)।

ঈশ্বরের বিশেষ অনুগ্রহধন্য যিশুর মা কুমারী মারিয়া যিশুর দেহধারণের মর্মসত্য উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। তাই ঐশ্বরিক ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে বলতে পেরেছিলেন : ‘প্রাণ আমার পরমেশ্বরের মহিমা গায়, নাচে হৃদয় ত্রাতা প্রভুর প্রেরণায়। … যাদের মন অহঙ্কারে ভরা, তাদের তিনি চারদিকে দূর করে দিয়েছেন। সিংহাসন থেকে রাজাদের তিনি নামিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু সাধারণ লোকদের তুলে ধরেছেন’ (লুক ১:৫১-৫২)। শাস্ত্রে আরো বলা হয়েছে ; ‘ঈশ্বর উদ্ধত মানুষের বিরুদ্ধে দাঁড়ান, কিন্তু বিনম্রকে তার অনুগ্রহে ধন্য করেন’ (প্রবচন ৩:৩৪)।

তাই তোমরা এখন পরাক্রান্ত-বাহু ঈশ্বরের অধীনে নিজেদের নমিত রাখ, যাতে সময় এলেই তিনি তোমাদের উচ্চ আসনে উন্নীত করেন’ (১ পিতর ৫:৫-৬) বড়দিনে তাই ভক্তজনের হৃদয়ানুভূতি ও গভীর আকুতি হলো : আমি মিলতে চাই, সবাইকে আপন করে পেতে চাই, জানতে চাই। ‘আমি দান চাই না, আমি দাতাকেই চাই। ’ অন্য সবাই দান নিয়ে ফিরে যাক, আমি শুধু ‘ওই আসনতলের মাটির পরে লুটিয়ে রব। তোমার চরণ ধুলায় ধূসর হবো’ … কেননা ‘নিজেরে করিতে গৌরব দান নিজেরে কেবলই করি অপমান’ (রবীন্দ্রনাথ, স্বরবিতান ১৭)। বড়দিন হচ্ছে স্বর্গীয় সম্পদে, মনুষ্যত্বের মহিমায়, মিলন ও ভ্রাতৃত্বের সুষমায়, হৃদয়বৃত্তিতে সিক্ত হয়ে অনন্য বিশ্বপ্রভুর সাথে, তার সৃষ্টির সাথে, শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষের সাথে মহামিলনের দিন, নিজেকে সবার মধ্যে এবং সবাইকে নিজের মধ্যে উপলব্ধি করে সচ্চিদানন্দকে আস্বাদন করার দিন।

সবার প্রতি আনন্দময় বড়দিন ও খ্রিষ্টীয় নববর্ষের শুভেচ্ছা। সংগ্রহীত সংকলন অন্দ্রে সিফাত ফ্রান্স ২৫ ডিসেম্বর ২০১২ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।