ইতিহাসের যেমন অদ্ভূত এক মাদকতা রয়েছে, তেমনি রয়েছে আজন্ম লালিত কিছু নির্মম বাস্তবতাও। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ Hard Target, Street Fighter, Universal Soldier, Kickbox এবং সর্বশেষ The Expendables 2 ছায়াছবিতে বেলজিয়ান অভিনেতা ভ্যান ড্যামের (Jean Claude Van Damme) মারামারি যেমন মন্ত্রমুগ্ধের মতো উপভোগ করেছে, তেমনিভাবে মজা পেয়েছে Blade (I, II, III) ছবিতে মার্কিন অভিনেতা স্নাইপের (Wesley Snipes) মারামারির কলা কৌশলে। ব্যবসা সফল এসকল চলচ্চিত্রের মূলে রয়েছে এই দুই অভিনেতার ব্রাজিলিয়ান ফাইটিং স্টাইল। এই স্টাইলটির নাম কাপোয়েরা (Capoeira)।
ফুটবলের নিঃসন্দেহে ব্রাজিলিয়ানদের এক উন্মাদনার নাম।
এর পরে যে দুটি খেলা এদেশে সমধিক জনপ্রিয়তা পেয়েছে তার একটির নাম ব্রাজিলিয়ান জু-জুৎসু (Brazilian jiu-jitsu) আর অন্যটি হলো এই কাপোয়েরা। মজার ব্যাপার এই যে, ১৮৯০ সালে আইন করে কাপোয়েরা নামক এই ফাইটিং স্টাইল ব্রাজিলে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কারণ তখন কাপোয়েরাতে সিদ্ধহস্ত অনেকে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মতো কাজে এ কৌশল ব্যবহার করতো। ১৯১৮ সালে এ নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও পুনরায় এ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এ প্রশিক্ষণ শুরু হয় আরও পরে। কাপোয়েরার অন্যতম প্রধান দুটি স্টাইলের একটি হলো Capoeira Angola, যার প্রথম ধারক-বাহক ছিলেন Mestre Pastinha।
অন্য স্টাইলটির নাম Capoeira Regional, যার জনক ছিলেন Mestre Bimba। এই মিস্ট্রে বিমবা ১৯৩৭ সালে ব্রাজিলের ১ম স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট গুটুলিও ভার্গাস (Getúlio Dornelles Vargas) কে এই কৌশল দেখিয়ে মুগ্ধ করেন এবং ১৯৩৭ সালে ১ম কাপোয়েরা রিজিওনাল শেখানোর একাডেমি খোলার অনুমতি পান। মিস্ট্রে পাসটিইয়া অবশ্য তার একাডেমি খোলেন ১৯৪২ সালে।
বাজনার তালে তালে নাচের ভঙ্গিতে আত্মরক্ষার এক চমৎকার কৌশল বা মার্শাল আর্টের নাম কাপোয়েরা। এই স্টাইলের প্রবাদ পুরুষ Mestre Acordeon এর মতে কাপোয়েরা হলো, “A dance like a fight, a fight like a dance, a song... a way of life”।
এটি মূলত অ্যাফ্রো-ব্রাজিলিয়ান মার্শাল আর্ট যা বর্তমানে ব্রাজিলের সংস্কৃতির একটি অন্যতম আকর্ষণ ও একটি জাতীয় খেলা। ইতিহাস বলে যে, এটিও ব্রাজিলের অন্যান্য অনেক সংস্কৃতির মতো ধার করা একটি সংস্কৃতি যা কালের বিবর্তনে ব্রাজিলের মূল সংস্কৃতির ধারায় মিশে গেছে।
কাপোয়েরা শব্দটির ব্রাজিলের আদিবাসী ইন্ডিয়ানদের Tupi-Guarani নামক ভাষা থেকে আগত যার অর্থ “wild grass cut short”। ব্রাজিলের ইতিহাস ৮০০০ বছরের পুরোনো হলেও পর্তুগীজ কূটনীতিক Pedro Alvares Cabal ১৫০০ সালে ব্রাজিলের বাহিয়া (Bahia) স্টেটের পোর্তো সিগুরো (Porto Seguro) শহরে পৌঁছান এবং “আনুষ্ঠানিকভাবে” ব্রাজিল “আবিস্কার” করেন। এসময় থেকে ১৮২২ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩২২ বছর ব্রাজিল পর্তুগালের কলোনি ছিল।
ছোট দেশ হওয়ায় ব্রাজিলে কাজ করানোর জন্য পর্তুগীজরা আফ্রিকা মহাদেশ হতে ক্রীতদাস আমদানি করতো। পরে অবশ্য ১৮৮৮ সালে ব্রাজিলের শেষ সম্রাট ২য় পেড্রোর (Pedro II) এর কন্যা প্রিন্সেস ইসাবেল (Dona Isabel) এর উদ্যোগে Golden Law এর মাধ্যমে ১৮৯০ সালে এদেশ হতে দাসপ্রথা চিরতরে দূর হয়। সে যাই হোক, পর্তুগীজরা অ্যাঙ্গোলা, মোজাম্বিক ও কঙ্গো হতে এদেশে যে সকল দাস এনেছিল তাদেরই হাত ধরে ব্রাজিলে কাপোয়েরার অনুপ্রবেশ ঘটেছিল। আর কালের স্রোতে সেটি পরে মিশে যায় ব্রাজিলের মূল সাংস্কৃতিক ধারায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।