পরাধীন দেশের বীর অনেক সময় স্বাধীন দেশে সাহসী থাকে না বা থাকতে পারে না। কোনো রকম ধিক ধিক বেঁচে থাকা কেউ আত্দমর্যাদার জন্য জীবন বাজি রাখে না। স্বাধীনতার পর যাদের বাপ-চাচারা দয়ার জন্য হাত কচলাতো তারা আজ রথি-মহারথি। লম্বা জীবন যেমন আনন্দের, তেমনি বেদনারও বটে। চোখে দেখা জিনিসগুলো যখন বদলে যাচ্ছে, অনেক পেছনের লোকগুলো যখন সামনে এসে নতুন নতুন ইতিহাস রচনায় ব্যস্ত তখন বিরক্ত না হয়ে পারা যায় না।
যতক্ষণ সম্মানের সঙ্গে বাঁচা যায় ততক্ষণই সম্মানীদের বাঁচা উচিত। কিন্তু হায়াত-মওত, মান-সম্মান, সব আল্লাহর হাতে। অকারণ আত্দবিসর্জন তিনি যেমন অপছন্দ করেন ঠিক তেমনি তাঁর রাস্তায় মানব কল্যাণে জীবনদানকারীকে ততোধিক ভালোবাসেন। কেউ যখন নিজের জন্য কাঁদে আল্লাহ হাসেন, আর কেউ অন্যের জন্য কাঁদলে আল্লাহ বিব্রত হন তার প্রতিকারের জন্য। সারা জীবন চেষ্টা করেছি মানুষের কাজে লাগতে, কতটা পেরেছি হিসাব করিনি।
কাজ করা আমার কাজ, ফলাফল নির্ণয় বা পুরস্কার সে তো জগৎ স্রষ্টা পরম প্রভু আল্লাহর কাজ। তবু চোখের সামনে যখন অহেতুক সত্যকে অসত্যে রূপ দেওয়ার প্রয়াস দেখি মন অশান্ত না হয়ে পারে না।
মার্চ বাঙালি জাতির এক অবিস্মরণীয় সংগ্রামের মাস। মার্চেই আমাদের স্বাধীনতা ঘোষণা এবং রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল। কত আত্দদানে আমাদের স্বাধীনতা সেসব এখন অনেকে স্বীকার করতেও নারাজ।
সবার মুখে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা, কিন্তু কেউ মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করে না, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ও ভালোবাসে না। তাদের নিয়ে বাণিজ্য করে, সত্যকে বিকৃতি করে। যুদ্ধের সময় কোথায় ছিল কেউ জানে না তারাই আজ বড় বড় যোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের নেতা, তারাই আজকাল শিশুদের মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনায়। গল্প কাহিনী আর কড়কড়ে বাস্তব যে এক নয় তা তারা বুঝতে চায় না। মুক্তিযুদ্ধের হৃদয় নিংড়ানো রক্তক্ষরণ নিয়ে কেউ যখন তামাশার মতো গল্প করে তখন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের অবশ্যই মরে যেতে ইচ্ছে করে।
আজ ক'দিন ৭ মার্চের ভাষণ শুনছি। এ ভাষণটি নিজ কানে, তারপর রেডিওতে যুদ্ধ করতে করতে কতবার খণ্ডাংশ শুনেছি। শুনে শুনে হানাদারদের মোকাবিলায় দেহমনে জ্বালা ধরে যেত। যা স্বাধীন দেশে হীনবল কারও পক্ষে অনুভব করা সম্ভব নয়।
কেউ কেউ আমেরিকার পিতা আব্রাহাম লিংকনের গ্যাটিসবার্গের ভাষণের সঙ্গে তুলনা করেন।
আব্রাহাম লিংকনের সে ভাষণ ছিল যুদ্ধ শেষে নিরাপদ পরিবেশে। আর বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ছিল এক না জানা সর্বনাশা উৎকণ্ঠার মাঝে। তবে ১০ জানুয়ারির ভাষণকে গ্যাটিসবার্গের ভাষণের সঙ্গে তুলনা করলে খুব একটা অসংগতি খুঁজে পাওয়া যাবে না। মনে হয় একমাত্র পরাধীন দেশেই যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধারা কিছুটা স্বাধীন। স্বাধীন দেশে কোনো মুক্তিযোদ্ধা স্বাধীন নয়।
পৃথিবীর বহু দেশে বিপ্লবীদের প্রতি বিপ্লবীরা হত্যা করে নিশ্চিহ্ন করেছে। ভিয়েতনাম, কিউবা ছাড়া লাউস, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া আরও কত দেশে। আলজেরিয়ার পিতা আহমেদ বেনবেল্লাকে উৎখাত করে ক্ষমতায় এসেছিলেন হু আর ই বুমেদীন, ইন্দোনেশিয়ার পিতা সুকর্ণকে সরিয়ে হাজি মোহাম্মদ সুহার্ত- এরকম কত নজির পড়ে আছে। স্বাধীনতার পর ক্ষমতার হাত বদলে মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে ধরে যে জবাই করা হয়নি সে জন্য আল্লাহকে শুকরিয়া জানানো উচিত। কিন্তু গ্রামগঞ্জের অবহেলিত মুক্তিযোদ্ধারা এসব ক্ষমতার অদল-বদল বুঝতে চায় না, বুঝেও না।
যদি বিপ্লবী দলের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো, যারা স্বাধীনতা অর্জন করেছিল তারা ক্ষমতা হারালে একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত। আজ আওয়ামী লীগাররা অতীত স্বীকার করতে চায় না। কাকের মতো ঠোঁট পুছে অস্বীকার করে। কিন্তু তবু এটাই সত্য, আমরা '৭৫-এ ওইভাবে প্রতিরোধ গড়ে না তুললে আওয়ামী লীগের অনেক বড় বড় নেতা তখনই কবরে যেত।
আওয়ামী লীগ কোনো সশস্ত্র ক্যাডার ভিত্তিক দল না।
যে যাই বলুন আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগের ১০ জনের কাছেও বৈধ অবৈধ কোনো অস্ত্র ছিল না। নিউক্লিয়াসই বলুন বা অন্য কিছু, চিন্তা থাকতে পারে কিন্তু কোনো প্রস্তুতি ছিল না। '৭০-এর নির্বাচনে বাঙালিরা এক হয়ে গেলে পশ্চিমারা দারুণ বেকায়দায় পড়ে। বঙ্গবন্ধু দেশের মানুষের হৃদয় স্পর্শ করেছিলেন কিন্তু তার কোনো সশস্ত্র সংগঠন ছিল না। তার রাজনৈতিক সংগঠন ছিল, জনপ্রিয়তা ছিল।
ছাত্র-যুবক বক্তা ছিল তার দলে রেকর্ড করার মতো। আওয়ামী ঘরানার নেতাকর্মীদের বক্তৃতা শুনলে মরা মানুষ তাজা হয়ে যেত। খুব দ্রুত পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে। নিরস্ত্র আন্দোলন সশস্ত্র রূপ নেয়। 'বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো বাংলাদেশ স্বাধীন করো' মুখে বললেই হয় না।
অস্ত্র ধরতে একটা সময় লাগে, মানসিক প্রস্তুতি ও কলাকৌশল রপ্ত করতে হয়। বাঙালিরা মানসিক প্রস্তুতি নেওয়ারই সুযোগ পায়নি, অস্ত্র ধরার কৌশল জানবে কি করে? এরকম অবস্থায় একটার পর একটা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ। সেদিন এক অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠানে বসেছিলাম। প্রধান কর্মকর্তার সঙ্গে শ্রমিক নেতাদের ঔদ্ধত্য দেখে বিস্মিত হয়েছি। প্রয়োজন ছাড়াই স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলক, ইশতেহার পাঠ নিয়ে যে তাচ্ছিল্যের অবতারণা করলেন দেখে শুনে বিরক্তিতে মন ভরে গিয়েছিল।
একটা ছাড়া অন্যটা যে অধরা হঠাৎ বাবুরা তা বুঝতে চায় না। সব কৃতিত্ব শুধু বঙ্গবন্ধুকে দিয়ে তাকে যে বড় নয় বরং ছোট করা হয়। তেমনি আবার যারা এখন বড় বড় নেতা তারা বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করে নিজেদেরই বরং অস্বীকার করেন। এখন যাদের হাতে কর্তৃত্ব নেতৃত্ব তাদের অস্বীকার করে যেমন চলে না, ঠিক তেমনি মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধুর কথা ছাড়া গাছের পাতা পড়ত না। পদ্মা-মেঘনা-যমুনার পানি বইতেও অনুমতির অপেক্ষা করত।
কারণ তিনি তখন বাংলার হৃদস্পন্দনে পরিণত হয়েছিলেন। আজ আওয়ামী ঘরানার বন্ধুরা মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানকে অস্বীকার করে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হন, ঠিক তেমনি তথাকথিত জিয়া প্রেমিকরা বঙ্গবন্ধুকে আড়াল করতে গিয়ে নিদারুণ ক্ষতিগ্রস্ত হন। যে জাতি মাতৃভাষার জন্য জীবন দিয়েছে এখন সেই দেশে ধনী লোকের ঘরে অনেকেই বাংলা জানে না। মায়ের পেট থেকে পড়েই শুরু করে ইংরেজি। অথচ সেইসব বিএনপির সমর্থকরা জিয়াউর রহমানের ঘোষণার অর্থ বুঝে না তাই বা মানি কি করে? জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম বেতারে কি বলেছিলেন? বলেছিলেন, “I Mejar Zia, do hearby declear independence of Bangladesh on behalf of our great national leader Bangabandu Sheikh Mujibur Rahaman.” মেজর জিয়া শুধু বলতে পারতেন, “I Mejar Zia do hearby declear independence of Bangladesh.” অমন বললে কাজ হতো না।
দেশি বিদেশিদের কাছে গ্রহণযোগ্য হতো না। তিনি আরেকটু যোগ করতে পারতেন, “Do hearby decleare independence of Bangladesh on behalf of Sheikh Mujibur Rahaman” অথবা “Bangabandu Sheikh Mujibur Rahaman” কেন তিনি বলতে গেলেন Our great national leader? তখন বঙ্গবন্ধুর ওরকম উচ্চতাই ছিল। বঙ্গবন্ধু দেশের পিতা, স্বাধীনতার পিতা। সে সময় সব কর্মকাণ্ডের আধার ছিলেন তিনি। তাকে অবলম্বন করেই আমরা অগ্রসর হয়েছিলাম।
যদি জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে কর্তৃত্বে প্রকৃতই যুদ্ধ হতো তাহলে পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রধান হতেন জিয়াউর রহমান, বঙ্গবন্ধু না। মুজিবনগর না হয়ে জিয়ানগর সরকার হতো। বঙ্গবন্ধুর সরকার জিয়াউর রহমানকে বা আমাদের খেতাব দিতেন না বা দিতে পারতেন না। আমরাই তাকে বা তার নেতাদের খেতাব দিতাম। এখন অনেকে অনেক বড় বড় নেতা হলেও তখন সবাই ছিলাম ছোট।
একমাত্র বঙ্গবন্ধুই ছিলেন হিমালয়ের চূড়ার থেকেও উপরে_ এ সত্যকে যতদিন না অকপটে মানতে পারব ততদিন প্রতি পদে পদে কলঙ্কিত হব, ক্ষতিগ্রস্ত হবে মুক্তিযুদ্ধ-মুক্তিযোদ্ধা। সার্বিক অর্থে সব জাতি। পিতৃপরিচয়হীন বিশুদ্ধ জন্মের ইতিহাস কখনো রচনা করা যায় না। কোনো কোনো পণ্ডিতরা এখন বলার চেষ্টা করেন বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা না করে ভুল করেছেন। তারা হয়তো এও বলবেন, আসম আবদুর রব বাংলাদেশের পতাকা তুলে অন্যায় করেছেন, শাজাহান সিরাজের ইশতেহার পাঠ উচিত হয়নি।
আচ্ছা, ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু যদি স্বাধীনতার ঘোষণা দিতেন তাহলে কি হতে পারত? পাকিস্তান সেনাবাহিনী সঙ্গে সঙ্গে মাথা নুইয়ে অস্ত্র ছেড়ে দিত? যদি না দিত তাহলে তাদের মাথা আমরা কে নুইয়ে দিতাম? সে সময় বাঙালি সৈন্যের সংখ্যা ছিল বড়জোর চার-সাড়ে চার হাজার। তার আড়াই-তিন হাজার ছিল পূর্ব পাকিস্তানে, বাকিরা পশ্চিম পাকিস্তানে। কেউ জোর দিয়ে বলতে পারেন বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করলে ৫ জন বাঙালি সৈন্য তার হুকুমে হীনবল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে অকেজো করতে ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও করত? জনাব জিয়াউর রহমান বীরউত্তম মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে ছিলেন ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে সোয়াদ জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাসের চেষ্টায় জনগণের বাধা পেয়ে। ৭ মার্চ কি তিনি বাঙালির পক্ষে দাঁড়াতেন বা দাঁড়াতে পারতেন? চট্টগ্রামে ইপিআরের ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলাম বীরউত্তমের ভূমিকা অসাধারণ। তিনি ২২-২৩ মার্চ পর্যন্ত নির্বিবাদে পাকিস্তানের হুকুম মেনেছেন, সরকারের অনুগত ছিলেন।
জয়দেবপুরে দ্বিতীয় বেঙ্গল ১৯ মার্চ ব্রিগেডিয়ার জাহানজেব আরবার যখন জয়দেবপুর গিয়েছিলেন তখনো তার দলকে জনতার অবরোধমুক্ত করতে গুলি চালিয়েছিল। ২৮ মার্চের আগে জয়দেবপুরের দ্বিতীয় বেঙ্গল রাস্তায় নামেনি। এত কিছুর পরও মুক্তিযুদ্ধে সব বাঙালি মিলিটারি, ইপিআর, পুলিশ, আনসার অংশ নেয়নি। তারা যেমন মুক্তিযুদ্ধে ছিল, তেমনি পাকিস্তানের সঙ্গেও ছিল। সেটা সামরিক-বেসামরিক উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
পরে যাদের জন্ম, যারা মহাপণ্ডিত, তারা বলতেই পারেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২০-২৫ লাখ জনতার সমাবেশে বঙ্গবন্ধু যদি বলতেন এই মুহূর্ত থেকে আমরা স্বাধীন। আমি আনন্দের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি। উপরে থাকা হেলিকপ্টার থেকে বোম্বিং করলে, মেশিনগানে স্ট্রেপিং করলে সেটা কে ফিরাত? একমাত্র উন্মাদ ছাড়া সশস্ত্র শত্রু অধ্যুষিত স্থানে নিরস্ত্র অবস্থায় কেউ স্বাধীনতা ঘোষণা করে না। করলে সারা পৃথিবী যে তাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী বলত সেটা ঠেকাত কি করে? ৭ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পশ্চিম পাকিস্তান থেকে কত সৈন্য কত অস্ত্র এসেছিল।
পাকিস্তানিরা যেমন সময় নিচ্ছিল প্রস্তুতি নেওয়ার, আমরা কি বসে বসে আঙ্গুল চুষছিলাম? আমরাও তো ঘরে ঘরে প্রস্তুত হচ্ছিলাম। যে কারণে সম্পূর্ণ বাংলাদেশ কখনো হানাদার পাকিস্তানিরা দখল করতে পারেনি। ওভাবে জাতিকে ধীরে ধীরে প্রস্তুত না করলে কোনোভাবেই হানাদারদের পরাজিত করা যেত না। প্রায় এক কোটি শরণার্থী ভারতে না গেলে ভারত কি খুব সহজে আমাদের পাশে দাঁড়াত? মুক্তিযুদ্ধে আমাদের সহযোগিতায় অসংখ্য কারণ থাকতে পারে। কিন্তু এক কোটি শরণার্থীর বোঝাও একটা প্রধান কারণ।
কামানের গোলার চেয়ে একজন শরণার্থীর বোঝা ছিল ভারতের জন্য বেশি কঠিন। কেউ কেউ বলতে দ্বিধা করেন না, বঙ্গবন্ধু ইচ্ছা করে পাকিস্তানের কাছে আত্দসমর্পণ করেছিলেন। করতেই পারেন। তিনি ধরা না পড়ে বা ধরা না দিয়ে আত্দগোপন করলে কতটা কি লাভ হতো? তিনি বাংলাদেশের কোথাও নিরাপদে থেকে যুদ্ধ চালাতে পারতেন? ওই সময় তার মতো নেতার বাংলাদেশের কোথাও আত্দগোপন করে থাকার কোনো উপায় ছিল? আর তিনি কোথায় আছেন তা জানা গেলে বোমা মেরে তামা করে দিতে পাকিস্তানিদের কোথাও বাধত? টিক্কা তো বলেই দিয়েছিল, 'হামে বঙ্গাল মল্লুককা আদমি নেহি, মিট্টি চাহিয়ে'। আর যদি তিনি আত্দগোপন করে থাকতেন, ভারতের আশ্রয়ে আছেন বলে পাকিস্তানিরা চালিয়ে দিতে পারলে আমাদের লড়াই করার শক্তি কমে যেত না? বিশ্ববাসী অতটা সহানুভূতি দেখাতে পারত? পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী বঙ্গবন্ধু ছিলেন প্রতিটি বাঙালির নিজের জীবনের চেয়েও প্রিয়।
'মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি' যখন শোনতাম তখন মনে হতো একটি ফুল মানে স্বাধীনতা, বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। প্রথম প্রথম অংশুমান রায় গাইছিলেন, 'শোন একটি মজিবরের থেকে লক্ষ মজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি প্রতিধ্বনি, আকাশে বাতাসে উঠে রনি'। প্রচার হচ্ছিল ওটা ভারতের কারসাজি। কিন্তু যখন আবদুল জব্বার গাইতে শুরু করলেন, 'সালাম সালাম হাজার সালাম', আপেল মাহমুদের 'মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যু্দ্ধ করি', রথিন্দ্র লাল রায়ের 'বগিলারে...' তখন হানাদারদের অনেক প্রপাগান্ডাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। (চলবে)
লেখক : রাজনীতিক
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।