পাণ্ডা বলতেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে সাদা কালোর মিশেলে প্রকৃতির এক অপূর্ব সৃষ্টিকে। ভালুক গোত্রের এই নির্বিবাদী শান্তশিষ্ট প্রাণীটি কিন্তু নিজ গোত্রের অন্য প্রাণীদের মতই শক্তিধর, কিন্তু অহিংস নিরামিষাশী (বাঁশখেকো) পাণ্ডাদের শক্তির প্রকাশ দেখা যায় না বললেই চলে। এহেন এক নাদুস-নুদুস প্রাণীকে নিয়ে একটি তুমুল এ্যকশন ভিত্তিক ‘কুংফু’ চরিত্রে উপস্থাপনের আইডিয়াতে চোখ কপালে উঠেছিলো তাই অনেকের। শেষ পর্যন্ত অনেক জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ২০০৮ সালে বিশ্বখ্যাত এয়ানিমেশন কোম্পানি ড্রিমওয়ার্কস এর ব্যনারে হলিউডে জয়যাত্রা শুরু হয় এক আজব পাণ্ডা ‘পো’ এর। ‘কুংফু পাণ্ডা’ নামের এ্যনিমেটেড মুভিটি সে বছর অভাবনীয় ব্যবসায়ীক সাফল্যের পাশাপাশি জিতে নেয় ‘এ্যনিমেটেড মুভি সেকশনে’ সেবছরের অনেকগুলো চলচিত্র সম্মাননা পুরষ্কার।
‘একাডেমি এওয়ার্ড’ এ নমিনেটেড হয়েও ফসকে যায় সর্বকালের সেরা এনিমেশন চলচিত্রের একটি- ‘Wall-E’ এর কাছে। তবে সবচাইতে সফলভাবে এ মুভিটি যা পেরেছিলো তা হচ্ছে- দর্শকদের হৃদয় জয়। ফলশ্রুতিতে ২০১১ সালে মুভি ভেঞ্চারটি থেকে আসে পরবর্তী সিক্যুয়াল- ‘কুংফু পাণ্ডা- ২’। বলা বাহুল্য হাসিখুসি এ পাণ্ডা ধুন্ধুমার একশনে আবারো জিতে নিলো দর্শকদের মন আর বক্স অফিসের শীর্ষস্থান।
লণ্ডনভিত্তিক শিশুতোষ টিভি চ্যানেল ‘নিকোলোডিয়ান’ ভালোভাবেই বুঝতে পারছিলো মুভিতে পো’ আর তার সংগীদেরকে দেখা ঘণ্টাখানেকে পোষাচ্ছেনা দর্শকদের।
তাই ড্রিমওয়ার্কসের সাথে মিলে তারা তৈরী করে এক এ্যনিমেটেড টিভি সিরিজের। ২০১১ সালের নভেম্বরে নিকোলোডিয়ানেই প্রচার শুরু হয় ‘কুং ফু পাণ্ডা- দ্যা লিজেন্ডস অফ অসামনেস’ নামে একটি নতুন এ্যনিমেশন সিরিজের। এ সিরিজটি কুংফু পাণ্ডা মুভি সিরিজের প্রথম মুভিটির পরবর্তী সময়কালের উপর ভিত্তি করেই তৈরী হয়েছে।
ড্রাগন ওয়ারিয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়ে ভয়ংকর সব বিপদ থেকে চীনকে আর কুংফু’কে সুরক্ষা দিয়ে চলা পো এখন আরো প্রশিক্ষিত (!)। জেড প্যালেসে গুরু ‘মাস্টার শি-ফু’র তত্ত্বাবধায়নে প্রশিক্ষণ নিতে থাকে সে এবং তার বন্ধুরা।
ঠিক ধরেছেন তারা- মুভিতে দেখা সেই অসম সাহসী যোদ্ধারা; গোটা চীন যাদের একনামে চেনে- ‘ফিউরিয়াস ফাইভ’। লৌহ কঠিন থাবার অধিকারী, একটু রসকষহীন, কর্মঠ ও একনিষ্ঠ কুংফু-সাধক বাঘিনী ‘টাইগ্রেস’। আছেন রসিকরাজ ও কৌশলী বানর ‘মাঙ্কি’। কুংফু সবার জন্য এই মন্ত্রে উজ্জীবিত ঘাসফড়িং- ‘ম্যান্টেস’। পরিপাটি সারস ‘ক্রেইন’ কুংফুকে আয়ত্ব করে চলেছে আকাশে ওড়ার সুবিধার সাথে সমন্বয় করে।
আর আছে তীব্র গতিসম্পন্ন বাহারী রঙ্গে রঙ্গীন সাপ ভাইপার। জেড প্যালেসের এই অধিবাসীদের কাজ কেবল কুংফু অনুশীলনই নয় বরং জেড প্যালেসের সংলগ্ন উপতক্যায় থাকা ছিমছাম ছোট্ট গ্রাম ‘ভ্যালি অফ পিস’ এর সুরক্ষাও।
এ ছিমছাম জীবনের মাঝে প্রায়ই উদয় হয় নানা রকম খল আর ছল চরিত্রের। এদের এক এক জনের উদ্দেশ্য আবার এক এক রকম। কারো লক্ষ্য কুংফু-কে পরাজিত করে বিলুপ্ত করা, কারো আশা জেড প্যালেস দখলের, কেউবা পো কিংবা তার সংগীদের সাথে পুরোনো শত্রুতার বশে জড়িয়ে পরে যুদ্ধে।
আর ‘ভ্যালি অফ পিস’ এ গুণ্ডামী/ডাকাতি করতে আসা অপরাধীদের সাথে নিয়মিত সংঘর্ষতো আছেই। কুংফু পাণ্ডার এই সিরিজের খুব আকর্ষণীয় অংশ কিন্তু এই ভিলেনরা। সময়ের মোটা দাগের বাধ্যবাধকতা না থাকাতে অধিকাংশ চরিত্রগুলোর পেছনের কাহিনী উপস্থাপিত হয়েছে বেশ যত্ন নিয়ে।
মূল চরিত্রগুলোর মধ্যে ‘পো’ এর ব্যপারে মুভিগুলোতে অনেক কিছু জানা গেলেও তাতে বাকী চরিত্রগুলোর সাথে দর্শকদের পরিচয় করিয়ে দেবার সুযোগ ছিলো না নির্মাতাদের। সেই কৌতুহল ধীরে ধীরে ভালোভাবেই মিটিয়ে চলেছে এই এ্যনিমেটেড সিরিজটি।
সিরিজটির গঠনশৈলী মূলত একক পর্ব (সিংগুলার এপিসোড) ভিত্তিক। অর্থাৎ অধিকাংশ পর্বেই একটি নির্দিষ্ট গল্প উপস্থাপন করে তার সমাপ্তি টানা হয়। এটির উৎপত্তি যেহেতু শিশুদের জন্যই তাই সারল্য ধরে রাখতে ধারাবাহিক ঘটনাভিত্তিক পর্বসমষ্টি (যেখানে একসুতোয় অনেকগুলো ঘটনা গেঁথে একটা বড় গল্প এগিয়ে যায়) নেই বললেই চলে। তাই কখনো সুযোগ পেলে মাঝখান থেকে কোন একটি পর্ব দেখে ফেললেও কোন স্পয়লারের আশংকা নেই।
‘লিজেণ্ড অফ অসামনেস’ সিরিজটি ‘কুংফু পাণ্ডা’র প্রথম মুভির মতই এ্যনিমেশনে তৈরি করা।
ঝকঝকে পিকচার কোয়ালিটিতে (ছবি মান !?) বানানো সিরিজটির চরিত্রগুলো তাই হাল আমলের অনেক উদ্ভট এনিমেশন সিরিজের তুলনায় অনেকটা বাস্তবসম্মত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ, তাই দেখার অভিজ্ঞতাও আরামদায়ক।
হাসি, ঠাট্টা, বন্ধুত্ব, ভালোবাসা, আনন্দ, দুঃখ আর দৃষ্টিনন্দন এ্যকশন (মারামারি!?!) সবকিছু মিলিয়ে সিরিজতার নির্মান হলেও প্রতিটা এপিসোডেই রয়েছে শিক্ষামূলক কিছু না কিছু। আর আমার কাছে মনে হয় কোন কিছু শিখতে গেলে তা আনন্দের মাধ্যমে শেখার চেয়ে ভালো কোন উপায় নেই।
তাই দেখুন-হাসুন-উপভোগ করুন ‘কুংফু পাণ্ডা- দ্যা লিজেণ্ডস অফ অসামনেস’। দেখতে দিন আপনার প্রিয়মানুষদের।
আনন্দে শিখুন- শেখান।
জয় তু- কুংফু!
---- মনজুর এলাহী ----
(ছবি কৃতজ্ঞতা- http://www.superbwallpapers.com)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।