জীবনের আলো - অনেকটা বদলে গেছে - হারিয়ে নিজেকে ...
তখন প্রায় সন্ধা ৭ টা বাজে। হয়তবা পুরোপুরি ৭ টা হবে না, পৌনে সাতটা হবে। আমি পুকুর পাড়ের পাশ দিয়ে হাটছিলাম। সন্ধা সন্ধা ভাব, পুব আকাশে সুর্য তলিয়ে গিয়েছে রাতকে জাগিয়ে তুলতে। আকাশে হলুদ আভা জানান দিচ্ছে জীবন থেকে আরেকটি দিনের সমাপ্তিকতাকে।
হটাৎ করেই আমার কান ভেদ করে বাতাসে সেই কথা গুলো সুর হয়ে ভেসে আসতে লাগলো। " সাফিন !! বলো, আই লাভ ইউ..." সাফিন ও তোমার সাথে সাথে অনুকরন করে আই লাভ ইউ বলতে লাগলো। প্রথমদিকেই আমার এন্টনা খাড়া হয়ে তোমার নেটওয়ার্ট পাকরাও করলো। তবে কি এই ক্যারেন্ট বিহীন সন্ধে বেলায় কথা গুলো আমার উদ্দেশ্যে বলছো। সারাগায়ে হীম শীতল হাওয়া বয়ে গেলো।
আশে পাশে তাকিয়ে দেখলাম অন্য কেউ আছে কিনা? কিন্তু না এমন কেউ নেই যাকে এ কথা তুমি বলতে পারো একমাত্র আমি ছাড়া। এসব কিছু বুজে উৎতে আমার একটু সময় লাগে। ততক্ষনে রাত সন্ধে তারা আকাশে উকি মারছে। আমি দোতলার বারান্দার দিকে তাকালাম। অনেক গুলো গলার স্বর শুনতে পেলেও কারউ চেহারা দেখতে পেলাম না।
তবে বুজলাম ওখানে রুপা আপা, রুনা আপা, তোমার মা, চাচী সবাই আছেন। আর তুমি তাদের মাঝে বসেই আমাকে নেটওয়ার্ক দিচ্ছো।
কিন্তু কেন যেন আমার বিশ্বাস হলো না। মনে হল আমি একটু বেশী বেশীই ভাবছি। হয়ত সাফিনের সাথে মজা করছে তাই বলে তোমার মত সুন্দরী আমাকে তার জীবনে যায়গা দিবে আমি ভাবতেও পারছিলাম না।
মন খারাপ করেই কথা গুলোকে ভুলে যাবার চেস্টা করলাম। কারেন্ট চলে আসার পরে অবশ্য তোমাকে এক ঝলক দেখেছিলাম ঐ বারান্দাতেই। আমার দিকে তাকিয়ে মুখ বাকিয়ে চলে গেলে। সারারাত ঘুম হলনা । আমি শুধু ভাবছিলাম।
পরদিন সকালে দাড়িয়ে আছি তোমার স্কুলের সামনে। এটা আমার জীবনে প্রথম। এর আগে কখনও এমন করে কোন গার্লস স্কুলের সামনে দাড়ানোর এক্সপেরিয়েন্স ছিলো না। তাই ইতস্তত বোধকরছিলাম। এদিকে তোমার স্কুলের লাল বান্দর খেতাব পাওয়া মাইয়াগুলোয় আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে কি যেন ভাবছিলো।
দুই একটা বদ মেয়ে উপর থেকে ডাক দেয়। এর মধ্যে একটা ঘটনা ঘটে গেছে। দুই তলা থেকে ২-৩ জন মেয়ের দল আমাকে একটা ইট ছুড়ে ছুরে মারে। আমি তো পুরাই অবাক। এখানে এসে এমন পরিস্তিতিতে পরতে হবে বুজতে পারি নাই।
আমি তো শুধু এসেছি ঐ একটা মেয়ের জন্য যাকে আমি কাল রাতের ব্যাপারটি নিয়ে শুধুমাত্র একটাই প্রশ্ন করতে চাই। ব্যাস। আর কিছুনা। যদি উত্তর না হয় চলে যাবো। আর কখনোও তার সামনে আসবো না।
কিন্তু কথা হলো তাকে বলবো কি করে? আর বলেই কি সে আমার সাথে কথা বলবে। আবার কথা বল্লেই কি সঠিক এনসার দিবে তারি বা কি গারান্টি আছে। এসব ভাবতে ভাবতে হটাৎ করেই স্কুলের ভেতর থেকে বাইরে মেয়েরা বের হয়ে আসতে শুরু করলো। সবাই যেভাবে আমার দিকে তাকাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে কোন চিড়িয়া খানার নতুন মডেলের বান্দর হিসেবে আমাকে দেখা যাচ্ছে।
এদিকে আমি তো চিন্তায় মরে যাচ্চি।
তুমি যদি আমাকে দেখে অন্য কিছু মনে করে বাসায় গিয়ে তোমার মাকে বলে দাও তাহলে তো আমি শ্যাষ। যাইহোক মনে সাহস রাখা লাগবে। আজকে যদি বার্থ্য হই সারা জীবন পস্তাতে হবে। কিন্তু তোমাকে কাছে ডাকবই বা কিভাবে। যদি তুমি চিৎকার দাও বা তোমার মা যদি তোমাকে নিতে আসে।
এসব ভাবতে ভাবতেই দেখলাম একটা বিশাল বন্যা। আরে এ বন্যা পানির বন্যা না , সুন্দরি রুপসি ললনাদের বন্যা। সেই বয়সে তো রংয়িন চশমায় মুগ্ধ নয়নে পরীদের ললনাই লাগে। হটাৎ করেই আমার ভাগ্নিকে দেখলাম। আরে ওর কথাতো আমার মনেই ছিলো না।
তোমার মানে তোমারি ক্লাশ ফ্রেন্ড মানে একি ক্লাশে। আমাকে দেখে বিশাল রাগ নিয়ে এগিয়ে এসে বল্লো মামা তোমাকে রিমু না মুরগী চোর বলেছে। বারান্দা দিয়ে তোমাকে দেখে এসব বলে আমাকে ক্ষেপাচ্ছে, আর তুমি এখানে এসেছো কেন?
আমি তো ওর কথা শুনে হতবাক। এখণ আমি কি বলবো। বুজতে পারলাম যে আমার এখনে দাড়ানোটা এভাবেই আমার নিজের ভাগনি ভালো করে দেখছে না, তাহলে তুমি? আত্মা শুকিয়ে গেলো।
এমনিতেই র্যাবের যা দৌড় ঝাপ দেখছি আজকে না প্যাদানি খেতে হয়। ভাগ্নিকে রিকশায় তুলে দিয়ে কেবল গেটের দিকে তাকিয়েছি। দেখি লম্বা মেয়েটি গেট থেকে বার হচ্ছে। আমার হার্টবিট ১০৫০ হয়ে গেলো। এই সেই মুহুর্ত ধীরে ধীরে কাছে আসছে।
কিন্তু বিপত্তি ঘটলো যে তুমি তো আমাকে বারান্দা থেকে দেখেছো। তাহলে আমার দিকে আসতে এত দেরি করছো যে। তার মানে কি ? মাথা ঘুরছে। মনে হল চশমার ফাক দিয়ে তুমি আমাকে দেখেছিলে। সেজন্যে ঠিক আমি যেখানে দাড়িয়ে আছি তার অপজিটে তুমি এসে দাড়ালে।
কাধে ব্যাগ, চোখে চশমা, ঠিক যেন সুন্দর একটা ফুটফুটে লাল বান্দর। তুমি রাস্তার ওপাশে আর আমি এপাশে আর মাঝখানে নদী ঐ (থুক্কু রিকশা) বয়ে চলে যায়। এত রক্সা যাচ্ছে যে তুমি এ পাশে আসতে পারছিলে না। আমি ইসারায় ডাকতেই তুমি হাত দিয়ে ইশারা করলে। দেখছি তুমি আসছো না।
ওখানেই দাড়িয়ে আছো। আমি আবারো ডাকলাম। কিন্তু তোমার 'কি' প্রশ্নের উত্তরে আমি বললাম চলো ঘুড়ে আসি। আমি আসলে কি যে বলবো তা ঠিক করতে পারছিলাম না। তাই 'চল ঘুড়ে আসি' বললাম।
ওমা মেয়েটি কোন কথা না ভেবে এক সেকেন্ডে বলেদিলো চলেন, বলেই রিকশায় উঠে বসলো। বাহ। এটা কিভাবে সম্ভব? ব্যাস সেই যে ঘুড়তে বের হলে আজও আমার সাথেই আছো। ভাবতে অবাক লাগে কিভাবে ৮ টি বছর আমার মত নস্ট একটা মানুষের সাথে কাটিয়ে দিয়েছো। আমি তোমাকে কিছুই দিতে পারিনি।
তবে তোমার কাছ থেকে অনেক কিছু পেয়েছি। এ ঘর, সংসার, সন্তান পিতৃত্ব সবই তোমারি অবদান। এভাবে আমাকে তুমি সেই দিন থেকে আকরে ধরে থাকবে যেটা আমি ঐ রিকশায় উঠার দিনেও ভাবতে পারি নি। এতো ভালোবাসো আমাকে । কেন? জানতে ইচ্ছে করে।
কি ছিলো আমার মাঝে যে তুমি আমার হলে ? মাঝে মাঝে তোমার কোলে মাথা দিয়ে খুব কাদতে ইচ্ছে করে। গুনরে ডুকরে কাদতে ইচ্ছা করে। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করে যে তোমাকে আমি আজও তোমাকে অনেক ভালোবাসি এবং তুমিই আমার একমাত্র জীবন সাথী আমার সন্তান রেহানের আম্মু।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।