আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রাতঃভ্রমণ: সঙ্গি কালি সাধক

কলেজ জীবনের সেই সময়টাতে প্রায় প্রতিদিনই খুব ভোরে সূর্য ওঠার আগে ঘুম থেকে উঠে হাটতে হাটতে চলে যেতাম শীতলক্ষা নদীর পাড়ে। সেখানে বরফ কলের মূল ঘাট থেকে কিছুটা ডানে একটা পরিত্যক্ত ছোট ঘাট ছিল। সেখানে গিয়ে বসে থাকতাম। সামনে শান্ত নদী। নদীর উপর দিয়ে ঝিরি ঝিরি বাতাস বয়ে যাচ্ছে।

ওপারে পুরনো এক রাজবাড়ি। অপূর্ব এক মুহূর্ত । সেখানে আমার এক সঙ্গি ছিল। একজন কালি সাধক। তার সাথে কখনওই কথা হত না।

দিনের পর দিন আমরা একই জায়গায় যাচ্ছি কিন্তু কেউ কারও ব্যপারে নাক গলাচ্ছি না। তবে মাঝে মাঝে ভদ্রতা বশঃত আমি তাকে বলতাম - ‘ আদাব, সাধু বাবা’। তিনি কোন উত্তর দিতেন না। জামাল বল সাবান দিয়ে কাপড় ধোয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। সাধুবাবার গায়ের রং কুচকুচে কালো।

রোগা শরীরে বেঢপ একটা পেট। মাথায় কয়েকটা চুল। মুখে এবড়ো থেবড়ো হলুদ দাঁত। গায়ে গেরুয়া বর্ণের কাপড়। সাথে একটা পিতলের লোট্।

া আমার আর তার প্রতিদিনের রুটিন ছিল একই রকম। আমি ঘাটে গিয়ে চুপচাপ বসে থাকতাম। আর তিনি কাপড় কাচতেন। কাপড়ে সাবান ডলতে ডলতে ফেনার ঢিবি বানিয়ে ফেলতেন। তারপর কাপড় ধুয়ে গিয়ে নামতেন নদীর কোমর সমান পানিতে।

নমস্কার করার ভঙ্গিতে দুহাত মাথা পর্যন্ত তুলে বিড়বিড় করে শ্লোক বলতেন। তারপর লোটা ভর্তি করে পানি নিয়ে চলে যেতেন। সঙ্গে সঙ্গে আমিও উঠে তার পিছনে পিছনে খাঁনপুর পর্যন্ত আসতাম। একদিন আমি ঘাটের এক কোণায় স্যান্ডেল পেতে তার উপর বসে ছিলাম। সাধূ বাবা তার কাজকর্ম করছেন।

এরমধ্যে কোথা থেকে যেন ধুপধাপ করে একদল বড় বড় ছেলে এসে পানির মধ্যে গিয়ে ঝাঁপাঝাঁপি শুরু করল। ঘাটের পিছন থেকে দৌড়ে এসে নদীর মধ্যে গিয়ে ঝাঁপ দেয়। নানা রকম কৌশল দেখায়। আবার উঠে এসে এসে ঝাঁপ দেয়। কিছুণের মধ্যেই এরা জায়গাটায় হল্লা বাধিয়ে ফেলল।

আমি সাধুবাবার দিকে তাকিয়ে দেখি তিনি ভিতরে ভিতরে গজরাচ্ছেন। তার চোখের মনি দুটি শুধু ডানে বামে ঘুরছে। ছেলেগুলোর ঝাঁপাঝাঁপিতে পানি এসে তার সাবানের ফেনা ভেঙে দিচ্ছে। তিনি কিছুই বলছেন না। কিছুণ পর ছেলেগুলো ডুব দিয়ে নদীর তলা থেকে কাদা উঠিয়ে এনে একজন আরেকজনের দিকে ছুড়ছে।

কাদা গিয়ে সাধুবাবার সামনে ছিটে পড়ছে। তিনি নদীতে নেমে গিয়ে দুহাত তুলে শ্লোক বলা শুরু করলেন। ছেলেগুলো এবার তাকে ভেঙাতে লাগল - ‘হুঁম বাবা...ওম শান্তি...উলুলু...। ’ হঠাৎ করে তিনি শ্লোক বলা বন্ধ করে হুংকার দিলেন - ‘অই... চিনস আমারে? চিনস?...যত বছর ধইরা কালি সাধনা করি ততদিনে তগো মত পোলা হইয়া যাইত। কালি সাধক আমি...এমন ভান দিমু ডুব দিয়া আর উঠতে পারবি না।

নদীর নীচে গাইড়া থাকবি...চিনস?’ সাধুবাবা কিছুণ অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে নিজের কাজে মন দিলেন। আমি খেয়াল করছি ছেলেগুলোকে। এরা কিছুণ হাসার চেষ্টা করে ব্যপারটাকে তুচ্ছ করার চেষ্টা করল। কিন্তু সেরকম হল না। তাদের হাসাহাসি কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেল।

আমি খেয়াল করছি তারা কেউ আর ডুব দিচ্ছে না। মনে আশংকা। কোথা থেকে কী হয়ে যায় বলা তো যায় না। এদিক সেদিক করে কিছুণ পর তারা এক সাইড দিয়ে উঠে চলে গেল। কান্ড দেখে আমি খুবই মজা পেলাম।

ছেলেগুলো ভাল ভয় পেয়েছে। কালি সাধনা বা এরকম কিছুর উপর আমার বিশ্বাস নেই। কিন্তু সেই সাধনায় যদি কয়েকটা বদের শিা হয় তাহলে মন্দ কী? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.