বাবা আব্দুর রব আর মা নুরজাহানের ঘর আলো করে ১৯৮৩ সালে ২৮ মার্চ তাঁদের ঘরে এক ছেলে সন্তানের আগমন ঘটল। সরকারি কর্মচারী বাবা আর গৃহিণী মা বড় শখ করে ছেলের নাম রাখলেন "মাসুদ রানা"। নাহ, কাজী আনোয়ার হোসেনের "বিখ্যাত" গোয়েন্দা চরিত্রের মত কোন "স্পাই" বানানোর কোন ইচ্ছা বাবা মায়ের ছিল না... শখের বসেই নাম রেখেছিলেন মাদুস রানা।
রানার জন্ম নারায়ণগঞ্জে... ছেলেবেলার অধিকাংশ সময় সেখানেই কেটেছে। পড়ালেখার পাশাপাশি এক বোন আর এক ভাইয়ের সাথে খুনসুটি করে সময়টা মন্দ কাটছিল না তার।
বাবা মাও ছেলেকে নিয়ে স্বপ্নে বিভোর হলেন- ছেলে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হবেন। সাইন্সে পড়া রানারও তাই ইচ্ছা ছিল। কিন্তু ভাগ্যদেবী তার জন্য অন্য কিছু ভেবে রেখেছিলেন। নিজের ইচ্ছা প্রসঙ্গে তিনি বলেন,
"ইচ্ছে ছিল বড় হয়ে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হব। কারণ আমি সাইন্সের ছাত্র ছিলাম।
সবসময় বুকে লালন করতাম ডাক্তার হয়ে দেশের মানুষের সেবা করব। এর বাইরে যে অপশনটি আমার মধ্যে কাজ করত তা হলো ইঞ্জিনিয়ার হওয়া। খুব পছন্দ ছিল এই পেশাটিও। কিন্তু এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করার পর হঠাৎ করেই যেন ছোটবেলার স্বপ্নগুলো হারিয়ে যেতে থাকল। "
১৯৯৯ সালের কথা।
সাইন্সে পড়া ছেলেটা গেল এফডিসিতে শুটিং দেখতে। ভালই লাগছিল রূপালী দুনিয়ার আলো ঝলমলে দুনিয়া চোখের এত সামনে থেকে দেখতে। নিজেকে নায়কের জায়গায় কল্পনা করেও বেশ আরাম পাচ্ছিল সদ্য এইচএসসি পাশ করা ছেলেটা। হঠাৎ এক সাংবাদিকের চোখ পরল এই ছেলের উপর। " তোমাকে দেখতে তো বেশ হ্যান্ডসাম লাগছে, কিছু ছবি তুলতে পারি তোমার?" নির্দ্বিধায় রাজি হয়ে গেল রানা।
সেই ছবি চলে গেল পরিচালক আবুল খায়ের বুলবুলের কাছে। নতুন একজনকে সিনেমার জন্য খুঁজছিলেন তিনি। রানাকে প্রস্তাব দিতেই দুরুদুরু বুকে রানা "হ্যাঁ" বলে দিল। মুক্তি পেল তার প্রথম সিনেমা ‘সবাইতো সুখী হতে চায়’। এ ছবির শুটিং শেষ না হতেই তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে ঢালিউডের পরিচালক-প্রযোজকদের মাঝে।
সবাই বলাবলি করে, ছেলেটি ভালো ফাইট করে। নাচে দুর্দান্ত, দেখতে সুন্দর। "কেয়ামত থেকে কেয়ামত" খ্যাত পরিচালক এই মাসুদ রানাকে কেন্দ্রীয় নায়ক চরিত্রে নিয়ে তার নতুন ছবি বানালেন, নাম " অনন্ত ভালবাসা’ । মুক্তি পেল ১৯৯৯ সালের ২৮ মে।
‘অনন্ত ভালবাসা’ খুব একটা সফল না হলেও নায়ক হিসেবে মাসুদ রানা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং ধীরে ধীরে নিজেকে প্রতিদ্বন্দ্বী সকল নায়কের ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যান।
নিজেকে একদম বদলে তিনি নিজেকে নিয়ে যান সাফল্যের স্বর্ণশিখরে। আজ তিনি চলচ্চিত্রের ওয়ান এন্ড অনলি নায়ক। পুরো ইন্ডাস্ট্রি একাই টেনে নিয়ে যাচ্ছেন আপন ক্যারিশমায়। বিশেষ করে মান্না মারা যাওয়ার পর তিনি যেভাবে শক্ত হাতে বাংলা চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি এর হাল ধরেছিলেন এবং সফল হয়েছিলেন, তিনি না থাকলে হয়ত আজ আমাদের ইন্ডাস্ট্রি ঘুরে দাঁড়াতে পারতো না। নতুন পরিচালকেরাও হয়ত বাংলা সিনেমার পরিচালক হওয়ার খাতায় নাম লেখানোর স্বপ্ন দেখতেন না।
নারায়ঙ্গঞ্জের সেই ছেলেটির ঢালিউডে এসে নিজের নাম বদলে এক নতুন জীবনের যাত্রা শুরু করেন। নাম বদলানো সেই ছেলেটিকে আশা করি এতক্ষনে চিনে ফেলেছেন, জি হ্যাঁ তিনি "নাম্বার ওয়ান" শাকিব খান । বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের নায়ক হিসেবে রেকর্ডসংখ্যক পারিশ্রমিকের অধিকারী শাকিব খান সর্বশেষ চমক সৃষ্টি করেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সভাপতি নির্বাচিত হয়ে। [১৪] এছাড়াও তিনি এনার্জি ড্রিংক পাওয়ার এর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর (প্রচার দূত)। সম্প্রতি পাওয়ার এনার্জি ড্রিঙ্ক এর বিজ্ঞাপন ছাড়াও আশিয়ান সিটির বিজ্ঞাপনে অংশ নিয়েও তিনি বেশ সুনাম কুড়ান।
বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ২০১০ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেতার পুরস্কারে ভূষিত করে, ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না এবং ২০১২ সালে খোদার পরে মা ছবির জন্য।
শুধু অভিনেতা বা পুরস্কার গ্রহণের পরিচয়ে আবদ্ধ না থাকতে চেয়ে তিনি এখন প্রযোজকের খাতায় নাম লিখিয়েছেন। "এস কে" প্রোডাকশন হাউজ নামে তিনি নিজের একটি প্রোডাকশন হাউজ সম্প্রতি খুলেছেন যার সার্বিক বিষয় সমূহ তিনি নিজেই দেখভাল করেছেন। সামনেই নিজের এই প্রোডাকশন হাউজ থেকে তার "রাজা হ্যান্ডসাম" আর " হিরো- দ্যা সুপারস্টার" নামে দুটি বিগ বাজেটের ছবি দর্শকেরা পেতে যাচ্ছেন বলে শাকিব জানান, শুটিং চলছে পুরোদমে। সম্প্রতি ইফতেখার চৌধুরী এর রাজত্ব ছবিতে একদম ডিফারেন্ট লুক ও অভিনয় দিয়ে তিনি সবার মন জয় করে নিয়েছেন এবং প্রমাণ করেছেন, সুযোগ দেয়া হলে এবং যোগ্য পরিচালকের হাতে পড়লে তিনি বেশ ভালো কাজ করে দেখাতে পারেন।
তাঁকে হিজড়া বলে বা তাঁকে রিকশাওয়ালাদের নায়ক বলে অনেকেই যাতে উঠতে চান। "জাতে" উঠার স্বভাব ও ইচ্ছা আমাদের বাঙ্গালিদের অনেকদিন আগে থেকেই। ইংরেজরা ২০০ বছর দেশ শাসন করে গেছে, মাথায় ও রক্তে ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে " সাদা চামড়া ইজ দ্যা বেস্ট"। আর বিদেশীদের প্রতি আমাদের আগ্রহ ও বিদ্বেষ দুটোই প্রয়োজনের তুলনায় একটু বেশি সবসময়ই। কিন্তু দুই মিনিটের বিদ্বেষ ঝেড়ে ফেলার পড়েই আমরা হলি, বলি দেখতে বসে যাই... অথচ সারাদিন আমাদের মুখের স্লোগান থাকে "নারী ও পুরুষের মাঝে যেই মানুষ, সেও মানুষ, হিজড়ারা মানুষ, তাঁদের সমান অধিকার চাই"... অথচ সারাদিনের এই স্লোগান গালি হয়ে যায় শুধু শাকিব খানের ক্ষেত্রেই... অথচ এফডিসি জিনিসটার টিকে থাকার পিছনে তার অবদানের কথা বা ভূমিকা আমরা ভিনদেশী কালচারে মগ্ন কেও স্বীকার করতে চাই না, নিজের জিনিস আমাদের কখনই ভাল্লাগে না, তাই আমাদের দেশে গুণীরা কম আসেন, আসলেও চলে যান আরও তাড়াতাড়ি।
নাহ, সমালোচনাতে কোন দোষ নাই, অবশ্যই করবেন, আপনার দেশের নায়ক বলে কথা... সমালোচনা মারলান ব্রান্ডো, ক্রিশ্চিয়ান বেল, আমির খান, শাহরুখ খান- সবারই হয়, আমাদের পার্থক্য শুধু একটাই- আমরা গালি দিতে পছন্দ করি অনেক, ভালো লাগলে আমাদের তালি দিতে ইচ্ছা করেনা শাকিবের ক্ষেত্রে, শাকিব কি করলে ভালো করবে সেই উপায়ও আমরা বাতলে দেই না, গালি দিয়েই আমাদের জাতে উঠা শেষ ও অন্য দেশের সিনেমা দেখা শুরু। আর তার সমালচকদের একটা বড় অংশই তার সিনেমা না দেখেই তাঁকে অনর্থক গালিগালাজ করেন। ভালবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না, চাচ্চু, ডাক্তারবাড়ি, সুভা, নিঃশ্বাসে আমার তুমি, টিপ টিপ বৃষ্টি , আমার প্রানের প্রিয়া, আমার স্বপ্ন তুমি - ছবিগুলো দেখার অনুরোধ থাকল- শাকিবের সম্পর্কে একটু হলেও ধারণা পালটাবে- গ্যারান্টি দিলাম
"নিজের নাম সাকিব বলে বা আপনার মিতা বলেই কি তার প্রতি আপনার এত দরদ?" এই প্রশ্ন যাদের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, তাঁদের জন্য বলি- জি না, এই জন্য না, দুনিয়ার অন্য প্রায় সব জায়গার সিনেমা আমার দেখা হয়, সেগুলা দেখতে পারলে কেন শাকিবের সিনেমা নয়? সে আমার নিজের দেশের, নিজের ইন্ডাস্ট্রির নায়ক, আমি না দেখলে কে দেখবে তাঁকে? নিজের টিউশনের টাকা খরচ করে রিকশাওয়ালার পাশে বসে শাকিবের সিনেমা এখতে ও সিটি বাজাতে আমার কোন সমস্যা হয়না, আমার "জাতে" উঠার কোন চিন্তা নাই, ইচ্ছাও নাই, আমি অনেক সস্তা, সো চিপ আমি শাকিবের সমালোচনা কম করি নাই, তবে সেটা তার সিনেমা দেখে করি, না দেখে না, আর যেটা সমস্যা সেটাই বলি... যেটা ভালো সেটাই বলি... আমার ইন্ডাস্ট্রির নায়ক, আমাকে যে বলতেই হয় দর্শক হিসেবে।
হলি ,বলি, কলকাতা স্টারদের জন্মদিন তো আমাদের মনে থাকে, নিজেদেরটা না থাকলেও আজ নাহয় শাকিবের জন্মদিনটাও একটু মনে রাখি? ২৮ শে মার্চ শাকিব খানের জন্মদিন। আজ ঢালিউডের এই বরপুত্রের জন্মদিনে তাঁকে জানাই জন্মদিনের অনেক শুভেচ্ছা।
শুভ জন্মদিন "কিং খান" শাকিব খান ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।