আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শেষ ধাপ নিয়ে উৎকণ্ঠায় প্রার্থীরা, নির্বিকার ইসি

শেষ ধাপে ৩১ মার্চ ৭৫ উপজেলার নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন প্রার্থীরা। গত কয়েক ধাপের নির্বাচনে জাল ভোট, ব্যালট ছিনতাই ও ব্যাপক সংঘাত-সহিংস ঘটনায় শেষ ধাপের নির্বাচন নিয়ে নানা শঙ্কা প্রকাশ করছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। বিশেষ করে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা এ নির্বাচন নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে মাঠ প্রশাসন ব্যবহার ও নানা ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ তুলছেন তারা। এমনকি স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও এ নির্বাচন সুষ্ঠু না হওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনে।

এ ছাড়া প্রতিনিয়তই ইসির কাছে শত শত অভিযোগ আসছে। তবে নির্বাচন কমিশন অনেকটাই নির্বিকার ভূমিকা পালন করছে। যদিও কয়েকজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে তারা নামে মাত্র ব্যবস্থা নিয়েছে। চতুর্থ ধাপে গুলির নির্দেশ দিয়েও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি ইসি। এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও দেওয়া হয়েছিল বিশেষ নির্দেশনা।

তার পরেও কমিশনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল চতুর্থ ধাপের ভোট। এদিকে শেষ ধাপের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘন, ব্যাপকভাবে কালো টাকা ছড়ানোর অভিযোগ এসেছে ইসির কাছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী বহাল থাকায় সহিংসতার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের চেয়ে শেষ ধাপে বেশি সহিংসতা হতে পারে বলেও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জানিয়েছে। চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শেষ ধাপের ৩৫ জেলার ৭৫ উপজেলায় ভোট গ্রহণ ৩১ মার্চ।

এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এক হাজারেরও বেশি প্রার্থী। নির্বাচনে সহিংসতা এড়াতে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ইসি। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে আজ থেকে মাঠে নামছে সেনাবাহিনী। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণ র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যও এসব এলাকায় টহল দেবেন। আজ মধ্যরাতেই শেষ হচ্ছে সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা।

একই সঙ্গে বন্ধ হচ্ছে যান্ত্রিক যান চলাচল।

ইসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন উপজেলা পরিষদের এ নির্বাচন দলীয় ব্যানারে না হলেও দলীয় প্রভাব রয়েছে সবখানেই। আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের পছন্দমতো প্রার্থী দিয়েছে। নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মাঝে রয়েছে ব্যাপক উৎসাহ।

নির্বাচন কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।

আমরা সবসময় চাই নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে হোক। এ জন্য যা যা করা দরকার আমরা তা-ই করছি। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য থাকছে।

মধ্যরাতেই বন্ধ হচ্ছে প্রচার-প্রচারণা : আজ মধ্যরাতেই বন্ধ হচ্ছে মিছিল-মিটিংসহ সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা। সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিরাজ করছে জাতীয় নির্বাচনের আমেজ।

নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে কমিশন ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ইসি সচিবালয়ের সহকারী সচিব আশফাকুর রহমান জানান, নির্বাচনের ৩২ ঘণ্টা আগে সব প্রচার-প্রচারণা বন্ধ থাকবে। কেউ আইন ভঙ্গ করলে কারাদণ্ড ও আর্থিক দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এমনকি প্রার্থিতাও বাতিল হবে।

আজ নামছে সেনা, র‌্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড : আজ থেকে ৭৫ উপজেলায় স্ট্রাইকিং ফোর্স ও গ্রেফতারের ক্ষমতা নিয়ে মাঠে নামছে সেনাবাহিনী।

নির্বাচনের আগে ও পরে মিলিয়ে মোট পাঁচ দিন তারা নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবে। প্রতি উপজেলায় এক প্লাটুন করে সেনা সদস্য টহল দেবেন। বড় উপজেলায় এ সংখ্যা বাড়তে পারে। পাশাপাশি প্রতি উপজেলায় সেনাবাহিনীর দুই থেকে তিনটি গাড়ি টহলে থাকবে। সঙ্গে সেনাবাহিনীর কমান্ডিং অফিসার ও একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন।

তবে সেনাবাহিনীর সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে গ্রেফতারও করতে পারবেন। এ ছাড়া মোবাইল ফোর্স হিসেবে র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য মোতায়েন থাকছে।

কালীগঞ্জে ৯০ কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ : গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার ৯০ কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছে প্রশাসন। ভোটাররা সুন্দরভাবে ভোট দিতে পারবেন কি না তা নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

ইসিতে অভিযোগ আর অভিযোগ : ইসি কর্মকর্তারা জানান, উপজেলা নির্বাচন ইসির নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।

পঞ্চম ধাপে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। পঞ্চম ধাপের নির্বাচন কেন্দ্র করে এরই মধ্যে ইসিতে অজস অভিযোগ এসে পৌঁছেছে। সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ শত শত। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী গাজী এম এ মাসুদ সরকার স্থানীয় সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুর বিরুদ্ধে ইসিতে অভিযোগ করেন।

একই সঙ্গে কক্সবাজারের টেকনাফ-উখিয়া আসনের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ তুলেছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী সরওয়ার জাহান চৌধুরী।

ইসির কাছে লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। সরওয়ার জাহান চৌধুরী তার লিখিত অভিযোগে বলেন, "আমার প্রতিদ্বন্দ্বী 'আনারস' মার্কার প্রার্থী স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির প্রথম স্ত্রীর বড় ভাই। বদি ও তার দলীয় ক্যাডাররা পথসভা ও প্রচারণা চালানোর সময় ভোটারদের 'আনারস' প্রতীকে ভোট দিতে বলছেন। এ ছাড়াও 'ঘোড়া' প্রতীকের পক্ষে এজেন্ট হলে এলাকাছাড়া করার এবং সাধারণ ভোটারদের কেন্দ্রে না যাওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। আমি শঙ্কিত ও উৎকণ্ঠিত।

" এ ছাড়া গফরগাঁও উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী মুশফিকুর রহমান স্থানীয় সংসদ সদস্য ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন ইসিতে। তিনি লিখেছেন- "এমপি ফাহমী গোলন্দাজ 'আনারস প্রতীকের' আশরাফ উদ্দিন বাদলকে সমর্থন দিয়েছেন এবং তিনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করে স্থানীয় সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলভবন উদ্বোধন করছেন আর আনারস প্রতীকে ভোট চাচ্ছেন। " নোয়াখালীর সুবর্ণচর ও হাতিয়া উপজেলায় ১৯ দলের প্রার্থীদের হয়রানির অভিযোগ এসেছে ইসিতে। বেলকুচিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকরা বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর সমর্থকের গাড়ি ভাঙচুর ও প্রার্থীর ওপর হামলা চালিয়েছেন বলেও ইসিতে অভিযোগ রয়েছে। এদিকে চতুর্থ ধাপের নির্বাচনের আগেও একইভাবে মন্ত্রী-এমপিদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের অনেক অভিযোগ এসেছিল কমিশনে।

তবে কোনো অভিযোগেরই দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি ইসি।

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।