বাংলাদেশ ক্রিকেটে সাম্প্রতিক বিপর্যয় শুরু হংকংয়ের বিপক্ষে ২ উইকেটের অপ্রত্যাশিত হার দিয়ে। রান রেটে এগিয়ে থেকে কোনোমতে চূড়ান্ত পর্বে পা রাখতে পারলেও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শুধু হতাশাই উপহার দিচ্ছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। বোলিং ব্যর্থতা, ক্যাচ মিসের মহড়া তো আছেই, তবে সবচেয়ে বেশি করে চোখে পড়ছে ব্যাটিং ব্যর্থতার ‘ধারাবাহিকতা’। প্রায় প্রতি ম্যাচেই যেন উইকেট বিলিয়ে দেওয়ার মিছিলে যোগ দিয়েছেন সাকিব-তামিমরা। এতকিছুর মধ্যেও ব্যতিক্রম কেবল এনামুল হক।
ডানহাতি এই ওপেনারই হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের লড়াকু মনোভাবের প্রতীক। প্রায় প্রতি ম্যাচেই হেসেছে এনামুলের ব্যাট।
এ বছরে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় এনামুলের নামটা আছে সবার আগে। সাতটি ম্যাচ খেলে ৪১.৩৩ গড়ে ২৪৮ রান করা এনামুল পেছনে ফেলেছেন গেইল, ফিঞ্চ, হেলসদের। এ ছাড়া এখনো পর্যন্ত এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিন ব্যাটসম্যানের তালিকায় রয়েছেন এনামুল।
৫ ম্যাচে তাঁর রান ১৬৬। অন্যদিকে টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি ছক্কা হাঁকানো তিন ব্যাটসম্যানের একজনও তিনি। ৫ ম্যাচে এ ডানহাতির ছক্কা সংখ্যা ৮। অথচ দলের অন্য ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্স বড্ড ম্লান, বিবর্ণ। চলতি বছর এ পর্যন্ত সাত ম্যাচ খেলে আরেক ওপেনার তামিম ইকবালের সংগ্রহ মাত্র ৯৪ রান।
সমান সংখ্যক ম্যাচ খেলে দলের অন্যতম ব্যাটিং ভরসা সাকিবের ব্যাট থেকে এসেছে মোটে ১২০।
বাংলাদেশ এ বছরের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি খেলেছিল গত ফেব্রুয়ারিতে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। সেই ম্যাচেই নিজের ভালো ফর্মের কথা জানান দিয়েছিলেন এনামুল। ৩ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে খেলেছিলেন ৪৫ বলে ৫৮ রানের লড়াকু ইনিংস। জয়ের কাছাকাছি গিয়েও মাত্র দুই রানের জন্য হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যাটিং বিপর্যয়ের মধ্যেও এনামুল খেলেছিলেন দলের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৪ রানের ইনিংস। এই ম্যাচেও ব্যাট করেছিলেন তিন নম্বরে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরুর পরে আর তিন নম্বরে নয়, মাঠে নেমেছেন উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে। এটা যেন আরও বদলে দিয়েছে ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানকে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ৩৩ বলে ৪৪ রান করে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছেড়েছিলেন।
নেপালের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে পড়েছিলেন রানআউটের ফাঁদে। তার আগে খেলেছিলেন ৪২ রানের ইনিংস। হংকংয়ের বিপক্ষে তৃতীয় ম্যাচটা তো বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসেরই অন্যতম লজ্জাজনক অধ্যায়। ভয়াবহ ব্যাটিং বিপর্যয়ের এই ম্যাচেও এনামুলের ব্যাট থেকে এসেছিল দলের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৬ রানের ইনিংস।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চূড়ান্ত পর্বের প্রথম ম্যাচেই শুধু ব্যর্থ হয়েছেন এনামুল।
আউট হয়েছেন ১০ রান করে। এই ব্যর্থতার স্মৃতি অবশ্য খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। গতকাল ভারতের বিপক্ষে আবারও এনামুলের ব্যাট থেকে এসেছে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৪ রান। তবে দলের সাম্প্রতিক ব্যর্থতায় ব্যক্তিগত এ পারফরম্যান্সে আনন্দ ছুঁতে পারছে না এনামুলকে। কণ্ঠে বরং তাঁর হতাশার সুর, ট্রাজিক হিরোর গলায় যেমনটা শোনা যায়, ‘দল পারফর্ম করতে না পারলে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের কী মূল্য!’ কিন্তু কেন দল পারফর্ম করতে পারছে না, এ জবাবে অবশ্য এখনই কিছু বলতে চাইলেন না এ ওপেনার।
শুধু বললেন, ‘টুর্নামেন্ট শেষ হোক, তারপর এ নিয়ে কথা বলা যাবে। ’
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।