১৮৬৫ সালে দেওবন্দ মাদরাসা প্রতিষ্ঠার সময়ে মাদরাসাটির প্রতিষ্ঠাতা কাসিম নানুতবী উক্ত মাদরাসা পরিচালনার জন্য আটটি মূলনীতি বেঁধে দেয়, যা ‘উসুলে হাশতগানা’ বা অষ্ট মূলনীতি নামে পরিচিত। কাসিম নানুতবী প্রণীত উক্ত আটটি মূলনীতির উপর ভিত্তি করে সেই সময় থেকে প্রতিষ্ঠিত তাবৎ ক্বওমী মাদরাসা পরিচালিত হয়ে আসছে বলে দেওবন্দীদের দাবি।
উক্ত আটটি মূলনীতি হলো:
১) মাদরাসার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে অধিক হারে চাঁদা আদায়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।
২) ছাত্রদের খানা চালু রাখতে হবে এবং ক্রমান্বয়ে তা রুচিশীল ও মানসম্মত করার ব্যাপারে মাদরাসার কল্যাণকামীদের সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে।
৩) মাদরাসার উপদেষ্টাবৃন্দ মাদরাসার উন্নতি ও অগ্রগতির দিকে সর্বদা লক্ষ্য রাখবে।
৪) স্বীয় মত প্রতিষ্ঠার একগুঁয়েমির কবলে না পড়ে মুক্তমনে পরামর্শ নিতে হবে। শিক্ষকদের অবশ্যই সমমনা ও একই চিন্তাচেতনার অনুসারী হতে হবে। স্বীয় স্বার্থপ্রতিষ্ঠা ও অন্যকে হেয় প্রতিপন্ন করার দুরভিসন্ধিতে লিপ্ত হতে পারবে না।
৫) পূর্বনির্ধারিত কিংবা পরবর্তী পরামর্শভিত্তিক নির্ধারিত পাঠ্যসূচি যেন সমাপ্ত হয়, সেই ভিত্তিতে পাঠদান করতে হবে।
৬) প্রতিষ্ঠানের জন্য যতদিন স্থায়ী আয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হবে, ততদিন প্রতিষ্ঠান আল্লাহ পাক-এর উপর নির্ভরশীল হয়ে গণচাঁদার ভিত্তিতে চলতে থাকবে।
৭) সরকার ও ধনাঢ্য নেতৃবৃন্দের সংশ্লিষ্টতা প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্ষতিকর মনে করতে হবে।
৮) প্রচারবিমুখ নিষ্ঠাবান ব্যক্তির চাঁদা গ্রহণ করা প্রতিষ্ঠানের জন্য বরকত ও অধিক স্থায়ীত্বের কারণ হবে বলে মনে করতে হবে।
(তথ্যসূত্র: মাহবুব রিজভী রচিত ‘তারিখে দেওবন্দ’ ও দেওবন্দের ইতিহাস সম্পর্কিত অন্যান্য গ্রন্থাবলী)
এখন সচেতন মুসলমান উনাদের নিকট প্রশ্ন- উপরোক্ত মূলনীতিসমূহ কি কোনো দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার মূলনীতি হতে পারে? একটি মাদরাসা তথা দ্বীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সর্বপ্রথম মূলনীতি হওয়া উচিত আল্লাহওয়ালা ছাত্র তৈরি করা। বিপরীতে দেওবন্দী ক্বওমী মাদরাসাসমূহের প্রথম নির্দেশই হচ্ছে- ‘বেশি বেশি করে চাঁদা আদায় করা’। মোটকথা, ক্বওমী মাদরাসার ছাত্রদেরকে প্রথমেই শিক্ষা দেয়া হয় অন্যের নিকট হাত পাততে।
যেহেতু চাঁদা আদায়ের বিষয়টিই মুখ্য আর তাক্বওয়ার বিষয়টি আদৌ তাদের সংবিধানে নেই, সেহেতু চাঁদার বিনিময়ে ক্বওমীদেরকে দেখা যায় বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মর্জিমাফিক ফতওয়া দিতে, হালাল-হারাম একাকার করতে। ক্বওমীদের চাঁদাভিত্তিক মূলনীতির ফলে উক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে চাঁদাখোর ধর্মব্যবসায়ী-ই বের হয়, আল্লাহওয়ালা হয়ে কেউ বের হয় না।
উল্লেখ্য, দেওবন্দী মাদরাসাসমূহকে ‘ক্বওমী’ বলা হয়, যার অর্থ হলো- ক্বওম বা সাধারণ জনগণের দান-ছদকায় পরিচালিত। যার ফলশ্রুতিতে দেখা যায়, সাধারণ মুসলমানরা আজ দ্বীনি শিক্ষা গ্রহণকে দেখে থাকে নিচু চোখে। (নাউযুবিল্লাহ)
কারণ মানুষের এটি একটি স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য যে, সে যাকে দান-ছদকা করবে তাকে করুণার দৃষ্টিতেই দেখবে।
এ প্রসঙ্গে সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি প্রায়ই একটি ঘটনার উল্লেখ করে দুঃখপ্রকাশ করেন। তিনি একবার ছফরে গিয়ে যে রেস্টহাউজে উঠেছিলেন, সেই রেস্টহাউজের আরদালিকে সেই কম্পাউন্ডের মসজিদের ইমাম সম্বোধন করছিল ‘স্যার’ বলে। জবাবে আরদালি তাকে পাত্তাই দিচ্ছিল না।
এটিই বর্তমান সমাজের বাস্তব দৃশ্য। সাধারণ মুসলমানরা এই ক্বওমী মাদরাসাগুলোকে টিকিয়ে রেখে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার ইহানত করতে সহায়তা করছে, ফলশ্রুতিতে তারা নিজেরাই বিধর্মীদের নিকট লাঞ্ছিত-ধিকৃত-অপমানিত হচ্ছে।
হুজুগে আমলোক ক্বওমী মাদরাসায় দান-ছদকা দেয়ার আগে জানারও চেষ্টা করে না যে, উক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মূলনীতি কি? সেগুলো যে দ্বীনি উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত নয়, বরং সাধারণ মানুষের চাঁদা খাওয়ার নিয়তে প্রতিষ্ঠিত তা তারা জানে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।