বসন্তে মাতাল আমি এক অপূর্ণতা ... আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে ঘটনার বিস্তারিত আগ্রহসহকারে শুনলাম, মোটেও বিস্মিত হইনি। গতকাল সে কোন এক রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছিল তার শরীরের খুব কাছ দিয়ে একটি সুদর্শনা মেয়ে হেটে যাচ্ছিলো, মেয়েটি যথেষ্ট স্মার্ট, মার্জিত এবং চেহারায় মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা মাঝারি গোছের মেয়েই মনে হচ্ছিলো। আমার সেই বন্ধুটি মেয়েটির আচরনে কিছুটা অবাক হচ্ছিলো আবার এটাও ভাবছিল যে তার মনের ভুল। কিন্তু শেষমেষ সে এই বিষয়ে সে পরিস্কার হলো যে মেয়েটা তার সাথে তাল রেখে পাশাপাশি হেঁটে যাচ্ছিলো কিন্তু সাথে সে এটাও ধরে নিলো যে মেয়েটি হয়তো তার গন্তব্যে নিরাপদে পৌঁছার জন্য তার সাথে তাল রেখে হেঁটে যাচ্ছিলো। যেহেতু সময়টা সন্ধ্যা সেহেতু এটা কোন কোন মেয়ের ক্ষেত্রে খুবই স্বাভাবিক হতে পারে।
যাইহোক পথের তুলনামূলক কিছুটা নির্জন এলাকায় আমার ওই বন্ধুটিকে মেয়েটি থামায় এবং তাকে সরাসরি সেক্সের প্রস্তাব দেয় এবং একটি নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে। আমার বন্ধুটি এবার সত্যিই বিস্মিত হয়। হয়তো বিস্মিত হওয়ার যথেষ্ট কারনও তার কাছে ছিল। তার বর্নণা অনুযায়ী সেই মেয়েটির সাথে তার পেশাদারিত্ব মোটেও মানানসই নয়। তার সাথে কথা বলার জন্য আমার বন্ধুটি তাকে একটি রেস্টুরেন্টে নিয়ে বসায়।
চা খেতে খেতে মেয়েটির সাথে কথা বলছিলো সে। মেয়েটির কাছ থেকে সে যব তথ্য উদ্ধার করে তা হচ্ছে মেয়েটি এই লাইনে প্রায় একবছর হলো এই লাইনে এসেছে। তার সাঁজ এবং মুখের কমনীয়তায় কখনো তাকে এই লাইনের মেয়ে হিসেবে ইঙ্গিত করে না। তবে মেয়েটির পরিবার তার এই পেশা জানে না। পরিবার জানে তাদের মেয়ে বড় শহরের এক হাসপাতালে ভালো চাকুরি করে, ভালো বেতন পায় এবং বেতনের সিংহভাগ বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।
মেয়েটি যখন নতুন শহরে এসেছিলো তখন ভূল পথ দিয়ে এসেছিলো, মেয়েটি যখন এই নগরীতে এসেছিলো তখন ভূল মানুষের হাত ধরে এসেছিলো। আমার বন্ধু তার মহানুভবতার পরিচয় দিয়ে তাকে এই পথ থেকে সরে আসতে বলে। মেয়েটি প্রতি উত্তরে জানায় যদি কেউ তার পরিবার চালানো, ছোটবোন, ভাইয়ের পড়ালেখার এবং বিয়ের দায়িত্ব নেয় তাহলে সে এই পথ থেকে সরে আসতে পারে। প্রসঙ্গতঃ মেয়েটির বাবা অসুস্হ এবং কর্মক্ষম। আমার বন্ধুটি এই কথা শোনার পর তার ওয়ালেটে থাকা ২হাজার টাকা থেকে সতের'শ টাকা মেয়েটিকে দেয় এবং মেয়েটির মুঠোফোন নাম্বার নেয় এবং নিজেরটাও দেয়।
এরপর থেকে সে সেই মেয়ের জন্য কি করা যায় তা নিয়ে দিনরাত মনের মধ্যে ঘনমেঘ জমিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু করেছে। উপরের আংশিক ঘটনা হয়তো অনেকেই শুনেছেন। আমিও আমার এক ছোটভাইয়ের এক লেখায় পড়েছিলাম ঠিক একই রকম ঘটনা। একটি উপন্যাসেও পড়েছিলাম কলকাতায় গিয়ে মেয়ে বাধ্য হয়ে বৃদ্ধ বাবা মা কে টাকা পাঠাত। এই রকম ঘটনা কিংবা গল্প অনেকেই শুনেছেন কিংবা দেখেছেন।
এর আগে আমি একবার দৌলতদিয়া যৌনপল্লী নিয়ে একটি প্রতিবেদন লিখেছিলাম, যেখানে উল্লেখ করা হয়েছিলো যে অনেক মেয়েকে এইসব পল্লীতে বিভিন্ন ভাবে ফুঁসলিয়ে এনে বিক্রি করে দেয়া হয়। এখান থেকে খুব কমসংখ্যক মেয়ে উদ্ধার পায়। আর যারা উদ্ধার পায় তারা আর তাদের সেই সমাজে, তার পরিবারে ফিরে যেতে পারে না। এইসব পথে অনেক মেয়েই আসে বিভিন্ন কারনেই আসে, বাধ্য হয়েই আসে। কেউ ছোটবেলায় নিশ্চই এমন স্বপ্ন দেখে না যে সে বড় হয়ে ..... হবে।
তাই অনেকেই কিংবা অধিকাংশই বাধ্য হয়েই এই পথে আসে। এদের জন্য আমাদের করণীয় কি? আমার করণীয় কি? আসলে এদের জন্য আমার করণীয় কিছুই নেই। আমার ক্ষমতা সীমিত। হয়তো এদের জন্য, এইসব মেয়েদের জন্য আমার বাম বুকে সামান্য কিংবা অসামান্য কষ্ট অনুভূত হবে। তবে এই সমাজে এদের জন্য অনেকেরই করণীয় রয়েছে অথবা কিছু করার ক্ষমতা রয়েছে ।
আমার বন্ধুটির মনখারাপ কিংবা তার মেয়েটির জন্য কিছু একটা করার তাগিদ আমাকেও দারুন ভাবে আহত করেছে। আমি পারি নি কিন্তু এই লেখা তাদের জন্যই যারা এই পথে ভুল পথে চলে এসেছে তাদের আবার নতুন করে পথ দেখাতে পারবে, নতুন পৃথিবীর আলো বাতাস তাদের নিকট পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করবে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।