Blood Diamond সিনেমায় একটা সংলাপ আছে, ‘I’m looking at an incredible view right now.’ –যুদ্ধ্যের ময়দানে আহত, শত্রু আক্রান্ত এবং নিশ্চিত মৃত্যু জানতে পারা Danny Archer ফোনে; তাঁর মাথার উপর দিয়ে একটা বিমান চলে যাওয়ার দৃশ্য দেখে তাঁর বন্ধু (প্রেমিকা) Maddy Bowen কে এই লাইনটা বলেছিল। যার অত্যন্ত ঘনিষ্ট বন্ধু পাইলট সে; বিমানে যে নিয়মিত উঠে তাঁকে মাথার উপর দিয়ে বিমান উড়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে অবশ্যই বলবে না 'I’m looking at an incredible view...'। কিন্তু Danny বলেছিল। যদি ব্যাখ্যা করতে পারতো Maddy-ও বলতো, ‘I’m sure it’s an incredible view..’। ওই বিমানে ছিল Solomon Vandy with son. ছেলের জন্য বাবার ত্যাগ, ভালোবাসা... বাবা –ছেলের ভালোবাসা দেখে Danny বাদ্য হয়েছিল তাঁর নিজের ভেতরের ‘অমানুষটাকে’ মেরে ফেলতে ।
সাধারণ একটা বিমান চলে যাওয়ার দৃশ্য Danny’র কাছে incredible ছিল, কারণ ওই বিমানে ছিলেন একজন বাবা, যিনি ছেলেকে নিয়ে উড়ছিলেন RUF -বদমাস মিলিটারীদের থেকে অনেক দূরে, নিরাপদের দিকে...।
আজ সকালে আমিও একটি incredible view দেখেছি। সেই দৃশ্যটার কথা আমাকেও খুব বলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু আমার সেরম কোন বন্ধু/প্রেমিকা নেই যারা আমার সেই কথা শুনবে/যাদের সেই কথা বলা যায়। ধন্যবাদ প্রথম আলো ব্লগ।
মাসে গড়ে যিনি ৪০ হাজার টাকা খরচ করেন তাঁর জীবন যাত্রার মান কীরম হবে এটা বুঝতে অবশ্যই মহাপন্ডিত হতে হয় না, সহজেই অনুমান করা যায়।
এখন আমি একজনের কথা বলতে যাচ্ছি...। তিনিও প্রতি মাসে গড়ে ৩৫-৪০ হাজার টাকা খরচ করেন। তাঁর জীবন যাত্রার মান কীরম আমাকে তা অনুমান করতে হয় না। আমি ক’দিন ধরে তাঁর সাথে উঠছি –বসছি –খাচ্ছি..., আমি সব দেখছি।
একেবারে রাজকীয়। কিন্তু আজ আমি এ কী দেখলাম? তিনি খাচ্ছিলেন, খেতে খেতে -মুখে গ্রাস ঢোকানোর সময় এক টুকরো ভাতের দানা (আমি ভালোভাবে দেখেছি ওটা ছিলো একটা ভাতের অর্ধেক) প্লেট থেকে খাবার টেবিলে পরলো। আমাকে অবাক করে দিয়ে তিনি ওই ভাতের টুকরোটি তুলে নিয়ে নিজের খাবার টেবিলে রাখলেন। এক সেকেন্ডেরও অনেক কম সময়ের মধ্যে ঘটে যাওয়া অতি তুচ্ছ ওই দৃশ্যটা আমার কাছে আর কারও Incredible view –এর চেয়ে কোন অংশে কম ছিল না। মাসে যিনি ৩৫-৪০ হাজার টাকা খরচ করেন, টাকা খরচ করার সময় যিনি টাকাকে টাকা মনে করেন না, educational background যার masters পাস -তিনি কেন ময়লা খাবার টেবিলে পরা এক টুকরো ভাতের দানা খাবার প্লেটে রাখবেন?
পর মুহুর্তে আমার কিছু গল্পের কথা মনে পড়ে গেল, যেগুলো তিনি আমায় বলেছিলেন; তাঁর বেঁচে থাকার গল্প।
এরপর অবশ্য ওই incredible view আর incredible থাকলো না, খুব ‘credible’ হয়ে গেল। জীবনে তাঁর সেইরম সময়ও এসেছিলো যখন তিনি ভালোভাবে খেতে পেতেন না। এমন কি টানা দু’দিনও নাকি তাঁকে না খেয়ে থাকতে হয়েছিল (তিনি নিজ মুখে আমায় এ কথা বলেছেন)। প্রচন্ড ক্ষুধার যন্ত্রনা চেখে দেখার দুর্ভাগ্য আমার এখনও হয় নি। জীবনে সেই দুর্ভাগ্য কখনো আসবে সেই সম্ভাবনাও আমি দেখি না।
কে জানে, অল্প অল্প ক্ষুধাতেই কাতর হয়ে যাওয়া এই আমি হয়তো সেই অসীম করুণাময়ের সীমাহীন করুণার শিকার? কাড়ি কাড়ি টাকা রোজগার/খরচ করার সময়ও ক্ষুদ্র এক টুকরো খাবার নষ্ট করার ইচ্ছে করে না। প্রচন্ড ক্ষুধার যন্ত্রণা মনেহয় এতটাই তীব্র এবং ভীতিকর যে, জীবনে আর কোনদিন সেই যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে না এই নিশ্চয়তা পাওয়ার পরও সেই ভয় থেকে নিস্তার পাওয়া যায় না।
এখন আমার মনে হচ্ছে আমরা -যারা কথায় কথায় ভগবানকে ব্লেম করি, ‘দিবা স্বপ্নগুলো’ পূরণ হচ্ছে না দেখে/হওয়ার সম্ভাবনাও নেই বুঝতে পেরে ‘জীবনে কিচ্ছু হলো না’ ভেবে বিষন্নতায় ভুগি –আমাদের সবারই উচিৎ প্রচন্ড ক্ষুধার যন্ত্রণা ভোগ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করা এবং পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষকে সেই যন্ত্রনাটা ভোগ করতে হয় একথা সবসময় মাথায় রাখা। আমার মনেহয় সেটা যদি আমরা সমস্ত মন -শরীর দিয়ে উপলব্দি করতে পারি, এরপর আমাদের মনে আর কোন ‘দিবা স্বপ্ন’ পূরণ না হওয়ার দুঃখ থাকবে না।
আমি খুবই স্বার্থপর একটা মানুষ।
সবসময় নিজের স্বার্থটাই শুধু দেখি। নিজের স্বার্থ রক্ষা ছাড়া আর কিচ্ছু বুঝি না। কারো জন্য কিছু করি না, করার তাগিদও কখনো অনুভব করি না। কিন্তু তবুও আমি পৃথিবীর সমস্ত প্রচন্ড ক্ষুধার যন্ত্রনায় ছটফট করা মানুষদের কথা সবসময় মাথায় রাখতে চাই। কেন? সেও নিজের স্বার্থে! iphone নেই, BMW নেই, মঙ্গল গ্রহে পিকনিক যাওয়ার টিকেট নেই -ওদের ছাড়া আর কার সাদ্যি আছে; আমার এই ‘প্রচন্ড দুঃখগুলো’ দূর করার..?।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।