বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ সাহেব এখন ঘুমিয়ে আছেন সেই সুদূর ফ্রান্সে কিন্তু তাহার রেখে যাওয়া উপন্যাস, গল্প বা তার বই থেকে নেওয়া নানা উক্তি এখনো আমাদের জীবনের সাথে খাপে খাপে মিলে যাচ্ছে।
কবির সাথে
চায়ের দোকানে এক লোকের সাথে পরিচয়। বেশভূষা তেমন একটা না। পূরানো গেঞ্জি গায়ে ও ময়লা প্যান্ট পরা পায়ে চটি স্যান্ডেল চুলগুলো বড় বড় উস্কসুস্ক। উদাস মনে কি যেন ভাবছে।
আমিও ঐ মুহূর্তে দোকানে চা খাচ্ছিলাম কথায় কথায় তার সাথে পরিচয় হল।
ভাই কি করেন?
- আমার আবার করা ভাই, এই টুকটাক লিখি তাও জীবনধারণের জন্য।
ওমা আপনি লেখক। ভাই আপনার সাথে পরিচয় হয়ে খুব ভালো লাগছে। ভাইয়া কি কি লিখেছেন আজ পর্যন্ত।
- কবিতা,গল্প,উপন্যাস এই আর কি ভাই।
যদি কিছু মনে না করেন ভাই। আপনার নামটা।
- আরে মনে করার কি আছে। আমার নাম দেওয়ান কামরুল হাসান ডাক নাম রথি।
আমি আপনাকে রথি ভাইয়া বলে ডাকবো। নামটা খুব ভালো লেগেছে আমার কাছে।
- সমস্যা নেই, ডাকেন। আপনার নাম কি?
আমার নাম নাদিম হায়দার। আর আমি ভাই এখনো ছাত্র।
- হুম, কবিতা গল্প সম্পর্কে কোন ইন্টারেস্ট আছে।
একসময় ছিলো এখন নেই। পরাশুনার এতো চাপ মাথা থেকে সব ঝেরে ফেলে দিছি। তবে মাঝে মধ্যে কবিতা আবৃত্তি শুনি। আমার কাছে খুব ভালো লাগে।
ভাইয়া আপনি আপনার কবিতা থেকে এক লাইন আবৃত্তি করে শুনান না।
- আমার কবিতা থেকে শুনবেন।
জি ভাইয়া
- একটু গলা খাঁকারি দিয়ে
মাঠে ঐ আসছে খাসি
আমি তোমায় ভালবাসি
ঐ খাসির লম্বা কান
তুমি আমার জানের জান।
দারুন দারুন ভাইয়া, এওয়েসাম। ঐ মামা ভাইয়ার চায়ের বিল আমি দিমু।
আমার খাতায় লিখে রাখো।
-আর একটা শুনবেন?
ভাইয়া কালকে আমার সেমিস্টার ফাইনাল আজকে আপাতত যাই। ঐ সামনে আমার বাসা কালকে শুনব। ঠিক আছে।
- কবি উদাসী ভঙ্গিতে আচ্ছা ঠিক আছে।
আমার বন্ধু ফিল্ম মেকার
আমার বন্ধু সুমন ছোটবেলা থেকে একটু খ্যাপাটে। যখন যা মাথায় আসে তা তার পূরণ করা চাই। মাথা থেকে ভুত না নামা পর্যন্ত তার ঐ কাজ করা চাই। মাঝে প্লান নিলো গীটার শিখবে যেই ভাবা সেই কাজ, বিকালে সুমনদের বাসার ছাদে গিয়ে দেখলাম সুমন গীটার বাজ্জাছে।
- মামা সূরটা কেমন তুললাম।
জটিল হইছেনা।
কই মামা আমিতো কোন গানের সূর দেখিনা।
- কস কি আমিতো এতক্ষণ উইন্নিং এর ঐ দূর পাহারের ধারে বাজাইলাম। পাসের বিল্ডিং থেকে লিপি কইলো ভাইয়া দারুন হচ্ছে। আর তুই কস কিছু হয়নাই।
মান্দার পো মজা লস আমার লগে। তুই জেলাস।
আমি আর কি কমু আমার ছোটবেলার বন্ধু। কয়েকদিন পরে আমার ভার্সিটিতে কনসার্ট হইবো সুমনরে নিয়া গেলাম সাথে কইরা। ভার্সিটির বন্ধুগো সাথে সুমন পরিচয় দিলো ও একটা ব্যান্ডের লিড গিটারিস্ট।
সবাইরে ওর বাসার ছাদে দাওয়াত দিয়া অস্থির।
যাহোক সুমনের পাগলামিতে আমি ওর সাথে ৪ দিন দেখা করি নাই। পরে ভাবলাম বাল্যবন্ধু যাই দেখা করে আসি। গেলাম বাসায় গিয়া দেখি সুমন নাই। আন্টিকে জিজ্ঞাসা করলাম, আন্টির কাছে সুমনের কথা শুনে আমি থ।
সুমন আমাদের এলাকার পাশে এক বস্তিতে গেছে। গরীব ছেলেমেয়েদের নিয়ে ডকুমেন্টারি বানাবে। তাড়াতাড়ি গেলাম ঐ বস্তিতে গিয়া শুনি ঐ কাট কাট এটা হবেনা আবার রি শুট করতে হবে।
কিরে মামা কি হইলো গীটার রেখে এখন ভিডিও ক্যামেরা।
- মামা কালকে রাত্রে আমি স্ট্যানলি কিউব্রিক এর ছবি দেখে পুরা ফিদা হইয়া গেছি।
আমি এখন ফিল্ম বানামু।
তাইলে গীটার কিনলি কেন?
- কিনছি মামা এখন আর বাজামু না। আমি আমার লাইন বুঝে গেছি। আই ওয়ান্না বি এ ফিল্মমেকার।
যাহোক সারাদিন সুমনের শুটিং দেখলাম।
আর লম্ফ ঝম্প।
- দোস্তো চল শুটিং শেষ। প্যানেল এ যাইতে হইবো।
কোন প্যানেল, কিসের প্যানেল?
- আরে বোকা*** এর জন্য বলি তোর কিছু হয়না কেন। এডিটিং প্যানেল।
ঐখানে গিয়ে এটারে সাইজ করতে হবে। ছোট করতে হবে।
যাহোক গেলাম প্যানেল এ। সারাদিনের শুটিং এর জিনিস সব ঢুকানো হল। ওমা কারো মাথা আসে নাই কারো পা আসে নাই।
যাচ্ছে তাই অবস্থা। তারচেয়ে সুমনের অবস্থা দেখে আমার মন আরো খারাপ। প্যানেল থেকে বের হলাম। বিদায় নিয়ে যে যার বাসায় চলে গেলাম।
বিদ্রঃ কাউকে ছোট করার উদ্দেশে নহে ইহা একটি রম্য রচনা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।