পাবনার এই ব্যক্তি সোমবার বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ সাক্ষ্য দেন জামায়াতে ইসলামীর এই নেতার বিরুদ্ধে।
নাসিমের জবানবন্দির মধ্য দিয়ে জামায়াতের এই নায়েবে আমিরের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হল। আর এসময় কাঠগড়ায় থাকা সুবহানকে সনাক্তও করেন ৬১ বছর বয়সী এই সাক্ষী।
একাত্তর সালের তরুণ নাসিম এখন সাংবাদিকতার পাশাপাশি মানবাধিকার কর্মী হিসেবে কাজ করেন।
২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সৈন্যদের পাবনা জেলা পুলিশ লাইনে আক্রমণ থেকে শুরু করে নিজের স্বজনদের হত্যার দৃশ্য দেখার বর্ণনা আদালতে তুলে ধরেন তিনি।
২৫ মার্চ রাতে হামলা করলেও জনতা ও পুলিশের প্রতিরোধের মুখে ২৯ মার্চ পাকিস্তানি সৈন্যরা মাধপুর এলাকা দিয়ে পাবনা থেকে পালাতে শুরু করে।
ওই সময় মাধপুরে অন্তত ১৮ জনকে হত্যার পাশাপাশি অনেক ঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয় বলে জানান নাসিম।
১৯৭১ সালের ১১ এপ্রিল পাকিস্তানি সৈন্যরা নগরবাড়ী হয়ে পাবনার দিকে ফের এগোতে থাকে। বিকালেই তারা দাসুরিয়া হয়ে ঈশ্বরদীতে চলে আসে। সংগ্রাম পরিষদের সদস্যরা তাদের প্রতিরোধ করতে না পেরে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
নাসিম বলেন, এসময় তিনি স্থানীয় এসএম স্কুলের পেছনে একটি জটলার মধ্যে আত্মগোপন করেন। এরপর সৈন্যরা চলে গেলে তিনি ঈশ্বরদী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে আশ্রয় নেন।
ওই মসজিদে আরো দুইশ’ মানুষ সেদিন আশ্রয় নিয়েছিলেন, যার মধ্যে নাসিমের মামা মোয়াজ্জেম হোসেন, ভগ্নিপতি মতলেব আহমেদ খান, ভাগ্নে নাজমুল হক খান হেলাল, রফিক পাটোয়ারী, জসিম উদ্দিন, জয়নাল আবেদিনও ছিলেন।
সাক্ষী জানান, ১২ এপ্রিল মসজিদের ইমাম সাহেব ঘোষণা দিলেন, পাকিস্তানি সৈন্য ও পাকিস্তানের নেতারা মসজিদে আসবেন। ওই দিন আসরের নামাজের আগেই একটি সাদা প্রাইভেটকারে করে সুবহান মসজিদে এসেছিলেন।
“নামাজের পর তিনি (সুবহান) উপস্থিত সবাইকে বলেন, ‘আগামীকাল যে কোনো সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সদস্যরা নেতৃবৃন্দসহ আপনাদের এখানে আসবেন। আপনাদের ঈমানের পরীক্ষা নেবেন। ”
মসজিদের পাশে একটি টিন শেডের পরিত্যক্ত দোকানে বসে ‘বিহারিরা’ মসজিদের মুসল্লিদের ওপর নজরদারি চালাত বলে জানান নাসিম।
এ কথা শোনার পর ভগ্নিপতির পরামর্শে পরদিন ফজরের নামাজের পর মসজিদ থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তবে বাড়িতে পৌঁছার পর পারিবারিক চাপে ১৭ এপ্রিল দুলাভাই ও ভাগ্নেকে নিতে পুনরায় ফিরতে হয়েছিল তাকে।
নাসিম জানান, মসজিদ থেকে ১০০ ফুট দূরে জঙ্গলে থেকে তিনি পরিস্থিতি বুঝতে চাইছিলেন।
তখন সুবহান এবং তার সঙ্গে থাকা জামায়াত সদস্য খোদা বকস, ইসমাইল, আবদুল হামিদ ওরফে হারেস উদ্দিন, ইসহাক আলী, আব্দুর রকিবকে দেখেন তিনি, যারা তার মামা মোয়াজ্জেমকে টেনে বাইরে নিয়ে আসেন।
“আমি দেখলাম, মাওলানা সুবহান তার পরনের পাঞ্জাবির হাত গোটালেন। তখন কেউ একজন তার হাতে একটি তরবারি দেয়। সেই তরবারি দিয়ে তিনি মামাকে সজোরে আঘাত করেন।
মামা ‘আল্লাহু আকবার’ বলে চিৎকার দেন। এরপরই সুবহানের সঙ্গীরা এলোপাথাড়ি কুপিয়ে মামাকে হত্যা করে। ”
এরপর সুবহান তার সঙ্গীদের নিয়ে মসজিদের পাশে পরিত্যক্ত টিন সেডের দোকানে ঢোকেন বলে নাসিম জানান। আর এসব দেখে মসজিদের দিকে না এগিয়ে বাড়িতে ফিরে আসেন তিনি।
পরদিন ১৮ এপ্রিল আবার তার দুলাভাই মোতলেব ও ভাগ্নে হেলালকে আনতে গিয়ে তাদেরও একইভাবে হত্যার দৃশ্য দেখেছিলেন বলে নাসিম জানান।
“সেই একই কায়দায় সুবহান প্রথম দুলাভাইকে আঘাত করে। এরপর তার সহযোগীরা কুপিয়ে হত্যা করে দুজনকে। ”
ঈশ্বরদী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ সংলগ্ন কয়লার ডিপোর পাশে ১৯ জন শহীদের স্মরণে একটি স্মৃতিসৌধ রয়েছে, যা উল্লেখ করেন সাক্ষী।
জবানবন্দি শেষে সাক্ষীকে জেরা শুরু করেন আসামি পক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। জেরা অসমাপ্ত অবস্থায় মঙ্গলবার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করা হয়।
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর সুবহানের বিরুদ্ধে একাত্তরে সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা, আটক, নির্যাতন, লুণ্ঠনসহ ৯টি অভিযোগে ভিত্তিতে অভিযোগ গঠন হয় ট্রাইব্যুনাল-১।
গত ২৭ মার্চ বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে ট্রাইব্যুনাল-১ মামলাটি বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল-২ এ স্থানান্তর করেন।
এরপর গত ২ এপ্রিল সুবহানের বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন।
পাবনার সাবেক সংসদ সদস্য সুবহানকে ২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।