আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তিন অভিনেত্রীর প্রবাস জীবন

শাবানা যুক্তরাষ্ট্রে

ঢালিউডের সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়িকার স্থান দখল করে আছেন শাবানা। ৬০, ৭০, ৮০ ও ৯০ দশক পর্যন্ত সমান জনপ্রিয়তায় কাজ করেছেন তিনি। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার আজিজুর রহমানের হাত ধরে চিত্র জগতে অভিষেক শাবানার। তখনো কিন্তু শাবানা হয়ে উঠেননি তিনি। রত্না নামেই তার অভিনয় জীবন শুরু।

পুরো নাম আফরোজা সুলতানা। প্রথম অভিনীত চলচ্চিত্র এহতেশামের 'নতুন সুর'। নায়িকা নয়, ছোট্ট মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন এ চলচ্চিত্রে। রত্না নামে ছোটখাটো চরিত্রে টানা পাঁচ বছর অভিনয়ের পর ১৩ বছর বয়সে নায়িকা হন তিনি। চলচ্চিত্রকার এহতেশাম ১৯৬৭ সালে রত্না পাল্টে শাবানা নামে 'চকোরী' চলচ্চিত্রে নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করালেন তাকে।

চলচ্চিত্রটি সুপারহিট হলে শুরু হয় রুপালি পর্দায় নায়িকা শাবানার অপ্রতিরোধ্য যাত্রা। চার দশকে পাঁচ শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় ও ২৫টি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেন তিনি। জাতীয় চলচ্চিত্রসহ বাচসাস এবং অন্যান্য সংগঠনের অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেন তিনি। ২০০০ সালে অভিনয় ছেড়ে সপরিবারে স্বেচ্ছায় ঠাঁই নিলেন আমেরিকায়।

শাবানার জন্ম ঢাকায়, ১৯৫২ সালের ১৫ জুন।

তার পৈতৃক বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার ডাবুয়া গ্রামে। শাবানার বাবার নাম ফয়েজ চৌধুরী। তিনিও চলচ্চিত্রে অভিনয় ও প্রযোজনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়ায় বাস করতেন তারা। ছোটবেলায় শাবানাকে গেণ্ডারিয়া হাইস্কুলে ভর্তি করা হলেও পড়ালেখা তার ভালো লাগত না।

তাই নয় বছর বয়সেই শিক্ষাজীবনের ইতি ঘটিয়ে চলচ্চিত্রে আসেন তিনি। শাবানা অভিনীত সর্বশেষ চলচ্চিত্র হচ্ছে 'ঘরে ঘরে যুদ্ধ'। এটি নির্মাণ করেন প্রখ্যাত চিত্র পরিচালক আজিজুর রহমান। দুই কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জননী শাবানা। তার পুত্র কন্যারা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করছিল।

কিন্তু তাদের সময় দিতে পারছিলেন না বলেই ১৯৯৭ সালে অভিনয়কে চিরতরে বিদায় জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান তিনি। স্বামী-সন্তানসহ সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তবে প্রতি বছর দু-একবার দেশে আসেন এবং কয়েক মাস সময় কাটিয়ে আবার যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান। ১১ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছেন শাবানা। এত অধিক সংখ্যকবার ঢালিউডের কোনো অভিনয় শিল্পী এখনো জাতীয় সম্মান লাভ করেননি।

সর্বশেষ ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে দেশে এসেছিলেন এবং ডিসেম্বরে ফিরে যান। এ সময় শাবানা জানান, দেশে ফিরে স্থায়ীভাবে বসবাস করার কোনো ইচ্ছা তার নেই। বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রেই। সেখানে স্বামী, পুত্র-কন্যা ও নাতি-নাতনি নিয়ে পরম সুখে বাকি জীবন কাটাতে চান তিনি। ধর্মকর্ম ও সংসারের কাজে ব্যস্ত সময় কাটে বলে জানান যুক্তরাষ্ট্রে ঠাঁই নেওয়া নায়িকা শাবানা।

 

অঞ্জু ঘোষ কলকাতায়

ঢালিউডের সোনালি সময়ের অন্তিম ক্ষণে আশির দশকে অঞ্জু ঘোষের চলচ্চিত্রে অভিষেক। এ অভিনেত্রীর ১০ বছরের অভিনয় জীবন ছিল বর্ণিল। অঞ্জু ঘোষের প্রকৃত নাম অঞ্জলী ঘোষ। তার জন্ম ১৯৫৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরের ভাঙ্গায়। ষাটের দশকের শেষ ভাগে কিশোরী বয়সেই যাত্রা দলের সঙ্গে যুক্ত হন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভোলানাথ অপেরার হয়ে যাত্রায় নৃত্য ও গান পরিবেশন করতেন। স্বাধীনতার পর সপরিবারে চলে যান চট্টগ্রামে। সেখানে মঞ্চনাটকে অভিনয় শুরু করেন। ফোক-ফ্যান্টাসি চলচ্চিত্র নির্মাতা এফ কবির চৌধুরী ১৯৮২ সালে অঞ্জু ঘোষকে চলচ্চিত্রে আনেন। তাকে নায়িকা করে নির্মাণ করলেন 'সওদাগর'।

এ চলচ্চিত্রটি হিট হওয়ার পর এফ কবির চৌধুরী অঞ্জুকে অভিনয় করালেন নরম গরম, আবেহায়াত, পদ্মাবতী ইত্যাদি চলচ্চিত্রে। ১৯৮২ সালে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার মহিউদ্দিন তাকে নিয়ে নির্মাণ করলেন চলচ্চিত্র 'বড় ভালো লোক ছিল'। এতে তার নায়ক ছিলেন রাজ্জাক। এ চলচ্চিত্রে সহজ-সরল বাঙালি নারীর চরিত্রে অভিনয় করে বোদ্ধা শ্রেণীর প্রশংসা কুড়ান তিনি। এরপর অভিনয় করেন আশীর্বাদ, রাই বিনোদিনী, আয়না বিবির পালা, আশা নিরাশা, নবাব সিরাজউদ্দৌলা, রক্তের বন্দী, পদ্মগোখরা ইত্যাদি নানা গল্প ও চরিত্রের সফল চলচ্চিত্রে।

১৯৮৯ সালে এলো অঞ্জুর বড় মাপের সাফল্যের মাহেন্দ্রক্ষণ। মুক্তি পেল 'বেদের মেয়ে জোছনা'। ঢালিউডের ইতিহাসে এর ব্যবসায়িক রেকর্ড এখনো কোনো চলচ্চিত্র অতিক্রম করতে পারেনি। এতে কাজ করে 'বেদের মেয়ে জোছনা' খ্যাতি পান অঞ্জু। পরে তাকে নিয়ে কলকাতায় চলচ্চিত্রটি রিমেক করা হয়।

সেখানেও সাফল্য পান তিনি। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সাইদুর রহমান সাইদ বলেন, তাকে নিয়ে ১৯৯৫ সালে 'নেশা' শিরোনামে একটি চলচ্চিত্রের নির্মাণ শুরু করেন তিনি। কিন্তু বিভিন্ন নির্মাতা ও স্থানীয় মাস্তানদের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে অঞ্জুর ওপর। তারা তাকে নানাভাবে হয়রানি শুরু করলে ১৯৯৬ সালে বাধ্য হয়ে সপরিবারে কলকাতা চলে যান অঞ্জু ঘোষ। কলকাতার স্থানীয় চলচ্চিত্র ও যাত্রায় অভিনয় শুরু করেন তিনি।

২০০২ সালে বিয়ে করেন যাত্রাশিল্পী সঞ্জিবকে। এ বিয়ে মাত্র চার বছর টিকেছিল। এক সময় চলচ্চিত্রে অভিনয় ছেড়ে দিয়ে যাত্রা পালায় নিয়মিত হন তিনি। সাইদ জানান, অঞ্জু ঘোষ বর্তমানে কলকাতার বিশ্বভারতী অপেরা যাত্রাপালায় অভিনয় এবং সল্টলেকের নিজস্ব বাসায় একাকী জীবনযাপন করছেন।

 

রোজিনা যুক্তরাজ্যে

অভিনেত্রী রোজিনার প্রকৃত নাম রওশন আরা রেনু।

তার জন্ম রাজবাড়ীতে। ছাত্র অবস্থাতেই ঢাকায় মঞ্চনাটকের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। সত্তরের দশকে প্রথমে একটি জন্মনিয়ন্ত্রণের বিজ্ঞাপনে মডেল হন। এতে তার কাজ প্রশংসিত হয়। ১৯৭৬ সালে কালিদাসের 'জানোয়ার' চলচ্চিত্রের মাধ্যমে চিত্রজগতে অভিষেক ঘটে তার।

টানা ১৯৯২ সাল পর্যন্ত প্রায় দুই শতাধিক চলচ্চিত্রে কাজ করেন তিনি। এর মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের চলচ্চিত্রেও কাজ করেছেন এই অভিনেত্রী। অর্জন করেছেন দুবার জাতীয় পুরস্কারসহ বেশ কবার বাচসাস, প্রযোজক সমিতি ও পাকিস্তানের নিগার অ্যাওয়ার্ড। বাংলাদেশে 'জীবন ধারা' ও আমজাদ হোসেনের 'কসাই' চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় এবং ১৯৮৬ সালে 'হামসে হ্যায় জামানা'র জন্য পাকিস্তানের নিগার পুরস্কার পান তিনি। আশির দশকে প্রযোজক ফজলুর রশিদ ঢালির সঙ্গে বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হন রোজিনা।

কিন্তু স্বামীর অকাল মৃত্যুর পর নব্বই দশকের শুরুতে লন্ডন প্রবাসী এক ব্যবসায়ীকে বিয়ে করে ১৯৯৩ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু তার। প্রতি বছরই দেশে আসেন তিনি। মাঝেমধ্যে টিভি নাটক নির্মাণ ও অভিনয় করলেও ২০০৫ সালে মতিন রহমানের পরিচালনায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের গল্পে নির্মিত 'রাক্ষুসী' ছাড়া আর কোনো চলচ্চিত্রে অভিনয় করেননি। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি দেশে এসে ৯ মার্চ আবার যুক্তরাজ্যে ফিরে যান তিনি। রোজিনা বলেন, দীর্ঘদিন কাজ করতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন।

তাই নব্বই দশকে এসে সিদ্ধান্ত নিলেন আর সেলিব্রেটি নয়, এখন থেকে পাবলিক

লাইফ লিড করবেন। তাই অভিনয় ছেড়ে পুরোদমে প্রবাসী গৃহিণী হয়ে গেলেন রোজিনা। '

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।