টি-২০ বিশ্বকাপে ভারত-শ্রীলঙ্কা ফাইনালের আগে লঙ্কান প্রেসিডেন্ট একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। খেলাটি মাঠে বসে দেখবেন না তিনি। সিদ্ধান্তটা অবশ্য ভক্তরাই নিতে বাধ্য করেছেন। লঙ্কান ক্রিকেটভক্তরা ফাইনালের আগে অনুরোধ জানিয়েছিল, প্রেসিডেন্ট যেন দেশে বসেই খেলা দেখেন। ভক্তদের এ অনুরোধ জানানোর কারণ ছিল।
শ্রীলঙ্কা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর অনেকেই কৌতুক করে বলছেন, ভাগ্যিস এবারে মাহিন্দ রাজাপক্ষে মাঠে বসে খেলাটি দেখেননি! দেখলে হয়তো হেরেই যেত লঙ্কানরা। চারটা ফাইনাল খেলে ব্যর্থ হয়েছিল শ্রীলঙ্কা। টি-২০ বিশ্বকাপের শিরোপা জয় করাটা কেবল শাপমোচনই ছিল না তাদের জন্য, ছিল চেপে রাখা দীর্ঘশ্বাস ফেলার উপলক্ষও।
এই একটি শিরোপা পুরো শ্রীলঙ্কাকেই বদলে দিয়েছে। ভক্তরা রাস্তার মোড়ে মোড়ে জড়ো হচ্ছে বীরদের বরণ করার জন্য।
শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ড আবেদন জানিয়েছে, কলম্বোর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শহরতলি পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার রাস্তায় মানবসারি তৈরি করার। ওপেন টপ গাড়িতে চড়ে ফুলের মালা গলায় দিয়ে ভক্তদের খুব কাছাকাছি গিয়ে উদযাপনটা করার কথা রয়েছে সাঙ্গাকারা-জয়বর্ধনদেরও। গতকাল বিশ্বজয়ী ক্রিকেটাররা দেশের ফিরলে শ্রীলঙ্কায় তাদের বীরোচিত সংবর্ধনা জানানো হয়। বিমানবন্দর থেকে পুরো রাস্তায় ক্রিকেটপ্রেমীরা হাত নেড়ে মালিঙ্গা সাঙ্গাকারাদের অভিনন্দন জানা।
পুরো শ্রীলঙ্কাই এখন উৎসবের নগরী।
বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজের ছাত্র/ছাত্রীরা রাস্তায় নেমে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে। আতশবাজি ছুড়ে বিশ্ববাসীকে জানান দিচ্ছে, দেখ, এবার আমরাই চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এর মধ্যেও কিছু অঘটন ঘটেছে। এ অঘটন আনন্দের আতিশয্যে। টানা হেরে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা।
ফাইনালের পর ফাইনালে ভক্তরা হতাশ হচ্ছে। গত ৬ এপ্রিলের ফাইনালে এক শ্রীলঙ্কানভক্ত ভেবেছিল, এবারেও বুঝি হারতে যাচ্ছে লঙ্কানরাই। তার ভাবনার পিছনে যথেষ্ট কারণ ছিল। শ্রীলঙ্কা দলটা দারুণ। তবে ভারত তো তার চেয়েও ফেবারিট।
অপরাজিত ছিল ভারত। সেই ভারতের পক্ষেই কুমারা নামের শ্রীলঙ্কানভক্ত বাজি ধরেছিল ৪০ হাজার রুপি। ম্যাচ শেষে তাকে হারাতে হয় এই অর্থ। তবে অর্থের চিন্তা তখন কে করে! কুমারা বিশ্বাসই করতে পারছিল না দলের জয়ের বিষয়টি। অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার পরই তার হার্ট-অ্যাটাক হয়।
কুমারা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দ উদযাপন করার আগেই পরপারে পাড়ি জমায়।
বিশ্বকাপ কাভার করতে আসা এক সাংবাদিক বলেছিলেন, লঙ্কান মিডিয়া ক্রিকেটারদের ঘোর বিরোধী। একটু খারাপ খেললেই তাদেরকে একেবারে যাচ্ছেতাইভাবে গালাগাল দেয়। জয় পেলে যে তারা প্রশংসা করতেও জানে, তার প্রমাণ দিয়েছে লঙ্কান মিডিয়া। ডেইলি মিরর লিখেছে 'বিগেস্ট উইন ইন এইটিন ইয়ারস'।
ডেইলি নিউজ আরও চমৎকার হেডলাইন করেছে। তারা প্রথম পাতায় আট কলামব্যাপী হেডিং করেছে, 'ডান!'। সাব হেডলাইনে লিখেছে, 'লঙ্কা'স সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড কাপ ক্রিকেট টাইটেল'। 'ডান' শব্দের সঙ্গে লঙ্কানদের দীর্ঘশ্বাসটাই যেন ঝেড়ে ফেলেছে ডেইলি নিউজ। তামিল ও সিংহলি ভাষার পত্রিকাগুলো সাঙ্গাকারাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছে এবার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।