বসন্তে মাতাল আমি এক অপূর্ণতা ... ঘন ছায়ায় সন্নিবিষ্ট একটি ছোট্ট পল্লী। তাতে কতগুলো আর পরিবার বাস করে! বারো থেকে চোদ্দটি পরিবারের বসবাস। এই ছোট্টপল্লীটির নামই বসুন্ধরা।
দিনাজপুর জেলার একটা বড় রেলের শহর পার্বতীপুর। আর এই রেলের শহরের নিউক্লিয়াস থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে এই বসুন্ধরার অবস্থান।
এর পাশ দিয়ে চলে গেছে দিনাজপুরের রেললাইন। আর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ঝিরঝিরে ছোট্ট একটা নদী। স্থানীয় ভাবে যার নাম তিলাই।
স্থানীয়ভাবে এই ছোট্ট পল্লীটির নামকরন করা হয়েছে বসুন্ধরা। এই নামকরনের স্বার্থকতা যে এত সুন্দরভাবে দৃশ্যমান তাতে সত্যিই অবাক হতে হয়।
চারিদিকে গভীর সবুজ। সবুজের মাঝেই ছোট্ট একটি রাস্তা প্রবেশ করেছে বসুন্ধরার ভিতরে। আঁকাবাকা রাস্তার একদিকে ছোট্ট ছোট্ট কটেজের মত বাড়িগুলো সাজানো রয়েছে।
প্রতিটি বাড়ির সামনে ফুলের বাগান, সবজীর বাগান। এর এক পাশে বাচ্চাদের খেলার জন্য গাছে ঝোলানো দোলনা।
আমগাছ, জামগাছ, নাম না জান কত গাছ দিয়ে ঘেরা এই পল্লীর একেবারে পশ্চিমের দিকে সিমেট্রি (খ্রিস্টানদের কবরস্থান), সেটার আগে ছোট্ট খেলার মাঠ। গোটা পল্লীই সবুজের ভেতর।
কারা থাকে এই বসুন্ধরায়: উত্তরবঙ্গের প্রসিদ্ধ একটি হাসপাতাল ল্যাম্ব। যার পুর্ণাঙ্গ নাম লুথারান এইড মেডিসিন অব বাংলাদেশ। এই হাসপাতালের সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু পরিবার থাকে এই বসুন্ধরায়।
হাসপাতালে 'অন কল' যাদের করতে হয় তারাই থাকেন এখানে। একটু আলাদাভাবে বলতে গেলে বলা যায় যারা রোগীর জন্য ডেডিকেটেড তারাই এখানে বসবাস করে। এখানে যারা বসবাসকারী সবাই খ্রিষ্ট ধর্মে বিশ্বাসী।
বসুন্ধরার বাসিন্দা ডলি জানান এখানে তিনি এসেছেন চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে। স্বামীসহ ল্যাম্বে চাকুরি করেন।
সবসময় প্রস্তুত থাকতে হয় হাসপাতাল থে ডাক এলেই চলে যেতে হয়। সেটা যত ঝড় হোক কিংবা যত রাত হোক। এই হাসপাতালে অধিকাংশই সিরিয়াস ধরনের গর্ভবতী মায়েরা ভর্তি হন। আর প্রাণান্তকর প্রচেষ্টায় নবজাতকদের পৃথিবীর আলো দেখাতে সহায়তা করেন তারা।
প্রাণজিত রামাও জানালেন একই কথা।
তিনি জানান আগে তাদের বাসাতে থেকেই জরুরী মুহুর্তে ডেকে নেয়া হত এখন 'অন কল' রুমে অবস্থান করতে হয়। উল্লেখ্য ল্যাম্ব হাসপাতাল খৃষ্টান মিশনারীদের একটি হাসপাতাল।
ডলি কিংবা প্রানজিত রামা ছাড়াও দুটি বিদেশি পরিবার এখানে বসবাস করে। জোনাথন পারলেন ও কুইন পারলেন । এরা যুক্ত্ররাষ্ট্রের।
ল্যাম্ব হাসপাতালের অভ্যন্তরে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে শিক্ষকতা করেন। এছাড়াও ডেনমার্কের ক্রিশচিয়ান ভেস্টাগারড একাই থাকেন এখানে। অবিবাহিত। সবুজের মাঝে একাই বসবাস করেন।
এখানে প্রতিটা পরিবারের সাথে পরিবারের হৃদ্যতাপুর্ণ সম্পর্ক।
স্বামী স্ত্রী ব্যাস্ত থাকলেও তাদের বাচ্চারা এখানে খেলাধুলা করে বেড়ায় নিশ্চিন্ত মনে। বসুন্ধরার শান্তিময় পরিবেশে শান্তির বার্তাবাহকরা বাস করেন। যাদের ছোঁয়ায় দেবদুতরা দেখে পৃথিবীর মুখ।
যে পল্লীটি সত্যিই 'বসুন্ধরা' ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।