১. মিছির আলি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন, ভাদ্র মাসের আকাশ এতো দর্শনীয় নয় তবু তার ভালো লাগছে | দীর্ঘ সাড়ে তিন মাস হাসপাতালের জেনারেল ওয়ার্ডের অন্ধকার ঘরে রোগ মৃত্যু ফিনাইলের গন্ধের সাথে কাটিয়ে আজ ই মুক্তি পেয়েছেন, ভুল হলো মানুষের কোন মুক্তি নেয় মৃত্যুর পর ও তাকে বিচারকের সামনে দাঁড়াতে হবে নয়তো আবারো ফিরে আসতে হবে পশু হয়ে পৃথিবীতে | একটা চিল অনেহ্মন ধরে এক জায়গাতেই যেন স্থির হয়ে আছে, তিনি ওটার দিকেই তাকিয়ে আছেন মোটা কালো ফ্রেমের চশমাটাতে আস্তে আস্তে সব কিছু ঝাপসা হয়ে আসছে তবে কি বৃষ্টি আসবে মেঘ যদিও পুরোপুরি কালো নয় বৃষ্টি এলে এই অসুস্থ শরীর সেটা সহজ ভাবে নেবে না তার কাছে কোন ছাতাও নেয় তিনি যেখানে আছেন এটা উত্তর গাজীপুরের একটা সদ্য চষা মাঠ কাছে পিঠে কোন বসত আছে বলে মনে হয় না,তবু তাকে চিন্তিত মনে হচ্ছে না | আগে অনেক ভিজেছেন এবং যথারিতি নিওমনিয়া বাধিয়ে মরতে মরতে বেঁচেও গেছেন তার মনের অবস্থা আসলে আসুক | এখন আর চিল টাকে দেখা যাচ্ছে না যাদুমন্ত্রের মতো মিলিয়ে গেছে তিনি শুনেছিলেন বৃষ্টি বাচাতে ঈগল মেঘের উপর চলে যায় চিলেরাও কি তাই করে.. -স্লামালিকুম স্যার ভালো আছেন? আচমকা মিছির আলির চিন্তায় ছেদ পড়লো তার সামনে ২৮/২৯ বছরের একটি ছেলে, খুব চেনা চেনা লাগছে কিন্তু তিনি চিনতে পারছেন না.. ছেলেটি মনে হচ্ছে তার বিব্রত ভাব দেখে খুব মজা পাচ্ছে ..সে নিজে থেকে আর কিছু বলছেও না .. মিছির আলি আকাশ পাতাল ভাবছেন হলুদ পাঞ্জাবী পড়া এই ছেলেটিকে তিনি কোথায় দেখেছেন...... ২. সোহানের অবস্থা ভয়াবহ, গত আধা ঘন্টায় সে দুই বার থু থু ফেলেছে দুই বার ই তা রক্তে পূর্ণ ছিলো মুখের ভিতর কোথাও কেটে টেটে গেছে মনে হয়, জিহ্বা কিংবা.... তার মুখ আবারো লালাতে পূর্ণ হয়ে আসছে, ইতিমধ্যে সে লোনতা স্বাদ পেতে শুরু করেছে পরী আর কাজল এক বার এসে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে উকিঁ দিয়ে গেছে এর ই মাঝে, এখন আর ওদের খুজে পাওয়া যাবে না, এ বাড়িতে কিছু হলে ওরা ওদের গোপন আস্তানায় গিয়ে গা ঢাকা দেয় একমাত্র সোহান ই জানে সে জায়গাটা কোথায় | পানি খাওয়া দরকার হাত মুখ ধোয়াও কাছে কাওকে দেখা যাচ্ছে না, দেখা গেলে লাভ ও হতো না সে কারো কাছে চাইতোও না থাক... হ্মুধা তৃষ্ণা ব্যাথা ভয় সব কিছু তাকে জয় করতে হবে সব ই .. সোহান থু থু করে দুই বার থুথু ফেললো, না আর রক্ত মনে হয় আসছে না.... ৩. বদরুল সাহেবের মেজাজ আজ এমনিতেয় খিচিয়ে আছে তার পর চা স্টলের ছেলেটা তার ঘিয়ে রঙ্গের পাঞ্জাবীটার উপর চা ফেলে দিলো, তার ইচ্ছা করছে কষে একটা চড় বসাতে বহু কষ্টে তিনি নিজেকে সংযত করলেন আর যায় হোক তিনি একজন শিহ্মক যেখানে সেখানে মারধোর করা ঠিক হবে না | তার সহকর্মী মোবারক সাহেব ও তখন জামালের চায়ের দোকানে ছিলেন তার এ অবস্থা দেখে তিনি হাসিতে ফেটে পরলেন নিজের কাপের অর্ধেকটা চা প্যান্টে ফেলে ও হাসতে হাসতে বললেন দাও দাও স্যাররে আর এক কাপ চা দাও হো হো হো.. আজ দিনটায় কুফা.... এই অবস্থায় আজ আর ক্লাস নেওয়া যাবে না, বাসাতেও ফিরে যেতে ইচ্ছা করছে না সকালে ছেলেকে চলা কাঠ দিয়ে মেরেছেন, দুই তিন টা হাড় ভাঙ্গা অস্বাভাবিক নয়. মারটা একটু বেশিই হয়ে গেছে | শুধু মারেনইনি ছেলের গা থেকে হলুদ পাঞ্জাবীটা টেনে ছিড়ে হিংস্র আক্রোশে কুটি কুটি করেছেন শেষে আগুনে পুড়িয়ে বাড়ি থেকে বার হয়েছেন, আছিয়া এই সময় একটা কথা ও বলেনি সে এমনিতেই কম কথা বলে তার সাথে আরো কম| তিনি চায়ের খুপরি দোকান থেকে বিরক্ত হয়ে বেড়িয়ে এলেন .. আকাশে মনে হয় মেঘ জমতে শুরু করেছে.... ৪. -স্যার আমি আপনাকে নিতে এসেছি মিছির আলি কিছু বললেন না, তিনি চশমাটা খুলে পাঞ্জাবীর কোনায় মুছতে শুরু করলেন | সবকিছু যেন কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে হলুদ পাঞ্জাবী পড়া ছেলেটাকে তার কাছে এখন এক খন্ড শর্ষে হ্মেত মনে হচ্ছে| ছেলেটি কোন উত্তরের অপেহ্মা না করেই পেছেনে ফিরে হাটা শুরু করেছে, সে যেন ধরেয় নিয়েছে তিনি আসবেন | মাঠটা মনে হয় এক জনের ই কোন আইল টাইল নেয় সবটা লাঙ্গল দিয়ে চষা কে জানে ট্রাক্টর দিয়েও হতে পারে উচু নিচু এখনো সমান করা হয়নি, কিংবা ছেলেটা ইচ্ছা করেই আইল দিয়ে যাচ্ছে না মিছির আলির হাটতে কষ্ট হচ্ছে তিনি অন্ধের মতো পা ফেলছেন ছেলেটিকে অনুসরণ করে...... ৫. বড় বড় ফোটায় বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে | বদরুল সাহেব জমির আইল দিয়ে দ্রুত পা ফেলছেন তার বাসা এখান থেকে বেশ দূর চারিদিকে অন্ধকার হয়ে আসছে প্রচন্ড শব্দে দূরে কোথাও বাজ পড়লো তিনি সেই আলোয় অবাক হয়ে দেখলেন একজন লোক মাঠের ভিতর প্রায় চক্রাকারে ধিরে ধিরে হাটছে একবার ভাবলেন অপ্রকৃতস্থ কেও তার পর ই তিনি ছুটে গেলেন লোকটার কাছে.... (to be continued)
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।