আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জেদি মেয়েটির গল্প

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! বেশ কিছুক্ষন ধরে কলিংবেল বাজতেছে । উঠে গিয়ে দরজা খুলতে ইচ্ছা করছে না । ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি সবে মাত্র সাড়ে আট টা বাজে ! এই সকালে আবার কে এল ? হায়রে কপাল । ছুটির দিনে একটু শান্তি মত ঘুমাবো তারও উপায় নাই ! খানিকটা বিরক্তি নিয়েই দরজা খুললাম ! নিশি ! এই সকালে ? নিশির মুখটা বেশ গম্ভীর হয়ে আছে । কি হল কে জানে ? আমি একটু হাসার চেষ্টা করলাম ।

-কি খরব ? এতো সকালে ? জরুরী কিছু? নিশির মুখ তবুও গম্ভীর ! কিছুক্ষন কোন কথা বলল না ! আমি বুঝতে পারলাম সিরিয়াস কিছু হয়েছে ! আমি আবার বললাম -কি হয়েছে ? নিশি বলল -আপনি আমাকে পছন্দ করেন না কেন ? আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম । কি বলে এই মেয়ে ? আমি ওকে পছন্দ করবো না কেন ? আমি চোখ কপালে তুলে বললাম -তোমাকে কে বলল যে আমি তোমাকে পছন্দ করি না ? -দেখেন প্রশ্নের জবাব প্রশ্ন দিয়ে করবেন না ! -না নিশি এমন কোন ব্যাপার না ! আমি তোমাকে পছন্দ করি ! সত্যি ! আমি তো নিজেই তোমাকে বলেছি । বলেছি না ? দেখলাম নিশি চোখে পানি জমতে শুরু করেছে ! নিশি প্রায়ই চোখে কাজল দেয় । অন্তত আমার সাথে যতবার ওর দেখা হয়েছে ততবারই আমি ওর চোখে কাজল দেখেছি । তবে আজকে কাজল নেই ।

কান্না কটির প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে বলেই মনে হয় কাজল দিয়ে আসে নাই । নিশি বলল -তাহলে কালকে যে আপনি না খেয়ে ছিলানে এটা আমাকে বলেন নাই কেন ? আমি একটু বিপাকে পড়ে গেলাম । আমি যে গতকাল না খেয়ে ছিলাম রাতে এই কথাটা ও জানলো কিভাবে ? আমি তো কাউকে বলি নাই ! সুমন কে বলেছিলাম কিন্তু সুমনের সাথে তো নিশির পরিচয়ই নাই তাহলে নিশি কেমন করে জানলো ? আমি একটু হাসার চেষ্টা করলাম । পরিবেশ হালকা করার চেষ্টা ! -কে বলল তোমাকে ? -কে বলল সেটা কথা না । না খেয়ে ছিলেন কি না সেটা বলেন ! -না ।

মানে না খেয়ে না ! ডিম আর ভাত খেয়েছি । -শুধু ডিম পোঁচ আর শুধু ভাত খাওয়া যায় ? কথা সত্যি ! খালি ডিম আর ভাব খাওয়া যায় না । কালকে রাতে আমি খেতে পারি নি । কেবল ডিম টুকু খেয়েছি আর কিছু না । আসলে আমি এক মানুষ বলে খাওয়া দাওয়ার কোন পার্মানেন্ট ব্যবস্থা নাই ।

দুপুরের খাবার অফিসেই খাই । আর রাতে অফিস থেকে আসার পথে খাবার কিনে আনি । এই তো বাসা থেকে একটু দুরেই একটা দোকানের সাথে পরিচয় আছে ! যদি যেতে ইচ্ছা না করে ফোন করে দিলেও হয় । একটা পিচ্চিকে দিয়ে খাবার পাঠিয়ে দেয় । কালকেও ঐ রকম হওয়ার কথা ছিল কিন্তু হয় নাই ।

গতকালকের আগের দিন এলাকায় এক রাজনৈতিক নেতা খুন হয়েছে । সেই জন্য কেবল এই এলাকায় হরতাল ছিল । কোন দোকান পাট খুলে নাই । আমি তো আর এতো কিছু জানি না । অফিস থেকে এলাকায় এসে দেখি এই অবস্থা ! আগে জানলে তো তো বাইরে থেকেই নিয়ে আসতাম ! কিন্তু আর যেতে ইচ্ছা করলো না ।

বাসায় চালডাল সবই আছে । একটা রাতই তো, ডিম আর ভাত দিয়ে কাটিয়ে দিবো ভেবেছিলাম । কিন্তু রাতে টের পেলাম আসলে একটু কষ্ট করে দুর থেকে কিছু কিনে আনাই ভাল ছিল । ডিম ভাজলাম আর ভাত রান্না করলাম কোন মতে । কিন্তু শুধু এই দুইটা দিয়ে কি খাওয়া যায় ? সারা রাতই প্রায় কষ্ট করেছি খিদের জন্য ।

তার তিনটার দিকে ফোন দিলাম সুমন কে ! ঘুম আসতেছিল না ! ওর সাথে কিছুক্ষন কথা বললাম । এই ঝামেলার কথাও বলেছিলাম ওকে । আর কাউকে তো বলি নাই তাহলে নিশি কেমন করে জানলো ? ভাল প্রশ্ন ! উত্তরটা জানতে হবে ! কিন্তু আমি এর আগেও দেখেছি নিশি কেমন করে যেন সব কিছু টের পেয়ে যায় ! কিভাবে যায় কে জানে ? আমি কি বলবো ঠিক বুঝতে পারছিলাম না ! নিশি আমার সামনে থেকে চলে গেল বেজার হয়ে ! আমি দরজা বন্ধ করে আবার একটু বিছানায় গা ঠেকাবো কিনা ভাবছি নাকি নাস্তা খেতে যাবো অথবা ফোন করে নাস্তা আনাবো । অবশ্য আজকেও দোকানপাট খুলেছে কিনা বলতে পারতেছি না । তবুও একবার ফোন করা যাক ।

না হলে হাত মুখ ধুয়ে আবার নিচে যেতে হবে ! ফোন দিতে যাবো ঠিক তখনই আবার দরজায় কড়া নড়ে উঠলো ! আবার কে এল ? ফোন রেখে দরজা খুলে দেখি নিশি ! আগের মতই গম্ভীর মুখে দাড়িয়ে । তবে এবার ওর হাতে নাস্তার ট্রে ! মাংসে ঝোল আর সদ্য ভাজা পরোটা দেখা যাচ্ছে । -সরুন ! আমি সরে দাড়ালাম । নিশি নিজেই ডাইনিং টেবিলে নাস্তা সাজাতে শুর করল। আমি দাড়িয়ে দাড়িয়ে ওর কাজ দেখতে লাগলাম ।

কেন জানি দৃশ্যটা বেশ ভাল লাগলো ! নিশি আমার দিকে তাকিয়ে বলল -খেতে বসুন ! -আরে আমি তো এখনও মুখ ধুই নাই ! -মুখ ধোয়া লাগবে না ! একটু কুলি করে নেন ! খেয়ে তারপর ইচ্ছা মত ধোয়াধুয়ি কইরেন ! নিশি নাস্তা সাজিয়ে চলে যেতে পা বাড়ালো ! আমি বললাম -এখনই চেলে যাবা ? -আমি আপনার কে হই ? আমি কেন থাকবো ? কেবল তো বেহায়ার মতই আপনার আসেপাসে ঘোড়াঘুড়ি করি আপনি তো আমাকে কিছু মনে করেন না ! আমি আবার অপ্রস্তুত হয়ে যাই ! বললাম -আসলে ঐ রাতে তোমাকে ডিস্টার্ব করতে চাই নি ! নিশি আমার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন । তারপর চলে যেতে উদ্ধত হল । আমি ওকে আটকালাম । ওর হাত ধরে ডায়নিং টেবিলে বসালাম । -প্লিজ যেও না ! -কেন যাবো না ? -তুমি সামনে বসে থাকলে আমার খেতে ভাল লাগবে ! নিশি আমার এই কথায় শান্ত হল একটু ! যেন এই রকম কিছুই শুনতে চেয়েছিল ।

আমার সামনেই বসে রইলো ! আমি আপন মনে নাস্তা খেতে লাগলাম ! নাস্তা খাইয়ে নিশি আবার চলে গেল । আমার কেন জানি মনে হল নিশিকে কিছু বলা দরকার । অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে । খুব জলদিই ওকে ঘরে তোলা দরকার । কিন্তু আবার একটু সমস্যাও আছে ।

ওর ছোট্ট ভাই রুমির সাথে আমার বেশ ভালই খাতির । ওর ভাইয়ের কাছেই শুনেছি নিশি নাকি খুব জেদি । আমার ব্যাপারটা নিয়ে নাকি নিশির সাথে ওর বাবা মার বেশ কয়েক দফা কথা কাটা কাটি হয়েছে । জামাই হিসাবে ওর বাবা মার আমি ঠিক পছন্দ না । আমি একটা প্রাইভেট ব্যাংকে চাকরী করি ।

বেতন খারাপ না হলেও নিশির বাবা মার ডিমান্ড আরো বেশি । ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার টাইপের ! কিন্তু কেবল নিশির জেদের কারনেই ওনারা কিছু করতে পারছেন না । এই মেয়ে আমার ঘরে এলে কি হবে কে জানে ? আমি মাঝে মাঝে অবাক হই আসলে নিশি আমার ভিতর কি এমন দেখলো কে জানে ? যাক আজকে আবার শুক্রবার । নামাজ পরতে যেতে হবে মসজিদে । অবশ্য এখনও বেশ সময় আছে ।

কি করবো ? পেট তো এখন বেশ ভরা আবার একটু গড়িয়ে নিবো নাকি ? বিছানায় শুতে যাবো আবার কলিংবেল ! নাহ ! আজকে কি হল ? দরজা খুলে দেখি আবার নিশি !! -এসো ? -আসবোই তো ! এই নিন ! এই বলে নিশি আমার হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে দিল ! প্রেম পত্র নাকি ? বাহ ভাল তো ! আমার মনের কথাই যেন নিশি বুঝতে পারলো ! বলল -জি না ! প্রেমপত্র না ! বাজার পত্র ? -বাজার পত্র ? -মানে বাজারের লিষ্ট ? -বাজারের লিষ্ট দিয়ে কি হবে ? আমার কথা শুনে নিশি এমন একটা মুখ ভঙ্গি করলো আমি আর কিছু জিজ্ঞেস করলাম না ! নিশি বলল -এখন বাজারে যাবেন ! যা যা লেখা আছে সব কিছু নিয়ে আসবেন ! ঠিক আছে ? -আর ? তারপর কি হবে ? -সেটা আপনার চিন্তা করতে হবে না ! যান ! এখনই বাজারে যান । আমি বাজারের ব্যাগ নিয়ে বের হলাম । যে হোটেলটাতে খাই সেই হোটেলের সামনে আসতেই দেখলাম হোটেলের মালিক বের হয়ে এল । -ভাই সাহেব কেমন আছেন ? বয়সে আমার সমানই । তাই কথা বার্তা ভালই হয় ।

তাছাড়া আমি উনার নিয়মিত কাষ্টমার । আমার সাথে তো তার একটা আলাদা ভাব থাকবেই । আমি বললাম -দোকান খুলেছেন দেখছি । -এই আর কি ? দোকান তো খুলতেই হবে ! শুনেন ভাই, আজকে স্পেশাল কাচ্চি রান্না হচ্ছে । আপনার বাড়ি কখন পাঠাবো ? -নারে ভাই ! আজকে মনে হয় পাঠানো লাগবে না ।

-সেকি ? কেন ? -বাড়িয়ালীর সাফ মানা ! বাইরের কিছু খাওয়া যাবে না । দেখেন না বাজার করতে বের হয়েছি । -বিয়ে করলেন কবে ? আমি এই প্রশ্নের জবাব দিলাম না । একটু হাসলাম মাত্র । এই হাসির অর্থ দুই টাই হতে পারে ।

-আরে বলেন কি ? বিয়ে করে ফেলেছেন ! যাক ভাল ভাল ! আসলেই ভাই এই হোটেলে হোটেলে খেয়ে বেড়ানো মোটেই ভাল কথা না ! দেখেন না আমার নিজের হোটেল তবুও আমি হোটেলে খাইনা ! যাক খুব ভাল ! খুব ভাল ! তবে ভাই একেবারে যেন ভুলে যাবেন না ! -আরে না না ! কি যে বলেন ! আমি আবার বাজারের দিকে হাটা দিলাম ! মনে মনে বললাম লোকটা কে এই কথা কেন বললাম ? বাড়িয়ালীর কথা কেন বললাম ? কে জানে ? কেন জানি নিজের কাছেই একটু খুশি খুশি লাগছিল । আমি বাজার করে নিয়ে যাচ্ছি নিশি আমর বাজার জন্য অপেক্ষা করছে । রান্না করবে !! আহা !! জীবন টা এমন হলে কতই না ভাল হত !! আসলেই কি ভাল হত !!! Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.