"সোলাইমানের মা" এই ডাকেই চিনি তাকে। চোখ দুটতে ছানি পরা। এক পা ভাঙাওয়ালা একটা চশমা পরে।
একটা মায়াবি মমতা যেন সরতেই চায়না এই বুড়ির চেহারা থেকে। মায়াবী চেহারার কারণ তার সবসময় অসহায়ের মত মুখের ভঙিমা।
চেহারার মত বাস্তব জীবনেও বড় অসহায় সোলাইমানের মা।
স্বামী মারা গেছে অনেক বছর আগে। সোলাইমান তখন হামাগুড়ি দেয়। বড় বোন মাত্র হাটতে শিখে তখন।
তাদের দিকে তাকিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেনা সোলাইমানের মা।
চাকরী করে গার্মেন্টস এ। একটানা প্রায় কুড়ি বছর বিভিন্ন গার্মেন্টস এ চাকুরী করে। মাঝের মধ্যে গার্মেন্টস থেকে ছুটে গেলে বাসা-বাড়ি তে বুয়ার কাজ।
সল্প পরিমাণ আয় দিয়ে বড় করতে থাকে ছেলে-মেয়ে দুটকে।
স্বপ্ন , এরা বড় হলে তাকে খাওয়াবে পরাবে।
তখন বসে বসে আরাম করে সময় কাটাতে পারবে সে।
ছোট খাটো করে মেয়ের বিয়ে দেয়। জামাতা খুচরা ব্যবসা করে। টানাটানিতে থাকার মত ব্যবসা।
হায় , মেয়েটা বুঝি মাকে সাহায্য করতে পারলোনা।
মায়ের স্বপ্ন।
হ্যা , পুড়ন করবে সোলাইমান।
মেয়েরা তো এমনেই স্বামীর ঘরে থেকে পর হয়ে থাকে মায়ের কাছ থেকে। এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু বাস্তবতা যে অনেক করুণ !
প্রেমে পরে বিয়ে করে সোলাইমান।
বৌ আসে ঘরে।
সোলাইমান এখন গ্যারেজে চাকরী করে। প্রায় ১০ হাজার টাকা আয় মাসের শেষে। বৌ ও চাকরি করে গার্মেন্টসে।
৪ হাজার টাকা বাসা ভাড়া দেয় সোলাইমান।
বৃদ্ধার বুড়ো বয়সে আরাম করে খাওয়ার স্বপ্ন বুঝি পূরণ হল !
বুড় ভোতা মেজাজের মায়ের খোটা সয়তে না পেরে বৌ চলে যায় বাপের বাড়ি। মা সহ কয়েকবার তাকে আনতে যায় সোলাইমান।
কিন্তু বৌ তার কথাতেই অটুট। সে স্বামীর সাথে একা থাকবে।
মেনে নিতে পারেনা সোলাইমান।
কিভাবে মেনে নিবে ?
এই যে সে মা জননী , যে নিজ হাতে আয় করে নিজ হাতে রেধে খাইয়ে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে।
নিজে কম খাইয়ে তাকে খাইয়েছে।
একদিন কি যেন হল সোলাইমানের। অস্থিরতা করতে থাকে সে।
মা জিজ্ঞেস করে , কি হয়েছে ?
হঠাৎ তর্কাতর্কি।
তুই আমার বৌকে এটা বলেছিস। তোর জন্যে আমার বৌ চলে গেছে।
লাগবেনা আমার তোর মত মা।
আমি বাসা ছেড়ে দিব , তুই কই যাবি যা।
বুড়ি শুনে আর কাঁদে।
মায়াবী অসহায়ত্বের মুখখানায় আরো মায়া ফুটে উঠে। আরো অসহায়ত্ব মেখে যায়।
মাস শেষ।
সোলাইমান সব গোছাচ্ছে।
হয়তো নতুন ঘর দেখেছে বৌকে সাথে নিয়ে।
একটা ভ্যানে করে ঘরের সব আসবাব নিয়ে যায় সোলাইমান।
মা দুয়ারে বসে বসে দেখে আর চোখের পানি ফেলে।
আশ্রয় নেয় পাশের ঘরের এক ভদ্রমহিলার কাছে।
ওখানে থেকে যোগাড় করে আরেকটি বুয়ার কাজ।
স্বপ্ন বুঝি তার পূরণ করলোনা কেউ।
সুখ বলতে কিছু বুঝি আর চোখে দেখা হলনা।
একটি অসহায় মায়ের বাস্তব গল্প।
জানিনা কত অসহায় মা আছে সোলাইমানের মায়ের মত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।