আজকের বিশ্বে বস্তুবিজ্ঞান (Material Science) একটি সবচেয়ে গুরুত্বপূণর্, ক্রমশ পরিবর্তনশীল এবং সদাবিকাশমান বিষয়। নিত্যনতুন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন বিজ্ঞানীদের ঈপ্সিত বস্তু বিনির্মাণে সমূহ সম্ভাবনার দ্বার উম্মুক্ত করে দিয়েছে। বিভিন্ন সম্ভাবনাময় মৌলের নিয়ন্ত্রিত সমন্বয়, সংশ্লেষ পদ্ধতির বৈচিত্রময়তা, সর্বোপরি একাধিক কন্ট্রোলিং প্যারামিটার বিযুক্ত থাকাতে এ বিষয়ে গবেষণা নতুনমাত্রা পেয়েছে। যার ঈপ্সিত ফসল হচ্ছে বহুল আলোচিত এবং জনপ্রিয় এডভান্সড্ ম্যাটেরিয়াল (Advanced Material)। এডভান্সড্ ম্যাটেরিয়ালগুলোর গুনাগুন বিশ্লেষণ এবং তাদের বিভিন্ন পিজিক্যাল, অপটিক্যাল ও ইলেকট্রিক্যাল প্যারামিটারের যোগসূত্র সম্পর্কে সম্যক ধারণা পেতে ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
বস্তুর সারফেস ট্রপোলজি তথা মরফলজি বিশ্লেষণের জন্য অপ্রতিদ্ব›িদ্ব ও বহুলব্যবহৃত যন্ত্র হচ্ছে Scanning Electron Microscope (SEM) ।
আজকের ন্যানোটেকনোলজি এবং মাইক্রোস্ট্রাকচার বিশ্লেষণে যার অবদান অতুলনীয়।
বর্তমানে ঢাকা গবেষণাগারের ইন্ডাষ্ট্রিয়াল ফিজিক্স ডিভিশনে অত্যাধুনিক সুবিধা সম্বলিত একটি ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ (Hitachi S-3400N) রয়েছে, যা যুগোপযোগী ও আধুনিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহ প্রকল্পের আওতায় সংগৃহীত। এ যন্ত্রের উল্লেখযোগ্য বিশেষত্ব গুলো হচ্ছে, Flexible Accelerating voltage range (300V-30kV), হাইভ্যাকুয়াম (High Vacuum less than 1 Pa) এবং ভ্যারিয়েবল পেসার পদ্ধতি (VP 6Pa-270Pa)। এ যন্ত্রের আরও একটি আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে Q Diffusion Pump এর পরিবর্তে Turbo Molecular pump এর ব্যবহার।
যা কয়েক মিনিটের মধ্যে স্যাম্পল চেম্বারকে ইমেজিং এর উপযোগী করে তুলে। আমরা জানি পরিবাহী নমুনার (Conductive Sample) ইমেজিং এ সাধারণত স্যাম্পল প্রিপারেশনে করতে হয় না। কিন্তু অপরিবাহী নমুনার (Non-Conductive Sample) ইমেজিং এ সারফেস কোটিং (Surface Coating) করা অত্যাবশকীয়। যাতে চার্জিং ইফেক্ট (Charging effect) দূর করা যায়। সুস্পষ্ট এবং হাইবেজুলেশন ছবির জন্য যা পূর্বশর্ত।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে “সারফেস কোটিং” দিলে বস্তুর প্রকৃত গাঠনিক বৈশিষ্ট্য (True surface feature) অনেকক্ষেত্রে দেখা সম্ভব হয় না। তাছাড়া এক্ষেত্রে স্যাম্পল প্রিপারেশন বেশ ঝামেলাপূর্ণ এবং ব্যয়সাপেক্ষ। কিন্তু আশার কথা প্রযুক্তির অভাবনীয় অগ্রগতি এ ধরণের অসুবিধা অনেকটা লাঘব করে দিয়েছে। এক্ষেত্রে সম্ভবত যুগান্তকারী সংযোজন হচ্ছে “ডুয়েল বায়াস চার্কিট” (Dual bias circuit)। ধন্যবাদ ডুয়েল বায়াস চার্কিট।
এ চার্কিট এর মহাত্ম হচ্ছে Variable pressure ও low voltage imaging এর ক্ষেত্রে emission current প্রয়োজন অনুযায়ী বাড়িয়ে দেয়া যাতে আউটপুট সিগন্যাল উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যায়। ফলশ্র“তিতে অপরিবাহী নমুনাসমূহ কোনরূপ সারফেস কোটিং ও স্যাম্পল প্রিপারেশন ছাড়াই তাদের প্রকৃত অবস্থায় (Natural state) ইমেজিং করা সম্ভব হচ্ছে। Dual bias circuit সুবিধা সম্বলিত আলোচ্য Hitachi S-3400N এর সুবিধা হচ্ছে এর High take off angle X-ray port যার সাহায্যে সম্পূর্ণ অজানা যে কোন কঠিন নমুনার ‘এ্যালিমেন্টাল বিশ্লেষণ’ দক্ষ ও অভিজ্ঞ অপারেটরের মাধ্যমে কয়েক মিনিটে করা সম্ভব। বলাবাহুল্য Non-destructive method এ সম্পূর্ণ অজানা নমুনার এলিম্যান্টাল বিশ্লেষণে EDX (Energy Dispersive X-ray spectrometry) এর জুড়ীমেলা ভার।
ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ সংযুক্তির ফলে বর্তমানে ইন্ডাষ্ট্রিয়াল ফিজিক্স ডিভিশনে চলমান R & D প্রকল্পে গতি সঞ্চার হয়েছে।
এ ছাড়া এ ডিভিশনের বিজ্ঞানীগণ SEM & EDX যন্ত্রের সাহায্যে বাংলাদেশ কাস্টমস, বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী অর্গানাইজেশন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রীদের গবেষণা ও এনালাইটিক্যাল সার্ভিস প্রদানে নিরলসভাবে কাজ করা যাচ্ছে। এ পর্যন্ত বায়োমেডিক্যাল স্যাম্পল, Ceramic, Composite material, Thin film, ফার্মাসিউটিক্যাল স্যাম্পল, Geologicalস্যাম্পল, লেদার স্যাম্পল এবং সলিড ফুড স্ট্যাপ (Solid Food Stuff) এর পাঁচ শতাধিক নমুনা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। পর্যাপ্ত গবেষণা-অর্থায়ন এবং স্যাম্পল Synthesize এর আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করতে পারলে অদূর ভবিষ্যতে এ ডিভিশনে বিশ্বমানের গবেষণা সম্ভব হবে বলে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।