আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এই নোয়াখাইল্যাদের এতো বদনাম ক্যান??? ...

When freedom is outlawed, then only outlaws will have freedom একটা পুরান জোকস দিয়ে শুরু করি, এক লোক ইলেক্ট্রনিক্স এর শো-রুমে গিয়ে সেলসম্যানকে জিজ্ঞাসা করল- ভাই, টিভিটার দাম কত? সেলসম্যানঃ আমি কোন নোয়াখাইল্যার কাছে টিভি বেচুম না নোয়াখাইল্যার তো আঁতে ঘা লেগেছে, মনে মনে ভাবছে, আমার মতন ট্যাকাঅয়ালারে দুইপয়সার সেলসম্যান দাম দেয়া না। খাড়াও!!! পরের সপ্তায় গাড়ি হাঁকিয়ে, স্যুটেড বুটেড হয়ে শো-রুমে গিয়ে সে আবার টিভির দাম জানতে চাইল। সেলসম্যানঃ আমি কোন নোয়াখাইল্যার কাছে টিভি বেচুম না নোয়াখাইল্যাঃ আমার গায়ে কি লেখা আছে যে আমি নোয়াখাইল্যা? সেলসম্যানঃ অবশ্যই!!! এক মাত্র নোয়াখাইল্যারাই মাইক্রোওয়েভ ওভেনকে ডাকে টিভি ! আমার মনে আছে, আমি যখন ক্লাস থ্রি তে পড়ি, তখন ম্যাডামের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলাম ‘আমার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী’। শুনে সবার কি যে হাসি!!!! ঢাকা ভার্সিটির বিবিএ মার্কেটিং এ প্রফেসর আব্দুল কুদ্দুস (উনি নিজেই কথা বলেন নোয়াখাইল্যা এক্সেন্টে) ক্লাসে জানতে চাচ্ছিলের - গ্রামের বাড়ি কোথায়?। একদম ব্যাকবেঞ্চে আমার পাশে বসা বন্ধুর কমেন্ট ছিল “নোয়াখাইল্যা গুলারে মার্ক কইরা রাখ, পড়ে বাইন্ধা পিডামু”।

আমি বললাম – আমাকে দিয়েই শুরু কর না!!! শুনে তার চোখ রসগোল্লা!!! কস্কি মমিন!!! এরকম কাহিনী বলতে বলতে ইতিহাস হয়ে যাবে। নোয়াখালীর মানুষকে অনেকেই একদম পছন্দ করে না । অনেকে মেয়েও বিয়ে দিতে চায় না। তাদের অনেক বদনাম। তারা খারাপ, কূট, ঘাড়ত্যাড়া।

অনেক যায়গায় তারা হাসির পাত্র। তাদের নিয়ে অনেক জোকস । আমি আমার দাদু/ জ্যাঠা / বাবাকে প্রশ্ন করেছিলাম, ছোটবেলাতেই – কেন নোয়াখালীর মানুষের এতো বদনাম? তাদের উত্তর ছিল এ রকম- ব্রিটিশ আমলে একবার ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের সময় (সম্ভবত সেটা ছিয়াত্তরের মনান্তর, বাংলা ১১৭৬ সালে) নোয়াখালী অঞ্চলে চরম খাদ্যাভাব দেখা দেয় । নোয়াখালির মানুষ একটা কাজ খুব ভালো পারত, এখনও পারে- সুর করে কোরআন তেলোয়াত করা, মিলাদ পড়ান। অনেক মানুষ খাবার / কজের খোঁজে নিজ ভূমি ছেড়ে অন্য জেলায় (এমনকি উত্তরবঙ্গ, বার্মা) চলে যায়।

সেখানে তারা প্রধানতঃ ইমামতি করে, মিলাদ পড়িয়ে জীবনধারণ করত। তখনকার সমাজে ইমাম বা হুজুরদের একটা আলাদা অবস্থান ছিল। সেই শক্তিশালি অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে, কূটবুদ্ধির জোরে (ক্ষেত্র বিশেষে লোক ঠকিয়ে) তারা ভূমি ও সম্পত্তির মালিক হয় উঠে। এখনও সিলেট ও উত্তরবঙ্গের অনেক যায়গায় আর্থিকভাবে নোয়াখাইল্যাদের অবস্থান অনেক শক্ত। সম্ভবত সেই থেকে নোয়াখালীর মানুষদের বদনাম।

উত্তরবঙ্গ, সিলেট এসব অঞ্চলের মানুষ এখনও নোয়াখালীর মানুষকে এড়িয়ে চলে। আরেকটা জোকসঃ একদল অভিযাত্রী এ্যামাজান জঙ্গল থেকে এক অদ্ভুতমানব ধরে এনেছে। তাকে চিড়িয়াখানায় রাখা হয়েছে যেখানে সবাই তাকে খোঁচায়। সে অদ্ভুত ভাষায় বলে – অ্যাঁই কিঁচ্চি ?? তার ভাষা শুনে শিশুরা আরো মজা পায়। একদিন এক নোয়াখাইল্যা চিড়িয়াখানায় এসেছে।

মজা পাবার জন্য সেও একটা খোঁচা মারল। তারপর ‘অ্যাঁই কিঁচ্ছি’ শুনেই সে চমকে উঠলো। তারপর সে জিজ্ঞাসা করল- তুঁই কিঁয়ারছ? তারপর জানা গেল অদ্ভুতমানবটিও নোয়াখাইল্যা…. মরাল অফ দ্যা স্টোরিঃ এ্যামাজান জঙ্গলেও নোয়াখাইল্যারা আছে নোয়াখাইল্যারা নিজেদের খুব টানে (ব্যাপারটা চট্টগ্রামেও আছে )। কোথাও একজন নোয়াখাইল্যা জায়গা (বাসা, অফিস, মার্কেট, ব্যবসা এমন কি ফুটপাত) পেলে, সে তার নোয়াখাইল্যা সঙ্গী সাথি, আত্মীয় স্বজনকে টেনে আনবে, একে অন্যকে টেনে তুলবে। নিজেরা নিজেরা হাতাহাতি- চুলাচুলি- মারামারি করলেও বাইরের লোকের সামনে তারা সবসময়ই একাট্টা।

পুরান ঢাকায় গেলে মাঝে মাঝে মনে হয়, নোয়াখাইল্যারা বুঝি সংখ্যাগরিষ্ঠ। ঢাকার জুরাইন, মুগদা এলাকায় নোয়াখালীপট্টি বলে জায়গা আছে। ২০০৩ সালে পা ভাঙ্গা কাজিনকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেছি। সিরিয়াল নং- ৫৭। বেচারা সিভিয়ার পেইনে চিৎকার করছে।

এক নোয়াখাইল্যা ভদ্রলোক (পড়ে জেনেছি, উনি কৃষি ব্যাঙ্কের একজন ডিজিএম) আলাপ করতে এসে জানলেন আমরা নোয়াখাইল্যা। তিনি বললেন আমার টোকেনটা (তার সিরিয়াল নং ছিল ১৩ বা ১৪ ) নিয়ে তোমরা আগে যাও । আমি পরে যাচ্ছি। এরকম অভাবনীয় সাহায্য খুব কমই খুজে পাওয়া যাবে। আমরা নোয়াখাইল্যা! উই আর প্রাউড টু বি এ নোয়াখাইল্যা ডিসক্লেইমারঃ ১।

আমি ইতিহাসের কচকচানি নিয়ে আসি নাই। ( আমার জানা) নোয়াখাইল্যাদের বদনামের ব্যাকগ্রাউন্ডটা, সাথে কিছু জোকস শেয়ার করলাম। সম্ভব হলে পক্ষে বিপক্ষে কেউ ঐতিহাসিক সুত্র দিতে পারেন। ২। টানা অফিস, ট্যুর আর আলসেমির জন্য আমি ব্লগে খুবই কম লিখি।

বেশিরভাগ সময় কমেন্টাই। ড্রাফট জেনেও যারা কমেন্ট করেছেন তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।