আলোর মিছিলের অপেক্ষায়... ছবরি ভাষা, কথার ভাষা, অভনিয়রে ভাষা কংিবা সঙ্গীতরে ভাষা, এই নানা ভাষা এ র্পযন্ত মানুষ কাজে খাটযি়ে আসছ। ে এর মধ্যে সঙ্গীত শুধু যা বলতে চায়, কংিবা যখন কাঁদাতে চায় বা হাসাতে চায়, কাকুত-িমনিতি জানাতে চায় তখন ছবরি ভাষা ও কথার ভাষাকে অবলম্বন না করওে নজিরে স্বতন্ত্র মীড় র্মূচ্ছনা ইত্যাদি দযি়ে সুব্যক্ত হয়ে উঠতে পার। ে রঙরে ভাষারও এই ক্ষমতা ও স্বাধীনতা আছ। ে আকাশরে রূপ নইে কন্তিু রঙরে আভাস দযি়ে সে কথা বল। ে
লোকনাট্য ঃ শব্দ-প্রতশিব্দ ও সংজ্ঞা
যে কোনো বষিয়কইে কোনো সংজ্ঞার মধ্যে সীমায়তি করা কঠনি।
তারপরে বষিয়টি যদি লোকনাট্যরে সংজ্ঞা হয়, তবে তা কঠনিতর হয়ে পড়। ে এজন্য অনকে বশিষেজ্ঞই র্বতমানে কোনো বষিয়রে সংজ্ঞা নর্দিশেরে চযে়ে তার বশৈষ্ট্যি নরিূপণরে উপরই অধকি গুরুত্ব আরোপ করনে। তবে সংজ্ঞা নর্ণিয়ে নানা প্রকার সমস্যা দখো দলিওে কোনো বষিয় সর্ম্পকে সংক্ষপেে সামগ্রকি ধারণা লাভরে প্রয়োজনে তার সংজ্ঞা নর্দিশে অপরহর্িায হয়ে পড়। ে
‘লোকনাট্য’ শব্দটি ‘লোক’ এবং ‘নাট্য’ এই শব্দদ্বয়রে সমন্বতি রূপ। এই শব্দটি লোকপ্রচলতি বা লোকসমাজ উদ্ভুত শব্দ নয়।
লোকন্যা শব্দ দ্বারা লোকসংস্কৃতরি যে বশিষ্টি ‘চবৎভড়ৎসরহম অৎঃ’-কে বোঝানো হয়ে থাক,ে বাংার বভিন্নি অঞ্চলে তা বভিন্নি রূপে ও বভিন্নি নামে পরচিতি। যমেন আলকাপ, বোলন, গম্ভীরা, কুশান, ডোমন,ি লটেো ইত্যাদ। ি এগুলরি প্রকৃতি বশ্লিষেণ করলে যে বশৈষ্ট্যি প্রতীয়মান হয়, ‘লোকনাট্য’ শব্দটি তা অনকোংশইে দ্যোততি করতে সক্ষম বলে সাধারণভাবে এগুলি বোঝাতইে লোকনাট্য শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে ।
লোকসংস্কৃতরি যে কোনো প্রকরণ বশ্লিষেণরে ক্ষত্রেে এই ‘লোক’ শব্দটি বশিষে তাৎর্পযর্পূণ বলে ববিচেতি হয়। ইংরজেী ‘ঋড়ষশ’ শব্দটি ব্যাখ্যার ক্ষত্রেে বশিষেজ্ঞ মহলে যে বর্তিক র্বতমান, তা সুবদিতি।
র্বতমান আলোচনায় সইে বর্তিক বস্তিারে অভপ্রিায় থকেে বরিত হয়ে বলা যায়, শব্দরে র্অথ পরর্বিতন ও প্রয়োজন সদ্ধিরি স্বাভাবকি নযি়মইে ‘ভড়ষশ’ শব্দটরি র্অথও বভিন্নি সময়ে বভিন্নি শাস্ত্রে বভিন্নি রূপ পরগ্রিহ করছে। ে সাধারণভাবে ‘ভড়ষশ’ বা ‘লোক’ শব্দ দ্বারা যা বোঝানো হয়ে থাক,ে তা হলো-
ওঃ ৎবভবৎং ঃড় ঃযব পড়সসড়হ ঢ়বড়ঢ়ষব ড়ৎ ঢ়বধংধহঃং ড়ভ ঃযড়ংব ধৎবধং ধহফ রং নধংবফ ড়হ ধ পষধংং ৎধঃযবৎ ঃযধহ ধহ বঃযহরপ ফরংঃরহপঃরড়হ .............. ওঃ পধহ নব ঁংবফ ঃড় ৎবভবৎ ঃড় ধ ঢ়ধৎঃরপঁষধৎ পষধংং ড়ৎ মৎড়ঁঢ় যিড় ধৎব ঃযড়ঁমযঃ ঃড় পধৎৎু ড়হ ঃযব ড়ষফ ঃৎধফরঃরড়হং, বংঢ়বপরধষষু রহ ঃযব ঃবৎস পড়ঁহঃৎু ভড়ষশ.’
র্অথাৎ ‘লোক’ বলতে পল্লী অঞ্চলে বসবাসকারী কৃষক বা জনসাধারণকে বোঝায়, যাদরে দহৈকি ও সাংস্কৃতকি বশৈষ্ট্যিগত সমতা র্বতমান এবং এই সমতা উত্তরাধকিার সূত্রে ও ঐতহ্যিানুসরণরে ধারায় তাদরে মধ্যে প্রবহমান।
যুগীর কাচ:
বাংলাদশেরে লোকজ নাট্য পরবিশেন রীতরি মধ্যে যুগীর কাচ অন্যতম। এটি শুধুমাত্র অন্যতম নয়, এটি প্রাচীন। এই পালটি প্রধানত বাংলাদশেরে জয়পুরহাট, নওগাঁ ও বগুড়া অঞ্চলে পরবিশেতি হয়।
জয়পুরহাট এলাকায় চন্ডমিঙ্গল পালটরি পাশাপাশি “যুগীর কাচ” পালটি যথষ্টে জনপ্রযি়। তবে এটি র্বতমানে হারযি়ে যাবার পথ। ে তবে তুলনামূলকভাবে “যুগীর কাচ” অধকি জনপ্রযি়। এখানে গায়নে মূলপালা পরবিশেন করনে, সাথে একজন সহযোগী থাক। ে
“যুগীর কাচ” পালাগানরে পরবিশেনার আখ্যানর্পবে লক্ষ্য করা যায়, মহাদবে মানব রূপধারণ করে পৃথবিীতে এলনে।
তার এক শষ্যি বাল্লক দাসকে বলনে, চল বৃন্দাবনে যাই। শষ্যি বাল্লক দাস মহাদবেরে সাথে যাত্রা করে এবং পথে তার বভিন্নি প্রশ্নমনে পড়। ে মানুষরে দহে, মানুষরে জন্ম, গুরু শষ্যিপরম্পরা, মৃত্যু, বভিন্নি রপিু, ইত্যাদি বভিন্নি প্রশ্নগুলো শষ্যি মহাদবেকে কর। ে মহাদবে একে একে সব প্রশ্নরে উত্তর দনে। এক সময় দবেী র্দূগকে খুঁজতে বরে হয় এক শষ্যিকে নযি়।
ে অবশষেে তারা বৃন্দাবনরে পথে রওনা দযে়।
“যুগীর কাচ” মূলত র্ধমীয় র্কৃতীমূলক পালা হলওে এর মূল কথা হলো দহেতত্ত্ব। এই পালা কোন কছিুকে মানত এবং যে কোন বশিষে উপলক্ষ্য, যমেন, পূজা-র্পাবন, কৃত্য অনুষ্ঠানে পরবিশেতি হয়। এই পালায় ঐ অঞ্চলরে সমসাময়কি মানস চত্রি ফুঁটে ওঠ। ে মৌখকি রীতরি নাট্যপালা যে কোন কালরে হোকনা কনে তা সম সাময়কি সময়রে কথা বলে এবং ভাষা নর্মিাণ কর।
ে “যুগীর কাচ” ব্যাখ্যার জন্য এর পরবিশেনা না রীতি ও ভাষা একটি গুরুত্বর্পূণ বাহন হসিবেে কাজ কর। ে এটি পরবিশেনার সময় গায়নে, কুশলিব, যন্ত্রীদল, র্দশক স্থান পায়।
যুগীর কাঁচ, দল পরিচিতি
জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল থানার জামালগঞ্জ ইউনিয়নের জয়সিংড়া গ্রামে একটি “যুগীর কাচ” দলের খোঁজপাই। দলটি পরিচালনা করেন শুশিল চন্দ্র দাস। যিনি এই পালায় শিষ্যের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন।
তিনি দলের বায়না থেকে শুরু করে যাবতীয় দায়িত্ব পালন করেন। পেশায় তিনি কৃষিকাজ করেন। মূল গায়েন অতুলচন্দ্র মন্ডল, যার বয়স ৫০-৫৫ এর মধ্যে। তিনি মূলত কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কাজের অবসরে তিনি এই দলে সময় দেন এবং কাজ করেন।
এরপর সহগায়েন অর্থাৎ শিষ্যের চরিত্রে যিনি অভিনয় করেছেন তিনি হলেন শুশিলচন্দ্রদাস (৫৫-৫৮)। তার ও প্রধান পেশা কৃষি। কাজ এর ফাঁকে তিনি একাজ করেন। দূর্গা এবং “যুগীর কাচ” এর দর্শক ছিল সকল স্তরের এবং সব ধর্মের। এতে বিবাহিত নারীদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি।
পাশাপাশি গ্রামের বয়স্কাদের সংখ্যাও ছিল অনেক। পাশাপাশি যুবক-কিশোর-কিশোরী শিশু শ্রেণীর দর্শকও ছিল। তবে শিশুদের সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে কমছিল। দর্শকদের বেশির ভাগ ছিল কৃষক, গৃহিনী, ছাত্র ও বিভিন্ন পেশার মানুষ।
“যুগীর কাচ” ধর্মীয় ভাব গাম্ভীর্য নিয়ে একটি লোক অভিনয়।
এটি উপস্থাপনের প্রথম উদ্দেশ্য-ই থাকে দেবতাকে তুষ্টি করা। সে দিক বিচার করলে এটির উপস্থাপনার পরিবেশটি ই ছিল যথোপযুক্ত, কেননা এগুলো মূলত পরিবেশিত হয় মন্দির প্রাঙ্গনে আঙ্গিনায় তাই ভাবগাম্ভীর্য ও শ্রদ্ধাবোধের স্থান পরিবেশটির সাথে সমতাপূর্ণ ছিল।
এটি মূলত পরিবেশিত হয় শরৎঋতুতে ও পূর্নিমা তিথিতে। বিশেষ করে শারদীয় দূর্গাৎসব থেকে লক্ষী পূর্ণিমার পরে ও এটি পরিবেশিত হয়। আবার মানত কিংবা বিভিন্ন পূজা উপলক্ষ্যে এটার আয়োজন করা হয়।
“যুগীর কাচের” জন্য যে স্থানটি নির্বাচন করা হয়েছিল সেটি ছিল একটি বাড়ির মন্দিরের আঙ্গিনা প্রাঙ্গন। মঞ্চটি ছিল মন্দিরের সামনে ভূমি সমতল একটি মঞ্চ। মঞ্চের বা আঙ্গিনার দুই পাশেই ছিল ঢালু ধানী জমি ও জলাশয়। আর অপর দুই পাশে ছিল বসতবাড়ি।
মঞ্চটি একটি খোলা ভূমি সমতল মঞ্চ।
মঞ্চের উপরে সামিয়ানা দেয়া ছিল। যে বাড়ির মন্দিরের সামনে এটি অনুষ্ঠিত হয়েছে সেটা ছিল একটু উঁচু স্থানে। পাশেই জলাশয় ও ফসলী জমি ছিল। স্থায়ীভাবে এটা কোন মঞ্চ ছিল না, গ্রামের লোকেরা একে খরাইও বলে। যে স্থানে চবৎভড়ৎসধহপব হয়েছিল তার চারপাশে দর্শকের অবস্থান ছিল।
আসরে সকল ধর্মের, বয়সের, শ্রেণীর দর্শকের আগমন ঘটেছিল। পালা পরিবেশনা হয় মন্দিরকে সামনে রেখে। সে স্থানে বিভিন্ন বয়সের মহিলা ও শিশু দর্শকের অবস্থান ছিল। অপর দুই পার্শে ছিল পুরুষদের অবস্থান, মন্দিরের ডানে অবস্থান ছিল মুসলমান দর্শকদের।
পরিবেশনা উপলক্ষ্যে:
“যুগীর কাচ” মূলত বিভিন্ন পেশা, বর্ণের মানুষের মানত কিংবা কোন কৃত্যমূলক অনুষ্ঠানে আয়োজন করা হয়ে থাকে।
এগান মূলত মৌসুমে কৃষকের ধান ঘরে উঠার পর অর্থাৎ পৌষ মাঘ মাসে বেশি হয়ে থাকে। ভক্তগণ ব্যক্তিগত উদ্যোগেই এগানের পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকেন। যেমন রোগমুক্তি আকাঙ্খা, মামলায় জয়লাভ, ভাল ফসল সহ যাবতীয় মানত এবং বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান। দলটি তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত বায়না ধার্য করা হয়। কাছাকাছি অঞ্চলে হলে এ বায়নার পরিমান কম হলেও দূরবর্তী অঞ্চলে বায়নার পরিমাণ বেড়ে যায়।
এছাড়াও পালা চলাকালীন সময়ে ফেরী বা প্যালা তোলা হয়।
আসরের বিবরণ:
মন্দির প্রাঙ্গন, যুগীর কাচ মূলত পরিবেশিত হয়, বাড়ির আঙ্গিনা, হাট-বাজার সহ যেকোন স্থানে। তবে সে স্থানে অবশ্যই একটি মন্দির থাকতে হবে। আমাদের পালাটি দলটির পরিচালক সুশিলচন্দ্র দাস এর বাড়ির আঙ্গিনায় আয়োজন করা হয়। যুগান চরিত্র অভিনয় করেন ৭০ বছর বয়সী সতিশচন্দ্র দাস।
তার পেশা ও কৃষি। তিনিই পুরুষ হয়েও নারী চরিত্রে অভিনয় করেন। কারণ দলের সব সদস্যই পুরুষ। দূর্গার শিষ্য হিসেবে অভিনয় করেছেন ৪৫ বছর বয়স্ক বিমল চন্দ্র দাস। তিনি কৃষি কাজকরেন।
এছাড়াও দোহারে যারা কাজ করেছেন তাদের নাম ও পরিচয় নিচে উল্লেখ করা হল:
ক্রমিক নং নাম বয়স ধন পেশা জাতি
১ সচিন চন্দ্র দাস (৫২-৫৫) হিন্দু (সনাতন) কৃষি বাঙ্গালি
২ সুনিল চন্দ্র দাস (৪০-৪৫) হিন্দু (সনাতন) কৃষি বাঙ্গালি
৩ জয়দেব চন্দ্র দাস (৪০-৪৫) হিন্দু (সনাতন) কৃষি বাঙ্গালি
৪ সচিন চন্দ্র দাস (৫০) হিন্দু (সনাতন) কৃষি বাঙ্গালি
৫ রঞ্জিত চন্দ্র দাস (৩৫-৩৬) হিন্দু (সনাতন) কৃষি বাঙ্গালি
৬ রমানী (৩৫-৩৬) হিন্দু (সনাতন) কৃষি বাঙ্গালি
৭ শচীন চন্দ্র দাস (৪০-৪৫) হিন্দু (সনাতন) কৃষি বাঙ্গালি
৮ বিমল চন্দ্র দাস (৪৫-৫০) হিন্দু (সনাতন) কৃষি বাঙ্গালি
৯ ফুল্লি মন্ডল (৫০-৫৫) হিন্দু (সনাতন) কৃষি বাঙ্গালি
১০ প্রফুল্ল চন্দ্র দাস (৪০-৪৫) হিন্দু (সনাতন) কৃষি বাঙ্গালি
প্রত্যেকের ধর্ম হিন্দু (সনাতন) এবং প্রত্যেকেই কৃষি কাজের সাথে জড়িত।
সাত দিন ব্যাপী হয়। সাধারণত রাত ১১টা থেকে শুরু হয়। রাতব্যাপী চলে পালার পরিবেশনা। পুরো পালা শেষ হতে দিনের আলো ফুটে ওঠে।
যুগী অভিনেতারা কখনও বর্ণনার মাধ্যমে, কখনও বর্ণনাত্মক গীতে, কখনও কাব্যে বর্ণনা আবার কখনও সংলাপের মাধ্যমে অভিনয় করেন। চরিত্রগুলো কখনো গদ্যে, কাব্যে, গানে আবার কখনও ছড়া কেটে তাদের সংলাপ বলে থাকেন। এ রীতিতে গায়েন ও অন্যান্য কুশীলব সংলাপ বিনিময়ে ও নৃত্য, গীত, বর্ণনা এবং চরিত্রভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকের কাছে পালা পরিবেশন করে থাকেন।
প্রত্যেকের হাতে অর্থাৎ যে সকল চরিত্রগুলো অভিনয় করেছে তাদের প্রত্যেকের হাতে মশাল ছিল। শিষ্যের হাতে শ্যামের লাঠি।
মহাদেবের হাতে ফুর্তি ছিল। নৃত্য: এই পালায় নৃত্যের ব্যবহার করে বিভিন্ন শারীরিক কসরত করেছে শিষ্য, এছাড়া মহাদেব এর বাদ্য সহযোগে সড়াবসবহঃ ছিল।
গীত:
এই পালায় সংলাপাত্মক, বর্ণনাত্মক পদ্য কবিতা ছিল। এগুলো শিষ্য, মহাদেব, দূর্গা দূর্গার শিষ্যের বিভিন্ন বর্ণনা, সংলাপে, গীতে পাওয়া যায়।
বাদ্য:
দোহারদের বাদ্য সমন্বয়ে নৃত্য, গীত পরিবেশিত হয়।
এটা অভিনয় সম্পর্কিত একটি উপাদান।
এছাড়াও এতে বিভিন্ন প্রকার শারীরিক কসরত, ট্রাস্ট গেমস, বিভিন্ন পরিক্রমা, রস, প্রবেশ স্থান ইত্যাদি দেখা যায়। যেগুলো ছিল অভিনয়ের সাথে সম্পৃক্ত। অভিনয় তাত্ত্বিকদের তত্ত্ব অনুযায়ী এই পালায় স্তানিস্লাড়স্কি, ব্রেকট্, ম্যায়ার হোল্ড-এর সকল প্রয়োগ দেখা যায়।
দৃশ্য বা ঘটনার সংযোগ স্থাপনের জন্য বর্ণনাত্মক গদ্যের ব্যবহার হয়ে থাকে।
মূলগায়েন গদ্যে ঘটনার বর্ণনার মাধ্যমে সংলাপত্মক অভিনয়ের ক্ষেত্র তৈরি করেন। বর্ণনাত্মক গদ্যের মাধ্যমে মূলগায়েন ঘটনার বা কোনো বিষয়ের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষন করে থাকেন। এমনকি জটিল শব্দগুলো গায়েন ও অন্যান্য কুশীলবগণ বর্ণনাত্মক গদ্যের মাধ্যমে তর্ক ও উপমার আশ্রয় দর্শকের কাছে ব্যাখ্যা প্রদান করে থাকেন।
পরিবেশনা রীতির অন্যান্য বৈশিষ্ট্য:
ক. পোষাক
পালা পরিবেশনাকারী মূল গায়েন অর্থাৎ মহাদেবের পোশাক হলো, জলপাই ও কমলা রং ও এর চেক শার্ট, সাতা ধুতি, পায়ে কালো মোজা, উত্তরীও সেটা পিঠে।
এরপর শিষ্য অর্থাৎ বাল্লক দাস এর জলপাই রং এর প্যান্ট, কালো ফুলহাতা সোয়েটার , মাথায় টোপ, গলায় হরিনামের মালা কোমড়ে ঘন্টা, পায়ে মোজা, কপালের মাঝে বাধা ফুর্তি।
পায়ে ঘুঙ্গুর।
দূর্গার পোশাক হলো, লাল শাড়ি, মাথায় ওড়না, লালচুড়ি, শাঁখা, পলা, পায়ে ঘুঙ্গুর, ব্লাউজে সোনালী ফিতা, পরচুলা ও গলায় মালা।
খ. রূপসজ্জা:
যুগীর কাচ পালায় গুরু, শিষ্য ও দূর্গা ছাড়া আর কেউ মেকআপ গ্রহণ করেনা। তাদের মেক-আপ নির্মাণের দ্রব্যাদি তারাই প্রস্তুত করে। এর বিবরণ দেয়া হলো:
প্রয়োজনীয় উপকরণ:
১।
জিঙ্ক অক্সাইড
২। পিউরি (হলুদ ও কাঠালী রং)
৩। সিঁদুর
৪। আরবী
৫। নারকেল তেল
৬।
আব্র“(চিকমিকি)
৭। পানি
৮। কাজল
৯। ম্যাচের কাঠি
১০। পাউডার
জিঙ্ক ৯৫%, পিউরি হলুদ ১%, পিউরী কাঠালী ১%, সিঁদুর ১%, নারকেল তেল ২% একত্রে মিশিয়ে একটি ঋড়ঁহফধঃরড়হ তৈরি করা হয়।
তারপর সেটা মুখে লাগানো হয়। তারপর মুখে পাউডার লাগানো হয়। তারপর পানি দিয়ে তা বসানো হয়। কিছুক্ষণ পর ভ্র“তে কাজল দেয়া হয়। কাজল মোটা করে এঁকে তৈরি করা হয় গোঁফ।
তারপর মুখে আব্র“ দেয়া হয়। কপালে কাঠি দিয়ে আঁকা হয়। দাগ ও লাল রং এর জন্য নারকেল তেল সিদুঁরে ব্যবহার করে, সেটা দিয়ে রাজ তিলকা কাটা হয়। ঠোঁটে ব্যবহার হয় সিদুঁর আর তেল। কপালে তিলক আকার জন্য ব্যবহার করা হয় জিঙ্ক অক্স্রাইড।
দ্রব্য সামগ্রী:
মহাদেবের হাতে মশাল থাকে, মাথায় থাকে জটা, হাতে ফুর্তি এবং পায়ে ঘুঙ্গুর। শিষ্য বল্লিক দাসের গলায় হরিনামের মালা, কোমরে ঘন্টি, হাতে শ্যামের লাঠি আর এক হাতে মশাল। মাথার ফুর্তি সুতা দিয়ে বাঁধা এবং পায়ে থাকে ঘুঙ্গুর।
দূর্গারলাল শাড়ী, ব্লাউজে ফিতাবাধা। গলায় মালা থাকে, হাতে লাল চিকন চুড়ি, গলা, শাঁখা, মাথায় ওড়না এবং পায়ে ঘুঙ্গুর।
দূর্গার শিষ্য জোকার হবার কারণে হাতে ও পায়ে ঘটি কাটা বিভিন্ন রং এর ঝালের হাতে শ্যামের লাঠি, মশাল এবং গায়ে ঘুঙ্গুর।
আলো:
সাধারণ আলোয় যুগীর কাচ পরিবেশিত হয়। যে সব জায়গায় বৈদ্যুতিক আলোর সুযোগ আছে সেখানে ২/৩টি একশত ওয়াটের বাল্বের আলো দিয়ে পালা পরিবেশিত হয়ে থাকে। বৈদ্যুতিক আলো না থাকলে, অভিনয় আসরে চার কোনায় হ্যাজাক লাইট দিয়ে যুগীর কাচ পরিবেশিত হয়। দিনের আলোয় পালা পরিবেশিত হয়না।
আমরা যে পালাটি দেখেছিলাম, সেখানে আলোর উৎস স্থল ছিল জেনারেটর চালিত এনার্জি বাল্ব। অভিনয়ের প্রয়োজনে প্রত্যেক চবৎভড়ৎসধহপব এর হাতে মশাল ছিল। এটাকেও পালার আলোর আরেকটি উৎস বলা যেতে পারে।
প্রবেশ স্থান:
প্রথাগত প্রসেনিয়াম মঞ্চের থেকে গাজীর গানের পরিবেশনায় প্রবেশ প্রস্থান ভিন্ন। কুশীলবগণের আলাদা কোনো গ্রি“নরুম নেই।
যন্ত্রীদল নাট্যক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করার সময় দাঁড়িয়ে অথবা বসে বসে তাদের সংলাপ বলে আবার বসে যান। মূলগায়েন ও সহগায়েন কেন্দ্রীয় বগ থেকে বরে হয়ে বহিঃবর্গে বা অভিনয় আয়তনে এসে অন্যান্য চরিত্রের ভূমিকায় অংশগ্রহন করে থাকেন। আবার গাজীর গানের পরিবেশরীতি এবং বিয়ের পালা।
অভিনয় শেষ করে কেন্দ্রীয় বগে বসে থাকেন। তাই গাজীর গান পরিবেশনায় নাট্যক্রিয়ার মধ্যে অংশগ্রহণকেই প্রবেশ প্রস্থান হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে।
যুগীর কাচ-এ লোকশিক্ষা:
“যুগীর কাঁচ” পালাটি পুরো কাহিনী দেখলে বোঝা যায়, পুরোপালাটিতেই শিক্ষা ও উপদেশমূলক কথাই বলা হয়।
আখ্যান পর্বের শুরুতে আমরা দেখতে পাই বলা হলো, গাছ আমাদের অতি প্রয়োজনীয়। গাছ কাটলে পরিবেশের ক্ষতি হয়।
এরপর দেখতে পাই একজন গর্ভবর্তী মায়ের দশমাসের গর্ভাবস্থার কথা। কোন মাসে কি অবস্থা হয় এবং কি কি কারণীয় তাও এখানে বলা হয়েছে-
১০-মাস দিসা
(দশ মাস জন্মের কথা)
১।
এক মাসের জন্ম হইলে জানে বার না জানে।
২। দুই মাসের জন্ম হইলে ঘানা ঘুনা শুনে। ।
৩।
তিন মাসের জন্ম হইলে লহু দলা দরা।
৪। চার মাসের জন্ম হইলে হারে মাংসের জোরা। ।
৫।
পঞ্চ মাসের জন্ম হইলে পঞ্চ পুষ্ম ফোটে।
৬। ছয় মাসের জন্ম হইলে এই গোপ পালটে। ।
৭।
সাত মাসের জন্ম হইলে সদের সাদ খাওয়ায়।
৮। আট মাসের জন্ম ইহলে নারী বপে¬র বড়ি যায়। ।
৯।
নয় মাসের জন্ম হইলে নবঘন স্মৃতি
১০। দশ মাসের জন্ম হইলে এই দেহের মুকতি। ।
দশ মাস দশ দিন নারীর পুরিত হইল। প্রসব বেদনা নারীর উপরে চাপিল।
।
উপর ঘর হইতে নারী দক্ষিন ঘরে গেল। চালের বাতা ধরে নারী তখন কাদিতে লাগিল। ।
ফটিকের স্তম্ভ ধরে নারী ধর্ম মান দিন।
জয় জয় বলে ছেলা ভূমিষ্ট হইল। ।
দারুন জন্ম এসে ছেলা গায়ে চর মারিল। চর খাইয়ে ছেলা তখন কাঁদিতে লাগিল। ।
একদিবসের বিজয় হলে নিহর বৃন্দ টলে।
দুই দিবসের বিজয় হলে রক্তের সঙ্গে মিলে। ।
তিন দিবসের বিজয় হলে রক্তে বিজে খোলা।
চার দিবসের বিজয় হলে বুন্দি মহরা।
।
পাঁচ দিবসের বিজয় হলে বুন্দি ফাসে ফাসে।
ছয় দিবসের বিজয় হলে সাজারেতে ভাসে। ।
সাত দিবসের বিজয় হলে শতদলে রয়।
।
নয় দিবসের বিজয় হলে জননী গর্ভে রইল।
দশ দিবসের বিজয় হলে সুতার সঞ্চয় হয়। ।
এখান থেকে লোক শিক্ষা হিসেবে পাই একজন মায়ের গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন কি অবস্থা হয় এবং সে সম্পর্কে প্রয়োজনীয় কথাও বলা হয়েছে।
এরপর দেখতে পাই স্বপ্নে কোন কিছু দেখলে কি ঘটে। এখানে বিভিন্ন স্বপ্নের কথা বলা হয়েছে এবং কার্যকারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যেমন বলা হয়েছে, কেউ যদি স্বপ্নে মাকে দেখতে পায় তবে, সে সোনা পাবে। কেউ যদি কচু শাক খায় তবে সে গ্রামের মন্ডল হবে। আবার কেউ যদি স্বপ্নে দেখে সাদা কাপড় পড়া অবস্থায়, তবে সে গুরুর দয়া পাবে-
বাল¬ক দাস/ শিষ্য : তোমারা কেহ স্বপন দেখেছো?
দোহার : দেখেছি।
শিষ্য : কেহ কচুর শাক খাই। কেহ মাংস ভাজা খাই। কেহ চাল ভেঙে পরে। কেহ হস্তি মোয়ার হয়। কেহ মৃত্তিকা ভক্ষণ করে।
কি স্বপন দেখিলে কি ঘটে এটি বলিলে আমি বৃন্দাবন যাব।
গুরু : স্বপনের গান
স্বপনেরতে সেবা জনা শুধুমাকে পাই,
নিশ্চয় জানিবে বাবা, সেই জনা সোনা পরে পাই।
স্বাপনেতে যেবা জনা কচুর শাক খাই,
নিশ্চয় জানিবে বাবা, সেই জনা গায়ের মন্ডল হয়।
স্বপনেতে যেবা জলা ধভল বস্ত্র পরে,
নিশ্চয় জানিবে বাবা, তার গুরু দয়া করে।
স্বপনেতে যেবা জনা মাংস ভাজা খাই
নিশ্চয় জানিবে বাবা, তার মহাবেদী হয়।
স্বপনেতে যেবা জনা, মৃত্তিকা ভক্ষন করে,
নিশ্চয় জানিবে বাবা, সেই জনা জমিদারী পাবে।
স্বপনেতে যেবা জনা কুকুরের সোয়ার হয়,
নিশ্চয় জানিবে বাবা, সেই ঘোড়ার সোয়ার পাই।
স্বপনেতে যেবা জনা ঘোড়ার সোয়ার হয়,
নিশ্চয় জনিবে বাবা, সেই হস্তি সোয়ার হয়।
স্বপনেতে যেবা জনা দোয়াি তরে যাবে,
স্বপনেতে যেবা জনার জুকে রক্ত খাই,
নিশ্চয় জানিবে বাবা, তার সুন্দর নারী হয়।
মহিসে মারিতে মৎস জয়ের নাই তার ফিছা
আগারাত্রে হাত স্বপন সব হইল মিছা।
বাল¬াক/শিষ্য : কিবা কহিলে গুরু। স্বপনেতে আমার জোকে রক্ত খেয়েছে। গুরুদেব আমি বিয়ে না করিলে বৃন্দাবন যাব না।
গুরু : আরে বাবা নারী হইল পায়ের বেরী, পুত্র বুকের খিল। এবার বান্দিবে লোহার জিঞ্জির।
বিয়া করিসনে বাছা, বিয়া করিসনা। অল্প বয়সে বিয়া করলে পেট টেপা হয়।
বাল¬ক/শিষ্য : রাত্রি বালে ডাক্তার খাব।
গুরু : আরে বাবা, আমার বিদেশ থেকে এসছি, সঙ্গে তো কোন টাকা পয়সা নেই। তুমি ভিক্ষা করিয়া আনিলে বিয়া করা হবে।
এখান থেকে আমরা দেখতে পাই যে, মানুষের স্বপ্নে বিশ্বাস আছে। এবং সে সকল স্বপ্ন তারা দেখে সেগুলোর প্রত্যেকটি না হলেও বিশেষ কিছু স্বপ্ন বিশেষ কিচু অর্থপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করে।
এরপর আমরা দেখতে পাই, গুরু শিষ্যের কথাতে উঠে এসেছে কোন দিনও রাতে বিয়ে ও বাসর ঘর করতে হয়। প্রত্যেক বারের নাম দেয়া আছে এবং কোন বারে বাসর ঘর করলে কি কি ঘটবে তারও কথা বলা হয়েছে-
সোমবারে সেবা জনা স্ত্রী সঙ্গ করে।
চয়মাসের হায়াৎ তার যাবে কমে পরে।
।
মঙ্গলবারে সেবা জনা নারীর ঘরে যাবে।
ভাঙ্গর বাসর গৌরি দেবীর মরে। ।
বধবার সেবা জনা নারীর মরে যাবে।
রজনী প্রভাব হইলে সুখখানি শুকাইবে। ।
বৃহসবারে সেবা জনা লইবে যুবতি।
পূর্বে উঠিবে ভানু, পশ্চিমে জ্বলে বাতি। ।
শুক্রবারে বাসি জ্যোস্না সর্বলোকে কয়।
সেই দিবসে নারীর মরে যাওয়া উচিত নয়। ।
শনিবারে সেবা জনা নারী মরে যাবে।
রাহুতে করে গ্রাস শনি পিছে ফিরিবে\
রবিবারে সেবাজনা নারীর মরে যাবে।
গায়ে জ্বর মাথায় বেদনা যমের মতো হবে \
বাল¬ক/শিষ্য : বুধবার দিনটা বদসে দেন। ঐদিন জয়পুর হাটের দিন। আদায় পত্রের দিন। আদায়পত্র করে, মাছ কিনে, সদাপত্র করে রাত্রি ১০টায় বাড়ি যায়ে রান্দে বারে খেয়ে রাত্রি শেষ হবে।
বিধিন কলম লিখন বদল হবে না।
এখান থেকে শিক্ষা লাভ করা যায় যে, কোন রাত্রে বাসর ঘর করা উচিৎ। এই নিয়ম মেনে চললে সুখের ও দীর্ঘস্থায়ী হয়।
এরপর ধর্ম সংক্রান্ত কথায় ইসলাম ধর্মের আরবি বর্ণের কথাও বর্ণনা আছে। প্রত্যেকটি হরফ বা বর্ণের মধ্যে বিভিন্ন অর্থ রয়েছে এবং প্রত্যেক বর্ণ ও শব্দের যথেষ্ট তাৎপর্য রয়েছে। এখানে শুধুমাত্র জীবন শিক্ষার কথা বলা হয় না, বিভিন্ন বিষয় ও ধর্ম সম্পর্কেও অবহিত করা হয়।
কোরান-এ কয়টি হরফ রয়েছে, অর্থাৎ কয়টি আরবি বর্ণ দিয়ে কোরান লেখা হয়েছে তার নিখুত বর্ণনা রয়েছে-
বালকের ছোয়াল : আচ্ছা গুরদেব কোরানে ধরে হয় হরপ।
গায়েন বলিবে : আরে বাবা কোরন ধরে তিরশি (ত্রিশ) হরফে।
বালক বলিবে : এখন আছে ত্রিশ হরফ, আর দশ হরফ কে নিল?
গায়েন : আরে বাবা দশ হরফ দশ ফকিরে নিল।
বালক : কোন কোন দশ ফকিরে নিল?
গায়েন : এই কথা বলিতে পারিব না...
এখান থেকে বুঝতে পারছি যে, মুসলমানদের ধর্ম শিক্ষা নিয়ে আলোচনায় কোরআন ও এর বর্ণ সম্পর্কে জানা যায়।
“যুগীর কাচে” প্রান্ত পান্ডুলিপিটির পুরোটাই গুরু-শিষ্যের সংলাপ ভিত্তিক।
এখানে গুরু-শিষ্য একসাথে বৃন্দাবনে যাবার জন্য বের হয়। গরুর জগত সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান। সে হিসেবে শিষ্য একেবারে নতুন। তার জগৎ সম্পর্কে জ্ঞান নিতান্তই কম। জগতে একজন মানুষ বেঁচে থাকতে হলে যে সকল বিষয় প্রাত্যহিক জীবনে প্রয়োজন তার প্রায় সবই গুরু-শিষ্যের কথায় বলে এসেছে।
শিষ্য নতুন কোন বিষয় দেখে কিংবা নতুন মনে হয় তখন সে তার গুরুকে সে বিষয়ে প্রশ্ন করে। “গুরু ঐ বিষয় সম্পর্কে তাকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রদান করে। এভাবেই পুরো পালাটি শিক্ষামূলক কথার মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
মানুষ তার নিজ প্রয়োজনের তাগিদে সবসময় স্বীয় শৈল্পিক মনের পরিচয় দিয়েছে। শিল্পের জন্য মূলত শিল্পের সৃষ্টি।
তাই চিন্তার নান্দনিকতার পরিচয় মেলে মানব সৃষ্ট নানা উপকরণে। সভ্যতা বিকাশের সাথে সাথে শিল্প উপাদানেরও বিকাশ সাধন হয়। লজ্জা নিবারনের জন্য যেমন বস্ত্র তৈরি করেছে তেমনি বস্ত্র তৈরি করতে গিয়ে তার প্রস্তুত প্রণালী, নকশা অংকন সবকিছুতেই নান্দনিকতার পরিচয় দিয়েছে। “যুগীর কাচে” প্রান্ত পান্ডুলিপিটির পুরোটাই গুরু-শিষ্যের সংলাপ ভিত্তিক। এখানে গুরু-শিষ্য একসাথে বৃন্দাবনে যাবার জন্য বের হয়।
গরুর জগত সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান। সে হিসেবে শিষ্য একেবারে নতুন। তার জগৎ সম্পর্কে জ্ঞান নিতান্তই কম। জগতে একজন মানুষ বেঁচে থাকতে হলে যে সকল বিষয় প্রাত্যহিক জীবনে প্রয়োজন তার প্রায় সবই গুরু-শিষ্যের কথায় বলে এসেছে। শিষ্য নতুন কোন বিষয় দেখে কিংবা নতুন মনে হয় তখন সে তার গুরুকে সে বিষয়ে প্রশ্ন করে।
“গুরু ঐ বিষয় সম্পর্কে তাকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রদান করে। এভাবেই পুরো পালাটি শিক্ষামূলক কথার মধ্য দিয়ে শেষ হয়। মৌখিক রচনা লোকনাট্যের বিশেষ বৈশিষ্ট্য রূপে পরিগণিত হলেও এই বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনশীল লোক সং¯কৃতির প্রেক্ষাপটে আংশিক সত্য রূপে প্রতিভাত। লোকসমাজে পূর্বের তুলনায় সাক্ষরতার হার ক্রমবর্ধনের ফলে অক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন অনেক লোকশিল্পী পাার লিখিত রূপ দান করেন। লোকসংস্কৃতির নানাবিধ পরিবর্তনশীলতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই লোকনাট্যেও নানাবিধ পরিবর্তন প্রতীয়মান হয়।
পালার লিখিত রূপ তার মধ্যে অন্যতম। তাই লোকনাট্যে পালা লিখিত হলেই যে তা লোকনাট্যাঙ্গনে ব্রাত্য বলে গণ্য হবে, তা নয়। লোকনাট্যের অপরাপর বৈশিষ্ট্যের সামগ্রিক মূল্যায়নের প্রেক্ষিতেই কোনো পালা লিখিত হলেও তা লোকনাট্য বলে বিবেচিত হতে পারে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।