আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বস্তিবাসীদের অমানবিক অবস্থা ও দারিদ্র্য দূরীকরণে সরকার ও বিত্তশালীদের এগিয়ে আসা উচিত

ভালো হওয়ার চেষ্টায় আছি.... রাজধানীর বিভিন্ন বস্তি ঘুরে দেখা গেছে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে রাজধানীর বস্তিবাসী। ঢাকার প্রায় সবকটি বস্তিতেই স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, বিদ্যুৎ এবং বিশুদ্ধ পানির কোনো সুব্যবস্থা নেই। নাগরিক সুযোগ-সুবিধাবঞ্চিত বস্তিবাসীর জীবন ধারণের মান যেন ক্রমেই নিম্নমুখী হচ্ছে। বস্তির ঘিঞ্জি পরিবেশ, অপ্রতুল পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং অধিক ভাড়ার পাশাপাশি নানা দুরবস্থায় বস্তিবাসীর জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। এর ওপর মৃত্যুঝুঁকিতে রয়েছে নগরীর লাখ লাখ বস্তিবাসী।

এ পর্যন্ত কোনো সরকারই বস্তিবাসীর উন্নয়নে আন্তরিক হয়নি। সারাদেশেই কর্মসংস্থান প্রয়োজনের তুলনায় কম থাকায় ঢাকায় বস্তিবাসীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। রাজধানীতে কাজের সন্ধানে আসা ছিন্নমূল মানুষের সিংহভাগই আবাসন হিসেবে বস্তিকে বেছে নিচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ঢাকার বস্তিবাসীর ৯৩ ভাগই এসেছে দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে। ক্রমশ বস্তিতে বসবাসকারীর সংখ্যা বাড়ছে।

নগরীর রেললাইনের দু’পাশ দিয়েও আছে অসংখ্য বস্তি। রেললাইন সংলগ্ন বস্তিতে বাস করা লোকদের অনেকেই রেল দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। অসতর্কতার কারণে রেলে কাটা পড়ে মারা যাচ্ছে নারী-শিশুসহ সব বয়সের মানুষ। কারওয়ান বাজার রেললাইন বস্তিতেই বর্তমানে বসবাস করছে ১ হাজার পরিবার। এই রেললাইন বরাবরই খিলগাঁও ও তেজকুনিপাড়া বস্তিতে ৩ হাজার ৫৩টি বস্তিঘর রয়েছে।

এসব বস্তিতে খুপরি আকৃতির ঘরের ভাড়া ৫শ’ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। অনেক বস্তিবাসীর ঘর তুলতে হয় আবার নিজ খরচে। ক্রমাগত নদী ভাঙনের শিকার হয়ে, টাউট-দালালদের খপ্পরে পড়ে, কর্মসংস্থানের অভাবে উদ্বাস্তু মানুষ বেঁচে থাকার তাগিদে স্রোতের মতো ঢাকামুখী হচ্ছে। এর ওপর রয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ভূমিহীন-কর্মহীন মানুষ শহরে এসে যে কাজই পাচ্ছে, তাই করছে।

অনেক সময় তারা দুষ্কৃতকারীদের উস্কানিতে জড়িয়ে পড়ছে অবৈধ কাজেও। ভ্রাম্যমাণ দেহব্যবসায়ী, দালাল কিংবা ভিক্ষুকে পরিণত হচ্ছে অনেকে। এদের এক বিশাল অংশ বাস করছে রেলস্টেশনে, বাস টার্মিনালে ও আন্ডারপাসে। সেখান থেকেও চাঁদা আদায় করছে মাস্তান, নিরাপত্তাকর্মী ও পুলিশ। এ অবস্থায় যাদের গা-গতরে শক্তি আছে তারাই বস্তি তুলে বা বস্তির মালিককে সামান্য ভাড়া দিয়ে নামমাত্র সংসার পেতেছেন।

বস্তিতে এমনও দৃষ্টান্ত আছে, উচ্ছেদ অভিযান হলে স্বামী-স্ত্রী মিলে মাথায় করে বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন গোটা সংসার। অথচ এদের পরিচয় মানুষ। রাষ্ট্রের নাগরিকও বটে। জাতীয় জনসংখ্যা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের এক জরীপে দেখা গেছে, শহরের বস্তির শিশুরা তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। তাদের মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর শতকরা প্রায় ৫৬ ভাগ বয়সের তুলনায় শারীরিক গঠন খর্বকায়।

বাকিদের বয়সের তুলনায় ওজন কম। তারা সময়মতো রোগ প্রতিষেধক টিকা ও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে না। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বস্তিগুলো ঘুরে দেখা গেছে, পরিবারের অভাব ঘোচাতে বাবা-মা দুজনই কাজে গেছেন। বাবা-মায়ের অনুপস্থিতিতে শিশুরা একাই ঘরে অথবা তাদের সমবয়সীদের সঙ্গে রাস্তায় খেলা করছে। ফলে তারা বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন এবং দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে অহরহ।

কোনো কোনো শিশু পাচারের শিকার হচ্ছে। টাকার অভাবে বাবা-মা তাদের শিশু সন্তানদের লেখাপড়া করাতে পারেন না। উল্লেখ্য, মানুষ শখ করে কিংবা আনন্দে বস্তিতে ঠাঁই নেয় না। শহরের বস্তিগুলোতে যে কেবল দুর্বৃত্ত, সন্ত্রাসী, মাদক বিক্রেতা, খুনি, ধর্ষক কিংবা সমাজবিরোধীরা আখড়া গেড়েছে এমনটি নয়, সবাই জন্মসূত্রে হতদরিদ্র ধোপা, নাপিত-মুচি পরিবারের সদস্যও নয়। মিঞা, ভুঁইয়া, তালুকদার, দফাদার, শিকদার, তফাদার, বেপারী, রাড়ী, মৃধা, সমদ্দার প্রমুখ বংশীয় লোকেরাও সর্বস্বান্ত হয়ে কিংবা পিতৃপুরুষের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ হয়ে বাঁচার তাগিদে এই ঘিঞ্জিময় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।

এদের অনেকেরই সুখের সংসার ছিল। কারো বা পুকুর ভরা মাছ, গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা দুধের গাভী ছিল। হয় নদীর করাল গ্রাসে পৈতৃক ভিটেমাটি হারিয়ে অথবা কোনো লুণ্ঠন-নিষ্পেষণের শিকার হয়ে প্রিয় গ্রাম, প্রিয় লোকালয় ছেড়ে ঢাকার বস্তিতে মানবতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। তা ছাড়া এটা ভাবার কোনোই কারণ নেই যে বস্তিবাসী নগর জীবনের বোঝা, জঞ্জাল। বরং তাদের কল্যাণে শহর জীবনের চাকা সচল রয়েছে, বিত্তবানদের সাজানো ঘরবাড়ি তকতকে পরিষ্কার আছে, নির্বিঘ্ন-নিরুপদ্রবে রিকশায় ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানো যাচ্ছে।

শহর চলছে ঘড়ির কাঁটার মতো সহজ ও সঠিক ছন্দে। প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য বিদেশেও বস্তি রয়েছে। সিঙ্গাপুরে ঢাকার মতিঝিল সরকারি কলোনির মতো সারি সারি পাকা ভবনে বস্তিবাসীদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে একদিন তারাও আমাদের দেশের মতো আলো-বাতাসহীন ঘিঞ্জি বস্তিতে বসবাস করত। সরকারি উদ্যোগেই ক্রমান্বয়ে তাদের পুনর্বাসন করা হয়েছে।

তাদের বস্তি থেকে নিজ নিজ কর্মস্থলে আসা যাওয়ার যানবাহনেরও ব্যবস্থা রয়েছে। আছে কর্মক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরে এসে নানা রকম স্বস্তির ব্যবস্থা। শুধু সিঙ্গাপুর নয় বস্তিবাসীদের পুনর্বাসন করা হয়েছে বিশ্বের সব সভ্য দেশেই। বলা হয় বাংলাদেশের মালিক এ দেশের জনগণ। সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে লেখা রয়েছে এ দেশের মানুষের মৌলিক চাহিদা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা নিশ্চিত করবে সরকার।

সেই সরকার যখন বুলডোজার দিয়ে বস্তিবাসীদের ভিটেমাটি নিশ্চিহ্ন করে তখন সংবিধান ও মানবতা উভয়ই আড়ালে কাঁদে। পৃথিবীর কোনো স্বৈরাচারী সরকারও এ কথা বলতে পারবে না যে বস্তিবাসীদের বাঁচার অধিকার নেই। পরিবেশের কথা ভেবে আদালত বস্তি উচ্ছেদের যে নির্দেশ দিচ্ছে সেখানেও মানবিক দিকটির কথা ভাববার যথেষ্ট অবকাশ আছে। বাস্তবে দেখা যায় আমাদের সরকার বস্তিবাসীদের পূনর্বাসন ও দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য কিছু তো করেই না উল্টো পারলে বস্তিবাসীদর শেষ ঠিকানাটুকু উচ্ছেদ করে দেয়। এটা বস্তিবাসীর প্রতি সরকারের প্রকাশ্য জুলুম।

এ জুলুম বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে বস্তিবাসীকেই এ জুলুম বন্ধে একতাবদ্ধ ও সক্রিয় হতে হবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।