হাইস্কুলের নীচের দিকে পড়ার সময় খুব মনোযোগ দিয়ে স্কাউট করতাম। পরে অবশ্য বি এন সি সি। বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর। দুইটা সংগঠন আমাকে খুব টানতো। স্কাউট করার সময় সময় আমাদের হাতে ছোটো এক টুকরো দড়ি থাকতো।
মুলতঃ জাম্বুরীতে গিয়ে তাবু বানানো কিংবা অন্য কোনো কারনে গিট্টু মারার দরকার হলে যেন সফল গিট্টু মারা যায়-তা শেখার ব্যবস্থা ছিলো স্কাউটে। একটা গিট্টু এখোনো খেয়াল আছে-রিপ নট বা জ্জীবন রক্ষার গেরো বলতাম স্কাউটের ভাষায়। সেই গিট্টুটা এখোনো মনে আছে। এই গিট্টুটা খুব সহযে দেওয়া যেতো আবার খুব সহযে খোলা যেতো।
খুব মজা পেতাম।
আমরা যখন রাজনীতি সচেতন হচ্ছি-তখনো আমরা স্কুলের খুবি নীচের দিকের ছাত্র। তখনকার ছাত্র সংগঠন গুলো খুব আন্তরিকভাবেই কাজ করতো মানে নেতারা ছিলেন খুবি আন্তরিক! বেশীরভাগ ছাত্র-সংগঠনের নেতাদের বক্তব্যে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেতো ছাত্র সমাজের দাবী-দাওয়া। খুব গুরুত্বপুর্ণ কিছু ইস্যু সামনে ছিলোঃ শিক্ষাখাতে জাতীয় আয়ের ৮% বরাদ্ধ করা হোক কিংবা সার্বজনীন বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষানীতি চাই কিংবা কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা নীতি চালু কর। আজকের ইস্যু ঠিক কি? আমার মাথায় ধরেনা! ঠিক সেই সময়ে এক মোটামুটি নতুন জিনিষ মাঠে নামলো -শহীদ জিয়ার আদর্শের ছাত্র সংগঠন। তার আগেও ছিলো কিন্তু তেমন কুনু পাত্তা পায় নাইক্কা।
আমাদের ক্লাশের বন্ধুদের মাঝেও দুই একজন শহীদ জিয়ার ভক্ত হয়ে পড়লো। প্র্যাক্টিক্যাল রুমে মুন্না-শিমুলের সাথে নেসারের বাত চিত চলতেছেঃ
-শহীদ জিয়া ছিঁড়া গেঞ্জী পরতেন!
-কেন?
-এতো সাদাসিধা জীবনযাপন করতেন তিনি।
-তার মানে কি ছিড়া গেঞ্জী গিট্টু দিয়া পরতো? শিমুল আস্তে কইরা কইলো।
-আমি কেমনে কমু? নেসার একটু দমে গেলো।
-ধুর চোখে রেভান সানগ্লাস কিংবা জিন্স প্যান্ট পরতে সমস্যা হয়না শুধু গেঞ্জী ছিঁড়া।
একটা সানগ্লাসের দাম কি গেঞ্জী থেইক্কা কম? মুন্না আবার কইলো।
-তোরা সবকিছুতে উলটা পালটা দেখোস! নেসার মরিয়া।
-ভালো কথা নেসার-তগো নেতা শহীদ জিয়া তো প্রচুর কোট-টাই পরতেন-তিনি কি কোট-টাই গিট্টু দিয়া পরতো? শিমুল আবার কইলো।
নাজেহাল নেসার একটু দূরে গিয়ে স্লাইড ক্যালিফার্স দিয়া দুনিয়া মাপা-মাপি করতাছে।
এ ধরনের স্মৃতিচারনের কারন আছে! এখন চলছে সেপ্টেম্বর মাস।
সেপ্টেম্বর মাসে জন্ম নিয়েছিলো আমাদের জাতির এক আজিব সন্তান। এমাসেই সেই তথাকথিত গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের জন্ম হয়েছিলো। আর তার পার্শ-প্রতিক্রিয়া এ জাতি এখোনো ভোগ করে যাচ্ছে। সেই গিট্টু মারা গেঞ্জীর গল্পে কতো অভি-কতো নীরু-কতো পাগলা শহীদের জন্ম নিয়েছে-তা আল্লাহ মালুম। তখন যদি মানুষের মনে প্রশ্নটা ভালো করে উঠতো যে-যে মানুষ দামী সানগ্লাস-দামী রিষ্টওয়াচ-স্যুট টাই পরতে পারে তার গেঞ্জী কেনো ছিঁড়া হবে? কিংবা তাঁর স্যুটকেস কেনো ভাংগা হবে? তাহলে হয়তো অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেতো! আমরা পেতামনা হাঁ-না মার্কা নির্বাচন কিংবা রাজনীতিবিদ কেনা-বেচার খেলা।
কিংবা পেতামনা আব্দুর রহমান বিশ্বাস নামে একজন রাজাকার প্রেসিডেন্ট। কতো কিছুই হতে পারতো কিংবা কতো কিছু হতে পারতোনা! যে ৪৭ এর ভুল আমরা শুধরেছিলাম ৭১ এ ৩০ লাখ মানুষের রক্তের বিনিময়ে। এখন আবার ধর্মাশ্রয়ী সেই সাম্প্রদায়িকতার চাষ-বাস। আবার সেই ভেদাভেদ মানুষে-মানুষে।
যেই গেঞ্জীওয়ালার ছিঁড়া গেঞ্জীতে গিট্টু দিতে গিয়া গোটা দেশের হাজার-হাজার মানুষের মন-মণনে-চেতনায় করোটি-মগজে গিট্টু দেওয়া হলো আর সিঁদকাঠি দিয়ে কাটা সিঁদ দিয়ে ফিরে আসলো পরাজিত হায়েনার দল।
ফেরার পথ কিভাবে? গিট্টু কি খুলছে? না আরো শক্ত করে এঁটে বসছে?
কান্ডারী হুঁশিয়ার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।