আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডিটেকটিভের পুনরাগমন

ঘরের খাই আর বনের মোষ তাড়াই ০১ ২১ ডিসেম্বর, ২০১২ পিকাডেলি সার্কাস, লন্ডন নিজের ডেস্কে বসে একটা মেডিকেল জার্নালের পাতা ওল্টাচ্ছিল ইন্টার্নি ডাক্তার এলিনা ওয়াটসন। তার চাকরি জীবনে কখনও লোডশেডিং দেখেনি সে এখানে। কিন্ত গতকালের প্রলয়ংকারী ঝড় পুরো ইংল্যান্ডকে তছনছ করার পর থেকে বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন ব্রায়ান ক্রায়োজেনিক রিসার্চ সেন্টার। ইমার্জেন্সী পাওয়ারও প্রায় শেষ। তবে এতে অখুশি নয় এলিনা।

এখানে কাজ করার মজাই আলাদা। কারন এখানে রোগ নেই, রোগী নেই। শুধু আছে সারি সারি ক্যাপসুল আর ক্যাপসুল এর ভেতরে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের অর্ধমৃত দেহ। তাই এখানে কাজও ওনেক কম। নতুন বডিগুলো আসলে যা একটু কাজ।

বাকিসময় শুধুই তদারকি। এলিনার সাধারনত লেভেল ৬ এর ব্লক এ তে কাজ করলেও এই দুর্যোগের পরের রাতে তাকে ব্লক বি এর দায়িত্বও নিতে হয়েছে। এই ব্লক টিকে নাকি বাড়তি কেয়ারে রাখা হয়। সাধারনত কোনো ইন্টার্নীকে এখানকার দায়িত্ব দেয়া হয়না। কিন্ত এলিনা যেনতেন ছাত্রী নয়।

অক্সফোর্ড থেকে রেকর্ড নাম্বার আর রাণীর স্বর্ণপদক নিয়েই ডাক্তার হয়েছে সে। এখন কর্মক্ষেত্রেও নিজের প্রতিভার প্রমান দিচ্ছে সে। তাই এলিনাকে দায়িত্বটা দিতে আপত্তি করেনি কেউ। আজ এলিনার ডিউটি রাত ৮টা থেকে। কিছুক্ষন আগে কিউরেটর রাউন্ড দিয়ে জাবার পর থেকে লেভেল ৬ এ এলিনাই একমাত্র সজাগ মানুষ।

অন্য ব্লক এর ডাক্তাররা নিচে ক্যাফেতে আড্ডা দিচ্ছে যদিও ডিনার ব্রেক আরো আধা ঘন্টা পর। ক্যাফেতে যাবার জন্য ব্যাগটা গোছাতে যাবে এলিনা এমন সময় ব্লক বি থেকে ভেসে এল ইমার্জেন্সী বিপ এর আওয়াজ। কৌতুহলী এলিনা ছুটে যায় ব্লক বি এর দিকে। সাব ব্লক ২ থেকে এসেছে বিপ। সাব ব্লক এর দরজা থেলে ভেতরে ঢুকতেই ব্যাপারটা বুঝতে পারে এলিনা।

ক্যাপসুল ২২১ এর ইন্ডিকেটরে নীল এর বদলে জ্বলছে লাল আলো। দৌড়ে ক্যাপসুল টার কাছে গেল এলিনা। কন্ট্রোল মনিটর চালু করল কাপা কাপা হাতে। ভেতরের বডিটায় অস্বাভাবিক কিছু হচ্ছে তা আগেই ভেবেছিল এলিনা। কিন্ত এখন যা দেখছে তা দেখে নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছেনা এলিনা।

পাওয়ার সাপ্লাই এর ঘাটতি বলে ক্যাপ্সুল টা বডিটাকে নিয়ন্ত্রন কর্তে হিমশিম খাচ্ছে। তবে বডিটার অবস্থা খারাপ না হয়ে উন্নতির দিকে যাচ্ছে। তাপমাত্রা বাড়ছে এমনকি মাঝে মাঝে হার্টবিটও আসছে। কাউকে ডাকার চিন্তা করল এলিনা। কিন্ত এখানে যারা আছে তারা কেউ এলিনার চেয়ে বেশি কিছু করতে পারবেনা।

তাই এলিনা নিজেই ঝুকি নেয়ার সিদ্ধান্ত নিল। প্রথমেই ম্যানুয়াল ইজেক্ট ব্যবহার করে প্রথমেই ক্যাপসুলের ঢাকনাটা খুলে ফেলল এলিনা। সে দেখতে পেল একজন মধ্যবয়সী পুরুষের দেহ। দীর্ঘদেহী, শ্বেতাংগ, ককেশিয়ান, শক্তসমর্থ চেহারা। ক্যাপসুল এর লিকুইড নিউট্রির কল্যানে মাথায় চুলগুলোও ঠিক আছে।

এমনকি ঠিক আছে হাতের পায়ের নখগুলোও। লোকটির সাদা হয়ে যাওয়া ত্বকের নিচে ধমনীতে রক্তপ্রবাহ শুরু হওয়ায় লালচে একটা আভা আসছে। অপার বিস্ময়ে লোকটির দেহের ক্রিয়া কলাপ দেখতে থাকে। গত তিন ঘন্টায় এলিনার উপর দিয়ে যে ধকল গেছে তা সে কখনোও ভুলবে না। লোকটার দেহের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কে জাগিয়ে তুলতে অমানুষিক পরিশ্রম করতে হয়েছে তাকে।

আস্তে আস্তে প্রান ফিরে আসছে লোকটির দেহে। সবকিছু ঠিক থাকলে কিছুক্ষন পরেই জ্ঞান ফিরে আসার কথা লোকটার। এতক্ষন পর একটু অবসর পেল এলিনা। ভাবল এইফাকে লোকটার সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেয়া দরকার। লগবুক থেকে ক্যাপসুল ২২১ এর প্রোফাইল হিস্টরী বের করল।

প্রথম তথ্যতা দেখেই বিস্ময়ে হা হয়ে গেল এলিনার মুখ। এই বডিটা এই ক্যাপসুলে শুয়ে আছে প্রায় ১০০ বছর। লোকটা চোখটা মেলে প্রথমেই দেখতে পেল এলিনার হাসি হাসি মুখটা। -আপনাকে ১০০ বছর পরের পৃথিবীতে স্বাগতম -হু -কথা বলতে হবেনা। আপনার ভোকাল কর্ড এখনোও পুরোপুরি প্রস্তুত নয়।

উঠবার চেষ্টা করবেন না। হাত দুটো মুঠো করার চেষ্টা করতে পারেন। -এবার হাতদুটো নাড়াবার চেষ্টা করুন। ......। ।

লোকটিকে আস্তে আস্তে উঠিয়ে বসায় এলিনা। ধাতস্থ হতে সময় নেয় লোকটা। ইশারায় অক্সিজেন মাস্ক চেয়ে নেয় এলিনার কাছ থেকে। শরীরের সবকিছুই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। আশেপাশের ক্যাপসুল গুলোর দিকে অবাক চোখে তাকাতে থাকে।

লোকটার এই বিস্ময় উপভোগ করতে থাকে এলিনা। এমন সময় লোকটি প্রথমবারের মত কথা বলে উঠল -আজ কত তারিখ -২১ ডিসেম্বর। ইচ্ছা করেই সালটা বলল না এলিনা। লোকটা তারিখ শুনেই চমকে গেছে। -তাহলে ওখানে নভেম্বর মাসের ক্যালেন্ডার ঝুলছে কেন? প্রশ্ন শুনে থমকে গেল এলিনা।

যে বিষয়টা এখানকার কেউ এতদিন খেয়াল করেনি সেখানে এই লোকটা ১০০ বছর পর উঠেই খেয়াল করল? সাথেসাথেই ভাবল এলিনা, লোকটা কি তাহলে ক্যালেন্ডার এর সালটাও দেখে ফেলেছে নিশ্চয়ই। কিন্তু তার ভেতরে তেমন ভাবান্তর দেখতে পেলনা এলিনা। শেষ পর্যন্ত একটা প্রশ্ন করল এলিনা। -লগবুক এ আপনার নামটা লেখা ছিলনা। আমি ইন্টার্ণী ডাক্তার এলিনা ওয়াটসন।

আপনি? -আপনাকে দেখে খুশি হলাম ডাক্তার ওয়াটসন। আমার নাম শার্লক হোমস। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.