আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রিভেনশন ইস বেটার দ্যান কিউর

স্মৃতির ভাসুরের ছেলে আবির বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার ভর্তি হয়েছে। হলে সিট পেতে এখনো অনেক দেরি। তাই এখন সে তার চাচার বাসাতে থেকে ক্লাস করতে ইচ্ছুক। কিন্তু আবিরের চাচী স্মৃতির মনে শুধু খুঁতখুঁতি। স্মৃতির মেয়েটা এখনো ছোট, মাত্র ক্লাস থ্রিতে পড়ে।

তবু তার মনের একটা কাঁটা খচখচ করতে থাকে। কত রকম ঘটনা যে ঘটে যাচ্ছে রোজ আমাদের চারপাশে। আপন লোকজনকেও আজকাল আর বিশ্বাস করা যায় না। ঘরের ভেতরেই যে কত অঘটন ঘটে যায়! খুব কাছের কেউ, পরিচিত কেউ, চাচা, মামা, কাজিন, শিক্ষক, স্কুলের পিয়ন, প্রতিবেশী এদের যে কারো দ্বারাই শিশুরা হতে পারে যৌন নিগ্রহের শিকার। কাউকেই শিশুর নিরাপত্তার ব্যাপারে বিশ্বাস করা যায় না।

স্মৃতি এসব ব্যাপারে ভীষণ সচেতন। তাই বাসার নানা রকম সমস্যার কথা বলে আবিরকে অন্য কোথাও থাকার ব্যবস্থা করার অনুরোধ করল। আবিরের এমন অবস্থায় ওকে সাহায্য না করায় স্মৃতির প্রতি রুষ্ঠ হলো ওর শ্বশুরবাড়ির লোকজন। তাদের সাথে কেমন যেন একটা দূরত্ব তৈরি হয়ে গেল। শুধু স্মৃতি কেন, কোন বাবা-মা চায় না নিজের সন্তান যৌন নিগ্রহের শিকার হোক।

যদিও আমরা এ ঘটনাগুলো খুব বেশি জানতে পারি না। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, ঘটনাগুলো ঘনছে না। এসব অহরহই ঘটছে আর যে এমন নিগ্রহের শিকার হয়েছে, শুধু সেই জানে তাকে সারা জীবন কতটা মানসিক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। এই স্পর্শকাতর বিষয়টির ব্যাপারে সবার সচেতন হওয়ার প্রয়োজন আছে। অনেক বাবা-মা সন্তানের নিরাপত্তার ব্যাপারে বেশ সচেতনও বটে।

কিন্তু সচেতন হতে গিয়ে কিছু নতুন সমস্যাও তৈরি হতে পারে। যারা শিশুদেরকে নিজের বিকৃত যৌন আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য ব্যবহার করে থাকে, দেখা যায় তারা খুব সহজেই শিশুদের সাথে সুন্দর সম্পর্ক তৈরি করে তাদের খুব প্রিয় হয়ে উঠে। ফলে তাদেরকে নিয়ে কেউ এ ধরনের সন্দেহ করে থাকে না। আবার এটাও তো সত্য যে, শিশুরা এমন নিগ্রহের শিকার পরিবারের খুব কাছের, খুব পরিচিত কারো দ্বারাই হয়ে থাকে। শিশুদেরকে সবাই ভালবাসে, সবাই কাছে নিয়ে আদর করতে চায়।

পাঠক, আপনি নিজেও এর ব্যতিক্রম নন। কিন্তু শিশুর নিরাপত্তার কথা ভেবে বাবা-মা হয়ত চাইবে না, আপনি তাদের সন্তানকে আদর করুন। কারণ, আপনার প্রতি তাদের অবিশ্বাস। এমন কি পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও তৈরি হতে পারে দূরত্ব। পরিবারে ভাংগনও হতে পারে।

অনেক বাবা-মা চাকরির কারণে সন্তানকে অন্যের কাছে রেখে নিশ্চিন্তে অফিসে চলে যেতে পারেন। কিন্তু শিশুর যৌন নিগ্রহের ব্যাপারে সচেতন বাবা-মা কি পারবেন সন্তানকে আরেকজনের কাছে রেখে নিশ্চিন্তে থাকতে, যত কাছের মানুষই হোক? কারণ, এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, কে আসলেই বিকৃত মানসিকতার আর কে নয়, তা সনাক্ত করাটা সত্যিই খুব কঠিন। এমন কোন নির্দিষ্ট লক্ষণ নেই যা দেখে আপনি কাউকে যৌন নিগৃহকারী বলে চিহ্নিত করতে পারেন। ব্যাপারটা সত্যিই খুব টেনশনের। এমনিতেই নানা কারণে আমাদের অনেক টেনশন।

এটা জানার পরে টেনশন করার আরো একটা কারণ বেড়ে গেল। কিন্তু তাই বলে কি বাবা-মায়েরা সন্তানের যৌন নিগ্রহ থেকে রক্ষা করার জন্য সচেতন হবেন না? অবশ্যই হবেন। ডায়রিয়া হবার পরে স্যালাইন খাওয়ার চেয়ে ডায়রিয়া না হবার জন্য সব সময় বিশুদ্ধ পানি পান করা ও পঁচা-বাসি খাবার না খাওয়াই বেশি ভাল, আপনারা জানেন। এটা একটি সাধারণ উদাহরণ হিসেবে দেওয়া হলো। ঠিক তেমনি বাবা-মায়েদের উচিত, শিশুরা যেন যৌন নিগ্রহের শিকার না হয়, তার জন্য আগে থেকে নিজেরা সচেতন হওয়া।

পাশাপাশি শিশুদেরও যথাযথ যৌনশিক্ষার মাধ্যমে সচেতন করে তোলা। এখন আমাদের দেশে যৌনশিক্ষা নিয়ে কথা বলতে যাওয়াটাও এক ধরনের বিপদ। বাবা-মায়েরা যে শিশুদের যৌনশিক্ষাটা দেবেন, তাদের নিজেদেরই তো এব্যাপারে তেমন কোন ধারণা নেই। আবার এর মধ্যে অনেকেই মনে করেন, যৌনশিক্ষা মানেই হলো যৌনকর্মীদের কাছে গেলে কিভাবে কনডম ব্যবহার করতে হবে শুধু সে ব্যাপারে শিক্ষা। তার উপর যৌন বা সেক্স এই কেমন কেমন ব্যাপারগুলো শিশুদের কাছে বাবা-মা কিভাবে বলবেন, এ নিয়ে অস্বস্তিতে পড়ে যান।

এ অস্বস্তি দূর হয়ে যাবে তখনি, যখন বাবা-মায়ের সাথে সন্তানের সম্পর্ক হবে সহজ। আর তার জন্য পর্যাপ্ত সময় সন্তানকে দিতে হবে। যৌনশিক্ষা নির্ভর করে ব্যক্তির বয়স, চাহিদা ইত্যাদির উপর। সন্তানকে পর্যাপ্ত সময় দিলে, তাকে বোঝার চেষ্টা করলে আপনি নিজেই বুঝবেন তাকে কতটুকু বলতে হবে। ৩ বছরের একটি শিশুর জন্য তার শরীরের সব অংগ প্রতংগের নাম ঠিক মত বলতে পারাটাই তার জন্য যৌন শিক্ষা।

আবার কিশোর-কিশোরীদের জন্য যৌন শিক্ষা ভিন্ন রকম হবে। তাদেরকে শরীর ও মনের পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে। তাদের শরীর, আবেগ সম্পর্কে সচেতন করতে হবে, যেন অনিরাপদ সম্পর্ক থেকে সে নিজেই নিজেকে দূরে রাখে। এছাড়াও ভালো ও খারাপ স্পর্শ সম্পর্কে তাকে সচেতন করে তুলতে হবে। আমাদের দেশের অনেক না-বাবাই সন্তান একটু বড় হলেই আর তাকে জড়িয়ে ধরে আদর করেন না।

অথচ সন্তানের জীবনে এই কোমল স্পর্শটির খুব বেশি প্রয়োজন। ভালো স্পর্শের অভিজ্ঞতা না থাকলে আপনার সন্তান খারাপ স্পর্শটিকে কীভাবে সনাক্ত করবে? কারো দ্বারা কোন খারাপ স্পর্শের অনুভূতি হলে প্রথমে আপনার সাথেই যেন সে তা শেয়ার করতে পারে, এমন খোলা সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। সন্তানকে শুধু মাত্র সন্দেহের বসে কারো কাছ থেকে দূরে রাখলেই যে সে নিরাপদ থাকবে তা নয়। বরং সবার সাথে তাকে মিশতে দেওয়া ভাল। তাকে নিজেই চিনে নিতে দিন কার সাথে সে মিশবে আর কার কাছ থেকে তার দূরে থাকতে হবে, নিজেকে রক্ষা করে চলতে হবে।

নিজের পথ নিজে চলার মত উপযোগী করে তাকে গড়ে তুলুন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.