আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দু মুহূর্তের অনুভূতি (ছোট গল্প )

প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি, বন্ধুতা । লাইফ লং ব্লাড ডোনার, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন । ভোলান্টারি ব্লাড ডোনার,রেড ক্রিসেন্ট । সন্ধ্যে থেকেই মিরাজ কেবল উশখুশ করছিল । ইস, কত্ত কাজ বাকি এখনও ! উচ্চ মধ্যবিত্তের এলোমেলো সংসারের ছেলে মিরাজ ।

মা মারা গেছে বছর তিনেক হল । সংসার বলতে কেবল বাবা আর ছোট বোন । নিজের জগৎটাকে একান্তই আপন করে সাজাতে চায় সে । কত্ত স্বপ্ন তার নিজেকে ঘিরে । নিজের জীবনটাকে একান্তই সে নিজের তুলিতে এঁকে নিতে চায় ।

জীবনকে সাজাতেই তার যত পথচলা । হাহ , বললেই হল ? জীবন সাজাতে প্রয়োজন নানা রকমের অর্জন । আর এই অর্জনগুলোকে এক হাড়িতে এনে রন্ধনের ইন্ধন হিসেবে চাই অর্থ । অর্থকড়ি নিয়ে মিরাজের বরাবরই লোভ কম । তার শুধু প্রয়োজন মিটলেই চলে ।

কিন্তু, হাতির প্রয়োজন কি আর সাধারণ প্রয়োজনের সমান ? ছেলেটা তাই খালি উশখুস করে । ভাঙা সংসারে বাবার কাছে ওভাবে আর আব্দারগুলো করা হয়ে উঠে না । কি আর করা , নিজ হাতে কামাও এবার । জীবনটাকে অতিমাত্রায় সাজাতে গিয়ে পুরোপুরি তেজপাতা বানিয়ে ফেলেছে সে । নিত্যদিন দূরান্তে গিয়ে লেখাপড়া আর সন্ধ্যের পর টিউশনি ।

জীবন যেন এক কলের মেশিনের মত । চলছে অবিরাম । এই দুই করে কি আর তার কাজ শেষ হয় ? একটু ফুসরত পেলেই এটা কর, ওটা কর । উফফ, হাঁপিয়ে উঠেছে প্রাণটা । সন্ধ্যে থেকেই তার মেজাজটা বিগড়ে আছে ।

কত্তগুলো কাজ বাকী । টিউশনি করাতে হবে । বাসায় ফিরে লন্ড্রি থেকে কাপড় ফেরত আনা,মোবাইলে টাকা ভরা, দুই মোবাইল থেকে দুই মুঠোফোন বান্ধবীদের ফোন করা (!) , পরশুদিনের ক্লাব মিটিংয়ের নোটিশ সব ক্লাব মেম্বারদের জানানো ইত্যাদি ইত্যাদি ......। ধ্যাৎ, ফুটপাতে হাঁটতে হাঁটতে সে শিডিউল সাজাতে থাকে । কিন্তু, রাত বারোটার মধ্যে সব কাজ শেষ করার শিডিউল মেলানো অসমাপ্তই থেকে যায় ।

নয়ছয় ভাবতে ভাবতে বহু জ্যাম পেরিয়ে , বাসযাত্রীদের ঘামের দুর্গন্ধ হজম করে টিউশনির বাসায় অবশেষে গমন করা গেল । বাসায় ঢুকতে না ঢুকতেই মেজাজ আরো খারাপ হয়ে গেল । বিদ্যুৎ নেই । ঠ্যালা ঠ্যালো , দুর্বিষহ গরমে ছাত্রের কাছে দেড় ঘণ্টার ভ্যাগর ভ্যাগর ! জ্ঞান বিক্রি শেষ করে যখন সে বাইরে বেরুলো তখন প্রায় রাত্রি নয়টা । ঘেমে নেয়ে শরীরটা জবজবে হয়ে গেছে ।

মাথাটা ব্যথা করছে। ---০--- একটি অভিজাত এলাকার এক প্রান্তে টিউশনি করায় সে । নিজেও একই এলাকার অধিবাসী । থাকে আরেক প্রান্তে । এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে আসতে ভালই ঝামেলা পোহাতে হয় ।

রিকশা,বাস অতঃপর পয়সা বাঁচাতে হন্টন ! নিজ বাসার সামনের মহাসড়কে বাস থেকে প্রায় লাফিয়েই নামল মিরাজ । এ জায়গাটায় বাস সিগন্যাল ছাড়া থামলেই বাসের হেল্পার “বাম পা...বাম পা” বলে লাফিয়ে নামার নিখুঁত ডিরেক্টরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় । আর মিরাজের মত জীবন যুদ্ধের অভিনেতারা সেই অভিনয় সম্পাদন করে হররোজ । বাস থেকে নেমে হাঁটা ধরল মিরাজ । শহরের এক প্রান্তে বলে এলাকাটি খুব নির্জন ।

অল্প রাত্তিরেই সুনসান নিরবতা নেমে আসে । চিরচেনা পথ বেয়ে চাবি দেওয়া পুতুলের মত হেঁটে যাচ্ছে মিরাজ । প্রতিটি পদক্ষেপ যেন গতকালেরই পুনরাবৃত্তি । ধনীর দুলালদের একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল পেরিয়ে আসতেই দুর্বোধ্য নির্জনতায় ছেয়ে থাকা মসজিদ লেনটিতে পা পড়ে মিরাজের । আজ যে তার কি হয়েছে ।

কোন কিছুই হিসেব মত মিলছে না । ফুটপাত ছেড়ে সে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে শুরু করল । মধ্যভাগ দিয়ে হাঁটছে , যেন এটিই ফুটপাত ! আচমকা বিদ্যুৎ চলে গেল । গাছগাছালিতে ঢাকা গলিটিতে ফুটে উঠল ঘন আঁধার । মিরাজ স্তব্ধ হয়ে গেল ।

এ দৃশ্য যে সে কখনোই দেখেনি ! অভিজাত এই এলাকায় কখনোই আঁধার নেমে আসতে দেখেনি সে । বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর মুহূর্তেই জ্বলে উঠে প্রতিটি বাড়ির নিজস্ব ব্যবস্থাপনার আলো । রাস্তাগুলো কখোনই অন্ধকারের ছোঁয়া পায় না । কিন্তু, আজ সে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার আগ মুহূর্তে রাস্তা দিয়ে হাঁটছে । তাই হঠাৎ এই অচেনা দৃশ্যের সঙ্গী ।

খুব ভাল লাগছে তার । মনের মধ্যে কেমন যেন রোমাঞ্চ জেগে উঠছে । নিকষ আঁধারে হারিয়ে গেছে সে । পাশেই প্রকৃতি স্বরূপ বৃক্ষরাজি আর সুনসান নীরবতা । কেন জানি এই মুহূর্তে একটি গাড়িও নেই গলিটিতে ।

তার অন্ধকার মন যেন এক বৃহৎ অন্ধকারের মাঝে বিলীন হয়ে গেছে । ভট..ভট...ভট...ভট...... বিকট শব্দে প্রতিটি বাড়ি থেকে জেনারেটর চালু হয়ে গেল আর সেই সাথে চারিদিকে আলোর বন্যা । মিরাজের দু মুহূর্তের অনুভূতি শুন্যে মিলিয়ে গেল সাথে সাথেই ! লেখনী ও লেখনীর স্বত্বাধিকার : মুনকির নাঈম সানি সৃজিত হয়েছে : ১৯ আগস্ট ২০১০ *লেখকের অনুমতি ব্যতীত লেখার কোন প্রকার অংশ গ্রহণ এবং প্রকাশ করা যাবে না । লেখকের অন্যান্য পোস্ট : #জীবন কড়চা (নিবন্ধ) #মানুষ কেন ভালবাসে? /প্রেমাখ্যান (নিবন্ধ) #ভালবাসায় ঠগবাজি এবং প্রাচ্য ভাবনা (নিবন্ধ)  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।