পুঁজিবাদের অভিশাপ তথাকথিত অতিউৎপাদন। পুঁজি চালিত উৎপাদন প্রক্রিয়াটি মূলতঃ মুনাফা লুন্ঠনের কুপ্রবৃত্তি প্রসূত একটি সুক্ষ্ম চতুরতা ও প্রতারণাপূর্ণ মানসিকতায় পরিচালিত। দুর্নীতির চরম বিকাশের মাধ্যমে পুঁজির পাহাড় গড়ে তুলে শ্রম বিযুক্ত উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সাধারণ সঞ্চয়কারীদের ব্যাংকের আমানত এবং শেয়ার বাজার লুন্ঠন করে শ্রম বাজারে পুঁজিপতিদের একক আধিপত্য প্রসার করা হয়। অসহায় মানব শ্রমকে পাশ কাটিয়ে যান্ত্রিক দানব শ্রমকে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যুক্ত করাই বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের মুখ্য উদ্দেশ্য। পরিণতিতে হয় ভয়াবহ অর্থনেতিক মন্দা? মন্দা কীভাবে হয়? ধরুন যান্ত্রিক বিকাশ এবং শ্রমিক মাইনাসের কারনে কোন একটি সেক্টরে প্রাথমিকভাবে কিছু প্রোডাক্ট মুনাফা বঞ্চিত হয়ে অবিক্রিত থাকল।
উৎপাদিত পণ্য বিক্রয় অলাভজনক হওয়ায় পুঁজিপতি সাহেব গুদামে মাল ভরে রাখলেন অতিউৎপাদনের দোহাই দিয়ে। পণ্য বিক্রয় করতে না পারায় শ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিশোধ বন্ধ হয়ে গেল এবং এক পর্যায়ে শুরু হল শ্রমিক ছাটাই। ধরুন কোন একটি সেক্টরে প্রাথমিকভাবে দশ হাজার শ্রমিকের বেতন বন্ধ ও কর্মহীনতা দেখা দিলে তাদের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পাবে অনিবার্য ভাবে। কর্মহীন শ্রমিকদের অতিপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়ও সীমিত এমনকি বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে তাদের ব্যবহার্য দ্রব্যাদির সেক্টরেও তথাকথিত অতিউৎপাদনের অভিশাপ লাগবে।
ঐ সকল সেক্টরেও শুরু হবে শ্রমিক ছাটাই। এভাবে ক্রমাগত সাধারণ পেশাজীবীগণ কর্মহীন হতে থাকবে আর অন্যদিকে গুদামে মাল অবিক্রিত অবস্থায় পঁচতে থাকবে।
মন্দা হল সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া এবং মুনাফা কম হওয়ায় গুদামে মাল পঁচতে থাকা। বৃটেনের এক কয়লা শ্রমিকের মেয়ে তার মাকে বলছে, ’মা, আমাদের ফায়ার প্লেসে কয়লা নেই কেন? মা উত্তর দেয়, ’খনিতে বেশী কয়লা উৎপাদন হয়েছে, তাই’। মেয়েতো মায়ের কথায় অবাক।
’বল কী মা! তা’হলে তো আমাদের আরো বেশী কয়লা থাকার কথা’। মা বললেন, ‘উৎপাদন বেশী হওয়ায় মালিক কয়লা বিক্রি করতে পারছেন না, তাই তোমার বাবাকে বেতন দিতে পারছেন না, আর বেতন না পাওয়ায় তোমার বাবাও কয়লা কিনে আনতে পারছে না’। এই হল পুঁজিবাদের অভিশাপ। পুঁজিবাদ নিজেই একটি ভয়াবহ প্রতারণা। অনৈতিকভাবে পুঁজিগড়ার মানসিকতার কারনেই বার বার বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টরে ঘটছে ভয়াবহ দুর্ঘটনা।
তাদের কাছে মানুষের জীবনের চেয়ে মুনাফার আকর্ষন অনেক বেশী। শ্রমিক শোষণই হল পুঁজি গঠনের মূল হাতিয়ার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।