যা মনে আসে তাই লিখি ...আমার নাম জাহিন গালিব। ডাক নাম মাহিক। ঢাকায় চলে আসার আগে আমি বরিশালে ছিলাম ছোটবেলা থেকেই। আমাদের পাড়ার নাম কলেজ এভিনিউ। বরিশাল এর নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে সোজা পথ সি,এন্ড্,বি রোড।
রিক্সাতে এখন ১০ ১২ টাকা ভাড়া। হেঁটে আসলে ১০ ১৫মিনিট এর পথ। এখানে একটা বড় পুকুর আছে। পুকুরটার নামই "বড় পুকুর"। এই পুকুরকে ঘিরেই আমাদের পাড়ার জীবন প্রবাহ।
আমার বড় হ্ওয়ার স্বপ্নের শুরু ও এই পুকুর থেকে। এই পুকুরেই আমার সাতাঁর শেখার হাতেখড়ি। পুকুর পাড়ে এসে দাড়াই। পাড়ের চারিদিকে অনেক বড় বড় গাছ ছিল। এগুলার দুইটা পাতা একসাথে করে বাঁশী বানিয়ে বাজাতাম।
বাংলাদেশ সেই যে কেনিয়ার সাথে যখন জিতেছিল তখন রাস্তায় রঙ মারামারি,ঢোল পিটা পিটির সময় এই বাঁশী নিয়ে আমরা পিচ্চিরা বাজিয়ে,পতাকা হাতে দৌড়ে ছিলাম সারা বরিশাল শহরে। তখন মনে হয়েছিল,"আমরাও পারি"।
এই পুকুরের মাঝেই আমার জীবনের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। পুকুরে নেমে আমরা ঝিঁনুক উঠাতাম মাটি থেকে। আমার দরকার ছিল খোলস টা;ভেতরের গুলো হাঁস মুরগীকে খেতে দিতাম।
তখন নানু অনেক হাঁস মুরগী পালতেন। নানু খুব ক্রিয়েটিভ মাইন্ডেড। তার ধৈর্যের প্রশংসা করতেই হয়।
ঝিনুঁকের খোলস রোদে শুকিয়ে চাকু দিয়ে ঘষে ঘষে পাউডার পেতাম অনেক। এগুলো নাকি চর্মরোগের ভালো মেডিসিন।
তখন আমাদের কাজের লোকের পায়ে ঘা হয়েছিল। পাউডার গুলো দিয়েই কিন্তু তার ট্রিটমেন্ট হয়েছিল,যদিও এখন শুনতে কেমন যেন লাগছে
আমি পড়তাম বি এম কলেজের মাঝে "বরিশাল শিশু নিকেতন"(নতুন নাম "অশ্বিনি কুমার শিশু নিকেতন")এ। আমাদের পাড়া দিয়ে বৈদ্য পাড়া হয়ে স্কুল এ যেতাম। বৈদ্য পাড়ার মুখেই ২ টা পুকুর,একসাথে এদেরকে "জোড়া পুকুর"বলা হয়। এখন এটা একটা ল্যান্ডমার্ক।
হেঁটে যাওআর সময় পুকুর পাড়ে জমে থাকা শেওলা খেতে দেখতাম মাছগুলোকে। হঠাৎ করে পাড় দিয়ে দিতাম উকি !! আর মাছগুলো ঝুপ করে পানিতে আলোড়ন তুলে হারিয়ে যেত। আমি খুব মজা পেতাম মাছগুলোকে তাড়িয়ে। সেই '৯৮ এ স্কুলটা থেকে চলে এসেছি। বড় হওয়ার পর ও সেই অভ্যাস মত পুকুর পাড় দিয়ে মাছ দেখতাম্।
পুকুর ২টা এখন বালি দিয়ে ভরে ২টা বাড়ী করা হয়েছে। আমাদের পাড়ায় এসে জোড়া পুকুরের কথা বললে যে কেউ পুকুর ২টা দেখিয়ে দিবে।
আগামী ৫ বছর পর এমন কেউ হয়ত থাকবেই না যে জোড়া পুকুর চিনবে।
ধীরে ধীরে সব কিছুই হারিয়ে যাবে হয়ত।
বড় পুকুরটাতে এখনো আমার মত অনেকেই সাতাঁর শেখে,মাছ ধরে,নতুন নতুন স্বপ্ন দেখে।
এত দূরে থেকেও আমি যেন সেই পুকুরটাকে দেখতে পাই। হয়ত কোন একদিন এটাও মাটি চাপা পড়ে হারিয়ে যাবে কোন বিশাল বিল্ডিং এর নিচে. . . .
[প্রথম লিখছি। বুঝছিলাম না কি লিখবো তাই নিজের জীবনেরই কিছু বিষয় তুলে ধরলাম। ডায়রিতে লেখা ছিল তুলে দিলাম। যদিও গুছিয়ে লিখতে পারিনা ।
ধন্যবাদ। ] ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।