আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফ্াইওভার ট্রাজেডি : বহদ্দার পুকুরের পানি নিষ্কাশন নিয়ে মতবিরোধ

আমি যা বলতে চাই... চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট সংলগ্ন ফ্লাইওভারের তিনটি গার্ডার ধসে পড়ার ঘটনায় ধ্বংসস্তূপে টানা ৬০ ঘণ্টার উদ্ধার অভিযান সেনাবাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্তি ঘোষণা করলেও স্থানীয়দের দাবির মুখে পুনঃ সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে জেলা প্রশাসনকে। বহদ্দারবাড়ীর পুকুরে একটি গার্ডার এখনো পড়ে থাকায় পুকুরের পানি নিষ্কাশন নিয়ে জেলা প্রশাসন ও স্থানীয়দের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি পুকুরের পানি নিষ্কাশন করে আছড়ে পড়া গার্ডারের তলায় আর কোন লাশ আছে কিনা তা দেখতে হবে। আর জেলা প্রশাসক আব্দুল মান্নান ও সেনা বাহিনীর উদ্ধার কর্মকর্তাদের দাবি সার্চার মেশিন দিয়ে গত তিন দিনেও কোন লাশের সন্ধান না পাওয়ায় উদ্ধার কাজ সমাপ্ত করা হয়েছে। তবে এ মতবিরোধ নিরসনে জেলা প্রশাসক এলাকাবাসী, সেনা, সিভিল সার্ভিস, পুলিশ ও নগর আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন।

বৈঠকে বিষয়টি নিস্পত্তি না হওয়ায় বৃহস্পতিবার ফের বৈঠকে বসার যৌথ সিদ্ধান্ত হয়। মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে চারটায় দুর্ঘটনাস্থলে যৌথ এক বৈঠকে স্থানীয়রা দাবি করেন লাশের সন্ধানে পুকুরের পানি নিষ্কাশন করতে হবে। আর জেলা প্রশাসক বলছেন পুকুরে থাকা প্রায় আড়াই কোটি গ্যালন পানি কোথায় নিয়ে যাওয়া যাবে তা ঠিক করতে পারছেনা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। পুকুরের পানি অপসারণের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ওই এলাকায় নেই। সনতান পদ্ধতিতে এ পানি অপসারণ করতে গেলে আশপাশের এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে।

এছাড়া এতে বেশ সময়য়েরও প্রয়োজনের পাশাপাশি সেনা ও পুলিশ বাহিনীকে বেশি দিন একাজে রাখা সম্ভব হবে কিনা তা ভেবে দেখতে হবে। বৈঠকে সেনাবাহিনীর উদ্ধার অভিযান সমন্বয়কারী কর্ণেল নাইম আশফাক চৌধুরী জানান, পুকুরে বর্তমানে দুদকোটি ৬০ লক্ষ গ্যালন পানি আছে। সেনা বাহিনীর কাছে যে সরঞ্জাম আছে তাতে প্রতি ঘন্টায় ৪০ হাজার গ্যালন পানি অপসারণ সম্ভব। এতে পুরো পুকুরের পানি অপসারণে সময় লাগবে ১৪দিন। গত শনিবার রাতে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের তিনটি গার্ডার ভেঙ্গে একটি ধসে পড়ে বহদ্দার পুকুরে।

বাকি দুদটি গার্ডার পড়ে উপরের স্থলভাগে। মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে উপরের অংশের উদ্ধার কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত ঘোষণা করে সেনাবাহিনী। তবে স্থানীয় বহদ্দারবাড়ীর বাসিন্দা মুছা চৌধুরীর দাবি, পুকুরের ভেতর আরও লাশ আছে। পুকুরের পানি পুরোপুরি অপসরাণ করলে লাশের সন্ধান পাওয়া যাবে। এছাড় লাশের গন্ধে পানি ব্যবহার অযোগ্য হওয়ায় যে কোনভাবে পুকুরের পানি নিষ্কাশন করতেই হবে।

জেলা প্রশাসন না করলেও তারা নিজ উদ্যোগে হলেও তা করবেন। কিন্তু সেনাবাহিনী এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তথ্য পাবার পর পুকুরের পানি অপসারণ নিয়ে জেলা প্রশাসনও দোটানায় পড়ে গেছে। স্থানীয়দের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্থানীয় বাসিন্দা রেজাউল করিমও পুকুরের পানি নিষ্কাশনের দাবি জানান। এসময় উপস্থিত নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোছলেম উদ্দিন স্থানীয়দের সাথে কথা বলে পুকুরের পানি নিষ্কাশনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার ফের বৈঠকের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। এদিন জেলা প্রশাসক ও সেনা, নৌ, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ প্রশাসনের লোকদের নিয়ে পুনঃরায় বৈঠকে বসবেন।

এদিকে ধ্বংসস্তূপে টানা ৬০ ঘণ্টার উদ্ধার অভিযান শেষ করেছে সেনাবাহিনী। মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১০টায় এ উদ্ধার কাজ শেষের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে উদ্ধার অভিযানের প্রধান সমন্বয়কারী কর্নেল মো. নাইম আশফাক চৌধুরী। শনিবার সন্ধ্যায় সিডিএ’র নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের তিনটি গার্ডার ভেঙে পড়ে। এরপর জেলা প্রশাসনের আহ্বানে ওইদিন রাত ১০টা থেকে উদ্ধার অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী। উদ্ধারকাজ শেষে সেনাবাহিনীর প্রধান সমন্বয়কারী সাংবাদিকদের বলেন, ‘শনিবার ফ্লাইওভারের তিনটি গার্ডার ভেঙে পড়ে।

স্থলভাগে থাকা দুটি গার্ডারকে ৩৯ ভাগে খণ্ড খণ্ড করে আলাদা করার পর নিশ্চিত হয়েছি সেখানে আর কোনো লাশ নেই। ’ তাই টানা ৬০ঘণ্টা উদ্ধার অভিযান চালানোর পর সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে স্থলভাগের মূল উদ্ধারকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। পুকুরে পড়ে থাকা অন্য একটি গার্ডারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পুকুরে যে গার্ডারটি পড়ে আছে সেখানে নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ভাড়া করা ডুবুরি দল তল্লাশি চালিয়ে কোন লাশের সন্ধান পায়নি। ’ সেনাবাহিনীর অত্যাধুনিক শক্তিশালী যন্ত্র ও সার্চ মেশিন দিয়ে ে খোঁজ করেও কোন লাশের খোঁজ পাওয়া যায়নি। সেনাবাহিনী ও জেলা প্রশাসনের কাছে কেউ লাশের দাবি না করায় উদ্ধার কাজ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয় বলে জানান তিনি।

তবে পুকুরে পড়ে থাকা গার্ডারের নিচে লাশ আছে এলাকাবাসীর এমন দাবির ব্যাপারে পুকুরের পানি নিষ্কাশনের বিষয়ে জেলা প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানান এই সেনা কর্মকর্তা। তবে উদ্ধার কাজ আনুষ্ঠানিক সমাপ্ত করলেও এখনো দুর্ঘটনাস্থরে সেনা, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা উপস্থিত আছেন। শনিবার দুর্ঘটনার পর রাত ১০টা থেকে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। উদ্ধার অভিযানে গ্যাস কাটার, গ্যাস সিলিন্ডার, এয়ার কম্প্রেসার, ক্রেন, ডাম্পারসহ ২৮ ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে সেনাবাহিনী। পরদিন রোববার দুপুরে সেনা সদর থেকে ১৭ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দল উদ্ধারকাজে যোগ দেয়।

এর আগে শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নগরীর বহদ্দারহাট সংলগ্ন শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়কের বহদ্দার পুকুর পাড়ে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের তিনটি গার্ডার ধসে পড়ে। স্থানীয়দের দেয়া তথ্যমতে, দুর্ঘটনার সময় ওই এলাকায় ভ্রাম্যমাণ সবজি বিক্রেতা, পুকুর পাড়ে বসে আড্ডারত ও চলাচলরত লোকজন মিলিয়ে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন ছিল। দুর্ঘটনায় সরকারী হিসেবে ১২ জন নিহতের কথা বলা হলেও প্রশাসনের বিভিন্ন সূত্র এবং স্থানীয়দের কাছ থেকে এ পর্যন্ত ১৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া নিহতের সংখ্যা নিয়ে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের হিসাবের মধ্যেও আছে গরমিল। দুর্ঘটনার পর সেনাবাহিনীর সঙ্গে উদ্ধারকাজে যোগ দেয় নৌবাহিনী এবং ফায়ার সার্ভিসও।

এছাড়া দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ ও র‌্যাবের সঙ্গে যোগ দেয় বিজিবিও। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।