বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ একজন পিগমি।
পিগমিরা মধ্য আফিকার অরণ্যচারী মানবগোষ্ঠী। পিগমিরা বহু গোত্রে বিভক্ত।
এদের তিনটি প্রধান গোত্র হল -আকা, বাকা এবং টিওয়া। এরা কঙ্গো, ক্যামেরন এবং জায়ারে -প্রভৃতি আফ্রিকার মধ্যাঞ্চলের দেশ সমূহের বৃষ্টিবনে (রেইন ফরেস্ট)-এ যাযাবর জীবন যাপন করছে। উচ্চতার দিক পিগমিরা তেমন লম্বা হয় না। এদের গড় উচ্চা ৪ ফুট ১১ ইঞ্চি। ‘পিগমি’ শব্দের উদ্ভব গ্রিক শব্দ Pygmaîos থেকে।
শব্দটির অর্থ one cubit high-যা ৫০ সেন্টিমিটারের কম। উনিশ শতকে ইউরোপীয়রা আফ্রিকার বৃষ্টিবনে খর্বকায় মানুষদের দেখে ওই নামে ডাকতে থাকে যা পরবর্তীকালে অনেকটাই অবজ্ঞাসূচকই হয়ে ওঠে। তবে বর্তমানে পিগমিদের তাদের গোত্রীয় নামে ডাকার কথা উঠেছে। যেমন--আকা, বাকা টিওয়া কিংবা এমবুটি। তবে এ বিষয়ে একজন গবেষক লিখেছেন: Nevertheless, the term is widely used as no other term has emerged to replace“Pygmy”.
Click This Link
আফ্রিকার মানচিত্র।
এই প্রকান্ড মহাদেশটির মধ্যাঞ্চলের বিষুবরেখার ওপর অবস্থিত রেইন ফরেস্টেই পিগমিদের আরণ্যক ঘরগেরস্থালী। প্রাচীন মিশরের পুথিতে এদের উল্লেখ রয়েছে। সেই পুথিতেও এক বনচারী মানুষ গোষ্ঠীর ওপর অজ্ঞতাপ্রসূত আরোপ করা হয়েছে রহস্যময়তা। গ্রিক মহাকাব্যের রচয়িতা হোমার-এর কাব্যেও পিগমিদের উল্লেখ রয়েছে।
আজ অবধি পিগমিদের শিকড় সর্ম্পকে এক ধরনের অস্পষ্টতা রয়েই গেছে।
যে কারণে বলা হয়েছে: ‘দ্য অরিজিন অভ পিগমিজ হ্যাভ লং বিন আ মিষ্ট্রি। ’ তবে পিগমিরা যে হাজার বছর ধরে আফ্রিকার বর্ষাবনেই বসবাস করে আসছে সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই । গবেষকরা নিরন্তর গবেষনায় প্রমান করেছেন যে- পিগমিরা আজ থেকে ২৮০০ বছর আগে মধ্যপশ্চিম আফ্রিকায় বসবাস করা একটি গোত্রের বংশধর। যাদের কৃষিজীবীরা আক্রমন করে তাড়িয়ে দিয়েছিল! In the most likely scenario, a small group of short people split off from nonpygmy populations between 50,000 and 90,000 years ago. The founding group of pygmy ancestors was fairly cohesive, with tribes interbreeding until 2800 years ago. At that point, taller Bantu-speaking farmers probably swept across central Africa and pushed them apart. Once the pygmy groups split, they stopped interbreeding. As a result, each group evolved separately. Even today, they seldom know of each other's existence ...
Click This Link
আফ্রিকার মানচিত্রে ক্যামেরুন- এর অবস্থান । আফ্রিকার মধ্যাঞ্চল থেকে পশ্চিম আফ্রিকায় ক্যামেরুন পর্যন্ত পিগমিরা ছড়িয়ে আছে।
পিগমিদের ভাষা আলাদা; অর্থাৎ একেকটি পিগমি গোত্রের মানুষজন একেক ভাষায় কথা বলে। তবে একটি বিষয়ে পিগমিদের মধ্যে মিল রয়েছে; সেটি হল জীবিকা নির্বাহের উপায়। পিগমিরা সাধারণত কৃষিকাজ করে না। (একেবারেই যে করে না-তা কিন্তু নয়; কিছু সূত্রে এদের কৃষিকাজের কথা জানতে পেরেছি। ) পিগমিরা বর্ষাবনের ফলমূল কুড়িয়ে খায় কিংবা শিকার করে।
অর্থাৎ এরা নৃবিজ্ঞানের ভাষায়: ‘শিকারী এবং খাদ্য সংগ্রহকারী’ (হান্টার/ গেদারার )।
মধ্য আফ্রিকার বর্ষাবনে একটি পিগমি গ্রাম।
পিগমিরা বাস করে গ্রামের কাছাকাছি। যে গ্রাম তাদের নয়, অন্যান্য আফ্রিকীয় গোত্র-যেমন বান্টু-এদের গ্রাম। পিগমিদের গ্রামের কাছাকাছি বাস করার বিশেষ কারণ আছে।
পিগমিরা মাংস এবং মধুর বিনিময়ে গ্রামবাসীর কাছ থেকে তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নেয়। নির্দিষ্ট একটি পিগমি পরিবার গ্রামের একটি নির্দিষ্ট পরিবারের সঙ্গেই পন্য বিনিময় করে। এবং এই সর্ম্পকটা সাধারণত দীর্ঘস্থায়ীই হয়-যা বংশ পরম্পরা ধরে চলে। তবে পিগমিরা ইচ্ছে করলেও গ্রামেও বাস করতে পারে। তবে তারা বৃষ্টিবনেই বাস করতে স্বচ্ছন্দ বোধ করে ।
কেননা, বৃষ্টিবনে অসুখবিসুক কম, সেখানে পরিস্কার পানি রয়েছে, কাজকর্মও কম, অনিশ্চয়তা তেমন নেই, টাকাপয়সার দরকারও নেই তেমন, ঝগড়াবিবাদও নেই। গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে,আফ্রিকার অন্যান্য গোত্রেদের চাইতে বর্ষাবনের পিগমিদের স্বাস্থ তুলনামূলক ভাবে ভালো ।
কিন্তু, পিগমিরা খর্বকায় কেন?
পিগমিরা তেরো বছর অবধি আধুনিক মানুষেন মতোই বেড়ে ওঠে। তবে তখনই তাদের উচ্চতা নির্দিষ্ট হয়ে যায়। (এ পোস্টের গোড়াতে বলেছি এদের গড় উচ্চা ৪ ফুট ১১ ইঞ্চি!) পিগমিরা কেন দৈহিক উচ্চতায় খর্বকায় ? গবেষকরা এই প্রশ্নের জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
পিগমিরা তাদের উচ্চতা পূর্বপুরুষের কাছ থেকে পেয়েছে না বর্ষাবনের সুযোগ সুবিধা পাওয়ার জন্য, তার মানে, বর্ষাবনের উপযোগী হওয়ার জন্য তারা আলাদা ভাবে বিবর্তিত হয়েছে- এ নিয়ে নৃতাত্ত্বিকবিদদের মধ্যে তুমুক বির্তক রয়েছে। অনেকে আবার মনে করেন যে খোলা জায়গার (তার মানে যেখানে কৃষিজমি রয়েছে) খোলা জায়গার চেয়ে বর্ষাবণে অধিক পরিমান ক্যালরি পাওয়াই সমস্যা। কাজেই পিগমিরা খর্বকায় কেন- এই প্রশ্নের উত্তর তাদের পরিবেশের মধ্যেই খুঁজতে হবে।
পিগমি মেয়ে। "পিগমি" শব্দ এদের পছন্দ হবার কথা না।
এরা নিজেদের নামই পছন্দ করে। বাকা কিংবা বাকোলা।
পিগমিরা শিকারী এবং খাদ্য সংগ্রহকারী বলেই বৃষ্টিবনের ভিতরে যাযাবর জীবন যাপন করে। যে কারণে এদের কুঁড়েঘরগুলি অস্থায়ী । এদের রোজকার কাজের মধ্যে রয়েছে উদ্ভিদের আঁশ দিয়ে ঝুড়ি ও মাদুর বোনা (সম্ভবত মেয়েরাই এই কাজটা করে থাকে) ; কাসাভা নামে এক ধরণে উদ্ভিদ -যার শিকড়ে শ্বেতসার রয়েছে-সেটি শুকিয়ে গুঁড়ো করা।
পিগমিরা যেহেতু রান্নাবান্নায় পাম ওয়েল ব্যবহার করে, কাজেই সেটি সংগ্রহ করাও এদের প্রাত্যহিক কাজেরই অংশ।
পিগমি ক্রশবো।
জঙ্গলের কাঠখড় যোগাড় করাও এদের দৈনিন্দন কাজ। এছাড়া এরা জঙ্গল থেকে শুঁয়া পোকা, উইপোকা, কন্দ, ব্যঙের ছাতাও সংগ্রহ করে। এদের অন্য কাজ হল হাতিয়ার ও কুঁড়েঘর বানানো।
জঙ্গলের বিশেষ লতাপাতা থেকে ভেষজও তৈরি করে । তীর ধনুক ও ক্রশবো দিয়ে শিকার করে। ফাঁদ পেতেও শিকার করে। দশ -পনেরো জনের একটি দল জাল দিয়ে জঙ্গলের একটি অংশ ঘিরে ফেলে। এভাবে ছোট ছোট হরিণ ধরে।
পশু-পাখি শিকার করা ছাড়াও পিগমিরা বর্ষাবনের নদীতে মাছও ধরে,
একজন পিগমি নারী ও তার সন্তান। পিগমি নারীরা অ-পিগমিদের বিয়ে করতে আগ্রহী। বিয়ের পর মেয়েটি অ-পিগমি পুরুষটির গ্রামে চলে যায়। তবে বিয়ে সুখের হয় না। কেন? পিগমি নারী আফ্রিকার আরণ্যক সমাজের নিম্নবর্ণের একজন বলেই! পিগমি নারী আবার সন্তানসহ পিগমি গোত্রে ফিরে আসে।
(পিগমিসমাজে প্রচলিত বিয়ের ধরণ, যৌতুক প্রথা এবং বিবাহ বিচ্ছেদ সম্পর্কে জানতে পারিনি ...)
পিগমিরা বৃষ্টিবন কে মনে করে পবিত্র জীবনদাতা এবং জীবন্ত সত্তা। এই ধর্মীয় ভাবনাটিই ওদের সংগীত ও নৃত্যে ফুটে ওঠে। ওদের গানে বর্ষাবনের সঙ্গে ভারসাম্য রেখে বাঁচবার নিগূঢ় আকাঙ্খা প্রকাশিত হয়। বর্ষাবনে যা সুলভ সে সব দিয়েই ওরা বাদ্যযন্ত্র বানিয়ে নেয় । ওদের বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে রয়েছে লিমবিনডি নামে তারযন্ত্র; রয়েছে আইয়েটা- যা ছড় দিয়ে বাজাতে হয় এবং গোমবি ।
পিগমিরা বাঁশীও বাজায়; বাজায় চামড়া ও কাঠের তৈরি ড্রাম। ওদের প্রতিবেশি বান্টুরা গিটার ও থাম্ব পিয়ানো বাজায়। পিগমিসমাজেও ওসবের চলও হয়েছে।
সংগীত ও প্রকৃতি মিলেমিশে একাকার ।
বদলে যাচ্ছে পিগমিদের জীবনধারা।
পিগমি শিশুর গায়ের জামাটি তারই প্রমাণ। তবে শিশু বয়েসে তীরধনুকের সঙ্গে নিবিড় পরিচয় না হলে রক্ষে নেই!
পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে মধ্যআফ্রিকার বর্ষাবনে আধুনিক সভ্যতার গ্রাসে আক্রান্ত না হলে আরও হাজার বছর পিগমিদের প্রকৃতিঘনিষ্ট জীবন অব্যাহত থাকবে ...
ছবি: ইন্টারনেট।
তথ্যসূত্র:
Click This Link
http://www.pygmies.org/
http://en.wikipedia.org/wiki/Pygmy_peoples
Click This Link
Click This Link
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।