চান্নিপসর রাইতে যেন আমার মরন হয়। সবে মাত্র 1st year এ উঠলাম। (inter 1st year). এই কিছুদিন আগেও মানে class 9-10 এ দোস্তমহলে বইলা বেড়াইতাম আমি চিরকুমার থাকুম। মুক্তপুরুষ আমি। প্রেম করমুনা জীবনে।
আর আজ এই আমার অবস্থা করুন। করুন বলতে করুন না। সাগরের জলে হাবুডুবু খাওয়া ধরনের করুন। যাহোক, আসল কাহিনীতে আসি। নতুন class এ উঠছি।
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় বিভিন্ন teacher দের batch এ private পড়া ফরজের উপরেও বেশি কিছু। আমিও তার শীকার। আমার কলেজেরই math এর sir। বড় রসিক মানুষ। আগেও 9-10 এ কিছুদিন তার কাছে private পরেছিলাম।
প্রথমদিন গেলাম। সবাই বলে আমি ইচ্ছা করে সবখানে দেরি করি। কিন্তু আমার যে কেন দেরি হয় আমি নিজেও জানিনা। যথারীতি সেদিনও লেট। ঘরে ঢুকলাম।
Sir আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসে। বিপদের সংকেত। “এহ, আমাদের লেট মফিজ আসছে। ফুলেল শুভেছা আপনাকে জনাব। এত তারাতারি না আসিলেও পারিতেন”।
আর কি লাগে। পুরা রুম এ Sir এর কথায় হুহুহু হাহাহাহা। কয়েকটা হিহিহিও সুনলাম। মানে নারি কন্ঠের ঝংকার। বিব্রত মুখে এক নজর দিলাম তাদের দিকে।
2nd বেঞ্চের মাঝের দিকে একটা মেয়ে বসা। চশমিশ মেয়ে। অবাক ব্যাপার সে হাসতেছে না। চশমার উপর থেকে বিজ্ঞানী নজরে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। নজর আর অন্য কথাও গেলনা।
এত সুন্দর মেয়ে দেখলে কি অন্য কথাও চোখ পড়ে নাকি! মনে হয় কিছুক্ষন অভাবে দাঁড়িয়ে ছিলাম। প্রেমের ভাষায় যাকে বলে হারিয়ে যাওয়া। জ্ঞান ফিরল sir এর গলার খাকড়ি শূনে। Sir দেখি আবার মুচকি হাসে। “আহেম! জনাব আপনি কি বসবেন নাকি একটা দূরবীন এনে দিব?” এবার আর হিহিহি হাসি খুব একটা শুনলাম না।
যা শুনলাম তা হল আমার দোস্তদের গা জ্বলানো হাসি। ৯ নাম্বার বিপদ সংকেত। ছেলেদের বেঞ্চে বসতেই পিছন থেকে নাহিদ খোঁচা দিয়া বলে, মামা সব ঠিকঠাক আছে? নাকি লিলুয়া বাতাস লাগছে? আমি আর কিছু কইলাম না। আর এক নজর তাকাইলাম তার দিকে। এইবার বাম পাশ থেকে ফাহাদ এর খোঁচা।
দোস্ত টুইস্ট এর গন্ধ পাইতেছি মনে হয়। আমি কইলাম শালা চুপ থাক। পড়াশুনা করতে আইছিস পড়াশুনা কর। গন্ধ শোঁকার কাজ কুকুর জাতিরে করতে দে। পোলা দেখি না ক্ষেপে দাঁত কেলায় হাসে।
নাহিদ আর ফাহাদ এই দুইটা আমার জিগার কা টুকরা দোস্ত। এভাবেই আরো কয়েকদিন গেল। আমার চশমিশ কে লুকায় লুকায় দেখার মাত্রা বাড়তে থাকল। আর আমার দোস্তদের খোটা মারার মাত্রা বাড়তে থাকল। মাঝে মাঝে সেও আমার দিকে চশমার ফাঁক দিয়ে তাকাত।
নাহিদ আইসা একদিন বলল চশমিশ এর নাম নাকি নিশি। নাম শুনে আমার মনে পড়ে গেল “নিশি রাত বাঁকা চাঁদ আকাশে”। এ কি যন্ত্রনায় পড়া গেল। আবার গান মনে পড়ে কেন। নাহিদ আর একটা কথা যোগ করল।
দোস্ত নাম্বার লাগলে বলিস। নাহিদের আবার বান্ধবী সংখা একটু বেশি ছিল। এই কাজ করা তার পক্ষে অসম্ভব না। আমি উলটা ফাপোড় মারলাম “আমি মুক্তপুরুষ”।
1st year এর মাঝামাঝি।
Half Yearly পরীক্ষা কোনমতে কাটাইলাম। নাহ আর পারা যায় না। চশমিশকে তো কোন ভাবেই ভোলা যাচ্ছেনা। উপায় না দেখে বিটকেল নাহিদের সরণাপন্ন আমি। মুক্তপুরুষ উপাধি জলাঞ্জলি দেবার পথে।
-দোস্ত ফোন নাম্বার টা লাগবে।
-কিসের ফোন নাম্বার? আমার নাম্বার তো তর কাছে আছে।
-আর শালা, নিশির ফোন নাম্বার।
দুই মুহূর্ত আমার দিকে তাকিয়ে থেকে...
-নিশি তোর শালা হয়?
(ধুপ)
নাহিদ উঁক কইরা উইঠা বলে...
-না তোরে ফোন নাম্বার দেয়া যাবেনা। তুই মুক্তপুরুষ তোর উপর আমার একটা দায়িত্ব আছেনা!!
(ধুপ)
-অরে শালা, মারস কেন।
উরেহ... কাইলকা নিস।
নাম্বার নিলাম পরেরদিন নাহিদের কাছ থেকে। ফোন আর দিতে সাহস হয়না। দুই-তিনদিন মোবাইলে রাইখা কাজের কাজ কিছু করতে পারলাম না। নাহ, আর না।
আজকে ফোন দিমুই। ডায়াল করলাম নাম্বার। বুক ধুকপুক ধুকপুক করে। Ring হইল কয়েকটা। ফোন ধরেনি।
যাক বাইচা গেছি। কচু বাচছি। দুই মিনিট পর দেখি Call back. আবার বুক ধুকপুক করে। এত কম বয়সে হৃদরোগ এর আলামত। বিপদের কথা।
কোনমতে ফোন রিসিভ করলাম-
-হ্যালো, কে?
-আ আ আমি রাফি।
-রাফি কে?
-আমরা একসাথে math batch এ পড়ি। হয়ত চিনবা না আমাকে।
-নাহ, মনে হয় চিনছি। আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকায় থাকে, সেই ভ্যাবলা তো?
-না আমি ভ্যাবলা না।
আমি রাফি।
এর পর একটা হাসি শুনতে পেলাম। যেটা লেখা সম্ভব না। কোনভাবে বোঝানোও সম্ভব না। আমি পাকনামি কইরা বললাম-
-তুমিও তো আমার দিকে মাঝে মাঝে চশমার ফাঁক দিয়া তাকাও।
হাসি তো দূরে থাক। কোন কথা নাই। সব নিশ্চুপ। ঝড়ের আভাস।
-কই তাকাই আমি, ফাজলামি করো তুমি আমার সাথে।
আমাকে আর ফোন দিবানা।
পিপ পিপ পিপ- ওপাশ থেকে কেটে দিছে। আমি তখনো কানে ফোন ধরে বসে আসছি। ঘটনা কোন দিকে গেল বুঝলাম না। মন খারাপ হয়ে গেল।
দুইদিন ভয়ে আর নিজের নির্বুদ্ধিতায় কোন ফোন দিলাম না। দু’দিন পর সুপারম্যানের সাহস নিয়া ফোন দিলাম। আবার বুক ধুকপুক কুরে। বড় বিপদে পড়া গেল। ইইইইই, ফোন ধরছে।
-হ্যালো নিশি, আমি রাফি।
-কি বলবা বল!!(ঝাঁঝালো কন্ঠের উত্তর)
-না মানে আমি Sorry. আগে মেয়েদের সাথে কথা বলার বেশি অভিজ্ঞতা নেইত তাই বুঝতে পারিনি।
-আগে মেয়েদের সাথে কথা বলার অভিজ্ঞতার সাথে আমার তাকানোর সম্পর্ক কি?
-না না, কোন সম্পর্ক নেই, তুমি আমার দিকে তাকাওনি কখনো। আমার চোখে সমস্যা। ডাক্তার দেখাব আজকে।
সত্যি।
আবার সেই হাসিটা। যাক। বাঁচা গেল। দুর্যোগ কাটছে।
এভাবে চলল আরো কিছুদিন। নিয়মিতই কথা হত বলা যায়। আর তার মান অভিমান টাও ছিল নিয়মিত। মাঝে কিছুদিন দেখাও করেছি। ফাজলামি করতাম, দুষ্টামি করতাম তবে আসল কথাটা বলাতে পারিনি।
যতদিন যাচ্ছিল আমি তত তার উপর দূর্ব্ল হইয়ে যাচ্ছিলাম। ততদিন আমার বন্ধুমহলে আমার দুর্দশার কথা চাওর হয়ে গেছে। সব নাহিদ আর ফাহাদ এর কাজ। আজকাল math batch এ লেট না করলেও ঢোকার সাথে সাথে নিশির পাশ থেকে কয়েকটা হিহিহিহি শোনা যায়। এটা একটা বড় রহস্য আমার কাছে।
যদিও তারটা শোনা যায়না। বড় দুর্লভ সেই হাসিটা।
2nd year এ উঠলাম। তাকে এখনো বলা সম্ভব হয়নি আমার মনে সে কোথায়। ভাল বন্ধু হয়ে গেছিলাম আমরা।
ততদিনে আমাদের তুই তোকারি সম্পর্ক। মনতো আরো বেশি কিছু পেতে চায়। মন জিনিসটা একটা বাজে বস্তু। যা চায় তা না পাওয়া পর্যন্ত আবদার করতে থাকে। কে যানে তার মনে আমার জন্য কোন জায়গা আছে কিনা।
একদিন ফোনে নিশিকে সাহস করে বললাম তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে। দেখা করতে পারবে কিনা। তাহলে সামনা সামনি বলতাম। সে রাজি হল। এবার একটা হেস্তনেস্ত করতে হবে।
আমার মাথায় কোন আইডিয়া আসতেছে না। আমার দোস্ত দুইটারে বললাম,সাজেশন চাইলাম। বেয়াদপ গুলা সাজেশন বাদ দিয়া উলটা আমারে টিটকারি মারতে থাকল। এই আমার দোস্ত। অবশ্য ভাল দুই একটা বুদ্ধি দিল।
গোলাপ ফুল দেয়া, কোন ইউনিক উপায়ে ভালবাসার কথা বলা।
আজ সেই দিন। আজ হয় আমার পৃথীবি ধ্বংস হবে নাহয় বসন্তের বাতাস বইবে। অনেক সাহস নিইয়ে গেলাম। গোলাপ ফুল কিনে নিলাম একটা।
একটা রেসটুরান্টে বসার কথা আমাদের। আমি আগেই পৌছালাম। গোলাপটা এক পাশে লুকিয়ে রাখলাম। ওইত আসতেছে আমার চশমিশ। নাহ, এখনো আমার হয়নি।
এসে বসলো, কিছুক্ষন একথা ওকথা হল। তারপরের কথা আর কাট করলাম না। এই কয়েকটা কথা বলা আর শোনার সময় ছিল খুব বেশি হলে ২ মিনিট। আমার কাছে মনে হয়েছিল কয়েক যুগ পার হয়ে গেছে...
-ইয়ে মানে নিশি তোকে আমার কয়েকটা কথা বলার ছিল।
নিশি হঠাত করে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে পড়ল।
-কি কথা?
-রাগ করবি নাতো?
-তোরে আমি ভ্যাবলা এই কারনেই বলি।
এত বড় অপমান সহ্য করা যায়না। আমি আমার পাশ থেকে লুকানো লাল গোলাপটা টেবিল এর উপর রাখলাম। নিশি একবার গোলাপটার দিকে তাকাল। তারপর তার সে তার সেই বিখ্যাত উপায়ে চশ্মার উপর দিয়ে আমার দিকে তাকাল।
দুইদিন ধরে অনেকভাবে আমি তোমাকে ভালবাসি বলার practice করছি। dramatic propose যাকে বলা। তার কিছু সেসময় আমার মাথায় ছিলনা। কোন মতে মুক্তপুরুষ এর উপাধি জলাঞ্জলি দিয়ে বলে ফেললাম-
-আমি তোকে ভালোবাসি।
সে এবার আমার দিকে চশমার ভিতর দিয়ে তাকাল।
আমাকে অবাক করে দিয়ে গোলাপটা টেবিল থেকে নিয়ে...
-আমার একটা শর্ত আছে। আমি তোকে ভ্যাবলা বলে ডাকব।
-আচ্ছা ঠিক আছে, আমি তাহলে তকে চশমিশ বলে ডাকব।
কোন কথা নেই। সব চুপচাপ।
সেই পুরানো ঝড়ের আভাস।
-চশমিশ বলে ডাকবা মানে? চশমা প্অরি বলে চশমিশ বলে ডাকতে হবে? ফাজ়লামি করো তুমি আমার সাথে?......
তারপর আর আমার কিছু কানে ঢুকছিল না। আমি চিন্তা করতেছিলাম তুই থেকে আবার তুমি হল কেন...
এই আমার কাহিনী। পরে শুনছিলাম নিশি নাকি আমার দূর্দশার কথা জানত। সব শালা নাহিদের কাজ়।
স্যারের কাছে আর লেট মফিজ নাম শুনতে হয়না। এখন ৫-১০ মিনিট আগেই পৌছাতে হয়। সবই আমার চশমিশ এর জন্য। আমার চশমিশ...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।