আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাতহীন প্রতিভুর অদম্য পথচলা ও প্রত্যয়ী এক মায়ের গল্প...

হাত নেইতো কি হয়েছে, পা আছে না! কোন কিছু নেই এমন অজুহাতে বসে থাকতে পারে না কর্মীরা। ১০ বছরের প্রতিবন্ধী ও লুলা বেলাল যেন আমাদের সে শিক্ষাই দিল? ওতো দেখি পুরো বাংলাদেশের জন্য সাহস ও সততার প্রতীক হয়ে উঠল। আমরা যা পারিনি ও তাই করে দেখাল। সত্যিই সত্যিই অবিশ্বাস্য-পঞ্চম শেণ্রীর ছাত্র বেলাল হোসেনের দুটি হাত নেই। তার জন্মই হয়েছে হাত ছাড়া।

তার উপর পা দুটি লুলা। সেই ছেলেটি পঞ্চম শ্রেণী পরীক্ষা দিয়েছে এক পা দিয়ে লিখে। বেঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যে ছেলেটা লিখছে সে কিন্তু সকালে কিছুই খেতে পারেনি! অর্থাভাব, দৈহিক বৈকল্য, সমাজের সুস্থ মানুষগুলোর তিরস্কার কিছুই ছেলেটিকে দমাতে পারেনি। আর তার এ অদম্য পথচলার সঙ্গী হয়েছে তার মা হোসনে আরা। এ এক মহিয়সী মা।

এ গল্প মা-ছেলের দীর্ঘ সংগ্রামের জীবন আলেখ্য। দৃশ্য-১, দিনমজুর খলিলুর রহমানও হোসনে আরার টানাটানির সংসার। ১০ বছর আগে ঘরে এলো একটি ছেলে সন্তান। এ দিনটি হওয়ার কথা ছিল তাদের জন্য আনন্দের। কিন্তু হয়ে গেল কেবলই দু:খের।

যে দু:খের শেষ কোথায় তারা নিজেরাও জানে না। হাতহীন একটি লুলা ছেলে জন্ম দিল হোসনে আরা । দৃশ্য-২, গ্রামের মানুষ হোসনে আরাকে অভিশপ্ত ভাবা শুরু করল। যারা গরীব বলে এতদিন তাদের সাহায্য করত তারা সাহায্য বন্ধ করে দিল। হোসনে আরা হয়ে গেল অনেকটা একঘরে।

তবু সন্তানটিকে গলা টিপে মেরে ফেলেননি তিনি। নিজের অপবাদ নিজেই মোকবেলা করার সিদ্ধান্ত নেন। শপথ নেন ছেলেকে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তোলার। শুরু হয় তার সংগ্রামী পথচলা। দৃশ্য-৩, ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে বেলাল।

গ্রামের অন্য শিশুরা বেলালকে দেখলে ভয় পায়। তারা বেলালকে খেলা বা অন্য কোন কাজে সঙ্গী করে না। মা বুঝে ছেলের দু:খটা। তাই তিনি নিজেই বেলালের খেলার সঙ্গী হন। খেলাচ্ছলে চক দিয়ে সিলেটে লেখার চেষ্টা করেন তিনি।

ছেলে ও মাকে দেখে খেলা ভেবে চক দিয়ে সিলেটে লেখা শুরু করে। এভাবেই শুরু হয় বেলালের পড়াশোনার জীবন। তারপর আর থামেনি.... দৃশ্য-৪, গ্রামের মানুষ কোনভাবেই বিষয়টা মেনে নিতে পারে না। তবু বেলাল পড়ে যাচ্ছে, বড় হয়ে যাচ্ছে। হাত দিয়ে অন্য ছেলেরা নির্দিষ্ট সময়ে যা লেখে বেলাল পা দিয়ে আরও কম সময়ে পরিমাণে বেশি, সাজানো ও সুন্দর লেখে।

ও এগিয়ে যাচ্ছে স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার পথে। তার সঙ্গী হয়েছে এক গ্রাম্য মহিলা। যে তার মা হন। যিনি তৃতীয় বিশ্বের শিক্ষার পথ প্রদর্শক। দৃশ্য-৫, দিন আনে দিন খায় এমন দিন মজুর পরিবারের সন্তান বেলাল।

মায়ের শপথ, বেলালের ইচ্ছা, বাবার শখ সবই আছে। কিন্তু একটি সন্তানকে পড়নোর মতো ন্যূনতম আর্থিক সক্ষমতা তাদের নেই। তাই যেকোন সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে তার পড়াশোনা! করুণ দৃশ্য-গ্রামের কোন মানুষ এসে দাঁড়ায়নি এ অসহায় পরিবারটির পাশে। কেউ বাড়িয়ে দেইনি সাহায্যের হাত। সবাই লুলা, লুঙ্গা বা অভিশপ্ত বলে তাড়িয়ে দিয়েছে।

সেই তাড়া এখনও তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে বেলালের পরিবারকে। ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ এলাকায় বহু ধনবান আছেন। যারা সবকিছুই জানেন। কিন্তু কিছু করার ইচ্ছা পোষণ করেন না। তারা হয়তো চান না বেলাল বড় হক।

কিংবা বেলালকে দেখে এ দেশের আরকেটা প্রতিবন্ধী ছেলে বা মেয়ে পড়াশোনা শুরু করুক। যদি করেই ফেলে তবে প্রতিবন্ধী ভাতার নামে দেশের মানুষর টাকা, বিদেশের টাকা কি করে মেরে খাবে তারা! আমি বলছি-বেলাল স্বশিক্ষিত ও সুশিক্ষিত হবে। নিজের পায়ে দাঁড়াবেও। আর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হবে। সেদিন পথিবীর ইতিহাসে নতুন করে লেখা হবে আামদের নাম।

আমি অনেক আশা নিয়েই বলছি। বেলাল যে সাহস আমদের দেখালো সে সাহসকে কাজে লাগাতে পারলে পাল্টে যেতে পারে এ দেশের চিত্র। হাতহীন প্রতিভুর অদম্য পথচলা ও প্রত্যয়ী এক মায়ের গল্প আমরা এতক্ষণ শুনলাম... এখন এ দাবিটি আমরা করতেই পারি, গত কয়দিন আগে, পাকিস্তানি মেয়ে মালালার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে মালালা দিবস পালন করেছে জাতিসংঘ। তালেবানের হুমকি উপেক্ষা করে নারী শিক্ষার কথা বলায় তাকে দেয়া হয়েছে নানা আন্তর্জাতিক পুরস্কার। কেউ কেউ দাবি তুলেছেন মামলালাকে নোবেল দেয়ার জন্য।

মালালা সংগ্রাম করেছে এক তালেবানের বিরুদ্ধে। আর আমাদের বেলাল লড়াই করছে, নিজের শরীর, মন, ঘর-বাহিরের দারিদ্রতা, শিক্ষিত মানুষের অবহেলা, তীব্র ক্ষুদা, প্রকৃতি আর একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। তাকে কি শিক্ষাক্ষেত্রে অসম সাহস দেখানোর জন্য একটি পুরস্কারও দেয়া যায় না। এমন একটি পুরস্কারের টাকা পেলেই কেটে যাবে বেলালের শিক্ষা জীবন । ও হয়ে যাবে মানুষের মতো মানুষ।

শিক্ষাখাতে বিশেষ অবদানের জন্য তার মাকে কি বিশেষ সম্মাননা দেয়া যায় না। বিশ্ব আমার এ আর্তি শুনুক বা না শুনুক আমি ব্লগারদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি আসুন আমরা বেলালদের বাঁচিয়ে রাখি। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই। বসে থাকবেন না প্লিজ। আসুন আমরা বেলালদের জন্য একটা কিছু করি।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের উমেদপুর দাখিল মাদ্রাসার পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রও। বাড়ি উমেদপুর গ্রামেই। ঐ গ্রামে গিয়ে আপনি লুলা বেলাল বললে সবাই একনামে চিনবে তাকে! ভ্রু কুচকাতে কুচকাতে দেখিয়ে দিবে বাড়ি। শেষ দৃশ্য (কল্পনা)-একদল তরুণ ব্লগার চলে গেছে বেলালের বাড়ি। তারা সবাই ভাগাভাগি করে নিয়েছে বেলালের পড়াশোনার দায়িত্ব।

বেলালের মতো অন্য প্রতিবন্ধীদের সাহায্য করার জন্য গড়ে তুলেছে একটি সংগঠন। শিক্ষাগ্রহণ শেষে বেলাল প্রধানমন্ত্রী হয়েছে। আর ঐ সংগঠনটি পেয়েছে শান্তি ও শিক্ষায় নোবেল...  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.