আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কন্টাক লেন্স নিয়ে যত কথা(Repost )

বিদ্রঃপ্রতিটা মেডিক্যাল স্টুডেন্টই বহু প্রাচীন কিন্তু চিরন্তন সত্য একটি উক্তি মনে মনে ধারণ করে তার ছাত্র জীবন শুরু করে তা হল- “When you learn something,ask yourself 3 QS.1.What is it?2.why it is?3.How it is?” কন্টাক লেন্স নিয়ে আমি আমার লিখাটাকে ঠিক সেভাবে সাজিয়েছি কারণ আমি বিশ্বাস করি এই পদ্ধতিতে অত্যন্ত জটিল বিষয় ও সোজা ভাবে শেখা যায়। কন্টাক লেন্স হল এক প্রকার বিশেষ প্লাষ্টিক জাতীয় উপাদানে তৈরী যা আমাদের কর্ণিয়ার সম্মুখ দিকে লাগানো হয়। বাজারে সাধারণত ২ প্রকার কন্টাক লেন্স পাওয়া যায়- ১-নরম(Hydrogel) ২-শক্ত(Rigid gas permeable) কন্টাক লেন্সের গল্পোটা শুরু হয় ১৫০৮ সালে। তখন লিওনার্দো দ্যা ভিন্সি প্রথম এমন এক লেন্সের কথা কল্পনা করেন যা সরাসরি আমাদের চোখের উপর পরা যাবে। একারনেই তাঁকেই কন্টাক লেন্সের জনক বলা হয়।

সত্যি বলতে কি তাকে আধুনিক বিজ্ঞানের রূপকার বললে খুব একটা ভুল করা হয়না। এর অনেক অনেক দিন পরে ১৮৮৮ সালে ইউগেন ফিক নামের এক বিজ্ঞানী সর্বপ্রথম পাওয়ার সমৃদ্ধ কন্টাক লেন্স তৈরী করেন। এর পর অনেক চড়া-উৎরাই পেরিয়ে ১৯২০ সালে ই মানুষের ব্যাবহার উপযোগী কন্টাক লেন্স বাজারে নিয়ে আসে zeiss.১৮৮৮ থেকে ১৯৩৬ পর্যন্ত সব কন্টাক লেন্স কাঁচের তৈরী ছিল ১৯৩৬ এর পর থেকে PMMA(Poly methyl methacrylate ),CAB(Cellulose acetate butyrate ) ইত্যাদি দ্বারা কন্টাক লেন্স তৈরী করা হতো। বর্তমানে Silicone Methyl Methacrylate ,Fluro-silicone Methyl Methacrylate ইত্যাদি দ্বারা শক্ত বা RGP লেন্স তৈরী হয়। আসলে আমরা সকলেই যে ধরনের কন্টাক লেন্স এর সাথে পরিচিত তা হল নরম বা Hydrogel কন্টাক লেন্স।

এর সুচনা হয় ১৯৬০ এর দিকে কিন্তু FDA(Food and Drug Administration) এর অনুমোদন মিলে ১৯৭১ সালে। এর পরের গল্পতো সবার জানা। সারা বিশ্বব্যাপী এক আলোড়ন ফেলে দেয় কন্টাক লেন্স। এবার আসা যাক কন্টাক লেন্স এর বাংলাদেশের বর্তমান অবস্তা নিয়ে। আসলে যে উদ্যশ্যে আমার এ লিখাটা তা হল কন্টাক লেন্সের বর্তমানের দুরাবস্তা।

আমরা জাতী হিসেবে নিজেদেরকে দরিদ্র বলে ব্রান্ডিং করতে করতে নিজেদেরকে এমন এক বিশৃংখল অবস্তায় দাঁড় করিয়েছি যা আমাদের পরবর্তি প্রজন্মের কাছে আমাদেরকে হাসির আর ঘৃণার পাত্র হিসেবে পরিচিত করবে। একটি ছোট্ট উদাহারণ দিলে পরিষ্কার হয়ে যাবে ব্যাপারটা। আমারা যারা নিজেদেরকে সাধারণ মানুষ হিসেবে পরিচয় দেই তারা সামান্য অসুখ হলেই কাছের ফারর্মেসি থেকে কনো রকম চিকিৎসা পত্র ছাড়া এন্টিবায়টিক ঔষধ কিনে রিতিমত খাওয়া শুরু করে দিই। কিছুদিনের মাথায় আমাদের অসুখ ভালো হয়ে যায় কিন্তু আমারা যতদিন ওই ঔষধটা খাওয়া দরকার তা না খেয়ে তার আগেই খাওয়া ছেড়ে দিই। এর ফল কতটা মারাত্তক হতে পারে আমরা তা কল্পনাও করতে পারবো না।

কারণ আপনি যদি একটি এন্টিবায়টিক খান তবে তা নিয়ম মাফিক না খেলে আপনার শরীরে ওই ঔষধের বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরী হয়ে যাবে এওং পরবর্তিতে আপনার শরীরে ওই ঔষধ আর কাজ করবে না। কন্টাক লেন্সের ও ব্যাপারটা ঠিক একই। কারণ,কন্টাক লেন্সের প্রস্ক্রাইব করার জন্য নিদিষ্ট পরিমাপ ও নিয়মাবলী আছে। আপনি যদি সঠিক মাপের ও সঠিক উপাদানের লেন্স না পরেন তবে আপনার চোখের ক্ষতি হবার সম্ভাবনা ৯০%। সম্প্রতি প্রথম আলো তে এ বিষয়ক একটি তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর থেকে অনেক রোগী ডাক্তারের সরণপন্ন হন কিন্তু তারা যাদের কাছে গিয়েছিলেন তারা কন্তাক লেন্স নিয়ে খুওব একটা দক্ষ নন ফলে তাদের কে ইন্টারনেট থেকে কপি পেষ্ট করা আর্টিকেলটির উপর ই বিশ্বাস স্থাপন করে থাকতে হয়েছে।

এবার আসা যাক কণ্টাক লেন্স এর ব্যাবহার সম্পর্কে- আমানার যদি মনে হয় যে আপনার চশমার বিকল্প কিছু দরকার তখনই কন্টাক লেন্স এর কথা আপনার প্রথম মাথায় আনতে হবে। করন কন্টাক লেন্সে ই আপনি পাচ্ছেন সার্জারী বিহীন চশমার একমাত্র বিকল্প। এর মাধ্যমে আপনি নানান রঙ ও ডিজাইনের লেন্স আপনার চোখে স্থাপন করতে পারেন যা সার্জারীর মাধ্যমে সম্ভব নয়। প্রথমেই আপনাকে অপ্টোমেট্রিষ্ট এর সরণাপন্ন হতে হবে কারণ অপ্টোমেট্রিষ্ট ই আপনার দৃষ্টি জনিত সকল সমস্যার নিখুত সমাধান দিতে পারেন। অপ্টোমেট্রিষ্ট আপনার চোখের কর্ণিয়ার পরিমাপ করে সঠিক উপাদানের ও ব্রান্ডের কন্টাক লেন্স দিবেন।

যা আপনাকে দেবে ইনফেক্সান বিহীন চশমাহীন জীবন। তিনি আপনাকে কন্টাক লেন্স ব্যাবহারের সঠিক নিয়ম ও আপনার পছন্দ অনুযায়ী লেন্স এর পরিধানকালের উপর ভর করে লেন্স নির্বাচন করে দেবেন। এবার আসা যাক যারা এখন কন্টাক লেন্স ব্যাবহার করছেন তারা কি করতে পারেন- সর্বপ্রথম আপনি একজন অপ্টোমেট্রিষ্ট এর সরনাপন্ন হন। যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে নিচের কাজগুলো করতে পারেন। কন্টাক লেন্স খোলার ও পরার আগে ভালো করে হাত ধুয়ে নিবেন এবং আয়নার সামনে বসে আলতো করে চোখের উপর লেন্স বসাবেন এবং খুলবেন।

মনে রাখবেন,নিয়মিত যদি সলুশন দিয়ে লেন্স পরিষ্কার না করেন তবে লেন্সে ময়লা জমে আপনার চোখের ক্ষতি করতে পারে। আরেকটা জরুরী কথা না বললেই নয় তা হল,যদি দেখেন কন্টাক লেন্স ব্যাবহারের পর আপনার চোখে জ্বালাপোড়া,চোখ লাল হয়ে যাওয়া,দৃষ্টি কমে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয় তবে অতি সিগ্রই একজন অপ্টোমেট্রিষ্ট বা চক্ষু বিশেষজ্ঞের সরনাপন্ন হন। পরিশেষে একটি অনুরোধ করবো আপনাদের সকলের কাছে- “ দয়া করে কখনো সরাসরি কোনো দোকান থেকে ডাক্তারের পরামর্শ ব্যাতিত কোনো ঔষধ কিনবেন না এবং অপ্টোমেট্রিষ্ট এর প্রস্ক্রিশন ব্যাতিত দোকান থেকে কন্টাক লেন্স কিনবেন না”  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।