বাংলার ইতিহাস আবুলের ইতিহাস, বাংলার আকাশ-বাতাস বাতাস-আকাশ বরাবরই আবুলময়। আবুলেরাই বাংলাদেশকে (বা ভারতীয় উপমহাদেশকে) করে গেছেন মহিমান্বিত, আবুলেরাই বাংলাদেশকে করে গেছেন ও করে চলছেন অপমানিত। আবুলে আবুলে হালি, এক আবুলে বিয়ে করে আরেক আবুলের শালি।
রাজনীতিক-বহুভাষাবিদ পণ্ডিত মওলানা আবুল কালাম আজাদ আজীবন ভারতের স্বাধীনতার জন্যে সংগ্রাম করে গেছেন, লিখে গেছেন India Wins Freedom (ভারত যখন স্বাধীন হলো) নামক বহুলপঠিত এক বই, পেয়েছেন ভারত সরকার কর্তৃক 'ভারতরত্ন' খেতাব।
বরিশালের চাখারের আবুল কাশেম ফজলুল হক স্বাধীন ভারতের আরেক শক্তিমান রূপকার, প্রবাদপ্রতিম রাজনীতিক, বাংলার বাঘ -- শের-ই-বাংলা।
আবুল মনসুর আহমদও ছিলেন প্রখ্যাত লেখক-রাজনীতিক-সাংবাদিক। আবুল কালাম শামসুদ্দিন, আবুল ফজল বাংলার দুই সুসাহিত্যিক; আবুল হাসান, আবুল হোসেন বাংলার দুই আধুনিক কবি; সৈয়দ আবুল মকসুদ হালের প্রধান কলামলেখক। ভাষাসৈনিক আবুল বরকত বুকের তাজা রক্ত দিয়ে বাংলা ভাষার মান রেখেছেন।
পিতা চরিত্রে এত বেশি অভিনয় করেছেন যে, আবুল হায়াত রীতিমতো বাংলাদেশের নাট্যজগতের 'জাতির পিতা'! আমার প্রয়াত নানার নাম আবুল কাশেম রাঢ়ী।
আমার খুব প্রিয় একজন মানুষ স্বেচ্ছানির্বাসিত অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী কবি আবুল হাসনাত্ মিল্টন।
অস্ট্রেলিয়ায় কোনো ব্যক্তিকে ডাকা হয় নামেরপ্রথম অংশ ধরে। লোকজন যেন তাকে তার নামের প্রথম অংশ ধরে 'মিস্টার আবুল' ডাকতে না পারে, সেজন্য তিনি তার ওয়েবসাইট ও ফেসবুক আইডি খুলেছেন নাম উলটে 'মিল্টন হাসনাত্' নামে। কারণ 'আবুল' নামের সেই আগের যশ বা জোশ এখন আর নেই। 'আবুল' এখন বোকামির প্রতিশব্দ। 'আবুল' নামের সেই যশে চূড়ান্ত ধস নামিয়ে দিয়েছেন হাল আমলের জনপ্রিয় আবুলজুটি -- আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং সৈয়দ আবুল হোসেন!
একবনে দুই বাঘ থাকতে না পারলেও একদেশে এই দুই আবুল বহাল তবিয়তে বিদ্যমান ছিলেন।
শেয়ারবাজার, গ্রামীণ ব্যাংক, ডক্টর ইউনূস, নোবেল পদক ও পদ্মাসেতু নিয়ে বিভিন্ন আবুলসুলভ বক্তব্য দিয়ে আবুল মাল তার আবুলত্ব বজায় রেখে চলছেন। আর মাদারিপুরের কালকিনির সৈয়দবংশের ছেলে সৈয়দ আবুল হোসেনকে তো আবুলদের মধ্যে সর্বকালের সেরা 'আবুল' বললেও বোধহয় অত্যুক্তি হবে না! কথিত আছে দৌড়প্রতিযোগিতায় জিতে তিনি এবার মন্ত্রী হয়েছিলেন, আগের বার ব্যক্তিগত পাসপোর্টে বিদেশসফর করে তিনি মন্ত্রিত্ব খুইয়েছিলেন। এবার তিনি দেশের
যোগাযোগব্যবস্থাকে নিকৃষ্টতম অবস্থায় নিয়ে যাওয়ায় জনগণ তার পদত্যাগের জন্য গত বছর ইদের দিন শহিদমিনারে বিক্ষোভ করেছিল সৈয়দবংশেরই আরেক আবুল সৈয়দ আবুল মকসুদের নেতৃত্বে। পদ্মাসেতু ইশুতে কালের পরিক্রমায় বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসক্রিপশনে সৈয়দ আবুল হোসেনকে পদত্যাগ করতে হয় গত ২৩শে জুলাই, ২৩শে আগস্ট মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবুলের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন, সমাপ্তি ঘটেছে একটি করুণ আবুল-উপাখ্যানের ! এই আবুলের এখন দুটো পদক প্রাপ্য হয়ে গেছে, দৌড়ে জিতে একমাত্র আবুলই মন্ত্রিত্ব পেয়ে রেকর্ড গড়ায় প্রথম পদক এবং দুই-দুইবার মন্ত্রিত্বখোয়ানো বাংলাদেশের একমাত্র ব্যক্তি হিশেবে তার দ্বিতীয় পদকটি প্রাপ্য। এছাড়া, সৈয়দ আবুল হোসেনের এখন দুটো ক্রাচও দরকার, যার ওপর ভর দিয়ে দু বার দুটো 'পদ' হারানো আবুল হাঁটতে পারেন।
আজ আবুল হাসান নামক জনৈক ক্রিকেটার পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের বিরুদ্ধে শতরান করে আবুলদের চলমান আবুলামিতে ছেদ ঘটিয়ে দিলেন, আবুল হাসান দেখি গোবরে পদ্মফুলের মতো আবুলে পদ্মফুল!
(লেখক: আখতারুজ্জামান আজাদ)
মূলপোস্ট ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।