aurnabarc.wordpress.com দুর্যোধন বলতে গেলেই হটাৎ করে সবার মুখটা একটু হাসি হাসি হয়ে ওঠে। সবাই এককাপ চা নিয়ে বসে পড়েন মোলায়েম বিনোদন আর অসাধারণ শৈলীর চলচিত্র বন্দনা পড়তে। কিন্তু এই দুর্যোধন আর আমি যে দুর্যোধনের কথা বলছি তা ভিন্ন চরিত্র। বলছি মহাভারতের দুর্যোধনের কথা। মহাভারতে উদযোগ পর্বে কৃষ্ণের সাথে তার কিছু কথোপকথন এর চিত্র তুলে ধরার যেতে পারে।
তার মাধ্যমে সামুর ব্লগাররা অন্তত সত্যিকার দুর্যোধন/চলচিত্র যুগ পূর্ব দুর্যোধনের আচরণ সম্পর্কে জানতে পারবেন।
মহাভারতে দুরাত্ম পুত্রদের ভয়ে সন্ত্রস্থ ধৃতরাষ্ট্র দুর্যোধনকে কিছু বলতে অপারগ হওয়ায় আহ্বান করে বসেন কৃষ্ণকে। মহামতি কৃষ্ণ দুর্যোধনকে পিতৃকূলের সাথে বিরোধ ভূলে সন্ধির জন্য আহ্বান করেন। তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন ধৃতরাষ্ট্র, ভীষ্ম, দ্রোণ, অর্জুন, কৃপ, অশ্বথামা, বিদুর, সোমদত্ত, বাহ্নীকরাজ, বিকর্ণ, বিবিংসতি এবং সঞ্জয় সহ তার জ্ঞাতিগোষ্ঠীর সবাই যেহেতু সন্ধি চায় সেখানে দুর্যোধনের সমস্যা কোথায়। কিন্তু আমাদের দুর্যোধনের মতো ঐ দুর্যোধনের ও ঘাড় ত্যাড়া।
এই দুর্যোধন যেমন বাংলা ছবির গোষ্ঠী উদ্ধারের তীব্র সংকল্প নিয়ে প্রবল বিক্রমে গাঁটের পয়সা জলে ঢেলে কনিষ্ঠ ভ্রাতা সহযোগে প্রেক্ষাগৃহে ঝাঁপাইয়া পড়েন। ঐ সময়ের দুর্যোধনের ও যুদ্ধক্ষেত্রের প্রতি তেমনি আগ্রহ ছিল। কিন্তু আমাদের দুর্যোধনের রিভিউ যেমন ন্যাক ষষ্ঠিরা পছন্দ করেননা । চুলকানির যন্ত্রণায় ছটফটরত খাইজানি রুগির মতো করনে। ঠিক তেমনি পাব্লিক ঐ যুগেও ছিল।
এদের একজন ভীষ্ম যথারীতি দুর্যোধনকে সদুপদেশ দিয়ে অনুরোধ করেন তুমি পিতামাতার অবাধ্য হয়োনা। তুমি বিনা কারণে অস্ত্রধারণ করোনা। দ্রোণ তাকে বললেন তুমি কৃষ্ণের কথার অবাধ্য অন্তত হয়োনা, বেচারি ভীষ্ম তো বাজে কথা কয় নাই। তুমি হুদাই ফাপরবাজি ফলাইতেছো কেনো ? তুমি মিয়া কি জানো না আজ থেকে শত যুগ পরে বঙ্গদেশ একজন নায়ক আসিবেন যিনি হৈবেন যখন নায়ককূলের শিরোমণি তোমার মতো অপর এক দুর্যো বিনা কারণে উনার পবিত্র ন্যাজ ধরিয়া কারণে অকারণে আকর্ষণ করিবে। তুমিও দেহি তার থাইক্য কুনো অংশে কম যাইতেছো না।
সব্বনাশ ও বাছাধন তুমি কেনো যে বুইজতার্ছোনা যে পক্ষে কৃষ্ণ আর অর্জুন একসাথে হৈয়া অবস্থান করিতেছে হ্যাতে তোমারে ছটকাইয়া আলু ভর্তা বানাইহেলিবে।
বিদুর স্বীয় কুমিরসদৃশ আঁখিযুগল ছলছল করিয়া বলিয়া উঠিলেন হায় দুর্য তুমি যাই হ্ও না কেনো তুমারে আমরা ক্যাচকলাও দেখাইনা। খালি তোমার বুইড়া বাবা মায়ের অবস্থা দেইখ্যা আমাগো বুকের মদ্দিখানে কেমন যেনো মোচড় মারে। মনে হয় কেউ হাই পাউয়ার ব্লেন্ডারে তরমুজ, বাঙ্গী আর বেল একসাথে ছটকাইয়া জুস বাইর কর্তেছে। তাই তুমারে কৈ কি বাপু তুমি যুদ্ধ যাত্রা করিও না।
তুমি মিয়া বিনা কারণে গায়ের জোর দেখাইও না। এ চাইতে যুদ্ধ কেচাল আর হাঙ্গামা বাদ দিয়ে যুধিষ্ঠিরকে প্রণাম করো। কিন্তু দুর্যোধন এইসব কথা মানার পাত্র নয়। সে বাজখাই চিৎকার করিয়া চিঁ হিঁ টগবগের মতো ফাল দিয়া উঠিল। ইভা রহমানের স্বামী মাহফুজের গান শুনতে শুনতে মানুষের মুখের চেহারা যেমুন হয় তেমনি ভাব লৈয়া হ্যাতে কৈল কৃষ্ণদা আন্নে যাই কন না ক্যা আমি আন্নের টেকনিক বুইজতার্ছি।
আন্নে পাণ্ডবদের ভালোবাসি ফালাইছেন তাই মোর বিরুদ্ধে এমুন ত্যাড়া ব্যাকা কতা কতিছেন।
তয় সাফ কয়া দিলাম ইডা কিন্তু আমার কাছে ভালো লাইতেছে না। আমি এখানে আমার কুনো দুষ দেহি না। ঐ বেটারা যুদ্ধ কর্ছে। আই ও যুদ্দু কইত্তাম চাই।
আই জানি ঐ ব্যাডা পাণ্ডুরাজার পুলাপাইন তো কুন বান্দা। মোগোরে হারাইতে আইলে ঐ দেবতাকূল পর্যন্ত পেরেশান হয়া যাইবে গা। আঁর বাপে যে জায়গা মোরে দিয়া গ্যাছেন হ্যাতে আঁই কাউরে দিবার পারুম না। দর্কার হৈলে আই একটা সূচের আগায় যে ছিদ্র হয় সেই পরিমাণ জমি দখলে রাখার জন্য যুদ্ধ কইরা যামুগা।
কৃষ্ন দাঁত বাইর করিয়া কইলেন দুর্য তুমার বাড়াবাড়ি বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করিয়া অনেকটাই বি, এস, এফ এর গুলি বরাবর চইলা গ্যাছে।
তুমি মিয়া একটা আস্ত ভণ্ড। তুমি এখানে উল্টা পাল্টা বইকা সমানে ফাল দিতাছো। ঐ দিকে ঠিকুজি কুষ্ঠি উল্টাই দেহো মিয়া। তুমি তো মিয়া দেহি বঙ্গদেশের এরশাদ কাকার চাইতেও কম যাওনা। তুমি মিয়া চশমখোর শকুনির সংগে মিটিং করো, জনগণের সামনে ভাইয়ের বউরে পিডানি দিছো।
পঞ্চপাণ্ডব আর কুন্তীকে তুমি মিয়া পুড়াইয়া বঙ্গদেশের বস্তিবাসীর মতো সোজা করার মতলব কর্ছিলা। পাণ্ডবদের ব্যাপারে কিছু কৈলেই তুমার এতো গাও চুলকায় ক্যালা। ভণ্ডামি বহুত কর্ছ এইবার ক্ষ্যামা দাও।
এতক্ষণ প্রাণ ললিপপ চুষতে থাকা দু:শাসন হটাৎ করে মুখ খুললো। চকিতে কইয়া ফালাইলো ওস্তাদ এতক্ষণ প্যাচাল বহুত পাড়িচ্চেন।
এখন যদি আন্নে পণ্ডিতি ফলানি বাদ না দিয়া আগের মতো ফাল দিতে থাকেন আন্নের কপালে খারাপি আছে। আন্নের বাপে কৈছে আন্নেরে বাইন্ধা ভালো রকম দলাই মালাই করার জন্য পাণ্ডবদের হাতে তুইলা দেয়া হৈবেক। হ্যাতে এমুন কথা কৈল ক্যামতে। আঁর তো পুরা গায়ে কাঁটা দিতিছে ইডা হুনার পর থাইক্যা। দুর্যোধন মারাত্বক রাগান্বিত হৈয়া গোক্ষুর সাপের মতো নি:শ্বাস ফেলতে থাকে।
এদিকে কৃষ্ণ কি চিন্তায় রত ছিলেন। চামে মুচকি মুচকি ভেটকি দিতে থাকেন মহারাজা ধৃতরাষ্ট্র।
এদিকে কৃষ্ন দেখলেন পরিস্থিতি ভয়াবহ। তিনি কর্মপরিকল্পনা ঠিক করেন। তিনি দুর্যোধনের মতো এহেন ভয়ংকর জীবনে ক্ষমতায় বসানোর জন্য সবাইকে তিরষ্কার করতে থাকেন।
তিনি সিদ্ধান্তে উপনীত হন কর্ণ, শকুনি আর দু:শাসন সমেতন দুর্যোধনকে ভালো কৈরা বাইন্ধা ডাইরেক্ট পাণ্ডবদের কাছে পাডাই দিতে হবে। তারপর বুঝবো বেডায় কতো গমে কতো পুকা। চামে মহারাজা ধৃতরাষ্ট্রকেও হালকা চুলকানি টাইপের বক্তব্য শুনতে হৈল। বলা হৈল মহারাজা আন্নের আক্কেলমন্দ অবস্থার জন্য আজ ক্ষত্রিয়কূল বিনষ্টের পথে। কে যেনো সংস্কৃত ভাষায় এভাবে হাক দিয়ে উঠেছিল..
ত্যজেৎ কূলার্থে পুরুষং গ্রামস্বার্থে কুলং ত্যজ্যৎ
গ্রামং জনপদস্বার্থে আত্মার্থে পৃথিবীং ত্যজ্যৎ।
মহারাজা আপনি যাই করেন... পিলিজ আন্নের কসম লাগে এই হতচ্ছাড়া দুর্যোধনকে সিধে করেন। ঐ বেটা এখানে যে লম্প ঝম্প করিতেছ ইহাতে দেবালয় কাপিতেছে। আমি আতংকে আছি এই বেটা পুনর্জন্মে বঙ্গদেশে গিয়া নায়ক-নায়িকাদের কিরূপ বিপদের সম্মুখীন করিবে। সময় থাকিতে তার উপযুক্ত সাজা দাবি করি।
........................... চলবে
প্রিয় ব্লগার দুর্যোধনের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা পূর্বক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।