অদ্ভুত আঁধার এক চারিদিকে
ওয়ার্নার ভন ব্রাউন (মার্চ 23, 1912 - জুন 16, 1977) ছিলেন জার্মান রকেট সায়েন্টিস্ট, অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার ও স্পেস আর্কিটেক্ট । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি জার্মানির এবং যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর আমেরিকার রকেট প্রযুক্তির উন্নয়নের এক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ত্ব ছিলেন তিনি ।
’৩০ এর দশকের পুরোটা সময় জুড়ে ভন ব্রাউন ছিলেন জার্মানির রকেট উন্নয়ন প্রোজেক্টের প্রধান ব্যক্তি। এই তিনিই ছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মিত্র বাহিনীর আতঙ্ক V-2 রকেটের নকশা, উন্নয়ন এবং অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের মাস্টার-মাইন্ড। বলে রাখি, V-2 রকেট হচ্ছে পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম গাইডেড মিসাইল।
আজকের স্কাড মিসাইল, টমাহক ক্রুজ মিসাইল ইত্যাদির বাপ।
V-2 রকেটের মডেল হাতে ভন ব্রাউন
বিশ্বযুদ্ধের পরে, তাকে এবং তার রকেট টিমের কিছু স্পেশাল সদস্যকে আমেরিকা অপারেশন পেপারক্লিপ নামক এক সিক্রেট প্রোজেক্টের জন্য একরকম অপহরণ করে নিয়ে যায়।
তিনি তার ক্যারিয়ার শেষ করেন নাসা’তে। ভন ব্রাউন এর টিম নাসা’র সাথে কাজ করার আগে আমেরিকার সেনাবাহিনীর Intermediate Range Ballistic Missile (IRBM) প্রোগ্রামে কাজ করেছিলেন।
নাসাতে তিনি মার্শাল স্পেস ফ্লাইট সেন্টার এর ডিরেক্টর পদে ছিলেন।
একই সাথে স্যাটার্ন-৫ রকেটের চিফ আর্কিটেক্ট ছিলেন। এই সেই স্যাটার্ন রকেট যা অ্যাপোলো সিরিজের মহাকাশযান গুলোকে চাঁদ পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিল। তার প্রতি নাসার ধারনা ছিলঃ ‘নিঃসন্দেহে ভন ব্রাউন ছিলেন ইতিহাসের সেরা রকেট সায়েন্টিস্ট’ ।
স্যাটার্ন-৫ বুস্টার রকেটে তার অসাধারণ অবদানের জন্যই আমেরিকানদের পক্ষে সম্ভব হয়েছিল সোভিয়েতদের সাথে পাল্লা দিয়ে স্পেস প্রোগ্রাম পরিচালনা করার ।
শৈশব
ভন ব্রাউনের জন্ম পোল্যান্ডের এক অভিজাত জমিদার(ব্যারন) পরিবারে।
ভন ব্রাউনের Lutheran Confirmation শেষ হলে তার মা তাঁকে একটা টেলিস্কোপ কিনে দেন। এবং এটা থেকেই তার অ্যাস্ট্রোনমি’র প্রতি আকর্ষন শুরু হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষে তার পরিবার আরও অনেকের সাথে জার্মানি পাড়ি দেয় এবং বার্লিনে বাসা নেয়। ওই সময় বার্লিনে ম্যাক্স ভ্যালিয়ের এবং ফ্রিটজ ভন ওপেল রকেট চালিত গাড়ি দিয়ে গতির রেকর্ড করেছিলেন। এটা ভন ব্রাউনকে এতই অনুপ্রাণিত করে যে তিনি একটা জনবহুল রাস্তায় খেলনা গাড়িতে আতশবাজি লাগিয়ে চেষ্টা করতে যান এবং আগুন লাগিয়ে এক বিতিকিচ্ছিরি কান্ড ঘটান।
পুলিশ ধরে নিয়ে যায়, তার বাবা এসে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।
এই কীর্তিমান লোকটি কিন্তু গণিত এবং ফিজিক্সে খারাপ করতেন। হারম্যান ওবের্থ এর ‘By Rocket into Interplanetary Space’ বইটা পড়ে অ্যাস্ট্রোনমি’র প্রতি তার আকর্ষন আরও বেড়ে যায়। এই হারম্যান ওবের্থ হচ্ছেন জার্মানির রকেট পাইওনিয়ার। ভন ব্রাউন ছিলেন হারম্যান ওবের্থ এর বিরাট ফ্যান।
ওবের্থ এর সম্পর্কে তার মূল্যায়ন ছিলঃ ‘হারম্যান ওবের্থ ছিলেন সেই প্রথম ব্যক্তিদের একজন, যিনি প্রকৃত অর্থেই মহাশূন্য ভ্রমন করার মত স্পেসশিপ বানানোর সম্ভাব্যতা চিন্তা করতেন। তিনি শুধু আমাকে অনুপ্রাণিত করেন নি, তার মাধ্যমেই আমি রকেট সায়েন্স এবং স্পেস ট্রাভেলকে থিওরিটিকাল এবং প্র্যাক্টিকাল প্রেক্ষাপটে দেখতে পাই’ ।
নাৎসি জার্মানিতে ক্যারিয়ার
নাৎসি পার্টি ক্ষমতায় আসার পর থেকে রকেট প্রোগ্রাম জার্মানিতে একটা জাতীয় ইস্যু হয়ে ওঠে। আর্টিলারি ক্যাপ্টেন ওয়াল্টার ডনবার্গার, ভন ব্রাউনকে সমরাস্ত্র বিভাগের একটি গবেষনা অনুদান জোগাড় করে দেন। এই প্রোগ্রামের কাজ ছিল সলিড-ফুয়েল রকেট টেস্ট।
১৯৩৪-এ ভন ব্রাউন About Combustion Tests নামক গবেষনার জন্য বার্লিন ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টরেট লাভ করেন। তবে এটা ছিল তার কাজের প্রকাশ্য দিক, আসলে গোপনে তিনি Construction, Theoretical, and Experimental Solution to the Problem of the Liquid Propellant Rocket এই বিষয়ের উপর গবেষণা করছিলেন যা ১৯৬০ সালের আগে জানাই যায় নি। ১৯৩৪ সালেই তার টিম দুইটা রকেট উৎক্ষেপন করতে সক্ষম হয় যেগুলো মাটি থেকে যথাক্রমে ২.২ এবং ৩.৫ কিলোমিটার পাড়ি দেয়। ভাবা যায়, সেই ১৯৩৪ সালে !!!
জার্মানি ওই সময়ে আমেরিকান পদার্থবিজ্ঞানী রবার্ট এইচ গডার্ড-এর গবেষণার ব্যাপারে অত্যন্ত আগ্রহী ছিল। ১৯৩৯ এর আগে থেকেই জার্মান বিজ্ঞানীরা গডার্ড এর সাথে বিভিন্ন প্রযুক্তিগত সমস্যায় সরাসরি যোগাযোগ রাখত।
ওই সময় কপি রাইট ছিল না, তাই ভন ব্রাউন বিভিন্ন জার্নাল থেকে গডার্ড এর পরিকল্পনা ব্যবহার করেন এবং তার রকেট প্রোগ্রামে তা অ্যাপ্লাই করেন । এভাবে তিনি Aggregate (A) সিরিজের রকেট ডেভেলপ করেন যা পরে V-2 হিসাবে পরিচিত হয় ।
১৯৪২ এর ডিসেম্বরে হিটলার A-4 রকেটের (Aggregate সিরিজ) প্রোডাকশনের অনুমতি দেয়। হিটলার এটার নাম দেন প্রতিহিংসা অস্ত্র (vengeance weapon)।
যাই হোক, ব্রিটিশ এবং সোভিয়েতরা এই রকেট প্রোগ্রামের অগ্রগতির খবর জানতে পেরে ভন ব্রাউনের টেস্টিং সাইট পিনামুন্ডা (Peenemünde) –তে এক বিশাল বিমান হামলা চালায়।
এতে টেস্টিং ফ্যাসিলিটি প্রায় ধুলায় মিশে যায়।
পরে হিটলার এর নতুন নাম দেন (vengeance weapon-2, V-2) এবং ১৯৪৪ সালের সেপ্টেম্বরে ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্যে প্রথম V-2 রকেট নিক্ষেপ করা হয়। ভন ব্রাউনের রকেট গবেষনার মূল উদ্দেশ্য ছিল মহাকাশ, তাই এই খবর শুনে তিনি মন্তব্য করেনঃ ‘রকেট একদম ঠিকভাবেই কাজ করেছে, শুধু ভুল জায়গায় ল্যান্ড করেছে’।
V-2
V-2: গাঠনিক নকশা
এবার আসা যাক V-2 বৃত্তান্তে। আগেই বলা হয়েছে, V-2 হচ্ছে এই দুনিয়ার প্রথম লং-রেঞ্জ গাইডেড ব্যালিস্টিক মিসাইল এবং মানুষের তৈরী প্রথম যন্ত্র, যা আউটার স্পেস পাড়ি দিতে সক্ষম হয়েছিল।
V-2 রকেট থেকে তোলা পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের প্রথম ছবি
প্রকৃতপক্ষে V-2 হচ্ছে আধুনিক সমস্ত রকেটের আদি পিতা। একই পক্ষে হওয়া সত্ত্বেও আমেরিকা, ইংল্যান্ড এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন এই রকেট সংক্রান্ত রিসার্চ হস্তগত করার জন্য যথাক্রমে অপারেশন পেপারক্লিপ, অপারেশন ব্যাকফায়ার এবং অপারেশন অসোভিয়াকিম এর মত সিক্রেট মিশনের মাধ্যমে রীতিমত কামড়াকামড়ি প্রতিযোগিতা করেছিল। শেষ পর্যন্ত আমেরিকা আর সোভিয়েত ইউনিয়ন-ই জার্মান রকেট সায়েন্টিস্ট আর রিসার্চ পেপার বগলদাবা করে নিয়ে যায়, ইংল্যান্ডের জোটে কলা। যে কারনে দেখবেন , রকেট সায়েন্স তথা মহাকাশ জয়ের ইতিহাসে শুধু আমেরিকা আর সোভিয়েত ইউনিয়নের জয়-জয়কার। তৃতীয় কোন দেশের বেইল নাই।
এর বড় কারন জার্মান রকেট বিজ্ঞানীদের মালিকানা লাভ।
১৯৪৪ এর সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ পর্যন্ত প্রায় ৫২০০টি V-2 রকেট উৎপাদন করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৩০০০ রকেট ইংল্যান্ডের বিভিন্ন লক্ষবস্তুতে নিক্ষেপ করা হয়।
V-2 উৎক্ষেপণ মঞ্চ
V-2 রকেটের অ্যাকুরেসি খুব একটা ভাল ছিল না। তারপরও উইনস্টন চার্চিল প্রায় একমাস ধরে রকেট হামলার শিকার হওয়ার পরও কোন ঘোষণা দেন নাই।
এই রকেটগুলো কোন ওয়ার্নিং দেওয়ার আগেই আঘাত করত।
ইংল্যান্ডের কোন টার্গেটের দিকে ছুটে যাচ্ছে V-2
যে কারনে জনগণ বা সশস্ত্র বাহিনী বা সরকার, সবার জন্যই এ ছিল এক বিভীষিকা। ধীরে ধীরে আক্রমনের সংখ্যা বাড়তে লাগলো, সেই সাথে বাড়তে থাকল এর অ্যাকুরেসি। কোন ভাবেই এর হামলা ঠেকাতে না পেরে শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশ সরকার রেডিওতে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করতে থাকে যে, রকেটগুলো লন্ডনের উপর দিয়ে ১৫-২০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে পড়ছে। কৌশলে কাজ হয়, জার্মানরা রকেটের টার্গেট নতুনভাবে করে, ফলে হতাহতের সংখ্যা কমে আসতে থাকে।
V-2 রকেটের ধ্বংশযজ্ঞ
আমেরিকানদের কাছে আত্ম-সমর্পণ
১৯৪৫ এর বসন্তে সোভিয়েত বাহিনী পিনামুন্ডার কাছাকাছি এসে পড়ে। যুদ্ধবন্দীদের সাথে সোভিয়েত বাহিনীর আচরন ছিল বেজায় নিষ্ঠুর। এ কারনে ভন ব্রাউন সোভিয়েতদের হাত থেকে বাঁচার জন্য গ্রামে গঞ্জে লুকিয়ে থাকা শুরু করেন। তিনি কিন্তু সাথে করে তার টিম এবং রিসার্চ পেপার সাথে নিয়ে ঘুরতেন। মে মাসে দুইজন আমেরিকান সৈন্যকে টহল দিতে দেখে ভন ব্রাউন নিজে এগিয়ে এসে নাম-পরিচয় বলে আত্মসমর্পন করেন।
আমেরিকান হাই কমান্ড ভন ব্রাউনকে পেয়ে খুবই খুশি হয়, তারা জার্মান বিজ্ঞানী এবং ইঞ্জিনিয়ারদের যে ব্ল্যাক লিস্ট বানিয়েছিল, তাতে ভন ব্রাউন এর পজিশন ছিল একদম টপে।
আমেরিকাতে ক্যারিয়ার
১৯৪৫ এর জুনে ভন ব্রাউন এবং তার টিমকে আমেরিকা নিয়ে যাওয়া হয়। বোস্টন, ডেলাওয়ার, মেরিল্যান্ড ঘুরে তাদের ঠাই হয়ে টেক্সাসের ফোর্ট ব্লিস-এ। এখানে তারা রকেট এবং গাইডেড মিসাইল উপর আমেরিকানদের ট্রেনিং দিতে থাকে। এবার আমেরিকা ভন ব্রাউনের আবিষ্কার, তার রিসার্চ, তার গবেষনা কাজে লাগায় তাদের হার্মিস প্রোগ্রামে।
এর সাথে মিলিটারি এবং রকেট টেকনোলজির ভবিষ্যত প্রয়োগ নিয়ে গবেষনাও চলতে থাকে।
১৯৫০ সালে দুই কোরিয়ার যুদ্ধ শুরু হলে ভন ব্রাউন এবং তার টিমকে অ্যালাব্যামা নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে ’৫০ থেকে ’৫৬ পর্যন্ত ভন ব্রাউন আর্মির রকেট ডেভেলপমেন্ট টিমের নেতৃত্ব দেন। যার ফলে আসে রেডস্টোন রকেট, যা আমেরিকার প্রথম নিউক্লিয়ার ব্যালিস্টিক মিসাইলে ব্যাবহৃত হয়।
পরবর্তিতে ভন ব্রাউন রেডস্টোন রকেটের আপগ্রেডেড ভার্সন হিসেবে ডেভেলপ করেন জুপিটার-সি রকেট ।
এই জুপিটার-সি রকেটে করেই আমেরিকা তথা পশ্চিমা বিশ্ব (সোভিয়েতরা ইতিমধ্যে স্পুটনিক পাঠিয়ে দিয়েছে) মহাশূন্যে তাদের প্রথম কৃত্তিম উপগ্রহ এক্সপ্লোরার-১ পাঠায় । তারিখটা ছিল ৩১ জানুয়ারি, ১৯৫৮। এবং এর মাধ্যমেই আসলে আমেরিকার মহাকাশ কর্মসূচির জন্ম হয়।
রেডস্টোন রকেটের কাজ সত্ত্বেও, ১৯৪৫ থেকে ১৯৫৭ পর্যন্ত বারো বছর ছিল সম্ভবত ভন ব্রাউন এবং তার সহকর্মীদের জন্য সবচেয়ে হতাশাজনক । সেই সময় সোভিয়েত ইউনিয়নে সার্গেই কোরোলভের নেতৃত্বে রকেটের নতুন নতুন ডিজাইন এবং স্পুটনিক প্রোগ্রাম নিয়ে কাজ চলছিল।
আর আমেরিকান সরকার ভন ব্রাউনকে দিয়ে স্পেস প্রোগ্রামে উৎসাহী ছিল না, তাদের আগ্রহ ছিল মিলিটারি প্রোগ্রামে।
তবে এই সব ঘটনার ফাঁকে ফাঁকেই ভন ব্রাউন মহাকাশ নিয়ে বেশ কিছু আইডিয়া বলেছেন, লিখেছেন। সেই সময়ের প্রেক্ষিতে তা সায়েন্স ফিকশন মনে হলেও খুব অল্প সময়ের মধ্যে তা ফ্যাক্ট হয়ে যায়। যেমন ১৯৫২ সালে তিনি মহাশূন্যে মানুষের থাকার উপযোগী স্পেস স্টেশনের ধারনা দেন। এই স্পেস স্টেশন ব্যাবহার করে মঙ্গল গ্রহে অভিযানের ধারনাও দেন।
১৯৫৭ সালে, সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রথম কৃত্তিম উপগ্রহ স্পুটনিক পাঠায় পৃথিবীর কক্ষপথে। তখন কোল্ড ওয়ারের সময়, আমেরিকা জুড়ে চিন্তা শুরু হল যে স্পেস প্রতিযোগিতায় তারা সোভিয়েত ইউনিয়নের পিছনে পড়ে গেল। এবার মার্কিন সরকারের টনক নড়ে। তারা ভন ব্রাউন ও তার টিমকে কক্ষপথে পাঠানোর জন্য রকেট এবং উপগ্রহ ডিজাইন করতে বলে। অথচ এই প্রস্তাব ভন ব্রাউন সেই ১৯৫৪ সালেই দিয়ে রেখেছিলেন।
নাসা প্রতিষ্ঠিত হয় জুলাই, ১৯৫৮ তে। এর একদিন পরে, রেডস্টোন রকেটের ৫০-তম সফল উৎক্ষেপণ সম্পন্ন হয়। দুই বছর পর, নাসা অ্যালাব্যামার হান্টসভিলে মার্শাল স্পেস ফ্লাইট সেন্টার প্রতিষ্ঠা করে এবং ভন ব্রাউনকে নাসাতে বদলী করা হয়। তবে তিনি নাসাতে আসার আগে শর্ত দেন যে যদি স্যাটার্ন রকেটের গবেষণার কাজ করতে দেওয়া হয় তাহলেই তিনি নাসাতে আসবেন। নাসা শর্ত মেনে নেয়।
তিনি ১৯৬০-১৯৭০ পর্যন্ত মার্শাল স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের প্রথম ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেন।
মার্শাল সেন্টারের প্রথম বড় প্রোগ্রাম ছিল পৃথিবীর কক্ষপথের ভিতরে অথবা বাইরে ভারী কার্গো বহনের জন্য স্যাটার্ন রকেটের উন্নয়ন । এটা থেকেই অ্যাপোলো প্রোগ্রাম শুরু হয়, যা মানুষকে চাঁদে নিয়ে যায় । অ্যাপোলো প্রোগ্রামে তিনি পিনামুন্ডাতে তার টিম সদস্য কুর্ট এইচ ডিবুস এর সাথে ঘনিষ্ঠ ভাবে কাজ করেন। এই কুর্ট এইচ ডিবুস হলেন কেনেডি স্পেস সেন্টার-এর প্রথম ডিরেক্টর ।
যাই হোক, মানুষকে চাঁদে পাঠানোর যে আজীবন স্বপ্ন ভন ব্রাউন দেখেছেন, তা বাস্তবে রূপ নেয় ১৯৬৯ সালের ১৬ জুলাই। মার্শাল সেন্টারের বিশেষায়িত স্যাটার্ন-৫ রকেট ঐতিহাসিক অ্যাপোলো-১১ মিশনের ক্রু দের নিয়ে মহাকাশ পাড়ি দেয়। সমগ্র অ্যাপোলো প্রোগ্রামে স্যাটার্ন-৫ রকেট সব মিলিয়ে মাহাকাশচারীদের ৬টি দলকে চাঁদের মাটিতে পৌছাতে সক্ষম হয়।
১৯৭২ সালে ভন ব্রাউন নাসা ছেড়ে দেন। তার ভিশন ছিল প্রকৃত অর্থেই মহাকাশ জয় করা, এজন্য তিনি একের পর এক উচ্চাভিলাষী আইডিয়া নিয়ে কাজ করতেন।
অন্য দিকে নাসা চাঁদে অভিযানে সোভিয়েতদের থেকে এগিয়ে থেকে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছিল। তার উপর নাসার জন্য বাজেট জোগাড় করা ছিল আরেক বিরাট ঝামেলার কাজ। এই সব ব্যাপারে মনোমালিন্য বাড়তে থাকায় নাসা থেকে অবসর নিয়ে ফেলেন।
অ্যাপোলো প্রোগ্রাম চাঁদে পৌছানোর পরও তিনি থেমে থাকেন নি, মঙ্গল অভিযানের সম্ভাব্যতা, স্পেস স্টেশন তৈরীর ব্যাপারে গবেষনা, এসব মিশনের জন্য রকেটের আপগ্রেডেশন ইত্যাদি কাজ করে গেছেন।
বিভিন্ন রোগে ভুগে ১৯৭৭ সালে ওয়ার্নার ভন ব্রাউন মারা যান ।
‘October Sky’ অত্যন্ত চমৎকার সিনেমাটি হোমার হিকাম নামের এক তরুনের রকেটের প্রতি ভালবাসার এক সত্য গল্প। এই তরুনটি পরে নাসার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে মহাকাশচারীদের ট্রেইনার হন। তার অনুপ্রেরনার উৎস ছিলেন ওয়ার্নার ভন ব্রাউন । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।