মেদবিহীন, ছিপছিপে সুন্দর স্বাস্থ্য সবার প্রিয়। আর সবাই চায় নিজের সুগঠিত, সুগড়ন ও কার্যক্ষম শরীর। এই প্রত্যাশা পূরণ সহজ কাজ নয়। রসনার সংযম এবং নিয়মিত শরীরচর্চায় ব্রত শক্ত মনের মানুষই স্বাভাবিক ওজন ও সুস্থ শরীর নিয়ে বেঁচে থাকেন। এ জন্য অহেতুক জিমে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
এ জন্য খুব বেশি প্রচেষ্টা বা জোগাড়যন্ত্রের প্রয়োজন পড়ে না। কতিপয় বদঅভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। প্রথমত মিষ্টি ও ভাজাভুনা খাবেন না। ভাত খাবেন নামমাত্র। দ্বিতীয়ত প্রতিদিন জীবনযাপনে যাই ঘটুক নিজে নিজে একটু ব্যায়াম করে নেবেন।
সেটা হাঁটা, সাঁতার বা ফ্রি হ্যান্ড যাই আপনার পছন্দ। এ দুটি হলো জিমে না গিয়ে ওজন কমানোর প্রাথমিক ও অন্যতম শর্ত।
মোটা হওয়ার কারণ
▬▬▬▬▬▬
1) ওজন বাড়ার অন্যতম কারণ অতিরিক্ত খাওয়া। নিয়ম অনুযায়ী খাবেন
2) শরীরে খাবারের প্রয়োজন নেই অথচ ভালো খাবার দেখলে খেতে ইচ্ছে করে বলে অনেকে সারা দিন খান। এতে শরীরে মেদ জমে
3) সারাদিন শারীরিক পরিশ্রমের অভাবে ওজন বাড়ে
4) বংশগত কারণে মোটা হওয়ার প্রবণতা থাকে।
খাবার যখন কম থাকে, জিন শরীরে ফ্যাটের স্টোরেজ বাড়িয়ে দেয়। এরপর খাবার বেশি খেলে এবং শক্তি ক্ষয় কম হলে ওজন বেড়ে যায়
স্বাভাবিক উপায়ে ওজন কমানো
ওজন কমানোর সবচেয়ে ভালো প্রাকৃতিক উপায় হলো এমন ডায়েট মেনে চলুন যাতে বেশি পরিমাণে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট এবং ফাইবার আছে, মাঝারি পরিমাণে প্রোটিন আছে এবং কম পরিমাণে ফ্যাট আছে। যারা অফিসে যান তারা ব্রেকফাস্টটা খেয়ে দুপুরের খাবার অফিসে যাওয়ার সময় লাঞ্চ হিসেবে নিয়ে যান।
ডায়েট টিপস
▬▬▬▬▬▬
1) আলু, কুমড়ো, কাঁচা কলা খাবেন না
2) ছাঁকা তেলে ভাজা কিছু খাবেন না; তা সে বেগুন হোক বা পটল ভাজা হোক
3) অ্যালকোহল, এনার্জি ড্রিংকস, হেলথ ড্রিংকস, সফট ড্রিংকস খাবেন না
4) চিনি একেবারেই খাবেন না, প্রয়োজনে সুইটনার চলতে পারে
5) গরু, খাসির মাংস ও চিংড়ি মাছ মোটেই খাবেন না
6) আপনার পছন্দ-অপছন্দের খাবার, বর্তমান খাদ্যাভ্যাস ও বাজেটের ওপর ভিত্তি করে ডায়েট চার্ট তৈরি করুন
7) কোন ধরনের কাজের সঙ্গে আপনি যুক্ত তার ওপর নির্ভর করবে আপনার পারফেক্ট ডায়েট আপনার ডায়েটে যাতে ফাইবার, ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যথেষ্ট পরিমাণে থাকে সেদিকে লক্ষ রাখুন
9) প্রতিদিনের ডায়েটে হোলমিল এবং বিভিন্ন ধরনের দানাশস্য রাখুন, কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট, যেমন-হোলহুইট ব্রেড, রাইস, ওটস মিল, হোল মিল পাস্তা, বার্লি, ব্রাউন রাইস খান প্রয়োজনমতো
10) ওবেসিটি কমিয়ে সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন যথেষ্ট পরিমাণে ফল ও শাকসবজি খান
অসময়ে খিদে পেলে করণীয়
অসময়ে খিদে পেলে হেলদি স্ন্যাক্স খান। লাঞ্চ এবং ডিনারের মাঝে ৩-৪ ঘণ্টা পর পর হেলদি স্ন্যাক্স খেতে পারেন।
খুব খিদে পেলে শুকনো রুটি বা টোস্ট বিস্কুট খান। ফলও খেতে পারেন। লাউ বা অন্য সবজির রস বা সিদ্ধ শাক সবজি খেতে পারেন। বেশি রাতে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার কম খাবেন।
বাড়িতে ব্যায়াম পদ্ধতি
▬▬▬▬▬▬
1) বাড়িতে কিছু ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম করুন।
এতে সময় একেবারেই কম লাগে। অথচ আপনি ফিট থাকতে পারবেন এবং অতিরিক্ত মেদ শরীরে জমা হবে না
2) বাড়িতে যত সময় অবস্থান করবেন সেই সময়ে শুয়ে বা বসে না থেকে হাঁটাচলাও যে ব্যায়াম তা অনেকে ভাবেন না। আপনার বাড়িতে যদি সিঁড়ি থাকে তাহলে কারণে-অকারণে দৈনিক কয়েকবার ওঠানামা করতে পারেন। আরও ভালো হয় যদি হালকা জিনিসপত্র বহন করা যায়। এতে আপনার মাসল টোনড হবে
3) বিভিন্ন ধরনের স্ট্রেচিং ব্যায়াম যেমন-আর্ম স্ট্রেচিং বা লেগ লিফটিং করতে পারেন।
এতে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয় এবং বিভিন্ন অংশের ফ্যাট ঝরে যায়
4) হার্ট সুস্থ রাখার জন্য জগিং খুব ভালো ব্যায়াম। বাড়ির যে কোনো জায়গায় আপনি স্পট জগিং করতে পারেন। তবে এ সময় উপযুক্ত জুতো পরবেন, যাতে পায়ের ওপর স্ট্রেস না পড়ে
5) দুই হাত সোজা করে ওপরের দিকে রাখুন। পায়ের পাতার ওপর ভর দিয়ে যতটা পারেন লাফান। কোনো বিরতি ছাড়া এভাবে এক মিনিট লাফাবেন।
এক মিনিট ব্রেক দিয়ে দিয়ে দুই থেকে তিনবার সাইকেলটা রিপিট করুন।
6) পুশ-আপ্স করতে পারেন। এই ব্যায়াম আবার চেস্ট ও আর্ম মাসলের শক্তি বাড়ায়। মাটির ওপর উল্টো হয়ে শুয়ে পড়ুন। তারপর দুই হাতের সাহায্যে মাটি থেকে ওঠার চেষ্টা করুন।
লক্ষ রাখবেন যেন আপনার হাঁটুতে ভাঁজ না পড়ে। শুরুতে ৫ থেকে ১০ পুশ আপ্স দেয়ার চেষ্টা করুন। সকালে এক সেট এবং বিকেলে এক সেট পুশ-আপ্স করতে পারেন।
7) পেটের মাসলের স্ট্রেংথ বাড়ানোর জন্য সিট-আপস জাতীয় ব্যায়াম করতে পারেন। মাটিতে সোজা হয়ে শুয়ে পড়ুন।
দুই হাঁটু ভাঁজ করুন। ডান হাত বা কাঁধের ওপর এবং বাঁ হাত ডান কাঁধের ওপর রাখুন। এরপর আস্তে আস্তে শরীরের ওপরের অংশ মাটি থেকে তোলার চেষ্টা করুন। মাঝামাঝি অবস্থানে যেতে কয়েক সেকেন্ড থাকুন। পরে ক্রমশ শোয়া অবস্থায় ফিরে যান।
শুরুতে ৩ থেকে ৫টা সিট-আপ্স যথেষ্ট হবে।
বিশেষ সতর্কতা
1) কোমল পানীয় একেবারেই খাবেন না। কোল্ড ড্রিংস মোটা হওয়ার আশঙ্কা ৬০ ভাগ বাড়িয়ে দেয়
2) কখনো স্টার্ভেশন ডায়েট করবেন না। এই পদ্ধতিতে দ্রুত রোগা হওয়া গেলেও শরীর প্রয়োজনীয় খাবারের অভাবে নানা সমস্যা দেখা দেয়
3) রাতে পর্যাপ্ত ঘুমানোর চেষ্টা করুন
4) বারবার অল্প করে খাবেন। লাঞ্চ বা ডিনারের সময় অবশ্যই কম খাবেন।
সংগ্রহঃ মনোজগত ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।