আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাঠানে খাঁ - সূফী ও সারাইকি লোকগীতি - দ্যা ফ্লাওয়ার অভ রোহী

মরণ আমার ভালো লাগে পাঠানে খাঁ (প্রকৃত নাম - গুলাম মোহাম্মদ, জন্ম ১৯২৬ - মৃত্যু ২০০০) ছিলেন সূফীয়ানা কালাম, কাফি, গজল ও সারাইকি লোকগীতির শ্রেষ্ঠ কণ্ঠশিল্পী। পাকিস্তানের, দক্ষিন পাঞ্জাব, উত্তর সিন্ধ ও বেলুচিস্তানের কিছু অংশ জুড়ে সারাইকি ভাষী দেড় কোটি জনগোষ্ঠীর বসবাস। একটি প্রাচীন সভ্যতার প্রতিভূ হওয়ার কারনে, সারাইকি লোকগীতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও ঐতিহ্যমণ্ডিত। সারাইকি লোকগীতিতে সূফী সঙ্গীতের (কাফি, গজল, কাওয়ালী) ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। লোকগীতির এই পরিমণ্ডলেই, থল মরুভুমির মধ্যবর্তী এক বস্তিতে গুলাম মোহাম্মদের জন্ম।

তাঁর বাবা খামিসা খাঁ ছিলেন একজন ভবঘুরে বাউল। এই দায়িত্বজ্ঞানহীন বাবা যখন তৃতীয় বিয়ে করলেন, শিশু গুলাম মোহাম্মদের হাত ধরে তাঁর মা তখন সংসার ত্যাগ করে অন্য একটি গ্রামে অন্য এক পরিবারের কাছে কাজের বিনিময়ে আশ্রয় নিলেন। তাঁদের আশ্রয়দাত্রী ছিলেন অত্যন্ত দয়ালু। শিশু গুলাম মোহাম্মদকে তিনি খুবই স্নেহ করতেন ও একবার রোগাক্রান্ত হলে সেবা শুশ্রূষা করে তাঁর জীবন বাঁচান। সেই মাতৃসম আশ্রয়দাত্রীই শিশুটির নাম বদলে রাখলেন 'পাঠানে খাঁ' (সারাইকি ভাষায় 'পাঠানে' শব্দের অর্থ ভালোবাসা ও শৌর্য)।

পরবর্তীতে, চরম দারিদ্রে তাঁদের সংসার নিদারুন কষ্টে চলতে থাকে। মা তাঁকে স্কুলে ভর্তি করে দিলেও, সংসারের প্রয়োজনে কাঠ কুড়ানো, রুটি বিক্রি ইত্যাদি নানা কাজ করতে যেয়ে সপ্তম শ্রেণীতেই তাঁর লেখাপড়া থেমে যায়। তাছাড়া, তাঁর বাবার ভবঘুরে বাউল স্বভাবও তাঁর মধ্যে দেখা যায়। এসময় তিনি বিভিন্ন মাজারে, দরগায় সূফীয়ানা কালাম শুনে শুনে একসময় বাহওয়ালপুরের সুবিখ্যাত পীর, খাজা গুলাম ফরিদের ভক্ত হয়ে পড়েন। ভাগ্যক্রমে স্বল্পকালের জন্য তিনি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের তালিম নিতে সমর্থ হন।

অসাধারণ দরদী কণ্ঠে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের তানে সাজানো গুলাম ফরিদের কাফি তাঁকে অচিরেই বিখ্যাত করে তোলে। এরপর থেকে বাবা বুল্লেহ শাহ ও বাবা শাহ হুসেনের সূফী কাব্য, কাফি, আমীর খুসরোর গজল, কাউল গেয়ে তিনি অচিরেই লোকগীতি ও সূফীয়ানা কালামের সেরা শিল্পীতে পরিণত হন। পাঠানে খাঁ ছিলেন জাত শিল্পী ও সূফীয়ানা কালাম ছিল তাঁর মজ্জাগত। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের সামান্য তালিম নিয়েই তিনি এক স্বতন্ত্র 'রাগাশ্রয়ী গায়কী' রপ্ত করেন। শ্রোতাদের মোহাবিষ্ট করার অসামান্য ক্ষমতা তাঁর ছিল।

তিনি গাইতেন তাঁর অন্তরের বিশ্বাস থেকে, তাই তাঁর আবেদন ছিল অসাধারণ ও মর্মস্পর্শী। দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সমাজের সাধারন মানুষ পর্যন্ত এমন কাউকে পাওয়া যেত না, যিনি পাঠানে খাঁর সঙ্গীতে আবেগাপ্লুত হননি। তিনি ১৯৭৯ সালে পাকিস্তানের সেরা রাষ্ট্রীয় পদক 'প্রাইড অভ পারফরম্যান্স' -এ ভূষিত হন। কিন্তু আত্মভোলা মানুষটির কোনও উচ্চাভিলাষই ছিল না, খ্যাতির পিছনে তিনি ছোটেননি। তিনি ছিলেন সমাজের অবহেলিত সমাজের প্রতিনিধি, তাই শাসক বা উচ্চবিত্তের আনুকূল্য তিনি চাননি এবং পাননি।

জৌলুস তাঁর ছিল না, তাই রেকর্ড কোম্পানিগুলো তাঁকে অবহেলাই করে গেছে। তাই খ্যাতি থাকলেও, দারিদ্র্য ও অবহেলা ছিল তাঁর জীবনের অঙ্গ। অবশেষে ২০০০ সালে ঘোর দারিদ্র্য ও প্রায় বিনা চিকিৎসায় এই কালজয়ী মরমী শিল্পী পরলোকগমন করেন আর রেখে যান তাঁর গাওয়া অমর গান 'মেদা ইশক ভি তুঁ'। তাঁর মৃত্যুর সাথে মরুভূমির একটি ফুল (ফ্লাওয়ার অভ রোহী) যেন ঝরে যায়। পাঠানে খাঁ - দ্যা ফ্লাওয়ার অভ রোহী 01 Darshan Bin Akhian 02 Kia Haal Sunawaan 03 Main Vi Jana Jhok 04 Meda Ishq Vi Toon 05 Pur Wehshat Sunjri 06 Thal Wich Kardi 07 Dilri Luti Tain Yar 08 Ghoom Charakhra 09 Mera Ranjhan Hun Koee 10 Meri Aj Kal Akhk 11 Ranjhan Ang Lagaya 12 Sohni Ghare Noon Akhhdi কোয়ালিটি - ১২৮ কেবিপিএস এমপি৩ ফাইল সাইজ - ৬৯ + ৭০ মেগাবাইটস ডাউনলোড - পাঠানে খাঁ - দ্যা ফ্লাওয়ার অভ রোহী ১ পাঠানে খাঁ - দ্যা ফ্লাওয়ার অভ রোহী ২ শেষ কথা - পাঠানে খাঁ'র মৃত্যুর কয়েক বছর বাদে তাঁর পরিবার, চরম দারিদ্রের কষাঘাতে, একমুঠো খাবারের সংস্থান না থাকায় 'প্রাইড অভ পারফরম্যান্স' পদকটি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়।

 ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।