আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হুকস্ִ, সিঁধু, বয়কট, ইউনুস আর শেবাগের যত পাপ- 'দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা শুধিতে হইবে ঋণ।'

সেই ২০০৩ এর জুলাই এ ডেভিড হুকস্ִ এর মন্তব্য থেকে শুরু, এরপর একে একে জিওফ্রে বয়কট, নভোজৎ সিং সিঁধু, বীরেন্দ্র শেবাগ, ইউনুস খানের মুখ ঘুরে আবার সেই শেবাগের বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে তাচ্ছিল্য। চলতেই আছে। মুখ দিয়ে প্রত্যুত্তর না দিয়ে একঝাক বাঘের বাচ্চা গড়ে তুলছি। আগে দু'-একটা নখের আঁচড় দিলেও চূড়ান্ত কামড়ের জন্য প্রস্তুত করছি। জবাব দিবোই।

কথাগুলো উল্টো গেলাতে বাধ্য করবোই। তার আগে লিখে রাখি আমাদের সাথে করা অপরাধগুলো: # তাচ্ছিল্য নাম্বার- ১: ডেভিড উইলিয়াম হুকস্ִ। জুলাই, ২০০৩। বাংলাদেশ তখন অস্ট্রেলিয়া সফরে। প্রথম টেষ্ট শুরু হওয়ার দিন দুয়েক আগে সাবেক অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার ডেভিড উইলিয়াম হুকস্ִ অস্ট্রেলিয়ান দৈনিকে লিখলেন, "অস্ট্রেলিয়ার উচিত বাংলাদেশের সাথে টেষ্টটা একদিনে শেষ করা।

" কেয়ার্ণসের সেই টেষ্টেই সাবেক বাংলাদেশ ওপেনার হান্নান সরকার ৭৬ রানের দারুণ একটা ইনিংস খেললেন সাথে কিছু বৃষ্টি হওয়ায় টেষ্টটা চার দিনে হেরেছিলো বাংলাদেশ। এই কথা বলার পরের বছরই, ২০০৪ সালেই মারা যান ডেভিড উইলিয়াম হুকস্ִ। # তাচ্ছিল্য নাম্বার- ২: জিওফ্রে বয়কট। সম্ভবত: ২০০৯ এর মাঝামাঝি সাবেক ইয়র্কশায়ার ও ইংল্যান্ড ক্রিকেটার এবং ধারাভাষ্যকার (ঠোটকাটা বলে পরিচিত) জিওফ্রে বয়কট বললেন, "২০০০ সালে টেষ্ট মর্যাদা পাওয়ার পর এত বেশি টাকা খরচ করেও বাংলাদেশ মোটেও উন্নতি করতে পারেনি। সেই শুরুর মত রয়ে গেছে।

আইসিসির এসব দেখার এখনই সময়। আইসিসির উচিত বাংলাদেশের টেষ্ট স্ট্যাটাস কেড়ে নেওয়া। " ২০১০ এর বিশ্বকাপের আগে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রেডিকশন করতে গিয়ে বললেন, "এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি এমনই জিম্বাবুয়ে বা বাংলাদেশ হুট করে দু'-একটা ম্যাচ জিতবে ঠিকই কিন্তু তারা বিশ্বকাপ জিতে নিবে এমন কথা কি বলেছে কেউ?" ২০১০ এ ইংল্যান্ডে গ্রীষ্মের শুরুতে বাংলাদেশ যে ইংল্যান্ড সফর করে সেই সফরে নিজেদের পেস সহায়ক কন্ডিশনেও লর্ডস টেষ্ট জিততে পাঁচ দিন লেগে যায় ইংল্যান্ডের। যদিও ম্যানচেস্টার টেষ্ট জেতে চার দিনে। দুটো টেষ্টেই ইংলিশ বোলারদের ডোমিনেট করে সেঞ্চুরী করেন তামিম ইকবাল।

যা তাকে ইংল্যান্ড থেকেই দেওয়া উইজডেন বর্ষসেরা টেষ্ট ক্রিকেটার পুরষ্কার এনে দেয়। এই পুরষ্কারের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয় যথাক্রমে ইংল্যান্ডের গ্রায়েম সোয়ান ও ভারতের বীরেন্দ্র শেবাগ। এর পরে ইংল্যান্ডকে ওডিআইতেও হারায় বাংলাদেশ। # তাচ্ছিল্য নাম্বার- ৩: বীরেন্দ্র শেবাগ। ২৯ শে জানুয়ারি ২০১০।

বাংলাদেশকে কখনো ভারত সফরে আমন্ত্রন না জানালেও তখন বাংলাদেশ সফরে ভারত ক্রিকেট দল। মাত্রই এক মাস আগে শ্রীলংকাকে হারিয়ে টেষ্টে এক নাম্বার তকমাটা পেয়েছে প্রথমবারের মত। চট্টগ্রাম টেষ্টের আগে সংবাদ সম্মেলনে আসলেন তখনকার সহ অধিনায়ক বীরেন্দ্র শেবাগ। টেষ্টে বাংলাদেশের সম্ভাবনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেই বললেন, "বাংলাদেশ ওয়ানডে ক্রিকেটে যে কোন দলকে চমকে দিতে পারে, কিন্তু টেষ্টে নয়। টেষ্ট ক্রিকেটে এখনও বাংলাদেশ খুবই সাধারণ মানের দল।

তারা টেষ্টে ভারতকে হারিয়ে দেবে এটা আমি চিন্তাও করি না। " কেন সাধারণ মানের দল বললেন এই প্রশ্নে বলেন, "ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ খুবই শক্তিশালী। বাংলাদেশের বোলারদের পক্ষে ২০ উইকেট নেওয়াটা খুবই কঠিন। গত সিরিজে শ্রীলংকাও এটা করতে পারেনি। " শেবাগের বাংলাদেশকে 'অর্ডিনারি দল' বলা নিয়ে তখনকার বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিবকে প্রশ্ন করা হলে সাকিব বলেন, "সেটা তার মন্তব্য।

তার এমন মন্তব্য ক্রিকেটীয় ভদ্রতা রক্ষা করেছে কি-না সেটা আমার চেয়ে আপনারাই ভালো বলতে পারবেন। " চট্টগ্রাম টেষ্টে ভারতের ১৯ উইকেট ফেলেছিলো বাংলাদেশ। পুরো সিরিজেই শেবাগ ছিলেন ব্যাট হাতে ব্যর্থ। এরপর এশিয়া কাপে ভারতকে হারিয়েই ফাইনালে খেলে বাংলাদেশ। # তাচ্ছিল্য নাম্বার-৪: নভোজাৎ সিং সিঁধু।

বিশ্বকাপ ২০১১ চলে তখন। স্যাটেলাইট চ্যানেল ইএসপিএন-স্টার স্পোর্টসে বিশ্বকাপের ম্যাচ পূর্ব টকশোতে অংশ নিচ্ছিলেন নভোজাৎ সিং সিঁধু। হার্সা ভোগলের উপস্থাপনায় নভোজাৎ সিং সিঁধুর সাথে ছিলেন ইয়ান চ্যাপেল, প্যাট সিমকক্স এবং ইয়ান বোথাম। বোথাম তার একটা মন্তব্যে কোয়ার্টার ফাইনালের দৌড়ে ওয়েষ্ট ইন্ডিজ থেকে বাংলাদেশের সম্ভাবনাকে বেশি বলায় সিঁধু কথা কেড়ে নিয়ে বলেন, "তেলাপোকাও আকাশে ওড়ে, পাখিও আকাশে ওড়ে। " এরপর বাংলাদেশের দীপন নামের এক তরুণ তখনকার আইসিসি প্রধান হারুন লরগাতের কাছে 'সিঁধুর এই উপমা আইসিসি বর্ণবাদ বিরোধী নীতিমালার অনুচ্ছেদ: ২ এর সস্পষ্ট লঙ্ঘন' লিখে মেইল করেন।

আইসিসি ইএসপিএন এর ওই সাক্ষাতকারের ভিডিও বিশ্লেষণ করে সিঁধুকে অফিশিয়ালি শাষিয়ে দেয়। # তাচ্ছিল্য নাম্বার-৫: ইউনুস খান। আফগানিস্তানের সাথে একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ শেষে জিও টিভিতে সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ইউনুস খান বললেন, "Can ICC please replace Afganistan with Bangladesh? Its so refreshing and exciting to see a new team in world cricket and that too play with so much intent and determination! I'm sure they will do much better job than Bangladesh." এর একটা সিরিজ পরেই ইউনুস খান ওয়ানডে দল থেকে বাদ পড়েন। সর্বশেষ ইউনুস খান ও শহিদ আফ্রিদির বিরুদ্ধে কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ প্রমানিত হয়েছে। # তাচ্ছিল্য নাম্বার-৬: বীরেন্দ্র শেবাগ।

১৫ নভেম্বর, ২০১২। আহমেদাবাদে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টেষ্টের প্রথম দিনে ১১৭ রানের ইনিংস খেলার পর সাংবাদিক সম্মেলনে কোনো কারণ ছাড়াই দ্বিতীয়বার তাচ্ছিল্য করার জন্য বাংলাদেশকে টেনে আনলেন বীরেন্দ্র শেবাগ। 'এই টেষ্ট নিয়ে কী ভাবছেন?' সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে বলে বসলেন, "We have to work hard to take 20 English wickets. They are not Bangladesh." পরের দিনই বাংলাদেশ মিরপুরে প্রথম টেষ্টে ওয়েষ্ট ইন্ডিজের ৫২৭ রানের জবাবে ৫৫৬ করে একটা মৃদু জবাব দিয়ে দিয়েছে। ডেভিড হুকস মরে গিয়ে বেঁচে গিয়েছেন। বাকি সবাইকে নিজেদের কথা গেলানোর জন্য একদল তরুণ উঠে আসছে।

'দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা, শুধিতে হইবে ঋণ। ' ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।