আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাংসদেরই সব কোটা লাগব ,স্কুলে ভর্তিতে কোটা পাচ্ছেন সাংসদেরা ।

আমরা হেরে যাইনি। এশিয়া কাপ না জিতলেও তোমরা আমাদের হৃদয় জয় করেছ। আমরা গর্বিত সারা দেশে বেসরকারি স্কুলে ভর্তিতে সাংসদেরাও কোটা পাচ্ছেন। তিন ধরনের ভর্তি কোটা বাড়িয়ে এ বছর সাত ধরনের কোটা চালু হচ্ছে। এর ফলে এবার ১৩ থেকে ১৪ শতাংশ শিক্ষার্থী সাত ধরনের কোটায় ভর্তির সুযোগ পাবে।

এদিকে সাংসদদের জন্য ১ না ২ শতাংশ কোটা বরাদ্দ থাকবে, তা আজ সোমবার চূড়ান্ত হওয়ার কথা। শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিবন্ধী ছাড়া যেকোনো ধরনের কোটার বিপক্ষে মত দিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, সাত ধরনের কোটার ফলে মেধাবী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার হবে। গত বছর আইডিয়াল স্কুলে বিভিন্ন শ্রেণীতে প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। ১৪ শতাংশ কোটা কার্যকর করা হলে ৪২০ জন শিক্ষার্থী শুধু কোটায় ভর্তি হবে।

মনিপুর স্কুলে গতবার ভর্তি করা হয় তিন হাজার ৫৪ শিক্ষার্থী। সাত ধরনের কোটায় ওই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হবে ৪২৭ শিক্ষার্থী। ভিকারুননিসা নূন স্কুলে প্রথম শ্রেণীতে আসন রয়েছে প্রায় এক হাজার ৪০০; ১৪ শতাংশ কোটা কার্যকর হলে ১৯৬ জন প্রতিযোগিতার বাইরে ভর্তি হবে। সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে সংসদদের কোটা নিয়ে। গত বছর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা উঠলেও শেষ পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি।

সাংসদ ছাড়াও এ বছর থেকে প্রবাসীদের সন্তান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এবং শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ১ শতাংশ করে কোটা রাখা হচ্ছে। এর আগে মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যা বা তাঁদের নাতি-নাতনির জন্য ৫ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ২ শতাংশ কোটা ছিল। আর ঢাকা মহানগর এলাকায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ছিল ২ শতাংশ কোটা। গতকাল রোববার মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকে ‘নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে অনুসরণীয় নীতিমালা’ প্রায় চূড়ান্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সাংসদদের জন্য কোটা রাখা হলে বৈষম্য বাড়বে, বাণিজ্য হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।

কারণ, সাংসদেরা যদি নিজেদের সন্তানদের জন্য কোটার কথা বলতেন, সেটা গ্রহণযোগ্য হতো। কিন্তু যেভাবে করা হচ্ছে, তাতে তাঁরা যে কাউকে ভর্তি করাতে পারবেন। এতে ভর্তি-প্রক্রিয়ায় রাজনীতি ও দুর্নীতি ঢোকার আশঙ্কা থাকছে। এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, সাংসদের জন্য কোটা থাকা উচিত নয়। এতে বৈষম্য আরও বাড়বে।

তা ছাড়া তাঁরা তো নিজেদের সন্তানদের জন্য কোটা চাইছেন না। ’ তিনি আরও বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে নিজস্ব নির্বাচনী এলাকার সর্বোচ্চ তিনটি প্রতিষ্ঠানে ১ শতাংশ করে কোটা রাখা যেতে পারে। তবে এই কোটা পূরণ করতে হবে ওই এলাকার সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের দিয়ে। রাশেদা কে চৌধূরী গতকালের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষাসচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেছেন, আজ-কালের মধ্যেই নীতিমালাটি আনুষ্ঠানিকভাবে জারি হতে পারে।

এর আগে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে। শিক্ষাসচিব গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে সভা করে নীতিমালাটি ঠিক করেন। কিন্তু সাংসদদের জন্য কয় শতাংশ কোটা রাখা হবে, সেটি চূড়ান্ত না হওয়ায় তা প্রকাশ করা হয়নি। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রথম শ্রেণীর ভর্তিতে এবারও লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। তবে নবম শ্রেণীতে শিক্ষার্থী ভর্তি হবে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী প্রথম আলোকে বলেন, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও বাস্তবসম্মত হয়, এমন নীতিমালা চূড়ান্ত করা হবে। জানা যায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বেশ কিছুদিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভর্তিতে সাংসদদের জন্য ২ শতাংশ কোটা দাবি করে আসছিল। গত বুধবার কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেননের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এই সুপারিশ বাস্তবায়ন করার জন্য মন্ত্রণালয়কে আবারও তাগিদ দেওয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকালের সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় উপস্থিত অনেকেই এর বিপক্ষে মত দেন বলে সভাসূত্রে জানা যায়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, এভাবে এত কোটা বাড়ানো হলে মেধাবী শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হবে। তাঁরা বলেন, এমনিতেই শিক্ষা বিভাগের অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীর সন্তানেরা ভর্তিতে অলিখিত সুযোগ পেয়ে থাকে। আর কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সাংসদদের অনেকেই নিজ এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমনিতেই ভর্তির সুযোগ পায়। ভর্তি ফরমের দাম বাড়ছে: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এবার বেসরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির আবেদনের ফরমের দাম বাড়ছে। শিক্ষাসচিব বলেন, আংশিক এমপিওভুক্ত, সম্পূর্ণ এমপিওভুক্ত এবং ঢাকার বাইরের প্রতিষ্ঠানের জন্য আবেদন ফরমের মূল্য আলাদা হবে।

আংশিক এমপিওভুক্ত ও ঢাকার কিছু বিদ্যালয়ের আবেদন ফরমের মূল্য কিছু বাড়ানো হবে। তবে সেটা ১৫০ থেকে ২০০ টাকা হতে পারে। ঢাকার বাইরের প্রতিষ্ঠানে আগের মতোই ১০০ টাকা করে ফরম বিক্রি করতে হবে। গত বছর ভর্তি ফরমের দাম নেওয়া হয়েছিল ১০০ টাকা। কিন্তু নামীদামি কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আরও বেশি টাকা নিয়েছিল।

ভর্তির টাকা আগের মতোই: এবারও ঢাকা মহানগরের আংশিক এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাংলা মাধ্যমে ভর্তির সময় মাসিক বেতন, সেশন ও উন্নয়ন ফিসহ সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ আট হাজার এবং ইংরেজি মাধ্যমে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা গ্রহণ করা যাবে। আর ঢাকার এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে পূর্বনির্ধারিত পাঁচ হাজার টাকার বেশি নেওয়া যাবে না। অন্যান্য এলাকার ভর্তি ফি গতবারের মতোই থাকছে। বেশি টাকা নেওয়া তিন প্রতিষ্ঠান ১৫ দিন সময় নিল: শিক্ষাবর্ষ শেষ হয়ে নতুন আরেকটি শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তির সময় এসে গেলেও রাজধানীর তিনটি নামকরা বিদ্যালয় মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় গত বছর ভর্তির সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া অতিরিক্ত টাকা ফেরত বা মাসিক বেতনের সঙ্গে সমন্বয় করেনি। এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ১৫ দিন সময় নিয়েছে।

গতকাল শিক্ষাসচিব এই তথ্য জানিয়ে বলেন, এই সময়ের মধ্যে তাদের টাকা ফেরত বা সমন্বয় করতে হবে। এর পরও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পালন না করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাজধানীর নামকরা এই তিনটি বিদ্যালয় গত বছর ভর্তির সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত নয় কোটি ৩১ লাখ ২৮ হাজার ১০০ টাকা আদায় করে। এর মধ্যে মনিপুর স্কুলে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয় পাঁচ কোটি ২৩ লাখ ৭৬ হাজার ১০০ টাকা। আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে তিন কোটি ৩৯ লাখ ৩৪ হাজার ৯০০ টাকা এবং ভিকারুননিসা স্কুলে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয় ৬৮ লাখ ১৭ হাজার ১০০ টাকা।

খোদ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গঠিত কমিটির সরেজমিন প্রতিবেদনে এই তথ্য বেরিয়ে আসে। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিদ্যালয়ের ভর্তির সময় অতিরিক্ত টাকা ফেরত বা মাসিক বেতনের সঙ্গে সমন্বয় করার জন্য কয়েক দফা নোটিশ দেওয়া হলেও এই তিনটি প্রতিষ্ঠান তা মানেনি।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।