আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জামায়াত-নেটওয়ার্ক ---- ঘাঁটি গেড়েছিল বুয়েটে

তথ্য সংবলিত কম্পিউটার উদ্ধার ০ হিযবুত ও শিবিরকর্মী গ্রেফতার ০ অনেক শিক্ষকের জামায়াত কানেকশন বিভাষ বাড়ৈ/মহিউদ্দিন আহমেদ ॥ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) জামায়াত-শিবির ও নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের কর্মকা- নিয়ে জনকণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনই শেষ পর্যন্ত সত্য হয়ে বেরিয়ে এলো। মঙ্গলবার দেশব্যাপী জামায়াত-শিবিরের তা-ব চালানোর সময় রাজধানীতে আটক শিবির ক্যাডার বুয়েটছাত্র শফিকুল ইসলামের কম্পিউটার, ফেসবুক, ই-মেইলসহ কাগজপত্রই প্রমাণ করে দিল বুয়েটে জামায়াত-শিবির গড়ে তুলেছে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। যেখানে এক সঙ্গে কাজ করছে হিযবুত তাহ্রীর। কেবল তাই নয়, এতদিন নিজেদের চেহারা লুকিয়ে ‘সাধারণ শিক্ষক’ বলে দাবি করলেও শিবির ক্যাডারসহ পুরো শিবিরের সঙ্গে অন্তত চারজন শিক্ষকের সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণ মিলেছে। যারা শিবিরকে অর্থনৈতিক যোগানসহ সব কাজে উপদেষ্টার মতো কাজ করছেন।

যেসব শিক্ষক শিবির ক্যাডারদের সঙ্গে ই-মেইল ও ফেসবুকের মাধ্যমে মিলিত হয়ে শিক্ষক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন অথচ বলেছিলেন, ‘এই আন্দোলন মৌলবাদীদের নয়। ’ তাদের বিভ্রান্তিকর প্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে সেদিন সুশীল সমাজেরও অনেকে সেদিন উগ্রবাদী এ শিক্ষক-ছাত্রদের আওয়ামী লীগের অবিচল সমর্থক মনে করেছিলেন। এর আগে দেশব্যাপী জামাতের তা-ব চলাকালীন রাজধানীর মৌচাক থেকে বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্রশিবির ক্যাডার শফিকুল ইসলামকে আটক করেছিল রমনা থানা পুলিশ। সোহরাওয়ার্দী হলের ২০০৮ নম্বর কক্ষের এই শিবির ক্যাডারকে ইতোমধ্যেই রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। শফিকুলকে আটকের পর মঙ্গলবার রাত পৌনে বারোটায় বুয়েটের সোহরাওয়ার্দী হলের ২০০৮ ও ২০১১ নম্বর কক্ষে তল্লাশি চালায় বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থী ও কর্তৃপক্ষ।

সেদিন কক্ষ দুটি থেকে বিপুল পরিমাণ জেহাদী বইপুস্তক, সিডি উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয় একটি কম্পিউটার ও শিবির ক্যাডারের একটি ডায়েরি। পরদিন রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে অপর শিবির ক্যাডার আমিনুল ইসলামের ১০৮ নম্বর কক্ষে আবার অভিযান চালায় বুয়েটের ছাত্ররা। আমিনুল পালিয়ে গেলেও উদ্ধার হয় রামদা, গোলাবারুদ, জেহাদী বইসহ বেশ কিছু আলামত। শিবিরের তা-ব ও ক্যাম্পাসের কর্মকা- প্রকাশ হয়ে পড়ার পর বুয়েটে কদিন ধরেই উত্তপ্ত অবস্থা বিরাজ করছে।

আতঙ্ক ছড়িয়ে পরেছে সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে। শিবিরের বড় কোন হামলার আশঙ্কাও করছেন অনেকে। এদিকে বুয়েট ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ শিবিরের যে কোন অপতৎপরতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিয়ে কাজ করছে। ইতোমধ্যেই ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে প্রতিটি নেতাকর্মীকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে শিবিরের অপতৎপরতা বন্ধে কাজ করছে বুয়েট ছাত্রলীগ।

জানা গেছে, শিবির ক্যাডারদের কক্ষ থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রসহ অন্যান্য আলামত পুলিশের কাছে জমা দেয়া হয়েছে। কিছু জিনিস এখনও আছে হল প্রশাসনের হাতে। তবে প্রযুক্তির মাধ্যমে শিবিরের বিশাল নেটওয়ার্কের আলামত আঁচ করতে পেরে সাধারণ ছাত্র ও ছাত্রলীগ শিবির ক্যাডার শফিকুল ইসলামের ডায়েরি হাতে রেখে গত দুদিন ধরে তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাই করে। শুক্র ও শনিবার সেই ডায়েরি হাতে নিয়ে দেখা গেল সেখানে আছে শিবিরের বুয়েটকেন্দ্রিক কর্মকা-ের পুরো ছক। শিবিরের ক্যাডারদের নাম, তাদের ছদ্মনাম, মেইল ও ফেসবুক আইডি এবং তার গোপন পাসওয়ার্ডসহ নানা তথ্য প্রমাণ আছে সেই ডায়েরিতে।

আর সেই পাসওয়ার্ড ও ফেসবুক আইডিতে প্রবেশ করতেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে জামায়তপন্থী শিক্ষকদের আশীর্বাদে কিভাবে বুয়েটে চলছে শিবিরের কর্মকা-। আছে সাম্প্রতিক শিক্ষক আন্দোলনের সময় সাধারণ শিক্ষকের ব্যানারে কিভাবে অংশ নেয় জামায়াতের শিক্ষকরা। শিবির ক্যাডাররা অংশ নেয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে। জামায়াতের চারজন শিক্ষক মেইল ও ফেসবুকে কিভাবে শিবির ক্যাডারকে সাপোর্ট দিচ্ছেন সব কিছুরই প্রমাণ মিলেছে। দেখা গেছে, সাম্প্রতিক শিক্ষক আন্দোলনের সময় বাইরে থেকে শিক্ষার্থী আনা, অর্থের যোগান দেয়া, প্রচার চালানো, পোস্টার ছাপানো ও বিলিসহ সব কর্মকা- চলেছে আটক শিবির ক্যাডারের কক্ষ থেকে।

ফেসবুক ও ই-মেইল যোগাযোগ চলেছে তার মাধ্যমেই। জামায়াতী শিক্ষকরাও পোগনে তাকে চিঠি লেখে, মেইল পাঠিয়ে নির্দেশনা দিয়েছে। তার ফেসবুক এ্যাকাউন্ট ও মেইলে প্রবেশ করে দেখা যায়, শফিকুল ইসলাম বিভিন্ন জনকে সাম্প্রতিক শিক্ষক আন্দোলনের সময় বলছেন, ‘নো ম্যাটার, ডোন্ট ওরি। আমি শিবির করি এটা অনেকেই জানে, ভয়ে কেউ প্রকাশ করে না। ’ আন্দোলনে অংশ নেয়া শিবিরের আরেক ছাত্র তা জেনে হতবাক হয়ে বলেছেন, সাবধানে থেকো।

ফি আমানিল্লাহ। এই শিবির ক্যাডারের মেইল ও ফেসবুকে যত তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হওয়ার মতো ঘটনা হচ্ছে এখন পর্যন্ত চার শিক্ষকের সম্পৃক্ততা। যেখানে শিবির ক্যাডারকে বিতর্কিত সেই শিক্ষকরা পরামর্শ, নির্দেশনা এমনকি অর্থনৈতিক যোগান দেয়ার কথাও বলেছেন নিজেরাই। যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের বডিগার্ড ছিলেন এমন অভিযোগ আগেই উঠেছিল শিক্ষক মাহবুব রাজ্জাকের বিরুদ্ধে। তার সঙ্গে সর্বক্ষণিক যোগাযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে শিবির ক্যাডার শফিকুলের ব্যক্তিগত মেইল ও ফেসবুক এ্যাকাউন্টে।

শিবিরের আন্দোলন নিয়ে কথোপকথনের এক পর্যায়ে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এই শিক্ষককে শিবির ক্যাডার শফিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘সালাম স্যার। কিন্তু আপনার লাস্ট আপডেটের প্রথম লাইনটা নিয়ে একটু সন্দেহ আছে। আমি জাহাঙ্গীর স্যারের সঙ্গে কথা বললাম। তিনি বললেন, স্যার কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি। বিষয়টা একটু পরিষ্কার করুন।

’ জানা গেলে শফিকুলের এই জাহাঙ্গীর স্যার হলেন সিভিল বিভাগের শিক্ষক ড. জাহাঙ্গীর আলম। সাম্প্রতিক শিক্ষক আন্দোলনে যিনি ছিলেন ব্যাপক সক্রিয়। তাকে শিবির ক্যাডার বলেছেন, সামনে ভিসি অফিস ঘেরাও কর্মসূচী আসছে। আর আমি ছাত্রশিবিরেরর হল কমিটির জন্য আবেদন করেছি। বুয়েটে উগ্রবাদী কর্মকা- চালানোর অভিযোগ অনেক আগেই উঠেছিল সিভিলের শিক্ষক স্নিগ্ধা আফসানার বিরুদ্ধে।

তিনি সব সময়ই অন্য তিন শিক্ষকের মতো শিবির ক্যাডারকে সাপোর্ট দিয়ে চলেছেন। ফেসবুকে নির্দেশনা দিয়ে তিনি এও বলেছেন, “শফিকুল, তোমরা কালকে যেসব বই বিতরণ করতে চাচ্ছ সেগুলোর নাম একটু আমাকে জানিও। আমি একটা বই প্রপোস করতে চাই সেটা হলো ‘প্রত্যেক মুসলিমের যেসব বিষয় জানা একান্ত কর্তব্য। ’ যদি এই বইটা দিতে চাও আমাকে জানালে আমি ব্যবস্থা করতে পারব। আর কোন ফিনান্সিয়াল সাপোর্ট লাগলে প্লিজ অবশ্যই আমাকে জানাবে।

আল্লাহ আমাকে যতটুকু তৌফিক দিয়েছেন তার মধ্যে কন্ট্রিবিউট করব- ইনশাল্লাহ, স্নিগ্ধা। ” আরেক জায়গায় এই শিক্ষক বলেছেন, ‘তোমরা তো আমারে প্যাঁচের মধ্যে ফিলে দিলা। আসলে আমি প্রচার থেকে দূরে থাকতে চাই। যে জন্য মিডিয়ার সামনে কোন সাক্ষাতকার দেই না। তোমার রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করলাম।

’ শিবির ক্যাডারের কক্ষ থেকে উদ্ধার করা কাগজের মধ্যে আছে শিবিরকে শিক্ষকদের টাকা দেয়ার রসিদ। যেখানে আছে শিবিরের সোহরাওয়ার্দী হল শাখার ৫০০ টাকা। জাহাঙ্গীর স্যার ১০০০। মোঃ আলী স্যার (মেকানিক্যাল বিভাগের শিক্ষক) ৫০০ টাকা। জানা গেছে, এসব প্রমাণ আজকালের মধ্যে শিক্ষার্থীরা তুলে দিচ্ছে পুলিশের কাছে।

ছাত্রলীগের আহ্বায়ক আমিনুল হক পলাশ বলেছেন, আমরা তথ্যপ্রমাণ যা পেয়েছি তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে তুলে দেব। তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা উগ্রবাদী এ ধরনের কর্মকা- বরদাশ্ত করবে না। যুগ্ম আহ্বায়ক তানভীর মাহমুদুল হাসান আরাফাত ও আরেক নেতা তন্ময় আহমেদ প্রশ্ন তুলেছেন, আশা করি এই তথ্যপ্রমাণ থেকে বুয়েটের অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলবে। ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার হারুন অর রশীদ বলেছেন, আমরা জানতে পেরেছি নানা প্রমাণ পাওয়ার কথা।

আজকালের মধ্যে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তা আমরা গ্রহণ করব। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেসবুকে বুয়েটের উগ্রপন্থী শিক্ষক নেতা হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন, যা নিয়ে আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দিয়ে হাফিজুর রহমান রানা স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন, ‘হায়েনা ওই হায়েনা তুই দেশকে খেয়েছিস, এখন তুই বুয়েটকে খাবি... পারবি না...আমরা বুয়েটের শিক্ষকরা ও সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা হচ্ছি শিকারি। প্রথমে তোর মাথাতে গুলি করব, তারপর তোর পেটে। তারপর তোর মাথা কেটে বুয়েটের গেটের সামনে টানিয়ে রাখব।

যাতে আর কোন হায়েনার আক্রমণে বুয়েট আক্রান্ত না হয়। এর আগে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বুয়েটে শিক্ষকদের মধ্যে ২২ ভাগ শিক্ষক বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসারী, ৭০ ভাগ শিক্ষক বিএনপি জামায়াত-হিযবুত তাহ্রীরের আদর্শের অনুসারী। অবশিষ্টরা নিরপেক্ষ মনোভাবাপন্ন এবং যেদিকে পরিবেশ অনুকূল মনে করেন সেদিকেই অবস্থান নেন। চার জন গ্রেফতার নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ ছাত্রকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গ্রেফতারকৃত ৪ জনের মধ্যে ৩ জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।

অপরজন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। গ্রেফতারকৃতরা সম্প্রতি দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলার সঙ্গে জড়িত। Click This Link ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।