এসো, গল্প শোনাই। ::"লক্ষণ সেণ এতো সৈন্য থাকতে ক্যান বখতিয়ার খিলজীর মাত্র চোদ্দজনের সৈন্যের ভয়ে পালাইছিলো, জানিস?"
:: ক্যান পালাইছিলো?
:: বখতিয়ার খিলজীর ভয়ে। কিন্তু বখতিয়ার খিলজীর কিসের ভয়ে?
:: কিসের ভয়ে?
:: আরে বাল এইডা জানিস না? বখতিয়ার খিলজীর হাত বড় আছিলো এইডা তো জানিস, নাকি?
:: হ্য ; এইডা তো জানি।
:: ভুল জানোস। ইতিহাস বিকৃতি হইছে।
আসলে ঠ্্যাং বিশাল বড় আছিলো। কোন ঠ্্যাং, বুঝছোস তো? আর লক্ষণ সেণ এর চেহারা আছিলো এক্কেবারে দুধে আলতা। ক্যান পালাইছিলো, এইবার বুঝছোস তো? পুরাই রেপ কেস।
::ধুরবেটা, ফাইজলামি করিস ক্যান?
:: আমাগো বখতিয়ার হইলো সেই বখতিয়ার খিলজীর বংশধর।
:: আসলেই??
আমার ভার্সিটি বা কলেজ জীবনের সবচেয়ে ঘনিষ্ট বন্ধুগুলা জাতে বিশিষ্ট সাইকো, নয়তো ফিলোসোফার।
আমি মনে হয় এর জন্য দায়ী। কারণ নেহা্য়েত ভালো মানুষগুলা আমার সাথে মিশে মিেশ এইরকম সাইকো হয়ে গেছে। রতনে রতন চেনে একটা কথা আছেনা?
আমার কলেজ জীবনের রুমমেট ছমরুল। একজন জাত ফিলোসোফার। আর ভার্সিটি জীবনের রুমমেট ছিলো বখতিয়ার।
বখতিয়ার একজন জাত সাইকো। খুবই গম্ভীর হয়ে থাকতো; বিশেষ করে পরিচিত মহলের বাইরে। মানুষজনকে ভয় দেখানো আর নির্দয় ভাবে ঝাড়ি দেয়া ছিলো তার প্রিয় অভ্যাস।
বিশাল বিশাল চাট্টিক সাহিত্য বানায় বানায় বলতো; গল্পের না্য়ক থাকতো সে নিজে; আর নায়িকা তার পাশের বাড়ির কোনো সেক্সী মাই্য়্যা। আর সেই গল্পগুলাতে হাসলে বা ডাউট দিলে খুব গম্ভীর হয়ে চশমার ফাক দিয়ে কড়া দৃষ্টিতে তাকায় থাকতো।
আমরা সেগুলার নাম দিছিলাম বাস্তব জীবনের কাল্পনিক কাহিনী।
ছমরুল এখন একজন আর্মি অফিসার; বখতিয়ার এখন ব্যাংকার। এ দুজন মান্ুষ ই আমাকে শর্তহীন ভাবে ভালোবাসে।
যাই হোক সিরিয়াস কথা না বলে মূল কাহিনীতে ফিরে আসি। বখতিয়ার আমাকে আর হাসানকে কখনো ঝাড়ি দিতোনা।
আব্দুল আর সারওয়ারকে রুটিন করে ঝাড়ি দিতো। আব্দুলকে ভালোবেসে "খানকি হালা" আর সারওয়ারকে কখোনো "মাতারি" বা "চোদনা" বলে ডাকতো। বখতিয়ারের কয়েকজন শিষ্য ছিলো যাদেরকে সে রুটিন কইরা মামু বানইতো। এর মধ্য মুকুল, টিটো আর ফয়েজ ছিলো অন্যতম।
এরা আমাদের রুমে ঢুকেই বায়না ধরতো, "মামা, একটা বাস্তব জীবনের কাল্পনিক কাহিনী শোনাও না।
" মুড ভালো থাকলে এদেরকে গল্প শোনাইতে বইসা যাইতো, মুড খারাপ থাকলে কইসা ঝাড়ি দিয়া রুম থাইকা তারায় দিতো; এরা অবশ্য মাইন্ড টাইন্ড করতো না। ক্লাসে বা ভার্সিটিতে এদেরকে দূর থাইকা দৃষ্টি আকর্ষন করতে প্রায়সই সে দু আংগুল এবং জিহবার সাহায্যে কিছু একটা ভংগিমা বা ইশারা করতো। শিষ্যদের সাথে খামাখা ইতরামি করা ছিলো তার দৈনিক বিনোদোনের একটা অংশবিশেষ।
ল্যানে এজ অফ এম্পায়ার খেলার সময় ক্যাসেল দিয়া বেড়া(ওয়াল) দেওয়া বা টাইনি ম্যাপের ১২টা ইনিমি নিয়া খেলা তার প্রিয় অভ্যাস ছিলো। তারে আব্দুল জ্ঞান দিতে গেলেই তারস্বরে চেচায় উঠতো।
ফিফা খেলার সময় গুলিকে(গোলকিপার) নিয়া গোল দেয়ার চেষ্টা করাটা তার প্রিয় বিষয়।
আমরা সবাই গোল হয়ে তার এই সমস্ত কাহিনী দেখতাম।
একবার আমরা দলবল বেধে চা বাগানের জংগলে ক্যাম্পফায়ার করার জন্য গেলাম। সবাই মাটিতে বসলো, কিন্তু সে আর মাটিতে বসেনা। আমরা জিগ্যাসা করলাম কি সমস্যা।
বলে, নতুন আন্ডারও্য়্যার। কোনো ভাবেই ভিজানো বা ময়লা করা যাবে না। পরে কোথা থেকে এক চলটা সাবানের পিছ জোগাড় কইরা ঝর্ণার পানিতে ধুইলো; ক্যম্প ফায়ারের আগুনে শুকাইলো। এই বার চাড্ডি মাথায় টুপি বানায়ে আব্দুলের সাথে রান্নায় লাইগা গেলো।
জংগলে ভোর হোলো।
বখতিয়ার ঘুম থাইকা উঠে দেখে তার স্যান্ডেল নাই। তার চিৎকার চেচামেচিতে ঘুম ভাংলো সবার। যে তার স্যান্ডেল নিছে তাকে সে বিষম শায়েস্তা করবে বলে ডিক্লেয়ার করলো। আমরা সবাই ঝোপগুলোতে খোজা শুরু করলাম। হুট করে দেখি সারওয়ার খালিগায়ে গামছা পই্ড়া ঝর্ণা থাইকা গোসল দিয়া আসতেছে।
আর বখতিয়ার তার দিকে অাগুন চোখে তাকায়ে আছে। কাছে আসতেই বখতিয়ার হুন্কার দিয়া উঠলো, "মাতারি। আমার স্যান্ডেল ভিজাইছোস ক্যানো?"
:: ও; এইডা তোর স্যান্ডেল? আমি পুরান স্যান্ডেল দেইখা আরো নিলাম এইডা। অসুবিধা নাই একটু পরেই শুকায় যাইবো।
::"মাতারি, তোর স্যান্ডেল দে।
"
স্যান্ডেল নিয়া মারামারি হাতাহাতি শুরু হয়ে গেলো। এক পর্যায়ে দুইজনেই দুইজনের এক পা এর করে স্যান্ডেল দখল কইরা ফেললো। বখতিয়ারের হাতে সারওয়ারের একটা স্যান্ডেল, সারওয়ারের হাতে বখতিয়ারের একটা স্যান্ডেল। আর একটা করে স্যান্ডেল নিজেদের পায়ে।
বখতিয়ার এক পর্যায়ে সারওয়ারের স্যান্ডেল নিয়া ঘন ঝোপগুলার মধ্যে ছুইড়া মারলো।
সারওয়ার ও কম যায় না। গায়ের জোরে বখতিয়ার স্যান্ডেলটা ফেললো ঝোপে।
কাহিনী এই খানেই শেষ না। এরা দুইজন আমাদেরকে বলে তাদের স্যান্ডেল খুইজা দিতে, নইলে তারা কোনো মাল বহন করবেনা ফেরার পথে। আর তারা খুজতে পারবে না কারণ সারওয়ার কেবল গোছল করছে এবং বখতিয়ারের আন্ডি সে ময়লা করবে না।
উপায় না দেইখা আমরা সবাই বটি শাবল নিয়া ঝোপ জংগল কাইটা স্যান্ডেল খুজতে লাগলাম।
আর এরা দুইটা এক পােয় কইরা স্যান্ডেল আর এক পা ককফাইট স্টাইলে মাটির উপরে রাইখা একজন আরেক জনের কান্ধে ভর দিয়া বিড়ি টানতে লাগলো।
(চলবে) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।