দেখা যত ছবি, শোনা যত শব্দ, হৃদয়ের সব উপলব্ধি, আর যত এলোমেলো ভাবনা
দ্বিতীয়বারের মতো বিজয়ের হাসি বারাক ওবামার মুখে। ‘এই জয় ভাগ্যগুণে পাওয়া নয়। এটি কোনো দুর্ঘটনাও নয়। আপনারা যাঁরা আমাকে সমর্থন দিয়েছেন, তাঁরাই এ জয় ছিনিয়ে এনেছেন। ’
দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার পর সমর্থকদের কাছে পাঠানো এক ই-মেইল বার্তায় এ অনুভূতি প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
চূড়ান্ত ফল ঘোষণার ঠিক আগ দিয়ে ওবামা ছিলেন শিকাগোতে। সেখানে বসেই তিনি তাঁর সমর্থকদের শুভেচ্ছা জানান। ওবামা বলেন, ‘আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই শিকাগোয় উপস্থিত সবার উদ্দেশে ভাষণ দিতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু এ মুহূর্তে আপনাদের ধন্যবাদ জানানোকেই আমি কর্তব্য মনে করছি। ’
পুনরায় নির্বাচিত এই প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আপনারা আমার পক্ষে জনসমর্থন তৈরি করেছেন।
আমার প্রচারণার মালিকানা আপনারাই গ্রহণ করেছেন। পাঁচ-দশ ডলার জমা দিয়ে এর তহবিল গড়ে তুলেছেন। প্রতিকূলতা ঠেলে এ বিজয়কে সামনে নিয়ে গেছেন। ’
সমর্থকদের প্রতি নিজের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করে ওবামা আরও বলেন, এই জনসমর্থনের প্রতি সম্মান রেখে তিনি আরও চার বছর দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাবেন।
গত চার বছরের অসমাপ্ত কাজগুলো ওবামা এই মেয়াদে শেষ করবেন বলে ই-মেইলে সমর্থকদের কথা দিয়েছেন।
ওবামার এই বিজয় অনাকাঙ্খিত নয় আবার অতি প্রত্যাশিত ও নয়। যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছিল তা কার্যত হয়নি। হয়ত শেষ মুহূর্তের বিবেচনাতেই এগিয়ে গেছেন রমনির থেকে। ওবামা প্রথম মেয়াদে কতটুকু সফল ছিলেন সেটা প্রশ্ন সাপেক্ষ তবে এটাও সত্যি যে নতুন করে কোন যুদ্ধ ও তৈরি হয়নি এই সময়ে। ইসরায়েল বারেবার ইরানে হামলার হুমকি দিলেও এতে কার্যত কোন সমর্থন তারা ওবামার কাছে পায়নি।
স্যান্ডির দুর্দিনে ওবামার কাজ ও প্রশংসা পেয়েছে। তাই সব দিক দিয়ে ওবামা ছিলেন রমনির চেয়ে অধিক গ্রহণযোগ্য ভোটার দের কাছে।
আর রমনিও নিজেকে যথার্থভাবে উপস্থাপনে ব্যর্থ হয়েছেন বলা যায়। এ ক্ষেত্রে কেউ বিতর্কে নিজেকে সঠিকভাবে তুলে ধরার ব্যর্থতাকে দায়ী করেছেন। কেউ আবার নির্বাচনী অঙ্গীকারে জনগণকে তাঁর খুশি করতে না পারার বিষয়টিকে দোষ দিয়েছেন।
আজ বুধবার ‘হাফিংটন পোস্ট’-এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে রমনির হেরে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে একটি বিশ্লেষণ এভাবে তুলে ধরা হয়।
রমনির সমর্থকেরা বলছেন, নির্বাচনের আগ মুহূর্তে হারিকেন স্যান্ডির আঘাত যুক্তরাষ্ট্রকে লন্ডভন্ড করে দিলেও প্রেসিডেন্ট ওবামাকে অনেকটাই এগিয়ে নেয়। কেননা তিনি ওই সময় নির্বাচনী প্রচারণা বাদ দিয়ে দুর্গত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের পাশে দাঁড়ান। এতে তাঁর জনপ্রিয়তা অনেকটাই বেড়ে যায়।
বিশ্লেষকদের মতে, অভিবাসন আইনের কড়াকড়ির বিরোধী পক্ষ, অভিবাসনের সমর্থক গোষ্ঠী, আগ্নেয়াস্ত্রের মালিক—এমন একক গোষ্ঠীকে যথেষ্ট পরিমাণে খুশি করতে পারেননি রমনি।
মতাদর্শ নিয়ে বিভিন্ন রকম বুলি কপচালেও তিনি কোনো উপসংহার টানতে ব্যর্থ হন। একই সঙ্গে সরকার পরিচালনার বিষয়ে সঠিক কোনো দিক নির্দেশনাও তিনি দিতে পারেননি।
তবে সব কিছুর পরেও প্রতিপক্ষ রিপাবলিকান প্রার্থী মিট রমনি তাঁর পরাজয় মেনে নিয়ে ওবামাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। সমর্থকদের উদ্দেশে রমনি বলেন, ‘আমেরিকার জন্য এটা বড় কঠিন সময়। আমি প্রার্থনা করি, জাতিকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে সফল হবেন প্রেসিডেন্ট।
'
এই নির্বাচনে ওবামার বিজয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশিরা স্বভাবতই বেশ খুশি। নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস, ব্রুকলিন, এস্টোরিয়ায় জড়ো হয়েছেন বাংলাদেশিরা। তাঁদের মুখে ‘ওবামা’, ‘ওবামা’ জয়ধ্বনি। ওবামা তার প্রতিশ্রুতি পূরণে সমর্থ না হলেও তারা ওবামার বিকল্প দেখছেন না বা রমনি সেই বিকল্প হিসেবে আবির্ভূত হতে পারেননি। তাছাড়া অভিবাসি আইনে ওবামার সহজ মনোভাব ও এর একটা বাস্তব কারন যা অনেক অবৈধ অভিবাসীর রাস্তা খুলে দেবে বলে তারা প্রত্যাশা করছেন।
নির্বাচন শেষ, এবার কাজে নেমে পড়ার পালা। কথায় কিন্তু চিড়া ভেজে না। মানুষ সেই কথার বাস্তবায়ন অর্থাৎ কাজ দেখতে চায়। দ্বিতীয় মেয়াদে মানুষের প্রত্যাশার পারদ আরও চড়েছে বলা যায়। ভালোয় ভালোয় নির্বাচনের কঠিন বৈতরণী পার হলেও রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে এবার ওবামাকে অনেক কঠিন বিষয় সামাল দিতে হবে।
তাঁর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে দেশের নাজুক অর্থনীতি সঠিক পথে নিয়ে আসা, ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরা, ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা।
এদিকে ওবামার সম্ভাব্য জয়ের খবরে শেয়ারবাজারে পতন দেখা দিয়েছে। উচ্চ আয়ের লোকদের ওপর কর বৃদ্ধির পক্ষে ওবামা। ওবামার জয়ের খবরে এই শ্রেণী এখন রীতিমতো শঙ্কিত।
মার্কিন অর্থনীতি ভালোভাবে সামাল দিতে না পারার অভিযোগ রয়েছে ওবামার বিরুদ্ধে।
নানা দিক দিয়ে দুর্বল হয়ে পড়া মার্কিন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পুনর্গঠন করা ওবামার জন্য বেশ কঠিন হবে। এর সঙ্গে আছে বেকারত্বের সমস্যা। প্রেসিডেন্টকে লাখ লাখ বেকার জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। সেটা তিনি কীভাবে করবেন, তা দেখার বিষয়।
কেন্দ্রীয় সরকারের ঋণের বোঝা কমানো, কর, স্বাস্থ্যসেবা, জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি, মার্কিন জনগণের নিরাপত্তা, মৌলিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিসহ অভ্যন্তরীণ নানা বিষয়ের সুরাহা করতে হবে ওবামাকে।
আফগানিস্তানে এক দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধে জড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৪ সালের শেষ নাগাদ সেখান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের কথা রয়েছে। সেটি ভালোভাবে করাও ওবামার জন্য একটা চ্যালেঞ্জ হবে।
এ ছাড়া ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ও সিরিয়ায় চলমান গৃহযুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নির্ধারণ, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব, মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক প্রভৃতি বিষয় মোকাবিলায় বেশ বেগ পেতে হবে ওবামাকে।
তবে রমনি দেশপ্রেমের স্বার্থে সহযোগিতার ই ঘোষণা দিয়েছেন।
তিনি বলেন- ‘জাতি এখন এক সন্ধিক্ষণে রয়েছে। এ সময় আমরা বিভেদ উসকে দেওয়া ও রাজনৈতিক ফায়দা লোটার মতো ঝুঁকি নিতে পারি না। আমরা যারা নেতৃত্বে রয়েছি, সবাইকে এক কাতারে দাঁড়িয়ে কাজ করতে হবে। এ উপলক্ষে জনগণকেও উঠে দাঁড়াতে হবে। ’ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।